13/05/2024
কী কী বৈশিষ্ট্যের কারণে সফল উদ্যোক্তারা অন্য উদ্যোক্তাদের থেকে আলাদা?
একটি সফল ব্যবসার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। ভাল কনসেপ্ট, শক্তিশালী বিজনেস প্ল্যান, মার্কেটিং ইত্যাদি। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় কারণটি হয়ত ব্যবসার পেছনে থাকা ব্যক্তি, উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তারাই একটি ভাবনাকে আয়ের উপযোগী কাজে রূপান্তরিত করেন।
আপনিও কি নিজের ব্যবসা দেওয়ার কথা ভাবছেন? ভাবছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হতে আসলে কী কী গুণ দরকার হয়, বা আসলে একজন সফল উদ্যোক্তা বাকিদের চেয়ে কোন কাজটা আলাদাভাবে করেন?
এসকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে এই আর্টিকেলে। দেখে নেওয়া যাক, কোন বৈশিষ্ট্যগুলি একজন সাধারণ উদ্যোক্তা থেকে একজন সফল উদ্যোক্তাকে আলাদা করে।
১. কৌতূহল বা জানার আগ্রহ
সফল উদ্যোক্তাদের প্রায় সবার মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায়, তা হল: কৌতূহল। কৌতূহলী থাকা একজন উদ্যোক্তাকে অভিনব সুযোগ ও সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। শুধুমাত্র নিজের জানার ওপর নির্ভর না করে, সফল উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন ও নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কারে সময় দেন।
কৌতূহল ছাড়া এই উদ্যোক্তারা কখনোই তাদের প্রধান উদ্দ্যেশ্য, তথা ‘নতুন সুযোগ খুঁজে পাওয়া’ পূরণ করতে পারবেন না। এই সুযোগগুলিই একটি ব্যবসাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে।
২. পরীক্ষা করার ইচ্ছা
সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে কৌতূহলের পাশাপাশি আপনাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারেও উদার থাকবে হবে।
এর কারণ প্রতিটি নতুন সুযোগ ব্যবসার জন্য লাভজনক হবে কিনা তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা চালিয়ে দেখাই একমাত্র পদ্ধতি।
ধরুন, নতুন কোনো পণ্য বা সেবার আইডিয়া পেলেন। কিন্তু কাস্টমাররা এর খরচ করতে রাজি আছেন কিনা, এটা তাদের কোনো চাহিদা পূরণ করবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য, আপনাকে বিস্তারিত জানার জন্য মার্কেট রিসার্চ করতে হবে এবং আইডিয়াটি যাচাই করে দেখতে হবে। এর সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে অর্থপূর্ণ পরীক্ষা চালাতে হবে।
আমরা অনেকে নতুন কিছু চেষ্টা করতে, বা পরীক্ষা করে দেখতে ভয় পাই। কিন্তু ভয় পেলে ব্যবসার উন্নতির জন্য আপনি কাজ করতে পারবেন না। একবার নতুন কিছু করেই দেখুন, সফল না হলেও এখান থেকে যে শিক্ষা আপনি পাবেন সেটাও ব্যবসায় কাজে লাগবে।
৩. মানিয়ে চলা
উদ্যোক্তা হওয়া ধাপে ধাপে আগানোর একটি প্রক্রিয়া। যেখানে প্রতিটি মোড়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আর সুযোগ আসতে থাকে। সব পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকা প্রায় অসম্ভব, তবে সফল উদ্যোক্তারা যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারেন।
কারণ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে নমনীয় থাকতে হয়, যাতে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এলেও ব্যবসা এগিয়ে যেতে পারে।
৪. বিচার করার ক্ষমতা
সফল হওয়ার পথে, একজন উদ্যোক্তাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ব্যবসার মূল ব্যক্তি হিসাবে, ফান্ড এবং ব্যবসার কৌশল থেকে শুরু করে সব কিছুর দায়িত্ব থাকে তার ওপরে।
বিচার ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া মানে সবসময় সঠিক হওয়া না। এর অর্থ আসলে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে পারা, সেখান থেকে শেখা এবং বর্তমান সংকট মোকাবেলায় অভিজ্ঞতা ও নতুন পরামর্শ কাজে লাগাতে পারা।
৫. টিম গড়ে তোলা
একজন সফল উদ্যোক্তা তার শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকেন। নিজস্ব ত্রুটি যেন তাকে পিছিয়ে না দেয় সেই চেষ্টা করেন এবং সেজন্য দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি ভাল টিম গড়ে তোলেন।
