28/01/2025
মেরাজ অর্থ হলো ঊর্ধ্বগমন। লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রজনী উপমহাদেশে শবে মেরাজ হিসাবে আখ্যায়িত। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অলৌকিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মিরাজের ঘটনা ও ইতিহাস
হিজরতের পূর্বের কথা। এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন, চোখদুটো মুদে এসেছে। তবে হৃদয়-মানস ছিল জাগ্রত। এরই মাঝে আগমন করলেন হযরত জিবরাঈল (আ.)। তিনি নবীজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন জমজমের নিকট। একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনা হলো। তা ছিল ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ; তাতে জমজমের পানি। জিবরাঈল (আ.) নবীজির বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করলেন। বের করে আনলেন নবীজির হৃদয়। যমযমের পানি দিয়ে তা ধুয়ে আবার প্রতিস্থাপন করে দিলেন জায়গামত। ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ করে দেওয়া হলো নবীজির কলব।এরপর আনা হলো নবীজিকে বহন করার জন্য সওয়ারী। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়া থেকে ছোট। নাম বুরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে।
বাইতুল মুকাদ্দাসে মহানবী (সা.)
এভাবে নবীজি (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে গেলেন বাইতুল মুকাদ্দাসে। বুরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাঈল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের অপরটি শরাবের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আ.) বললেন, আপনি (দ্বীনের) স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন।
নবীজি মদের পেয়ালা নেওয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিবরীল (আ.) বলেন, আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৪)
নবীজি যখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসমানে
এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানেও দরজা খুলতে প্রথম আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। এরপর নবীজিকে ইস্তেকবাল করা হলো। নবীজি সেখানে দেখতে পেলেন দুই খালাত ভাই হযরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সাথে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজিকে স্বাগত জানালেন- মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তারা নবীজির জন্য দোয়া করলেন।
এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেও দুই আসমানের মতো জিজ্ঞাসাবাদ হলো এবং নবীজিকে স্বাগত জানানো হলো। সেখানে গিয়ে দেখলেন হযরত ইউসুফ (আ.)। হযরত ইউসুফের সাথে নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। নবীজি (সা.) বলেন, হযরত ইউসুফকে যেন দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য ঢেলে দেওয়া হয়েছে!
চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ও শেষ আসমানে নবীজি
এরপর চললেন চতুর্থ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। স্বাগত-সম্মান জানানো হলো। সেখানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হযরত ইদরীস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন।
এরপর চললেন পঞ্চম আসমানের দিকে। সেখানে হযরত হারূন (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো।
এরপর চললেন ষষ্ঠ আসমানের দিকে। সেখানেও পূর্বের পর্বগুলোর মতো জিজ্ঞাসা করা হলো। নবীজিকে অভিনন্দন জানানো হলো। সেখানে দেখা হলো হযরত মূসা আ.-এর সাথে। হযরত মূসা আ. নবীজিকে খুব ইস্তেকবাল করলেন।
বাইতুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহায় নবীজি
এরপর নবীজি সপ্তম আসমানের দিকে উঠতে থাকেন। সেখানে দেখা হলো হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে। জিবরাঈল আ. পরিচয় করিয়ে দিলেন- ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে সালাম বিনিময় করলেন।
নবীজি বলেন, হযরত ইবরাহীম আ. তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে ছিলেন। বাইতুল মামুর, যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসে। এরপর এই সত্তর হাজার আর ফিরে আসে না। এভাবে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে ফেরেশতাদের নতুন নতুন কাফেলা আসতে থাকে।
এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহার দিকে। সেই কুল বৃক্ষের একেকটি পাতা হাতির কানের মতো। আর একেকটি ফল মটকার মতো বড় বড়। যখন ওটাকে আল্লাহর বিধান আচ্ছন্ন করে নিল তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। সৃষ্টির কারো সাধ্য নেই তার সৌন্দর্যের বিবরণ দেবার। জিবরাঈল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদীদুটি কোনগুলো? জিবরাঈল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো নীল নদ ও ফুরাত নদী।