07/06/2024
ফুরোমোন পাহাড় ভ্রমন
মোহাম্মদ ছানা উল্যাহ . রাঙ্গামাটি জেলার সর্বোচ্চ চূড়ার নাম ফুরোমোন। ইহা রাঙামাটির মানিকছড়ি থানার সাপছড়িতে অবস্থিত। পায়ে হেটে সেই চূড়ায় উঠতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা এবং খাড়া পাহাড়ী পথে নামতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘন্টা। আমার জীবনের কঠিন এই ভ্রমনের বর্ণনা করতে বসলাম। ২০১৪ সালে বান্দরবান, তাজিং ডং বিজয় চূড়ায় উঠে যে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেছিলাম, ফুরোমোন উঠে সেই তৃপ্তির জায়গাটা ছিল অন্য রকম। . ০২ আগষ্ট ২০১৭ খ্রিঃ সকাল বেলা রওনা দিলাম কক্সবাজার হতে। সাথে আছে তারেক আহমেদ, সোহেল রানা ও মিলন। আমাদের গন্তব্য নির্ধারিত না থাকলেও বান্দরবান -বাঙালখালী হয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বান্দরবান চা বিরতী দিয়ে সোজা চলে যাই বাঙ্গালখালী বাজারে। সেখানে গিয়ে সিদ্ধান্ত হলো আমরা রাঙ্গামাটি যাব এবং সেখানে আমরা গত ১৩ই জুন সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও পাহাড় ধস দেখে ফিরে আসব। সেই মোতাবেক বাঙ্গালখালীতে নাস্তা খেয়েই আবার রওনা দিলাম। বাঙ্গালখালী থেকে লিচু বাগান ফেরী পার হয়ে কাপ্তাই সড়ক ধরে রওনা দিলাম। চন্দ্রঘোনা পেপার মিলের সামনে দাঁড়ালাম শুধু ছবি তোলার জন্য। বাদসাধল নিরাপত্তাকর্মী। বলল ছবি তোলা নিষেধ। ততক্ষনে তারেক ফোন করে এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করল যে এই পেপার মিলেই চাকরী করে। পরে তার সুবাদে আমরা প্রবেশ করলাম। ধ্বংশের দাড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা স্বর্ণালী ইতিহাসের স্বাক্ষী সেই পেপার মিলে। বিশাল জায়গা জুড়ে কর্নফুলীর তীর ঘেষা ব্রিটিশের স্থাপনা সমূহ দেখলাম। যা শুধু এখন নিঃশেষ হওয়ার অপেক্ষায়। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি ছুটল রাঙ্গামাটির দিকে। সবুজ বনানী, পাহাড়, নদী প্রভৃতির সৌন্দর্য মগ্ধতা ক্ষুধাকে দমিয়ে দিল। কাপ্তাই তাপ বিদ্যুতের গেইটে যাওয়ার পর জানলাম গত ১৩ই জুনের ঘুর্নিঝড়ে লেক ঘেষা অবিরাম সৌন্দর্য্যরে আধার সেই রাস্তাটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। আবার ফিরে এলাম। বিকল্প সড়ক ধরে পানছড়ি হয়ে ঘাগড়া গিয়ে মিশেছে। গাড়ি আবার প্রধান সড়ক ধরে ঘাগড়া মানিকছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটির দিকে ছুটল। সেখানে ভেদভেদী হতে যোগ দিল রূপধন চাকমা(মিঠুন) ও তার আাট বছরের মেয়ে সম্পন্না। আমরা নবরূপা কুটুমবাড়ী রেস্তোরাতে দুপুরের খাবার খেলাম বিকাল ৪:৩০ মিনিটে। