Ishwardi Travel Group

Ishwardi Travel Group Tour and Travel Group
(1)

29/01/2023
প্রাচীন অনুরাধাপুরা (সিংহল বা অধুনা শ্রীলংকা) নামক রাজ্য শাসন করত ধাতুসেনা নামের এক রাজা। তাঁর ছিল তিন সন্তান। দুই ছেলে ...
03/11/2022

প্রাচীন অনুরাধাপুরা (সিংহল বা অধুনা শ্রীলংকা) নামক রাজ্য শাসন করত ধাতুসেনা নামের এক রাজা। তাঁর ছিল তিন সন্তান। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম ক্যশপ, ছোট ছেলের নাম মোজ্ঞালানা। বয়সের বিচারে ক্যশপ সিংহাসনের দাবীদার হলেও, রাজ হারেমের রক্ষিতার গর্ভে জন্ম হয়েছিল বলে তাঁকে স্বীকৃতি না দিয়ে রাজ মাতার গর্ভে জন্মে নেয়া ছোট ছেলে মোজ্ঞালানাকে যুবরাজ হিসেবে ঘোষনা করে ধাতুসেনা। অন্যদিকে ক্যশপকে রাজ কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ক্যশপকে ছোটবেলা থেকে এভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে। সে খুশি খুশি রাজার আদেশে রাজসভার কাজ দেখভাল করতে লাগল। সমস্যা শুরু হল ধাতুসেনা যখন তাঁর মেয়ের বিয়ে ঠিক করল।

আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগের কথা। মহা ধুমধাম করে সিংহলে মৌর্য্য বংশের স্থপতি মহান রাজা ধাতুসেনার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয় তাঁরই আপন বোনের ছেলে মিগারার সাথে। যে ছিল অনুরাধাপুরা রাজ্যের সেনাবাহিনীর বীর জেনারেল, এক দুর্ধষ ক্ষত্রিয়। ধাতুসেনা তাঁর মেয়েকে অন্ধের মত ভালোবাসত। মেয়ের বিয়ের পর তাঁর শাশুড়ির সাথে কোন এক বিষয় নিয়ে একদিন ঝগড়া লাগল। রাজকন্যা এসে তার বাবার কাছে বিচার দিলে ধাতুসেনা তাঁর বোন ও মেয়ের শাশুড়িকে দরবারে তলব করে। ভালো মন্দ কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে ধাতুসেনা তার বোনের শিরচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে দেয়। ভরা মজলিসে তার জামাতা মিগারার চোখের সামনে রাজার হুকুম তামিল করা হয়।

মিগারার মনে তখন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। রাগের মাথায় উলটা পালটা কিছু না করে ধূর্ত মিগারা রাজনীতির মাধ্যমে রাজাকে ঘায়েল করার সিদ্ধান্ত নিল। এরপর শুরু হল তাঁর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, গেইম অফ থ্রোনস।

কিছুদিনের মধ্যেই মিগারা রক্ষিতা পুত্র ক্যশপের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলল। মদ পান করিয়ে ক্যশপের মাথায় রাজ জামাতা সিংহাসনের ভুত ঢুকিয়ে দিল। ‘তুমিই যোগ্য, তুমিই রাজা, সিংহাসন তোমার অধিকার’- দুলাভাইয়ের এমন এহেন কানপড়া তথা মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে ক্যশপ তাঁর পিতাকে একদিন রাজবাগানে জ্যান্ত পুঁতে হত্যা করে রাজ সিংহাসন দখন করে নেয়। প্রাণের ভয়ে ছোট ভাই মোজ্ঞালানা ভারতে পালিয়ে যায়।

অন্যায়ভাবে পিতাকে হত্যা করে রাজ্য দখল করার পর ক্যশপের মনে ভয় ঢুকে গেল। প্রতি রাতে তাঁর পিতার ভুত দেখতে লাগল। সেই সাথে সে আতঙ্কিত থাকত যে এই বুঝি তার ছোটভাই ভারতীয় তামিল বা পান্ডবদের নিয়ে হামলা করতে আসছে। নিজেকে আরও সুরক্ষিত করতে সে তার রাজ প্রাসাদ নতুন করে গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ জারি করল। রাজ্যের সব প্রতিভাবান স্থপতি, শিল্পী ও রাজ করিগরদের সন্নিবেশ ঘটানো হল। প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞান প্রজ্ঞা কলা কৌশলের এক অভুতপূর্ব ক্যামেস্ট্রির পর তৈরি হল, ‘সিগিরিয়া’- প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন, একটা ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল! বর্তমানে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

