26/09/2022
➡️যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়েছিল
আস্’সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। বিসমিল্লাহ্! ওয়াল-হামদুলিল্লাহ্! ওয়া আস্’সালাতু ওয়া আস্’সালামা আলা রাসূলুল্লাহ্! ওয়ালা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন।
আমাদের প্রিয়নবী, সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমুল-ফীল) হাতী বাহিনীর ঘটনার পঞ্চাশ অথবা পঞ্চান্ন দিন পর ৯ রবিউল আউয়াল, সোমবার অনুযায়ী ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে, মক্কায় কুরাইশ বংশে বনু হাশিম গোত্রে- সুবহে সাদিকে পিতামহ আবূ তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সত্য ও হিদায়াতের সূর্য উদিত হওয়ার জন্য সুবহে সাদিকই উপযুক্ত সময়। ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।’
🌟 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সময়
বনী আদমের সরদার মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতী বাহিনীর ঘটনার পঞ্চাশ অথবা পঞ্চান্ন দিন পর ৮ রবিউল আউয়াল, সোমবার অনুযায়ী ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে, এক সুবহে সাদিকে আবূ তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শুভ জন্মের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ বক্তব্য হলো- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবিদদের নিকট প্রসিদ্ধ ও অনুমোদিত বক্তব্য হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। [সীরাতুল মুস্তাফা ﷺ]।
জমহুর আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মের মাসটি হলো রবিউল আউয়াল মাস, এটি বিশুদ্ধতম এবং প্রসিদ্ধতম অভিমত। অপরদিকে আর্-রাহীকুল মাখতুম সীরাত গ্রন্থে উল্লিখিত- বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মাদ সোলায়মান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং মাহমুদ পাশা ফালকীর অনুসন্ধানলব্ধ সঠিক অভিমত হচ্ছে, ৯ রবিউল আউয়াল, সোমবার সুবহে সাদেকের সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টীয় বছর গণনায় এটা ছিল ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ২০ অথবা ২২ এপ্রিল। গ্রন্থাকার এ বর্ণনার পাদটিকায় লিখেছেন, এপ্রিলের তারিখ নিয়ে মতভেদ হচ্ছে খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জির ভ্রান্তির ফল। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম প্রসঙ্গে অন্যান্য সীরাত গ্রন্থসমূহে ভিন্ন তারিখও উল্লিখিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিবলী নু’মানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মিশরের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা ফালকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-র মতামতের আলোকে ৯ রবিউল আউয়াল/২০ এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ-কে প্রধান্য দিয়েছেন (শিবলী নু’মানী, সীরাতুন-নবী, মুহাম্মাদ আল-খিদরী বেগ, নূরুল-য়াকীন ফী সীরাতি সায়্যিদিল মুরসালীন)। কাযী সুলায়মান মানসূরপূরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ নামক গ্রন্থে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, ৯ রবিউল আউয়াল, আমুল-ফীল মুতাবিক ২২ এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ ...মক্কা মু’আজজামাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন (কাযী সুলায়মান মানসূরপূরী, রাহমাতুল্লিল আলামীন)। আয-যাহাবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি উপরিউক্ত মতকে সহীহ বলেছেন (আয-যাহাবী, আস-সীরাতুন-নাবাবিয়্যা)।*
হিফজুর রহমান সীওয়াহারবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি উল্লেখ করেছেন যে, মাহমুদ পাশা ফালকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কনস্টানটিনোপল-এর একজন প্রসিদ্ধ ও খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি তাঁর গবেষণার আলোকে এ কথা প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছেন যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় হতে তার সময় পর্যন্ত সংঘটিত সবগুলি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নিখুঁত হিসাব করলে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভ জন্মতারিখ ১২ রবিউল আউয়াল হতেই পারে না, বরং এটা ৯ রবিউল আউয়াল হবে (হিফজুর রহমান সীওয়াহারবী, কাসাসুল কুরআন)। কাসাসুল কুরআন-এ উল্লিখিত