03/02/2022
Traveler’s Note: You’ll get different information, stories, and advices here.
সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষার পরিবর্তনে সম্ভাষণের পরিবর্তন হয়েছে – স্বাগত ও বিদায় উভয় ক্ষেত্রেই। তরুণ-তরুণীরা এখন পরষ্পরের সাথে দেখা হলে ‘হাই’ বা ‘হ্যাল্লো’ বা ‘হাই ব্রো’ বলে সম্বোধন করে থাকে; বিদায়ে ‘সি ইউ’ বা ‘বাই’ বলে সম্ভাষণ করে থাকে। ইংরেজির প্রভাব ব্যাপক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগেকার দিনের চিঠি-পত্রের সম্ভাষণ ‘শুভাশীষ’, ‘সালাম’ বা ‘ভালো থেকো’ কিংবা ‘নিজের যত্ন নিও’ এ ধরনের শব্দগুলো এখন ই-মেইল ও ম্যাসেঞ্জারে ‘Good Bye’, ‘Bye’ ‘Take Care’ বা সংক্ষেপে TC তে রূপ নিয়েছে। দুঃখজনক ভাবে বাংলার ভালোবাসায় পূর্ণ ও আশীর্বাদ মাখা বিদায় সম্ভাষণ বিদায় নিয়েছে প্রায়। এ বিষয়ে আমরা পরে আসছি। তার আগে আমরা একটু দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিদায় সম্ভাষণ – বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক (Informal or Casual) বিদায় সম্ভাষণগুলো কেমন।
ওলন্দাজ ঔপনিবেশের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষায় এর প্রভাব রয়েছে। আফ্রিকানরা বিদায় সম্ভাষণে বলে থাকে tot weersiens [উচ্চারণ: TOTE-veer-seens] যার অর্থ ‘সে পর্যন্ত’ অথবা বলে থাকে TOTE-VAY-der-OM যার অর্থ ‘শীঘ্রি আবার দেখা’ হবে। উত্তর আফ্রিকা, আরব উপসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা আরবীতে বিদায় সম্ভাষণে বলা হয় ‘সালাম’ অর্থাৎ ‘শান্তি’। বিদায়ী ব্যক্তির শান্তি কামনা করে এ সম্ভাষণ করা হয়ে থাকে। চায়নার সরকারি ভাষা চাইনিজ মান্দারিন ভাষায় অনানুষ্ঠানিক বিদায়ে বলা হয়ে থাকে mīng tiān jiān [উচ্চারণ: miin-tyen-JIEN] যার অর্থ ‘আগামিকাল আবার দেখা’ হবে। এ ভাষায় চীনের মূল ভূখন্ডের পাশাপাশি তাইওয়ানের লোকজনও কথা বলে থাকে। জাপানীরাও অনেকটা একই ভাবে বলে থাকে ‘জাহ্-নেহ’ অথবা ‘জাহ্-মা-তা-নেহ’ অর্থাৎ ‘দেখা হবে’ বা ‘আবার দেখা হবে’। লাউসের অধিবাসীরা লাউ ভাষায় খুব সংক্ষেপে বলে থাকে ‘পাই দি’ অর্থাৎ ‘ভালোভাবে যেও’।