হাজার ফুট উঁচু বিশালকায় এক পাথর কেউ যেন সমতলে বসিয়ে দিয়েছে। এই পাথরের উপরেই তৈরি করা হয়েছিল রাজা ক্যশপের নতুন প্রাসাদ ও দুর্গ, সিগিরিয়া বাংলা করলে এর অর্থ দাঁড়ায় সিংহ পাথর। বিশালকায় এই পাথরকে ঘিরে বানানো হয়েছিল বিশাল সব পরিখা। পরিখা পেড়িয়ে পৌঁছানো যেত পাথরের গোড়ায়। এরপর কারিগরেরা পাথর খোদাই করে বানিয়েছে একের পর এক সিঁড়ি। হাজার ফিট সিঁড়ির পর বানানো হয়েছিল বিশালকায় এক সিংহ তোড়ন। সেই তোরণের নিচের অংশ সিংহের পাঞ্জা দুটি আজও টিকে আছে। এরপর রাজ পরিবারদের জন্য মনোরম প্রাসাদ, প্রমোদের জন্য উদ্যান, ফল ফলাদির বাগান, আয়নার মত চকচকে পাথরের দেয়াল, দেয়ালে দেয়ালে আঁকা অনিন্দ্য সুন্দর অপ্সরাদের পেইন্টিং...

ভাবতে যতটা সহজ, আদতে কিন্তু কাজটা অনেক কঠিন ছিল। পাথরের পাহাড়ের উপর পানির ব্যবস্থা কি হবে? পানির ব্যবস্থা ছাড়া দুর্গের তো প্রশ্নই উঠে না। প্রাচীন স্থপতিরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরী করল সারফেস/ সাব সারসেফ হাইড্রলিক সিস্টেম। রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ও হারনেসের জন্য বানানো হল একুয়াডাক্ট ও একুইফার। পুরো দুই হ্যাক্টর পাথর জুড়ে বানানো হল ওয়াটার চ্যানেল, কাটা হল বিশালকায় পুকুর ও অনিন্দ্য সুন্দর ফোয়ারা। পানির চ্যানেলগুলো ঘিরে বানানো হল গুচ্ছ বন ও উদ্যান। এ ইডেন অন দ্যা রক।

রাজা কশ্যপ খুব বেশিদিন তাঁর এই ইনভিন্সিবল ফোর্ট্রেস ভোগ করতে পারেনি। ৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে পালিয়ে যাওয়া মোজ্ঞালানা তাঁর পিতৃভূমি অনুরাধাপুরায় ফিরে আসে ও সৎ ভাই ক্যশপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে বসে। পুরাণে পাওয়া যায়, সম্মুখ যুদ্ধে এডভান্টেজ নেয়ার জন্য হাতির উপর বসে থাকা রাজা ক্যশপ একটু ঘুরে আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রাজার হাতি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হঠাৎ বামে চলে যাচ্ছে দেখে কশ্যপের সৈন্য বাহিনী ভেবে বসে রাজা বোধ হয় যুদ্ধ থেকে পালাচ্ছে। এহেন ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে পুরো সৈন্য বাহিনী রাজাকে রেখে আত্মসমার্পন করে বসে। রাগে দুঃখে ক্ষোভে রাজা ক্যশপ ছুড়ি বের করে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করে। মোজ্ঞালানা সিংহাসনে বসে অনুরাধাপুরার রাজধানী আবার আগের জায়গায় নিয়ে যান ও সিগিরিয়াকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আশ্রমে পরিণত করেন।

এরপর ধীরে ধীরে একসময় সিগিরিয়া পরিত্যক্ত নগরী হয়ে যায়। বিশালকায় বন পুরো অঞ্চল ঢেকে ফেলে। লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যায় প্রাচীন এই নগরী। এর বহু বছর পর ১৮৩১ সালে ব্রিটিশ এক্সপ্লোরার জোনাথান ফোর্বস খুঁজে বের করেন শ্রীলঙ্কার এই অষ্টম আশ্চর্য। সে এক ভিন্ন গল্প।

ছবি: @ collected

জাফলং, সিলেট
07/10/2022

জাফলং, সিলেট

সুন্দরবন ভ্রমণ আমরা মূলত যাব সুন্দরবন এর চাঁদপাঁই রেঞ্জের দক্ষিন চিলা গ্রামে। সেখানের বনের পাশে গড়ে ওঠা বাদাবন ইকো কটেজে...
07/10/2022

সুন্দরবন ভ্রমণ

আমরা মূলত যাব সুন্দরবন এর চাঁদপাঁই রেঞ্জের দক্ষিন চিলা গ্রামে। সেখানের বনের পাশে গড়ে ওঠা বাদাবন ইকো কটেজে আমাদের আপাতত ঘাটি। আর তাই মংলা পৌছেই আমাদের প্রথম কাজ পশুর নদী পাড়ি দেয়া। এ ক্ষেত্রে জন প্রতি ৫ টাকা নৌকা ভাড়া আর ১ টাকা ঘাটের টোল প্রদান করে নদী পার হলাম। যেতে হবে আরো পথ। তাই দামাদামি করে ২২০ টাকায় একটি অটো রিজার্ভ নিলাম। প্রায় ১২ কিলো পথ পাড়ি দিয়ে এবার আমাদের বৈদ্যমারী যাবার পালা, সেখানেই আছে বাদাবন এর ধার ঘেষা আমাদের কটেজ। সুন্দরবনকে এখানের স্থানীয়রা মূলত বাদাবন বলেই ডাকে। চিংড়ির ঘের ঘেরা গ্রামীন ব্যাপক ন্যাচারাল বিউটি গিলতে গিলতে আমাদের ছুটে চলা দক্ষিন চিলা পথে।