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না- আমরা কি রাঙ্গামাটি থাকব না চলে যাব। খাবার পর আমরা রওনা দিলাম গত ১৩ই জুনে ঘটে যাওয়া ভূমি/ পাহাড় ধ্বংসের চিত্রগুলো দেখার জন্য। এ এক বিভিষিকাময় দৃশ্য। এই ক্ষতি বর্ণনাতীত। স্থানীয় মিঠুন সে দিনের কথা বলতে বলতে চোখে পানি এসে গেল। আমরা একটি উপজাতি পাড়ায় প্রবেশ করলাম। তাদের সাথে কথা বললাম। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পগুলো শুনে মনটা ভরে গেল। ঐ পাড়ায় ৯০% উপজাতিরা, তারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করা এই মানুষগুলোর হারিয়ে যওয়া আত্মাগুলোর জন্য তাদের ধর্ম মত প্রার্থনা করছে প্রতিনিয়ত। আমরা আসাম বস্তি হয়ে কাপ্তাই যাওয়ার সেই সড়ক ধরে রওনা দিলাম। যে প্রকৃতি শত শত মানুয়ের মৃত্যুর জন্য কাঠগড়া, সেই প্রকৃতিই যে নিমিশে মানুষের মনকে ভাল করে দিতে পারে, এটা তারই প্রমান। এক দিকে কাপ্তাই হ্রদ, নীল জলরাশির মাঝে সবুজ বৃক্ষরাজি তার বুকে দাঁড়িয়ে আছে দানবময় বিশাল বিশাল পাহাড়। পাহাড়ের ধ্বংস যঙ্গ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। প্রকুতির সৌন্দর্য মগ্ধতায় সিন্ধান্ত হলো আমরা আজ রাঙ্গামাটি থাকছি। উপজাতি পাড়া পেরিয়ে আমরা মাগরিবের নামায পড়ে চলে এলাম মনোঘর এলাকায়। সেখানেই মিঠুনদের বসবাস। সেখানে গিয়ে তাদের অবস্থা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাদের ঘরটা পুরো ভেঙ্গে গেছে। তাদের ভিটায় গিয়ে বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠল। এত কিছুর পরও তারা দিব্বি স্বাভাবিক আছে। তারা উঠেছে মনোঘর স্কুলের একটি ক্লাস রুমে। সেখানে তার বাবা, মা ও ছোট ভাই থাকে। তার পরিবার সারাদিন সেখানেই থাকে কিন্তু ঘুমাতে যায় কোন একটি ক্লাস রুমের কক্ষে, যেখানে সকালে ক্লাস হয়। এমন বহু পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রবীন (নাম না জানা) এর সাথে কথা হলো, উনার স্ত্রীও মারা গেছে পাহাড় ধ্বংসের মাটি চাপা পড়ে। পুরো গ্রামের সকলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তবুও তাদের আপ্যায়নের কোন কমতি নেই। হৃদয় বিদারক দৃশ্যগুলো দেখে আমরা আসাম বস্তি হয়ে চলে এলাম রিজার্ভ বাজার। এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল রাঙ্গামাটি ব্যবসায়ী সমিতির অর্থ সম্পাদক জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন। হোটেল প্রিন্সে আমাদের বাসস্থান হলো। আমরা কেউ কোন কাপড় চোপড় নেয়নি। ¯েœহ ভাজন মামুন তার বাসা হতে সকলের জন্য লুঙ্গি, গামছা সহ যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে এল। আমরা একটু বিশ্রাম নিয়েই আবার বেরিয়ে পড়লাম। রাঙ্গামাটি আসলাম আর লেকের পানিতে গোসল করব না তা কি হয়? গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রিজার্ভ বাজারের নতুন শহীদ মিনারের পাশে লেকের পাড়ে বিশাল ঘাট। লেকের স্বচ্ছ পানিতে রাতের বেলা সকলে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এবার খাবারের