12/03/2022
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত, দৃষ্টিনন্দন স্বাস্থ্যকর পরিবেশের শহর, সুন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন এলাকা কক্সবাজারকে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে সরকারি গেজেটে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সাগরকন্যা দ্বীপ কুতুবদিয়াও কক্সবাজারের পর্যটন এলাকার অন্যতম চুম্বকঅংশ। রূপে-গুণে-সুন্দর্যে পরিপূর্ণ কুতুবদিয়া সমুদ্রসৈকত। এই দ্বীপে সমুদ্রের লোনা জল রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক লবণ উৎপাদন করে লবণচাষী। নির্ভীক নাবিক যখন সমুদ্রের বুক চিড়ে অথৈ সমুদ্র পানে মৎস সংগ্রহ করতে যাত্রা করে তখন শিহরিত হই। কি অসীম সাহস তাদের বুকে! লবণচাষী-মৎসশিকারীরাই হলো কুতুবদিয়া দ্বীপের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার মহান কারিগর। সিংহভাগ অর্থ এই দুই উৎস হতে আসে। বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প তথা প্রবহমান প্রকৃতির বায়ুকে ব্যবহার করে পাখা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চমৎকার একটি দর্শনীয় স্থান। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নির্মিত নাবিকের পথনির্দেশক বাতিঘর (বর্তমানে নতুন সংস্করণ হচ্ছে) পুরো বাংলাদেশের ৫টি বাতিঘরের একটি আমাদের কুতুবদিয়া দ্বীপে। এ ছাড়া শীতকালীন কুতুবদিয়া ভ্রমণ করলে গ্রামবাংলার প্রকৃত দৃশ্যপট স্পষ্ট ভেসে ওঠে।
কুতুবদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ করলে পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের 'উড়ানীর চর' কবিতার পুরো কথামালা মানবচিত্তে স্পষ্ট দোল খায় । মনে হয় যেন কবি কুতুবদিয়া ভ্রমণ করে কবিতাটি লিখেছেন আপন ছন্দে।
"ধূলায় ধূসর
যোজন জুড়ি,
জলের উপরে ভাসিছে ধবল
বালুর পুরী।
ঝাঁকে বসে পাখি ঝাঁকে উড়ে যায়
শিথিল শেফালি উড়াইয়া বায়;
কিসের মায়ায় বাতাসের গায়
পালক পাতি;
মহা কলতানে বালুয়ার গানে
বেড়ায় মাতি।
উড়ানীর চর উড়ে যেতে চায়
হাওয়ার টানে;
চারিধারে জল করে ছল ছল
কি মায়া জানে।
ফাগুনের রোদ উড়াইয়া ধূলি,
বুকের বসন নিতে চায় খুলি;
পদ ধরি জল কলগান তুলি,
নূপুর নাড়ে;
উড়ানীর চর চিক্ চিক্ করে
বালুর হারে।
বিরতী কৃষাণ বাজাইয়া বাঁশী,
কাল-রাতে মাখে কাল-ব্যথারাশি;
থেকে থেকে চর শিহরিয়া ওঠে,
বালুকা উড়ে;
উড়ানীর চর ব্যথায় ঘুমায়
বাঁশীর সুরে।"