প্রায় ৩০ মিনিট পথ চলার পর অতঃপর আমরা এসে পৌছুলাম দক্ষিন চিলায়। বেশ গহীনে এই গ্রাম হলেও আধুনিক জীবন যাত্রায় অনেক কিছুর ছোঁয়া পাবেন এখানে। এখানে আছে বিদ্যুৎ আছে, আছে মোবাইলের ফোরজি নেটওয়ার্ক ।

ঘরে বসে সুন্দরবনের পাক-পাখালির ডাক। পায়ে হেঁটে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ। নিরাপত্তার সঙ্গে নিশিযাপন। মানসম্মত খাবার গ্রহণ। সেই সাথে স্বল্প খরচে লোকালয় থেকে খুব কাছে ভ্রমণ করেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন উপভোগের সুযোগ। এই সব কিছুই এক সাথে পেতেই মূলত আমরা ছুটে এসেছি এই বাদাবনে। স্থানীয় গ্রামীন পিছিয়ে পড়া জনগনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পর্যটন বিকাশের স্বার্থে স্থানীয় কিছু এনজিও এর সহায়তায় কমিউনিটি ইকো ট্যুরিজম এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে চাঁদপাঁই ফরেস্ট রেঞ্জের আওয়ায় গড়ে তোলা হয়েছিল এই অসাধারণ বাদাবন ইকো কটেজটি।

কটেজে প্রবেশ পথের শুরুতেই পড়বে পুকুর আর তার পাড়ে রিসিপশন ও ডাইনিং এরিয়া। পুকুরের উপরেও রয়েছে বসে আড্ডা দেবার মতন সুন্দর ব্যবস্থা। যদি চান তবে মাছ ও মারার সুযোগ আছে পুকুরে কিংবা চিংড়ি ঘেরে। প্রথমে ওয়েলকাম ড্রিংক্স হিসেবে লেবুর শরবত প্রদান করা হলো আমাদের। কটেজের গাছের টাটকা লেবু দিয়ে তৈরি সাথে সুন্দর উপস্থাপনা। শুরুতেই মন ভাল করে দেবে আপনাদের। এদের রিসিপশন ও ডাইনিং রুমটির ও কিছু বিশেষত্ব আছে। এখানে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো সুন্দরী গাছের কংকাল দিয়েই তৈরি তাদের বসার সোফা। সেই সাথে প্রায় শত বর্ষী কিছু টালি ব্যবহার করা হয়েছে ছাদ তৈরীতে।

এবার পালা আমাদের রুম বুঝে নেয়ার। টিম ঘুরুঞ্চি আমাদের ঘুরাঘুরি হয় খানিকটা রিল্যাক্স এ। এবারো তার ব্যাতিক্রম নয়। প্রায় পুরো কটেজটিই আমাদের দখলে এবার। যদিও আমরা মাত্র ৬ জন এ যাত্রায় বেরিয়েছি এই বাংলার রুপ গিলতে।

চিংড়ি ঘেরের উপর, সম্পূর্ণ ইকো ফ্রেন্ডলি ইকুইপমেন্ট দিয়েই বানানো দুটো কটেজ। যার একটির নাম শুশুক, আরেকটা ইরাবতী। মূলত দুটো কটেজের নামই ডলফিনের দুটি প্রজাতীর নামে। উপরে গোলপাতার ছাদ৷ তার ভেতরে বাঁশ, বেত আর কাঠ দিয়ে তৈরি এই অসাধারণ স্থাপনা। প্রতিটি কটেজেই আছে দুটো করে ডাবল ফ্লোরিং বেড। আর পর্যাপ্ত ফ্যান। সেই সাথে আছে পর্যাপ্ত চার্জিং এত ব্যবস্থা। সেই সাথে আছে হাই কমোড ও লো কমোড উভয় ব্যবস্থা যুক্ত দুটো ওয়াশরুম।

এসেই ফ্রেস হতেই, চলে আসলো আমাদের জন্য দেশি স্থানীয় ফল। কটেজের গাছের আমড়া মাখানো। যার উপস্থাপন ও আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