পালা। গাড়ি নিয়ে ছুটে গেলাম বনরূপা বাজারে। রাতের খাওয়ার শেষে হোটেলে ফিরে এলাম। রাতের সুন্দর ঘুমটা শরীরটাকে সতেজ করে তোলে। সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়ি। সকাল ০৭ টায় মামুন এসে হাজির। চলে গেলাম পর্যটনের ঝুলন্ত ব্রীজ দেখতে। ১৩ই জুন সেই করাল আঘাত এখানেও স্পষ্ট। রাস্তাগুলো ভেঙ্গে গেছে। পাহাড়ের ফাটল দেখা যাচ্ছে। লেকের ¯িœগ্ধ বাতাসে গাঁ জুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এবার যাত্রা রাঙ্গামাটির সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া ফুরোমোন। আমরা নাস্তা করে মামুন ও মামুনের আব্বাকে নিয়ে রিজার্ভ বাজার হতে রওনা দিলাম। মনোঘর স্কুলের সামনে থেকে মিঠুন ও তার মেয়ে সম্পন্নাকে তুলে নিলাম। মিঠুনের পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি চলতে লাগল। পথিমধ্যে পাহাড় ধ্বসের সেই ধ্বংস লীলা দেখেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মামুন বলল, ১৩ই জুন এখানে বালুর বন্যা হয়েছিল। বালুর নীচে চাপা পড়েছে ফসলের ক্ষেত, ঘরবাড়ি সহ সবকিছু। ধ্বংস লীলা দেখতে দেখতে চলে এলাম মানিকছড়ি। সেখান থেকে আমরা সাপছড়ি রোডে প্রবেশ করলাম। সাপছড়ি স্কুলের সামনে গাড়ি রেখে আমরা ফুরোমোন পাহাড়ের চূড়ায় উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চূড়ায় উঠার দু’টি রাস্তা- একটি পাহাড়ের গায়ে গায়ে পায়ে হেঁটে একেবারে খাড়া। অপরটি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ইটের সলিং করা আছে। তবে গাড়ি নিয়ে উঠার মতো নয়। তার উপর বৃষ্টি হওয়াতে পথটা খুব পিছলে হয়ে আছে। তার পরও আমরা একটি সিএনজি ঠিক করলাম। কিন্তু একটি সিএনজি দিয়ে আমাদের হবে না- আবার দু’টি সিএনজি পাওয়াও যাচ্ছেনা। ফলে সকলে হেঁটে রওনা দিলাম। মামুনের আব্বা আমাদের সাথে গেলেন না, তিনি একটি দোকানে বসে রইলেন। দুঃসাহসিক এই যাত্রার সাথী হলো তারেক আহমেদ, সোহেল রানা, রূপধন চাকমা(মিঠুন), মিঠুনের আট বছরের কন্যা সম্পন্না, আব্দুল্লা আল মামুন, মিলন ও আমি। ৯:৩০ মিনিটে আমরা পদব্রজে যাত্রা শুরু করলাম। সাথে যৎসামান্য খাবার পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন নিয়ে যাত্রা করলাম। যাত্রার পরও বুঝতে বাকি রইল যে, যাত্রা আমাদের জন্য কত কঠিন হবে। সমতল ভূমি হতে আমরা পাহাড়ের উচ্চতার দিকে ধাবিত হচ্ছি। সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে সূর্যের তাপ। সবুজের মাঝে হাঁটতে ভাল লাগল। রোদের কারণে সবাই ক্লান্ত। হাটি হাটি পা পা করে আমরা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। উচু নিচু পাহাড় টিলা পেরিয়ে আমরা উপরের দিকেই যাচ্ছি। পথের মধ্যে বেশ কিছু উপজাতি কাঠুরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। চলতি পথে বললাম আমরা চূড়ায় উঠব। তারা