22/03/2022
#হজ্ব_ও_ওমরার_তেলেসমাতি
হজ্ব ও ওমরাহ্ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থতম। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মুসলিম ওমরাহ্ হজ্ব পালন করে থাকেন। এছাড়া পূর্ণ হজ্ব আদায় করতে যান প্রায় দেড় লাখ মুসলিম। বাংলাদেশ থেকে হজ্ব করতে গেলে প্রত্যেককে অবশ্যই কোন না কোন হজ্ব এজেন্সির মাধ্যমে যেতে হয়। দেখা গেছে, হজ্ব থেকে ফেরত এসে অধিকাংশ হাজী সাহেব ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে থাকেন; কথা হচ্ছে, সত্যিই কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অবিচার করা হয়? তারা যেসব অভিযোগ করেন তার কতটুকু সত্য? তার জন্য দায়ী কে? ট্রাভেল এজেন্সি, নাকি মধ্যস্থতাকারী? নাকি হাজী সাহেব নিজেই? আসুন আমরা এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
হজ্ব বা উমরা সামর্থ্যবানদের জন্য বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সা-ঈ করা, রওজাতুল মদিনা জিয়ারত করাকে বুঝায়।
এজন্য প্রত্যেক হাজীকে মক্কা-মদীনা যেতে হয়। সেখানে যেতে যাবতীয় খরচ হাজী সাহেবকেই বহন করতে হয়। সেক্ষেত্রে খরচের খাত মোটামুটি ৭টি। ১. বিমান ভাড়া, ২. হোটেল / বাসা ভাড়া, ৩. গাড়ী ভাড়া, ৪. মুয়াল্লিম ফি, ৫. খাওয়া-দাওয়া, ৬. জিয়ারা বা রসূলুল্লাহর স্মৃতিবিজড়িত বা দর্শনীয় জায়গা ভ্রমণ ও ৭. ট্রাভেল এজেন্সির সার্ভিস চার্জ।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এসব খরচকে একত্র করে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। এরপর হাজী সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন ইমাম-মুয়াজ্জিন বা আলেমদের স্মরণাপন্ন হন। এজন্য তাদের ভালো কমিশনও দিয়ে থাকেন।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো কীভাবে এ কমিশন দিয়ে থাকে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা আলেম-ওলামাদের প্রতি ওমরা হাজীর জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। আবার, পূর্ণ হাজীর জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। এছাড়া আরেকটি প্রথার প্রচলন আছে, তা হচ্ছে- কোন গাইড ৮ থেকে ১০ জন হাজী সংগ্রহ করতে পারলে ওই আলেম বা গাইডকে সম্পূর্ণ ফ্রি হজ্ব বা ওমরা করানো হয়। এখন কথা হচ্ছে, যিনি ফ্রি যাচ্ছেন তারও উপরোক্ত খরচ লাগে। সেটা কে বহন করে? বহন করা হয়, যে আট/দশ জনকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের মধ্য দিয়ে! তার মানে, প্রতি ওমরা হাজীর কাছ থেকে গড়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয় ওই মুয়াল্লিম বা গাইডের জন্য। এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি লাভ করে থাকে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে হিসেব করে দেখা গেছে, একজন ওমরা হাজীর তার নিজস্ব খরচ ছাড়াও অতিরিক্ত খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যা একজন ওমরা হাজীর জন্য এক প্রকার জুলুম। এটা তিনি করে থাকেন না জানার কারণে, না বোঝার কারণে। এ বিষয়ে হাজী সাহেবদের জানতেও দেওয়া হয় না। অথচ, হাজী সাহেবরা একটু সচেতন হলেই এবং ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করলে তাদের খরচের খাত জেনে তার ব্যয় ভার কমিয়ে আনতে পারেন। আরেকটি কথা, হাজী সাহেব যেহেতু তার নিজের টাকা খরচ করে হজ্বে বা ওমরায় যান, সেহেতু; তার জানার অধিকার থাকে যে, কোন খাতে কত টাকা খরচ হয় এবং সেই টাকার রশিদ তিনি চেয়ে নিতে পারেন। যদি তিনি এ কাজটি করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তার কাছ থেকে অতিরিক্ত কত টাকা আদায় করা হয়েছে।