সব থেকে আকর্ষণীয় এই কটেজ গুলো রুমের বাইরের বারান্দায় থাকা আড্ডা দেবার সিটিং এরিয়াটি। ফ্রেন্ডস বা ফ্যামিলি নিয়ে বসে ঘেরের সৌন্দর্য , কিংবা বিকালের সূর্যাস্ত অথবা রাতের তারাভরা আকাশ সকল কিছুই উপভোগ করতে পাবেন এখানে। সেই সাথে এখানে আপনার কটেজের সাথেই বাধা থাকে একটি নৌকা। ইচ্ছে হলেই বেরিয়ে পড়তে পারেন ঘেরে। চালাতে পারেন আনলিমিটেড নৌকা।

এ কটেজে এলে বনের আশপাশের সহজ-সরল মানুষের জীবন-যাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন যেমন, তেমনি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, বিশ্বাস, ধর্ম, প্রথা জানতে পারবেন। কিভাবে সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা বনরক্ষায় কাজ করছে, তা দেখার সাথে সাথে, রাত্রে তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করতে পারবেন এখানে।

ইতিমধ্যে আমাদের দুপুরের খাবারের ডাক পড়েছে, এ যাত্রায় দুপুরের খাবারের আয়োজন হিসেবে আছে ঘেরের চিংড়ি, আছে দেশি মুরগির মাংস, আলু ভর্তা, ভারি ডাল, স্থানীয় বিষ মুক্ত অর্গানিক সবজি, সাথে স্থানীয় অসাধারণ স্বাদের মিস্টি দই। নানান সময় নানান রিসোর্ট বা কটেজে দল বেধে ঘুরলেই খানিকটা ব্যাতিক্রম এ যাত্রায়। এই প্রথম গ্রুপের প্রতিটা সদস্যই মুগ্ধ খাবারের স্বাদে। খাবার খেয়ে এবার খানিক বিশ্রাম নেবার পালা। এখানে ঘেরের সাথে লাগোয়া আছে হ্যামক, আছে বিচ চেয়ার। সেগুলোতে বসে বা শুইয়ে কাটিয়ে দেয়া সম্ভব পুরো একটা বেলা। কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম। কারন বিকেল হলেই বেড়িয়ে পড়বো ক্যানেল ক্রুজিং এ।

বিকেল ৫ টা ছুই ছুই, ছোট দিনের বেলা এখন তাই বেড়িয়ে পরলাম লিটন ভাই সাথে আমরা। মোঃ লিটন জমাদ্দার ভাইয়ের মূলত স্বপ্নের প্রজেক্ট এই বাদাবন ইকো কটেজ। তিনি একজন প্রশিক্ষিত ট্যুর গাইড ও। মাত্র ৫ মিনিট এর পথ হেটেই আমরা ঢুকে পরলাম সুন্দরবন এর চাঁদপাঁই রেঞ্জের বৈদ্যমারী বন বিট অফিসে। এখান থেকেই মূলত সংরক্ষিত বন এর শুরু। আমাদের ভাগ্য কিছুটা খারাপ কারন এখন চলছে ভাটা। জোয়ার আসবে গভীর রাতে। আর তাই নৌকা নিয়ে ক্যানেল ক্রুজিং আর কপালে নেই এই যাত্রায়। তাই পায়ে হেটেই ঢুকে পড়লাম আমরা সুন্দর এর ভেতরে সেই সাথে লিটন ভাই এর কাছ থেকে শুনতে থাকলাম বাঘ নিয়ে তাদের নানান বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা। যদি চান সেগুলো শুনতে বিস্তারিত সব দেখতে তবে Biskut Pagla ইউটিউব চ্যানেলের ম্যানগ্রোভে মাতামাতি সিরিজের ২য় পর্ব দেখতে ভুলবেন না। বন এর খানিক ভেতরে ঢুকতেই প্রথমেই দেখা পেলাম এক বন বিড়ালের পায়ের ছাপ যা পেরিয়ে একটু সামনেই একটি বট গাছ, এই গাছের একটা বিশেষত্ব আছে, এই গাছের গোড়াতে মুসলিম মৌয়াল বা বাউয়ালরা কালু গাজীর নামে সিন্নি মানত করে।

