12/10/2017
কুমিল্লা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বা কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র
বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি।স্থানীয় লোকদের কাছে এটা ইংরেজদের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। ১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মায়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম, এবং বাংলাদেশের ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধিক্ষেত্রে আসেন।
ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। এই সমাধিক্ষেত্রটি Commonwealth War Graves Commission (CWGC) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করেন। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থণাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ময়নামতি তখনকার সময়ে একটি ক্ষুদ্র গ্রাম হলেও তৎকালিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটিতে পরিনত হয়। এখানে স্থাপিত হয় বড় একটি হাসপাতাল। এছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমান ঘাঁটি, আর ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হবার আগে চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর। এই সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৮টি কবর আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হলেন সেসময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে এর মধ্যে রয়েছেন ৩জন নাবিক, ৫৬৭জন সৈনিক এবং ১৬৬জন বৈমানিক,সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল।এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩৭ সৈন্য। এখানে সমাধির সংখ্যা ছিল ৭৩৮টি। ১৯৬২ সালে এ সমাধিস্থল থেকে একজন সৈনিকের আত্মীয়স্বজন তার দেহাবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। বর্তমানে এ সমাধি সংখ্যা ৭৩৭টি। এরমধ্যে ১৪জন সৈনিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখানে যাদের সমাহিত করা হয়েছে তাদের লাশ আনা হয়েছে ঢাকা, ফরিদপুর, সৈয়দপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে।এ সমাধি ক্ষেত্রে রয়েছে- বৃটেনের ৩৫০ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, ভারতের ১৭২ জন, পূর্ব আাফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, বার্মার ১ জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, পোলান্ডের ১ জন এবং জাপানের ২৪ জনের কবর। কুমিল্লা কমনওয়েলথ সমাধির পাহাড়ের প্রথম ধাপে রয়েছে ইউরোপিয়ানদের কবর। উপরের ধাপে রয়েছে এ উপমহাদেশের যোদ্ধাদের কবর। সমাধিগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ১৪টি বাদে প্রত্যেক সমাধিতে লেখা আছে নিহত সৈনিকের নাম, বয়স, পদবী, নিহত হবার তারিখ ও ঠিকানা। সমাধিক্ষেত্রের আগে সেখানে ছিল বৌদ্ধ বিহার মন্দির। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে শ্বেত পাথরের একটি ক্রশ। বর্গাকার এ সমাধি ক্ষেত্রের প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ ফুট। সমাধি ক্ষেত্রের মোট আয়তন সাড়ে ৪ একর। সমাধি ক্ষেত্রের চারদিক বাউন্ডারি দেওয়া।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকার কমলাপুর ও আরামবাগ থেকে ১০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায় কুমিল্লার উদ্দেশে, এশিয়া এয়ারকন, ও রয়েল উপকূল, ভাড়া নিবে ২৫০ টাকা, এছাড়া সায়দাবাদ থেকেও কিছু লোকাল গাড়ি ছাড়ে। নামতে হবে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট. ওখান থেকে রিকশায় করে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বা কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র যেতে লাগে ১৫ মিনিট, ভাড়া নিবে ৩০-৪০ টাকা।
কুমিল্লা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার। টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেবের বাজারের মাঝামাঝি কুমিল্লা-সিলেট সড়কের বাম পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাড়ে চার একর পাহাড়ি ভূমি জুড়ে বাংলাদেশে অবস্থিত দ্বিতীয় এ কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র। কুমিল্লা শহর হতে বাস অথবা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। ঈদের দুদিন ছাড়া বছরের প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ সমাধিস্থল সর্ব সাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকে। এ সমাধি ক্ষেত্র দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত দর্শনার্থী ভিড় করে। প্রতিবছরের ৫ নভেম্বর কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা এই সিমেট্রিতে উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
টিম দূরবীন ।