19/01/2024
মসজিদে কুবায় দু’রাকাত নামাজে এক ওমরার সওয়াব
মসজিদে কুবা :
দুনিয়ায় ফজিলতপূর্ণ চারটি মসজিদের একটি হলো- মসজিদে কুবা। মসজিদটি মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ ১. মক্কার মসজিদুল হারাম, ২. মদীনার মসজিদে নববি ও ৩. জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা। এর পর মসজিদে কুবা’র অবস্থান। মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করলে এক ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) নবুওয়ত লাভের পর এটিই ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ।
মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের ফজিলতঃ
মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করলে এক ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব। আল্লাহর রাসুল (সা.) হিজরতের সময় মদিনা গমনকালে এই মসজিদের নির্মাণ কাজে নিজে অংশ গ্রহণ করেন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে কুবার অধিবাসী ও মসজিদে কুবার প্রশংসা করে বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সঙ্গত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১০৮)
মসজিদে কুবায় নামাজ পড়ার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘নবী কারিম (সা.) প্রতি শনিবার কুবা মসজিদে আসতেন, কখনও পায়ে হেঁটে, কখন আরোহণ করে।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড- : ০২, হাদিস : ১১১৯)
উসাইদ ইবনে খুদাইর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘মসজিদে কুবায় নামাজ, ওমরাহর সমতুল্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১১)
নাফি (রহ.) হতে বর্ণিত আছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) দুইদিন ছাড়া অন্য সময়ে চাশতের সালাত আদায় করতেন না। এক. যেদিন তিনি মক্কা আগমন করতেন; তাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি চাশতের সময় মক্কায় আগমন করতেন। তিনি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করার পর মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। দুই. আর যেদিন তিনি কুবা মসজিদে গমন করতেন। তিনি প্রতি শনিবার সেখানে গমন করতেন এবং সেখানে সালাত আদায় না করে— বেরিয়ে আসা অপছন্দ করতেন।’ নাফি (রহ.) আরও বলেন, তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হাদিস বর্ণনা করতেন যে, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা মাসজিদ জিয়ারত করতেন; কখনো আরোহন করে, আর কখনো পদব্রজে।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৯৩, ১১৯৪, ৭৩২৬) (আধুনিক প্রকাশনী, হাদিস : ১১১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস : ১১১৮)
মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ইতিহাস ঃ
মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সা.) অংশগ্রহণ করেন।
ইতিহাসবিদরা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি নিজ হাতে স্থাপন করেন।
কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল- হযরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।
মসজিদে কুবার অবস্থান ও নামকরণঃ
মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই মসজিদ কুবা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।
কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।
পবিত্র কোরআনের মসজিদে কুবাঃ
পবিত্র কোরআনে কুবার অধিবাসী ও মসজিদে কুবার প্রশংসা করেন আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সঙ্গত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১০৮)
মসজিদে কুবার সংস্কারকাজঃ
মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ( রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তার ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন।
৪৩৫ হিজরিতে আবু ইয়ালি আল-হোসায়নি কুবা মসজিদ সংস্কার করেন। তিনি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। ৫৫৫ হিজরিতে কামাল আল-দিন আল-ইসফাহানি মসজিদে আরও বেশ কিছু সংবর্ধনের করেন। পরবর্তী সময়ে ৬৭১, ৭৩৩, ৮৪০ ও ৮৮১ হিজরিতে ওসমানি সাম্রাজ্যকালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওসমানি শাসনামলে ১২৪৫ হিজরিতে সর্বশেষ সংস্কার করেন সুলতান আবদুল মজিদ।
১৯৮৬ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সম্প্রসারণ হয়। তখন পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।
মসজিদে কুবা দেখতে এখন যেমনঃ
মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে এই মসজিদে।
মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।
মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর।
মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা।
মসজিদের উত্তর দিক নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ১১২ বর্গমিটার অংশজুড়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের থাকার জায়গা, একটি লাইব্রেরি, প্রহরীদের থাকার জায়গা এবং সাড়ে ৪শ’ বর্গমিটার স্থানে ১২টি দোকানসমৃদ্ধ একটি বাণিজ্যিক এলাকা।
মসজিদে ৭টি মূল প্রবেশ দ্বার ও ১২টি সম্পূরক প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রতিটি ১০ লাখ ৮০ হাজার থার্মাল ইউনিট বিশিষ্ট তিনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মসজিদকে ঠান্ডা রাখছে।
মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ শ্বেতবর্ণের একটি অনন্য স্থাপত্যকর্ম হওয়ার দরুন বহু দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।
---------------------------------------------
হজ্জ্ব - ওমরাহ্ বুকিং নেয়া হচ্ছে।
বুকিং এর জন্য বিস্তারিত যোগাযোগ করুন।
🇧🇩 যোগাযোগঃ
ফাতিমা হজ্জ্ব কাফেলা
মীর কামরুজ্জামান মনি
☎️+8801975444466