আধ্যাত্মিক কালু গাজীর প্রসঙ্গ যখন উঠে তখন সুন্দরবনের মানুষ জানায় তারা কালু গাজীকে সাধক ও দরবেশ মনে করে এবং দাবী করে যে তিনি বনে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে পথ দেখিয়ে লোকালয়ে নিয়ে আসতেন, বাঘের মুখ থেকে বাঁচাতেন, বন্য শুকরের কবল থেকে উদ্ধার করতেন। তারা এটাও বলে, তাকে চাইলেই দেখা যায় না, তার ঘর বাড়ী কেউ দেখেনি তবে বিপদে পড়া মানুষকে তিনি উদ্ধার করতেন। সাত আট বছর আগে চার যুবক এক বাঘের কবলে পরে, বাঘ তাদের উপর ঝাপিয়ে পরার ঠিক আগে কোথা থেকে যেন কালু গাজী এসে হাজির হন এবং যুবকদের বলেন 'আমার পেছনে দাড়া', এরপর তিনি এক অপলকে তাকিয়ে থাকেন বাঘের চোখের দিকে, এক সময় বাঘ পিছু হটে যায়; তিনি তারপর যুবকদের লোকালয়ে পৌছিয়ে দেন কিন্তু যুবকরা তাকে ধন্যবাদ দেবার আগে সন্ধ্যা -আলোয় মিলিয়ে যান। তাকে বহুদিন দেখা যায় না তবে সন্ধ্যে নামার সময় বা বিশাল ঝড় উঠার আগে কাকে যেন এখনো দেখা যায় সেজদা দিচ্ছে; স্থানীয়রা ধারনা করে নেয় কালু গাজী নামাজ পরছেন।

কালু গাজীকে সুন্দরবন এর হিন্দু - মুসলিম উভয় সম্প্রদায় বিশ্বাস করে ও মেনে চলে। কালু গাজীর মতন হিন্দু সম্প্রদায় আরেকজনের পূজা করেন তিনি- বন বিবি। কালু গাজীর মানতের গাছ পেরিয়ে দল বল ছেড়ে কাঁদা মারিয়ে আমি আরো গহীনে ঢুকে পরলাম বন বিবির পূজা হবার গাছের সন্ধানে। খানিক ভিতরে মৃত প্রায় আরেক বট গাছ। আর সেই গাছের গোড়াতেই হয় মূলত বন বিবির পূজা।

বনবিবি হলেন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর দ্বারা পূজিত এক লৌকিক দেবী তথা পিরানি। উক্ত জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করে। বনবিবি, বনদেবী, বনদুর্গা, ব্যাঘ্রদেবী বা বণচণ্ডী নামেও পরিচিত। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের সুন্দরবন অঞ্চলেই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করেন।

ইতিহাস গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণরায়, বণিক ধোনাই ও মোনাই এবং গাজীর অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বনবিবি ছিলেন ইব্রাহিম (মতান্তরে বেরাহিম) নামে এক আরবের কন্যা। ইব্রাহিমের স্ত্রী গুলাল বিবি সতীনের প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যক্ত হলে সেখানেই বনবিবির জন্ম হয়। কথিত আছে, গুলাল বিবি মদিনা এবং ইব্রাহিম মক্কা হতে আগত ছিলেন।

সুন্দরবনের এই অঞ্চলে বনবিবিকে নিয়ে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে,

এক সওদাগরের দুই সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন। ছোটো বউয়ের চক্রান্তে সন্তানসম্ভবা বড়ো বউ গুলালবিবি সুন্দরবনে নির্বাসিতা হন। কয়েকদিন পর সেখানেই যমজ পুত্র-কন্যার জন্ম দিয়ে তার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশু দু'টির কান্না শুনে বনের বাঘ, কুমির, হরিণ, অজগর, বানর সবাই ছুটে আসে। তারাই দুই ভাইবোনকে লালনপালন করে বড়ো করে তোলে। ছেলেটি বড়ো হয়ে বাঘের রাজা এবং মেয়েটি বনবিবি নামে পরিচিত হয়। স্থানীয় বিশ্বাসে এই বনবিবি হলেন মানুষের রক্ষাকর্ত্রী। তারা মনে করেন, বনের বাওয়ালি-মৌয়ালেরা বাঘের মুখে পড়লে বনবিবির নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়ে আর সঙ্গে সঙ্গে বাঘও দৌড়ে পালিয়ে যায়। অদ্যাবধি স্থানীয় মানুষ বনে কাজে যাওয়ার আগে তাই বনবিবির পূজা করে।

প্রতি বছর মাঘ-ফাল্গুন মাস নাগাদ বনবিবির বাৎসরিক পূজা হয়। এই পূজায় ব্রাহ্মণেরা পৌরোহিত্য করেন না, করেন নিম্নবর্ণীয় হিন্দুরা। বনবিবির পূজায় নিরামিষ নৈবেদ্য নিবেদনের রীতি আছে, বলি হয় না। কখনও বা তাঁর নামে জীবন্ত মুরগি ছেড়ে দেওয়া হয়। দেবীর পূজায় মন্ত্রতন্ত্রের কোনও বিধি নেই, নামাজের কলমা পড়ে ভক্তদের জন্য ‘দোয়াদরিত মাঙা’ হয়। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে পূজা-হাজত দেন ও ‘দোয়াদরিত’ প্রার্থনা করেন। দুটি ভিন্ন ধর্ম যেন মিলেমিশে গেছে সুন্দরবন এর এসে বনবিবি ও কালু গাজীর মাঝেই।