ভেংচি কেটে বলল, চূড়াতে? পারবা? আরও কিছু দুরে উঠে বসলাম গাছের ছায়ায়। তারেক, মামুন তারপর আমি। পরেই আছে মিলন, সোহেল রানা, রূপধন চাকমা ও সম্পন্না। সময় যতই যাচ্ছে সূর্যের তীব্রতা ততোই বাড়ছে। সাথে নেওয়া পানি শেষ হয়ে গেল। আমরা অর্ধেকও উঠতে পারি নাই। সকলে গরমে ক্লান্ত হয়ে গেল, কিন্তু হাঁটা বন্ধ নেই। কখনও বসে, কখনও শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু। আমরা যেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করেছিলাম তা ০৩(তিন) কিলোমিটার পূর্ণ হলো। বিশাল এক বন্য গাছের ছায়ায় দম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু। এবারের পথটা একেবারেই খাড়া পাহাড়। প্রায় ১১০ ডিগ্রি এঙ্গেলে প্রায় ২০০ ফুট অতিক্রম করতে হবে। পাহাড় যত খাড়া হয়, কষ্ট ততো বেশি। বেশি কষ্ট হচ্ছে রূপধনের, কারণ তার আট বছরের সম্পন্নাও তার কাঁধে চড়ে উঠেছে। তার উপর সূর্য মামাটা ঠিক মাথার উপর। অনেক টুকু উঠে আমি ও তারেক ছায়ায় আশ্রয় নিলাম। মামুন ও মিলনকে দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে সোহেল রানা আসলেও রূপধনকে দেখা যাচ্ছেনা। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
সম্পন্নাকে নিয়ে নানা ভাবনা ভয় পাইয়ে দিল। না- অবশেষে বাবা মেয়ে এসেছে। রূপধনের চেহারার মধ্যে তার কষ্টের ছাপ পড়েছে। তবে সম্পন্না যখন বলল, তার বমির ভাব হচ্ছে, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম হিট স্টোকের কথা ভেবে। এমনি করে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলাম আমরা। নানান ভয়, শংকা, ক্ষুদা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আমরা এসে পৌঁছালাম, যেখানে পাহাড় কেটে সমতল করে দু’টি ভবন বানানো হয়েছে। সেখানে ২/৩ জন ভান্তে (বৌদ্ধ ধর্মের গুরু) কে দেখা যাচ্ছে। রূপধন এগিয়ে গিয়ে ধর্মীয় রীতি অনুসরণে প্রনাম করে তাদের সাথে দেখা করে পানি ও খাবারের কথা বল্ল। শ্রদ্ধেয় ভান্তেদ্বয় আমাদেরকে দুই প্যাকেট বিস্কুট, সম্পন্নার জন্য জুস ও এক প্যাকেট টিস্যু দেয়। আর পানি সেখান থেকে আরও ৮০ ফুট নীচে গিয়ে আনতে হলো। মামুন ও রূপধনকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবেনা এত ক্লান্ত শরীরে পানি আনার জন্য। এখানে বসে আমরা বিস্কুট ও পানি খেয়ে পেটের কৃমিগুলোকে সান্তনা দিলাম। ছায়াঘেরা এই সবুজ প্রান্তরে শীতল বাতাসে গা জুড়িয়ে নিলাম। তার সামান্য দুরেই ফুরোমোন সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনধ্যান কেন্দ্র। সেখানে একজন ভান্তে ধ্যান মগ্ন ছিল। রূপধন ও সম্পন্না উনার সাথে সাক্ষাত করে আমাদের আগমনের কারণ জানান। ভান্তে মহোদয় আমাদের সাথে কথা বলেন এবং কষ্ট করে আর একটি চূড়া উঠতে বলেন। সেখানে উঠলে রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম শহর দেখা