বর্তমানে কেউ ওমরা হজ্ব করতে চাইলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুসারে হজ্ব যাত্রীকে প্রথমেই বিমানের টিকেট কাটতে হয়, এরপর সৌদি আরবের হোটেল বা বাসা ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে হয়, এরপর বিমানবন্দর থেকে হোটেল, সেখান থেকে মক্কা-মদিনা এবং সেখান থেকে পুনরায় বিমানবন্দর আসার গাড়ি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে হয়, এরপর সৌদি মুয়াল্লিম ফি জমা দিতে হয়। এ কয়টা কাজ করার পরে তিনি ওমরায় যাবার জন্য ভিসা বা মোফা পেয়ে থাকেন। এ চারটা খরচের হিসাব এবং রশিদ হাজী সাহেব নিতে পারেন বা তার নেবার অধিকার থাকে।
এরপর তিনি রওনা দেবেন। রওনা দেয়ার পরে তার তিনটা খরচ। প্রথমতঃ খাওয়া খরচ, দ্বিতীয়তঃ জিয়ারা, তৃতীয়তঃ ট্রাভেল এজেন্সির সার্ভিস চার্জ। এভাবে যদি তিনি চান তাহলে কোন দালালের প্রয়োজন হয় না। কারণ, ট্রাভেল এজেন্সির নিজের দায়িত্ব থাকে- হাজী সাহেবকে পরিপূর্ণরূপে হজ্ব করিয়ে নিয়ে আসা। এজন্যই তিনি সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকেন।
অতিরিক্ত আর একজন দালাল নিতে গিয়ে হাজী সাহেব অহেতুক খরচ বাড়িয়ে তোলেন। অন্যদিকে যিনি এই দালাল বা গাইড হিসেবে যাচ্ছেন, তিনি তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আর দশজন হাজী বা আল্লাহর মেহমানের ওপর জুলুম করছেন। নিশ্চয়ই তারা জালিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এবারে আসা যাক পূর্ণ হজ্ব বিষয়ে।
কোন মুসলিম পূর্ণ হজ্ব করতে চাইলে বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুসারে তাকে প্রথমে Pre-registration বা প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে। এতে তার খরচ হয় ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা। যা সরকারের ফান্ডে জমা থাকে। এরপর তার সময় হলে সরকার যখন তাকে জানাবে, তখন তিনি Registration বা নিবন্ধন করবেন। Registration বা নিবন্ধন খরচ এক লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ টাকা। Registration বা নিবন্ধন এর কাজ সম্পন্ন হবার পর যখন তার সিরিয়াল আসবে তাকে ফোন করে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে হাব বা হজ্ব এজেন্সিদের যৌথ আলোচনা-পর্যালোচনা করার পর যে প্যাকেজ ঘোষণা হয়, বা বিভিন্ন প্যাকেজ অনুযায়ী যে টাকা নির্ধারণ হয়, সেই টাকায় হাজী সাহেবের অধিকার-দায়-দায়িত্ব বুঝে নিয়ে হজ্ব করতে যেতে পারেন। এখানেও হাজী সাহেবের অতিরিক্ত কোন দালাল বা গাইড প্রয়োজন হয় না। ট্রাভেল এজেন্সি তার নিজ দায়িত্বেই এ সকল কাজ করিয়ে থাকে।
বিঃ দ্রঃ- ওমরাহ্/পূর্ণ হজ্ব যে কোন ক্ষেত্রেরই আর্থিক লেনদেন অবশ্যই লাইসেন্স নাম্বারের বিপরীতে ব্যাংকের মাধ্যমে করা উচিত। নচেৎ প্রতারিত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।
আল্ল-হ্ আমাদের হজ্ব ও ওমরার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়া ও প্রতারিত করা থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন
মুর্ত্তাজা খান
২২/০৩/২০২২