চাঁদপাঁই রেঞ্জের এই এরিয়াতে বাঘের আনাগোনা একটু বেশিই। কাঁদা মারিয়ে আমরা পথ চলছি এমন সময় জানা গেল বৈদ্যমারীর টহল ফাঁড়ির দক্ষিনে তাজা বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে৷ পথ ঘুরে সাঁকো পেরিয়ে বনের কোল ঘেষা পথ ধরে ছুটলাম আমরা। খাল পেরিয়ে খানিক গহীনে ঢুকার মুখেই বাঘের পায়ের ছাপ। অভিজ্ঞ জনরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বললো এই বাঘের পায়ের ছাপ কয়েকঘন্টা আগের। কারন এখনও জোয়ার আসেনি। জোয়ার আসলে ছাপ মুছে যেত কিংবা একটা পলি অন্তত পড়তো ছাপের উপরে। কিন্তু এই ছাপে কোন পলি নেই। পায়ের ছাপ ধরে আরেকটু আগাতেই দেখি ছাপ চলে গেছে বনের আরো গহীনে। এই পথে প্রবেশ একদমি নিষেধ। তাই ফিরতী পথ ধরলাম। লিটন ভাই এর সাথে গল্প করতে করতে শুনছিলাম তার অভিজ্ঞতার কথা, নিজ চোখে বাঘ দেখা কিংবা বাঘে ধরা মানুষ এর বিভৎস লাশ উদ্ধার এর কথা। বৈদ্যমারির এই স্থানের পূর্বে সেই শরনখোলা রেঞ্জ আর দক্ষিনে চাঁদপাই রেঞ্জ সুন্দরবনের। ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা হতে চললো যখন তখন ফিরলাম আমরা কটেজে। ফ্রেস ট্রেস হয়েই দেখি সন্ধ্যার স্ন্যাকস হিসেবে হাজির গরম গরম পিঁয়াজু আর ধোঁয়া উঠা গরম চা। সুন্দর করে পরিবেশন করা যে খাবার স্বাদের সাথে সাথে রুপেও আপনাকে মুগ্ধ করবে। সন্ধ্যার অসাধারণ নীলচেলাল আকাশের নিচে ঘেরের ধারে সিটিং এরিয়াতে বসে চা খেতে খেতে হারিয়ে যাবেন অসাধারণ অনুভুতি মাঝে সেই গ্যারান্টি এ যাত্রায় আমি দিতে পারি।

সন্ধ্যার পর টিম ঘুরুঞ্চি আমরা আড্ডা গল্প গানে পার করলাম সেই সাথে করলাম মাছ ধরার বৃথা চেস্টা। কেউ কেউ আবার রাতের আধারেই নৌকা নিয়ে নেমে পড়লাম ঘেরে। অসাধারণ রাত অসাধারণ অনুভূতি। এদিকে শুরু হয়ে গেছে আমাদের বার-বি-কিউ এর আয়োজন। চিকেন সাথে সাথে স্থানীয় কাঁকড়া, পরাটা আর কোল্ড ড্রিংক্স এর আয়োজন ছিল ডিনারে। ডিনার করে পুকুরের উপর বসে চললো আমাদের আড্ডা। কখনো পুকুরের উপর কখনো হ্যামকে ঝুলে গান, কখনো বা কটেজের বারান্দায় বসে টিম ঘুরুঞ্চি আগের ট্রিপ গুলোর মজার মজার স্মৃতি চারন ও দুস্টামি। আর তাই করতে করতে হয়ে এলো গভীর রাত। এবার যে ঘুমাতে যাবার পালা। কারন উঠতে হবে অনেক সকালে, বেড়িয়ে পড়তে হবে সুন্দরবন এর আরো গহীনে হারিয়ে যাবার জন্য। চলবে.....

বাগেরহাট ভ্রমণ :ঘুরে ঘুরে ঘুরাঘুরি করতে করতে মাথায় চেপে বসলো হঠাৎ ম্যানগ্রোভ এর ভূত। আর সেই ভূত নামাতেই অনেকটা হঠাৎ করেই...
07/10/2022

বাগেরহাট ভ্রমণ :

ঘুরে ঘুরে ঘুরাঘুরি করতে করতে মাথায় চেপে বসলো হঠাৎ ম্যানগ্রোভ এর ভূত। আর সেই ভূত নামাতেই অনেকটা হঠাৎ করেই দলবল পাকিয়ে এক বৃহস্পতিবার রাতে চেপে বসলাম বাগেরহাটের বাসে। খ্যাতির বিড়ম্বনার মত অতি উন্নয়ন এরও এক মধুর বিড়ম্বনা আছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন দক্ষিণের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই সহজ যে, সায়েদাবাদ থেকে রাত ১২ টার বাস আমাদের কে নামিয়ে দিলো যখন বাগেরহাট তখন তার কেবল রাত ৩ টা পার। যদিও যাব আমরা ভিন্ন পথে সুন্দরবন কিন্তু তবুও বাগেরহাট না ঘুরেই সুন্দরবন যেতে ঠিক মন সায় দিচ্ছিল না। ফজরের আজানের পর ভোরের আলো ফুটতেই আমরা পথ ধরলাম বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদের।

