05/03/2024
সাম্প্রতিক অনেকে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আরেহ, বাহ! শাব্বাস! এই হলো গিয়ে টাকার তেজ! গেটস, বার্গ, খান সব এক প্লেটে!
এই মুগ্ধতা শেষে পোস্ট হচ্ছে, টাকা থাকলে সব করা যায়! জীবনে প্রচুর টাকা লাগবে! আল্লাহ, দুই বস্তুা টেকা দাও! টাকাই টাকা! ইত্যাদি। ডলার বা টাকার পুজো করাকে গ্লোরিফাই করা! যেভাবেই হোক, চাই আরো টাকা, আরো ডলার!
তার দু দিন আগেই, বান্দা নাখোশ! কেন? কারণ, বেইলি রোডে ৪৬টা লাশ পড়ে গেছে, পুরো ঢাকা শহর মৃত্যুকূপ হয়ে আছে। পৃথিবীর সবথেকে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয় এখানকার মানুষ। পৃথিবীর সবথেকে ব্যায়বহুল শহর এটা। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি এরিয়ায় রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরাঁর যে ঝলকানি! অসাধারণ!
কিন্তু রাজউকের উপর ব্যাপক ক্ষোভ, সরকারের উপর আরো বেশি ক্ষোভ! সরকারের যারা দায়িত্বে তাঁরা তো প্রচন্ড খারাপ! থানা-পুলিশ, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় সব শালা হারামজাদা! এদের অনিয়মের কারণেই তো এতসব দুর্ঘটনা। সিলগালা করো, তালা মারো! মহা বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত!
খেয়াল করে দেখবেন, এরাই কিন্তু শুরুতে টাকা আর ডলারের উপাসনা করছিলো। এখন যাদের উপর ক্ষোভ, এরাও সবাই কিন্তু টাকা ওয়ালা। রেস্টুরেন্টের মালিক তো আর আমার মতো গরিব কেউ নয়। সে ওই আগের জিনিস টাকা দিয়েই সরকার, কতৃপক্ষ, মন্ত্রী, আমলা সব পক্ষরে ম্যানেজ করে চুপ করিয়ে দিছিলো এতদিন। এরা সবাই কিন্তু টাকাই কামাচ্ছিলো, টাকা থেকে ডলার হচ্ছিলো! ৪৬ সহ চকবাজার, সবখানে যদি ঘটনার শুরুতে যান, দেখবেন যে কিছু ব্যাংক নোট, নতুবা ডলার।
আবার যার যতবেশি ডলার আছে তারে আমার তত বেশি পছন্দ। তার সাথে দুটা ফটো তুলতে পারলে ১০ বছর সেগুলা দিয়েই কাটিয়ে দিই আমি। একবারও প্রশ্ন করি না, "কোথা থেকে তুমি এলে? কিভাবে এলে?"
প্রশ্ন করতে না পারি, তাকে প্রমোট করা থেকেই নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারি না। এরপর আবার প্রশ্ন তুলি নিলজ্জের মতো! দেশটা রসাতলে গেলো! হাঁক ডাকি, গেলো গেলো! সব শালা ঘুষখোর, সুদখোর! রাজউক, পুলিশ, মন্ত্রী, কতৃপক্ষ! এদের সবার প্রতি মনে কত কষ্ট, আহা! আবার কেউ সেইম পজিশনে গেলে, শুভকামনা ভাই, যেভাবেই পারেন টাকা কামান। যে ভাই কম কামায়, সে ভাইকে আর শুভকামনা নয়, যার ট্রান্সফার হয়ে যায়, অনুদান কম দেয় তাকে আর ভালো লাগে না। অথচ ১ম টাকাওয়ালারা কিন্তু তত খারাপ নয়, ডাবল স্ট্যান্ড বাজ নয় আমাদের মত। ওরা জাস্ট একটা কাজে মনোনিবেশ করছে; টাকা কামানো।
যেটা আপনি আমি শুরুতে চাচ্ছিলাম, টাকা হলে তিন খানকে নাচাবো। আপনি জানেন? ওই খানরা যে টাকায় নাচছিল সে টাকায় বাংলাদেশের টাকাও ছিল? বিদ্যুৎ প্রকল্পে ওর কত বড় বিজনেস? বাংলার কত কোটি টাকা তার পকেটে ঢুকেছে কোনো আইডিয়া আছে? রক্তচোষা টাকার ঝনঝনানিতে আপনি লাভ রিয়েক্ট দিচ্ছেন। আবার ন্যাকা কান্না করে বলতেছেন, বেইলি রোডে আগুন কেন!
সবকিছুর পেছনে অবৈধভাবে এই টাকা কামানোই দায়ী। সেরকম কাউকে আপনি যেহেতু মন থেকে প্রত্যাখান করতে পারেন না তাই আপনিও সমান অংশীদার। দোষ টাকার নয়, দোষ তরিকার। উসমান (র.), আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (র.)দের টাকা আরো বেশি ছিল, বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন, তবে আপনি যেভাবে হতে চাচ্ছেন, সেভাবে নয়।
যেদিন কেউ বিসিএস ক্যাডার হওয়া মাত্রই আমরা তাকে অন্তঃস্থল থেকে সালাম করা শুরু না করে তার স্টাইল দেখা সাপেক্ষে সালাম করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবো সেদিনই বেইলি রোড, চকবাজার, রানা প্লাজার জন্য কান্না সাজবে।
২৩শে শাবান, ১৪৪৫।