যাবে বলে জানান। উনার কথায় অনুপ্রানিত হয়ে আমরা ফুরোমনের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠা শুরু করলাম। প্রায় ৩০০ টি সিঁড়ি অতিক্রম করে আমরা যখন সর্বোচ্চ চূড়ায়, তখন অনুভব করলাম সৌন্দর্যের এক ভান্ডার আমাদের শত কষ্টকে দুর করে দিল। মেঘ ও বৃষ্টি হচ্ছে আমাদের অনেক নিচে। তার অর্থ হচ্ছে আমরা মেঘেরও উপরে। মোবাইলে লক্ষ্য করলাম তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গৌতম বুদ্ধের একটি মুর্তি ও তাদের উপাসনালয় আছে এখানে। আমি, মামুন ও সোহেল রানা সেখানে যোহরের নামাজ আদায় করলাম। সেখানে কেউ থাকেনা এবং সিঁড়ির অবস্থা দেখে মনে হলো গত ১০/১৫ দিন ধরে সেখানে কেউ উঠেও নি। কিন্তু সেখানে চারদিকে এত সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। পায়ের নীচে বালিমাটি। মাটির উপরে এমন এক ধরনের শ্যাওলা জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যাচ্ছে যা কার্পেটের চেয়েও আরামদায়ক, সম্পূর্ণ মেঝেটাকে সবুজ করে তুলেছে। সামান্য বাতাসেই সকলে শীত অনুভব করলাম আর চারপাশে যেভাবে মেঘ উড়ছে মনটা জুড়িয়ে গেলেও ভয় হচ্ছে কখন বৃষ্টি শুরু হয়। আমরা যেই পথে উঠেছি সেই পথে নামবনা। নামব খাড়া পাহাড়ি মেঠো পথে। ফলে বৃষ্টি হলে পথটি অনেক বেশি বিপদ জনক হয়ে যাবে। বৃষ্টির কথা ভেবে তাড়াতাড়ি নামতে চাইলেও মন নামতে চাচ্ছেনা। মেঘ যেখান থেকে সরে যায় সেখান দিয়েই এক অনিন্দ সৌন্দর্য ভেসে ওঠে, সূর্যের আলো হেসে ওঠে। এমন সৌন্দর্য ছেড়ে কার মন যেতে চায় বলেন। তবুও নির্দিষ্ট সময়ে নিরাপদ দুরত্বে যেতে হবে। তাই এবার ফেরার পালা। সকলেই খুবই সাবধানে নামছি। সর্বশেষে যেই ৩০০ সিঁড়ি অতিক্রম করেছিলাম তা খুবই পিচ্ছিল। খুব ধীর গতিতে আমরা নামছি। তার মধ্যে একবার মামুন পিছলে খেয়ে ৩/৪ সিঁড়ি নিচে পড়ে যায়, তবে কোন আঘাত পায়নি। যাই হোক সকলে বিপদ জনক এই পথ পাড়ি দিয়ে নতুন অপরিচিত পাহাড়ি জঙ্গলময় পথে রওনা দিলাম। অচেনা এই পথে সহযোগীতার জন্য মোবাইলে যুক্ত আছেন রুপধনের এক মামা ও সুমিত্রা চাকমা, কাউন্সিলর- সংরক্ষিত মহিলা আসন। তবে আশার কথা এখান দিয়ে লোক চলাচল আছে বলেই মনে হয়। প্রথম দিকে পথটা যতটুকু সহজ মনে হচ্ছিল বাস্তবে তা অনেক কঠিন ও বিপদ জনক। স্থানে স্থানে পাহাড় ধ্বসের কারণে পথটি অত্যাধিক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় ৩০ মিনিট নামার পর আমরা একটি ক্যায়াং (বৌদ্ধ উপাশনালয়) এর কাছে এলাম, যেটা নিচে সাপছড়ি স্কুলের সামনে হতে দেখা যায়। এখানে কঠিন চীবর দানের অনুষ্ঠান করা হয়- বুনা হয় বেইন। সেখান থেকে একটি ঝর্নার পথ ধরে আমরা আবার রওনা দিলাম। সামনেই কলার বাগান। সেই বাগানে বানরের ঝাঁক। দেখে পুলকিত লাগলেও খুবই ভয় পাচ্ছিলাম কখন আবার আক্রমন করে। কিছু দুর নামতেই চোখে পড়ল বিশাল এক পাহাড় ধ্বসে পড়েছে।.