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোকিটার দুরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাসে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত।

২০ টাকা টিকেট কেটেই ঢুকে পড়তে হবে মসজিদ কমপ্লেক্স এ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে কোন সময় নির্মাণ নির্মাণ করা হয়েছিলো সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে বোঝা যায়, এটি যে খান ই জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্পর্কে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শত শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদটি বহু বছর ধরে এবং বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এর পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে একটি।

মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেওয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীন এ মসজিদটিকে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage Sites) হিসাবে মর্যাদা দেয়। মসজিদটি বাগেরহাট শহরকে বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহরের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।

মসজিদটির পূর্ব দিকে দেওয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর তুলনায় বেশ বড়। উত্তর এবং দক্ষিণ দেওয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। আর মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনারও আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড এবং চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেবার ব্যবস্থাও ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।

মসজিদটির নাম ৬০ গম্বুজ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয় বরং গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি । ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেওয়ালের মাঝের দরজা এবং পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে। তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে।

🌼সিংগাইর মসজিদঃ
ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রায় তিনশ গজ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সিংগাইর মসজিদের অবস্থান। এই মসজিদের একটিমাত্র গম্বুজ রয়েছে। খান জাহান আলির নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী গম্বুজটি পুরু দেয়ালের উপর দণ্ডায়মান এবং এর র্শীষে রয়েছে বাঁকানো কার্নিশ। মসজিদটির প্রত্যেক বাহু বাইরের দিকে ৩৯ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট লম্বা। ইট নির্মিত মসজিদটির প্রাচীরগুলো প্রায় ৭ ফুট প্রশস্ত। মসজদিরে র্পূব দেয়ালে আছে প্রবেশের পথ। প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলংকৃত মিহরাব। তবে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং সুসজ্জিত। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন সিংগাইর বা সিংড়া মসজিদের নির্মাণকাল আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি।

সিংগাইর মসজিদ ঘুরেই এবার আমরা ধরলাম হযরত খান জাহান আলীর মাজারের পথ।

বাগেরহাট জেলা যে কয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সুপরিচিতি লাভ করেছে হযরত খান জাহান আলী (র:) তাদের মধ্যে অন্যতম। ভারতে জন্মগ্রহন করলেও তিনি বাংলাদেশের যশোর, বাগেরহাট অঞ্চলে আসেন ধর্ম প্রচার করতে। বাগেরহাটে নির্মাণ করেন স্বরণকালের বিখ্যাত মসজিদ ষাট গম্বুজ মসজিদ।

🌼 হযরত খান জাহান আলীর মাজারঃ
খাঞ্জেলী দীঘির উত্তর পাড়ে এক উচ্চ ভূমিতে তাঁর সমাধি সৌধ নির্মিত। সমাধি সৌধটি বর্গাকৃতি,এর আয়তন ৪২ফুট X৪২ ফুট এবং প্রাচীরের উচ্চতা ২৫ ফুট,এর ছাদে একটি গম্বুজ আছে। সমাধি সৌধের ভিতর একটি প্রস্তর নির্মিত বেদিতে হযরত খানজাহান (রঃ)এর মাজার অবস্থিত । দরগাহ বা সমাধি সৌধের স্থাপত্য শিল্প অনেকটা ষাটগুম্বজের ন্যায়। শিলালিপিতে মৃত্যু তারিখ,দাফন তারিখ ছাড়াও আল্লার নাম,কোরআন শরিফের কয়েকটি সূরা এবং তাঁর উপর আল্লার শান্তি বর্ষিত হোক ইত্যাদি লিপিবদ্ধ আছে।

প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত তাঁর রুহানী দোয়া লাভের আশায় মাজার জিয়ারত করতে আসেন এখানে। এছাড়া প্রতি বছর ২৫ অগ্রহায়ণ এ মহান সাধকের মাজার প্রাঙ্গনে বার্ষিক ওরশ মোবারক এবং চৈত্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে এক বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

