10/09/2024
🔰ওমরাহ কাদের জন্য, এর ফজিলত ও কবুল হওয়ার শর্ত
🔰‘হজ’ আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ অভিপ্রায় বা সংকল্প করা, কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করা। ওমরাহ অর্থ পরিদর্শন। হজের সময় ব্যতীত বছরের যেকোনো দিন ওমরাহ পালন করা যায়।
🔰ওমরাহর ফজিলত
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ: أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلا الجَنَّةُ». متفق عليه.
১) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,এক উমরাহ অন্য উমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর কাফফারা। আর মাবরুর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। ( বুখারী ও মুসলিম )
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «تَابعُوا بَيْنَ الحَـجِّ وَالعُمْرَةِ فَإِنَّـهُـمَا يَــنْــفــِيَــانِ الــفَــقْــرَ وَالــذنــُوبَ كَمَا يــَنْــفِــي الــكِــيــرُ خــَبــَث الــحَــدِيــدِ». أخرجه النسائي.
২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সে ভাবে মুছে ফেলে, যে ভাবে কর্মকারের হাওয়া দেয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী- হাদীস সহীহ)
ওমরাহ পালনের অসংখ্য ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহর পর আরেক ওমরাহ, উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহের কাফফারা। আর জান্নাতই হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান।’ সহিহ মুসলিম : ১৩৪৯
🔰ওমরাহ ওয়াজিব না সুন্নত?
ওমরাহ ওয়াজিব না সুন্নত তা নিয়ে ফিকহের ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, ওমরাহ ওয়াজিব। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক ও আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ওমরাহ পালন করা সুন্নত। কারণ হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ওমরাহ কি ওয়াজিব?’ তিনি বলেছেন, ‘না, ওমরাহ করা তোমার জন্য উত্তম।’ সুনানে দারাকুতনি : ২৭২৪
🔰ওমরাহ কাদের জন্য
হজের মতো ওমরাহর জন্যও সুস্থ, শারীরিকভাবে সক্ষম এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্যও থাকতে হবে, তাহলেই ওমরাহ করা সুন্নত। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার মর্ম হলো, সফরের সময়ে নিজের, পরিবারের ও অধীন ব্যক্তিদের সব ধরনের খরচ নিশ্চিত করার পর ওমরাহ পালনের মতো অর্থ জমা থাকা।
হজ যেমন জীবনে একবার আদায় করা ফরজ, তেমনি ওমরাহও জীবনে অন্তত একবার আদায় করা সুন্নত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একাধিক ওমরাহ করতে অসুবিধা নেই। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় হজ বাদ দিয়ে বারবার ওমরাহ করা অনুচিত। অবশ্য ওমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এ কথা সঠিক নয়। কারণ হজ ও ওমরাহর খরচে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আর ওমরাহ হজের সফরে যেমন করা যায়, আলাদাভাবেও করা যায়। নারীদের জন্য মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকার শর্ত রয়েছে।
🔰ওমরাহ কবুল হওয়ার শর্ত
ওমরাহ একটি ইবাদত। তাই অন্যান্য ইবাদতের মতো এটিও ইখলাস ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। ওমরাহতে ইখলাসের মর্ম হলো, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্যের উদ্দেশ্যে ওমরাহ সম্পাদন করা; কোনো ধরনের পার্থিব উদ্দেশ্য এখানে গ্রহণযোগ্য নয়; বিশেষ করে প্রচারপ্রিয়তা ইবাদতের সওয়াব নষ্ট করে দেয়। আর নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণের মর্ম হলো, তিনি যেভাবে ওমরাহ পালন করেছেন, সাহাবিদের শিখিয়েছেন এবং সম্মতি দিয়েছেন, সেভাবেই তা পালন করা।
🔰হজ্জ বা উমরা কবুলের জন্যও উপরে উল্লেখিত শর্তের সাথে আরো কিছু শর্ত রয়েছে যেমন-
১। হালাল মাল বা অর্থ দিয়ে হজ্জ করা-
আল্লাহর ইবাদাত করবে অথচ তার উপার্জন হালাল হবে না, এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। অতএব হালাল উপার্জন ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। আবূ হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?। ইমাম মুসলিম: ২৩৯৩।
২। যাবতীয় মন্দ কাজ ও ঝগড়া থেকে দূরে থাকা ও আল্লাহর ভয় ও মক্কার ফযিলত অন্তরে জাগ্রত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া।
মহান আল্লাহ বলেছেন
হজ্জের মাসগুলো সবার জানা। যে ব্যক্তি এই নির্দিষ্ট মাসগুলোতে হজ্জ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজ্জের সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ, দুষ্কর্ম ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা করবে আল্লাহ তা জানেন। হজ্জ সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। সূরা আল বাকারা:১৯৭
যে ব্যক্তি মক্কার যমীনে সীমালংঘন করে কোন অন্যায় কাজ করতে ইচ্ছা পোষন করবে,আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করাব। সূরা হজ্জ:২৫
৩। হজ্জ উমরাহ বিনষ্টকারী কাজ সমূহ থেকে দূরে থাকা