অনেক ক্ষেত্রেই, কোনো একজন ব্যক্তি না, বরং ভাল টিমই একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। আপনি যখন ব্যবসা শুরু করবেন, অবশ্যই ভাল কর্মীদের নিয়োগ দিন। যারা দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি আপনার ব্যবসার লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতেও ইচ্ছুক।
৬. সহনশীলতা
উদ্যোক্তা হওয়ার সাথে ঝুঁকি নানাভাবে জড়িত। যদিও এটা ঠিক যে কোনো উদ্যোগ চালু করার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়, কিন্তু একই সাথে এই ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়াও প্রয়োজন।
নতুন উদ্যোগ চালু করার সময় অনেক কিছু ভুল হতে পারে, অনেক কিছু ঠিকও হতে পারে। ঝুঁকি এবং লাভের মধ্যে সম্পর্ককে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা ব্যবসাকে 'উন্নতি' করার অবস্থানে নিয়ে আসে।
সফল উদ্যোক্তারাও তাদের প্রচেষ্টার ফল লাভ করতে ঝুঁকি নেন, এর মুখোমুখি হতে কখনও ভয় পান; তবে, ঝুঁকির প্রতি তাদের সহনশীলতাই ব্যবসার গতি ধরে রাখে, ব্যবসাকে আরো বড় হতে সাহায্য করে।
৭. ব্যর্থতা মেনে নেওয়া
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ব্যর্থতার সাথে মানিয়ে নিতে শেখাও প্রয়োজন।
ব্যবসায় নানারকম ব্যর্থতা আসতে পারে। যার মধ্যে অনেকগুলি আগে আগে সচেতন থেকেও এড়ানো কঠিন হয়। তখন পরিস্থিতি মেনে নিয়ে নতুন ভাবে শুরু করার সাহস অর্জন করেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
নিজেকে ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বারবার ব্যর্থ হলেও ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
৮. অধ্যবসায়
ব্যর্থতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে পরাজয় মেনে নেওয়া ভেবে ভুল করবেন না। ব্যর্থতা মেনে নেওয়া মানে, পুনরায় উঠে দাঁড়ানো, আবারো শুরু থেকে শুরু করা। একে বলে অধ্যবসায়।
সফল উদ্যোক্তারা ব্যর্থতাকে শেখা এবং এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসাবে দেখেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াতে, অনেক অনুমান ভুল প্রমাণিত হয় এবং কিছু উদ্যোগ সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়। একজন উদ্যোক্তাকে সফল করে তোলে এমন কিছু জিনিসের মধ্যে রয়েছে ভুল থেকে শেখা, প্রশ্ন করা এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত অবিরাম চেষ্টা করে যাওয়া।
৯. সৃজনশীল চিন্তা
উদ্যোক্তা শব্দটির সাথে আরেকটি শব্দ অনেক বেশি উচ্চারিত হয়, তা হল সৃজনশীলতা। সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে পারা। ব্যবসায় উদ্ভাবনকে এমন একটি ধারণা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা একই সাথে নতুন এবং উপযোগী, তবে এটি সবসময় সম্পূর্ণ নতুন পণ্য বা সেবা তৈরির সাথে জড়িত থাকে না।
সৃজনশীল উপায়ে চিন্তা করাকে এক ধরনের মানসিকতাও বলা যেতে পারে। যার কারণে ব্যবসার উন্নতির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি বিষয়কে আপনি ভিন্নভাবে ভেবে দেখতে চান। যা হয়ত ব্যবসায় এমন কোনো নতুন অধ্যায় যোগ করবে, আপনি আশাও করেননি।
১০. দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য
ব্যবসা শুরু করা সহজ, তবে তা টিকিয়ে রাখা ও সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া কঠিন। উদ্যোক্তা হওয়াও একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা, সফলতা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দিতে হয়।
সফল উদ্যোক্তারা নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট থাকেন। সেই অনুসারে তারা কাজ করেন, ব্যবসা চালিত করেন।
একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এক্ষেত্রে আপনাকে পথ দেখাতে পারে। ব্যবসাকে আপনি কোথায় নিয়ে যেতে চান, তা ঠিক করুন। কীভাবে ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করবেন, কী কী করবেন তার একটি পরিকল্পনাও তৈরি করে নিন।
উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো সঠিক বা ভুল পদ্ধতি নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অবিরাম চেষ্টা এবং উদ্ভাবনীমূলক চিন্তার মত বৈশিষ্ট্য এবং আচরণগুলি সময়, অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা যায়। যতদিন আপনার মধ্যে উদ্যোক্তার মনোভাব থাকবে, ততদিন আপনি যাত্রাপথের সুযোগ চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।
#ব্যবসা #উদ্যোক্তা #সফলতা