24/09/2022
বাড়ির প্রবেশপথে দেয়ালে বড় বড় করে লেখা—‘ভানুবিল মাঝেরগাঁও মণিপুরি কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম’। নিচে ছোট হরফে লেখা ‘মাঙাল লৈকাই’।
বাড়ির সামনেই বসার জন্য কয়েকটা পাকা বেঞ্চ। মাঝেমধ্যে ফুলের গাছ। দুই দিকে বাঁশের তৈরি বসার ঘর। আরেকটু ভেতরে একটি টিনশেড হলঘর। হলঘরে নিরঞ্জন সিংহের সঙ্গে দেখা। ২০১৮ সালের ৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বাড়ি থেকেই শুরু হয় ‘সম্প্রদায়ভিত্তিক পর্যটন’। বলা যায় তিনিই উদ্যোক্তা। আরও দুজন মণিপুরির সঙ্গে গল্প করছিলেন নিরঞ্জন। কৌতূহল নিয়ে ‘মাঙাল লৈকাই’ কথাটার অর্থ জানতে চাই।
মাঙাল লৈকাই অর্থ ‘আলোকিতপাড়া’, জানান নিরঞ্জন সিংহ।
তাঁর সঙ্গে গ্রাম দেখতে বেরিয়ে পড়ি। প্রতিটি ঘরের একটা অংশ পর্যটকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো বাড়ির দুটি, কোনো বাড়িতে চারটি কক্ষেই পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে তাঁত আছে। আছে নিজেদের ঐতিহ্য প্রদর্শনের তাক। ঘুরতে ঘুরতেই নিরঞ্জন সিংহের কাছে শুনছিলাম কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম গড়ে তোলার গল্প।
নিরঞ্জনের প্রয়াত ভগ্নিপতি রবিনের মণিপুরি তাঁতবস্ত্রের কারখানা ছিল। জাপানে তাঁতবস্ত্র রপ্তানি করতেন তিনি। জাপানি ক্রেতারা সরাসরি পণ্য তৈরির কাজ দেখতে চাইতেন। রবিন তাঁদের ভানুবিল মাঝেরগাঁওয়ে আনতেন। নিরঞ্জন সিংহ মণিপুরিদের জীবনযাপন, তাঁতবস্ত্র বোনাসহ এলাকার পর্যটনস্থানগুলো তাঁদের ঘুরিয়ে দেখাতেন। রবিন মারা যাওয়ার পর ভানুবিলে জাপানিদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সাল তখন। নিরঞ্জন ভাবলেন, সাধারণ পর্যটকদের বাড়িতে রেখে তিনি নিজেদের ঐতিহ্য জানানোর ব্যবস্থাটা করবেন।
পর্যটন ব্যবসায়ী আজিয়ার কমিউনিটি বেজ ট্যুরিজমের প্রবক্তা শাহিদ হোসেন শামীম অনেককে নিরঞ্জনের বাড়িতে আনতেন। মণিপুরিদের আপ্যায়নে পর্যটকেরা মুগ্ধতার কথা বলতেন। শামীম বিষয়টি তৎকালীন সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে জানালে তিনি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকেও এর সঙ্গে যুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম। প্রথমে ১০টি মণিপুরি পরিবার যুক্ত হলেও এখন আছে ৭৫টি পরিবার। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরেরাও এখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করেন।
ভানুবিল মাঝেরগাঁওয়ের ৭৫টি বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘সম্প্রদায়ভিত্তিক পর্যটন’। কেউ চাইলে ওই বাড়িগুলোতে মণিপুরি পরিবারের সদস্য হয়ে থাকতে পারবেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের গ্রামটি ঘুরে এসেছেন মুজিবুর রহমান।