🌼খাঞ্জেলী দীঘিঃ
হযরত খান জাহান আলী (রহঃ) মাজারের দক্ষিণ দিকে আয়তনে প্রায় ২০০ বিঘা জমি জুড়ে খাঞ্জেলী দীঘি অবস্থিত। হজরত খান জাহান আলী (রহঃ) কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে কয়েকটি কুমির এই দিঘিতে ছেড়েছিলেন । ‘কালা পাহাড়’ এবং ‘ধলা পাহাড়’ নামে দুটি বিশাল সাইজের কুমির, যেগুলো পরে মারা যায়। পরর্বতীকালে কিছু মিঠা পানির কুমির দীঘিতে ছাড়া হয়। মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগত লোক জন দীঘির এ কুমিরগুলোকে হাঁস, মুরগি, ভেড়া,খাসিসহ নানা ধরনের মানতের পশু উৎর্সগ করেন। কালা পাহাড় মারা যাওয়ায় ষাটগম্বুজ মসজিদের জাদুঘরে মমি করে রাখা হয়েছে। দীঘির প্রধান ঘাটটি প্রশস্ত ও সুন্দর। মহিলাদের জন্য আলাদা ঘাট আছে। এ দীঘির পানি সুপেয়। এই দিঘিকে ঠাকুর দিঘি বলে ডাকা হয়।

খাঞ্জেলী দীঘির নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন বুদ্ধ ঠাকুরের মুর্তি প্রাপ্তির জন্য এর নাম হয় “ ঠাকুর দীঘি”। অন্য মতে খানজাহানকে দেশীয় হিন্দুগণ ভক্তিভরে “ ঠাকুর ” বলতো এবং তাঁরই বিশেষ তত্ত্বাবধানে এ দীঘি খনন করা হয় বলে তাদের ভক্তিভাজন ঠাকুরের নামানুসারে ঠাকুর দীঘি বলা হতো। আবার কেউ কেউ বলেন পীর আলী মোহাম্মদ তাহের খাজাহানের প্রিয়তম বন্ধু ছিলেন। তিনি পূর্বে ব্রাক্ষ্মণ ছিলেন এবং তাঁর নাম ছিল শ্রী গোবিন্দ লাল রায়। খানজাহান তাঁকে আদর করে “ ঠাকুর ” বলে সম্বোধন করতেন। তাঁরই স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি এ দীঘির নাম “ঠাকুর দীঘি”রেখেছিলেন। তাঁর মাজার খানজাহান (রঃ) মাজার সংলগ্ন পশ্চিমে অবস্থিত।

🍤 সকাল হয়ে গেছে, দরকার পেট পূজো করার তাই বসে পড়লাম মাজারের পাশেই গড়ে ওঠা হোটেলে। চিংড়ির শহরে এসে চিংড়ি না খেলে কি হয়। তাই বসে পড়লাম গরম ভাত দিয়েই চিংড়ি গিলতে।

খাওয়া শেষে চড়ে বসলাম রিজার্ভ অটোতে, ২৫০ টাকা ভাড়ায় এই অটো আমাদের কে নিয়ে যাবে আপাতত ফয়লা। কারন বাগেরহাট থেকে মংলা সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভাল নেই। কয়েকবার ভেঙ্গে ভেঙ্গেই মূলত যেতে হয় মংলায় বাগেরহাট থেকে। আমাদের আপাতত লক্ষ ফয়লা। গ্রামীণ ঘের ঘেরা গ্রাম পেরিয়ে ছুটে চলছি আমরা। প্রায় ৪০ মিনিটের পথ পাড়িয়ে পৌছালাম ফয়লায়। তারপর ফয়লা থেকে সরাসরি বাস একদম মংলা ফেরি ঘাটে। ফয়লা থেকে মংলা এর পথেই দেখা পাবেন সেই বিখ্যাত রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একি সাথে দেখা পাবেন, মংলা বন্দরের। ফয়লা থেকে জন প্রতি ৪০ টাকা বাস ভাড়া মংলা ফেরিঘাট পর্যন্ত। এবার পালা পশুর নদীর পার হবার। চলবে...

রংপুর চিকলী ওয়াটার পার্ক
07/10/2022

রংপুর চিকলী ওয়াটার পার্ক

07/10/2022

কুচিয়ামোড়া ,সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ

জেলা ভিত্তিক পর্যটন এলাকাসমুহ...
07/10/2022

জেলা ভিত্তিক পর্যটন এলাকাসমুহ...

একই জাগায় অবস্থিত ১২ মাসের ১২ টি সূর্য অস্ত যাবার ছবি। ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১ জানুয়ারি এর  ছবি তোলা হয়েছে। অর্থাৎ আপ...
05/10/2022

একই জাগায় অবস্থিত ১২ মাসের ১২ টি সূর্য অস্ত যাবার ছবি।

১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১ জানুয়ারি এর ছবি তোলা হয়েছে। অর্থাৎ আপেক্ষিক দৃষ্টিতে মাস ১৩ টা হলেও মূলত ১২ মাস ১ দিন। এই সময় কালকে ১ বছর ধরে নিতে পারি। জানুয়ারি মাসের ছবি ২ টি হওয়ার কারণে মাস ১৩ টি দেখা যাচ্ছে।

📷 Luca Vanzella

Address

Ishurdi
6620

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ishwardi Travel Group posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category


Other Ishurdi travel agencies

Show All