ডেনমার্কের দাপ্তরিক ভাষা Danish; এ ভাষায় ডেনমার্কের অধিবাসী ছাড়াও কথা বলে গ্রীনল্যান্ড ও জার্মানীর কিছু অংশের লোকজন। বিদায়ে তারা বলে থাকেন hej hej [উচ্চারণ: হেয় হেয়] যার অর্থ ‘বিদায়’। গ্রীকরা ইংরেজদের মতোই গুড বাই বা বাই বলে থাকেন ‘ইয়াহ-সুউ’ অর্থাৎ ‘শুভ বিদায়’ বলার মাধ্যমে। ফ্রেঞ্চ আর স্প্যানিশ ভাষায় বিদায় সম্ভাষণ মোটামুটি একই অর্থ বহন করে। ফ্রেঞ্চ ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘ah-bee-EN-toe’ কিংবা ‘ah-DE-mah’ যার অর্থ ‘আবার দেখা হবে’ কিংবা ‘কাল আবার দেখা হবে’। হিব্রুতে যে বিদায় সম্ভাষণ তা প্রায় আরবীর কাছাকাছি – ‘Shalom’ যার অর্থ ‘শান্তি’। এদিকে লাতিন ভাষার বিদায় সম্ভাষণ অনেকটা বাংলা আনুষ্ঠানিক বিদায় সম্ভাষণের মতো। লাতিনে বিদায়ে বলা হয় ‘ভালে’ অর্থাৎ ‘ভালো থেকো’। তার্কিশ ভাষায়ও বিদায় সম্ভাষণ এমনই – ‘Hoshakal’ অর্থাৎ ‘ভালো থেকো।’
ইরান, আফগানিস্তানে সুস্বাস্থ্য ও শান্তি কামনায় বিদায়বেলায় ফার্সিতে বলা হয় ‘বি সালামাত’ বা পশতুতে বলা হয় ‘da khoday pa amaan’। ভুটানিজ ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘Yaya. Yasi mey.’ যার অর্থ ‘আচ্ছা বিদায়’; যেখানে নেপালে বিদায় সম্ভাষণে বলা হয়ে থাকে ‘pachi bhetaula’ অর্থাৎ ‘পরে দেখা হবে’। পাকিস্তানীরা উর্দুতে বলে থাকে ‘খুদা হাফেজ’ যেটা এক সময় বাংলাদেশেও প্রচলন ছিলো এখন কমে এসেছে; অনেক ক্ষেত্রে এটা ‘আল্লাহ হাফেজ’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে! হিন্দিতে নেপালীদের মতোই বলা হয়ে থাকে ‘ফির মিলেঙ্গে’।
তবে মজার ব্যাপার হলো তামিল ভাষায় বিদায় সম্ভাষণে যা বলা হয় তা বাংলার হারিয়ে যাওয়া সম্ভাষণের প্রায় কাছাকাছি। বিদায় বেলায় তামিল ভাষায় বলা হয় ‘poitu varein’ বা সংক্ষেপে ‘varein’ যার অর্থ ‘যাচ্ছি কিন্তু আবার আসবো’ বা ‘আবার আসবো’। আমাদের দেশের বাংলায় সবচেয়ে আবেগঘন কিন্তু ছোট্ট বিদায় সম্ভাষণ যেটা প্রায় উঠে যাচ্ছে সে সম্পর্কে আমি এখানে কিছু না লিখে প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী’র কিছু কথা বিনয়ের সাথে উদ্ধৃত করছি।
“নানা দেশে নানা রকমের বিদায়বাণী বলা হয়। জানিনে, এই লক্ষ্মীছাড়া মুল্লুকে এখন পনেরো আনা লোক – এমনকি মেয়েরা পর্যন্ত ঘোর অপয়া ‘এখন তবে যাই’ বলে। যেন অগস্ত্য যাত্রা করছে! ‘এখন তবে আসি’ প্রায় উঠে গেছে। আমরা তখন উত্তরে বলতুম ‘এসো।’ এখন কী উত্তর দেয়। এই আধুনিক আধুনিকারা যখন কেউ বলে, ‘এখন তবে যাই?’ তারা কি ‘হ্যাঁ, যাও’ বলে? সর্বনাশ! এর চেয়ে মারাত্মক বর্বর অপয়া উত্তর কী হতে পারে।”
বিদায় সম্ভাষণে বাংলায় ‘আসি’ শব্দের চল এখনকার তরুণ সমাজে অনেকটাই অবহেলিত।
[তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট]
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শ ও মতামত আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।