মতকে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং ঐতিহাসিকগণ তাঁদের সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত তারিখের প্রামাণ্য বুঝাতে আরবী ‘সাহীহ’ এবং ‘আছবাত’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ বিশুদ্ধ এবং ‘নির্ভরযোগ্য’। এ ছাড়া হুমায়দী, আকীল, য়ূনুস ইবন ইয়াযীদ, ইবন আবদুল্লাহ, মুহাম্মাদ ইবন মূসা, আবুল-খাত্তাব, খাওয়ারিযমী, ইবন দাহয়া, ইবন তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম, ইবন হাজার আসকালানী, শায়খ বদরুদ্দীন আয়নী রাহমাতুল্লাহি আলায়হিম প্রমূখ উলামার এটাই অভিমত। (হিফজুর রহমান সীওয়াহারবী, কাসাসুল কুরআন)।*
ইবনুল-জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম ৮ রবিউল আউয়াল উল্লেখ করেছেন (ইবনুল-জাওযী, আল-ওয়াফা বি-আহ্ওয়ালিল-মুসতাফা)। সীরাতুল মুসতাফা-তে উল্লিখিত হয়েছে যে, ‘মূলত ৮ তারিখ বা ৯ তারিখ–এর পার্থক্যটাই মূল ভিত্তি হচ্ছে আরবী মাস ২৯ অথবা ৩০ দিনে হওয়া বা না হওয়া। অতএব এটা যখন প্রমাণিত হলো যে, ঐ তারিখ টি ২১ এপ্রিল ছিল, সুতরাং ৮ তারিখের বর্ণনাগুলি মূলত ৯ তারিখের পক্ষেই প্রমাণিত হয় (মুহাম্মদ ইদরীস কান্ধলবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)।*
*[সীরাত বিশ্বকোষ]।
আরো অসংখ্য আলিম এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর অভিমত হিসাবে এটাই সর্বাগ্রবর্তী। আল্লাহ্ই ভাল জানেন!
আর জন্ম বার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলে গেছেন। আবূ কাতাদা রাদ্বি’আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে সোমবারের সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “ঐদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং ঐদিন আমার উপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে।” [মুসলিম শরীফ]। আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ!
🌟 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মায়ের গর্ভে
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গর্ভে ধারণ করার পর তাঁর সম্মানিতা মা স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আম্মাজান আমিনা বিনত ওয়াহব বলতেন: “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গর্ভে ধারণ করার পর আমি নানা রকমের স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করি। একবার স্বপ্নে আমাকে কে যেন বলল: মানবজাতির মহানায়ককে তুমি গর্ভে ধারণ করেছ। তিনি যখন ভূমিষ্ট হবেন, তখন তুমি বলবে: ‘আমি আমার এই সন্তানকে সকল হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি’। তারপর তার নাম রেখো মুহাম্মদ।” তিনি গর্ভে থাকাকালে আমিনা আরো স্বপ্ন দেখেন যে, তার দেহের ভেতর থেকে এমন একটা আলোকরশ্মি বেরুল, যা দিয়ে তিনি সুদূর সিরীয় ভূখণ্ডের বুসরার প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত দেখতে পেলেন। [সীরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় আমিনা কোন দিনই সামান্যতম বেদনাও অনুভব করেন নি। ইবনুল জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তার কিতাবু সিফাতিস-সাফওয়াত গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইয়াযীদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন যামআ তাঁর খালা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গর্ভধারণের সময় আমরা সায়্যিদা আমিনাকে বলতে শুনেছি, আমি তাঁকে গর্ভধারণ করেছি অথচ কোন দিন সামান্যতম ব্যাথা অনুভূত হয়নি এবং কোন কষ্টও পাইনি, যেমন অন্যান্য গর্ভবতী মহিলারা অনুভব করে থাকেন। আমার রজঃস্রাব বন্ধ হলে আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমার গর্ভে সন্তান এসেছে। তন্দ্রাবস্থায় আমার কাছে একজন আগমনকারী এসে বললেন, তুমি একজন পুণ্যবতী গর্ভধারিণী নারী, এটা কি তুমি অনুভব করেছ? উত্তরে আমি যেন বললাম, আমি কিছুই অনুভব করি না। তারপর তিনি বললেন, তুমি বিশ্বমানবের সরদার ও তাদের নবীকে গর্ভে ধারণ করেছ। [সীরাত বিশ্বকোষ]।
🌟 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম মুহূর্ত
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সময় সমস্ত ঘর উজ্জ্বল আলোতে ভরে যায়। উসমান ইবন আবুল আস রাদ্বি’আল্লাহু আনহু-এর মা ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ বলেন, হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময় আমি আমিনার ঘরে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম যে, সমস্ত ঘর উজ্জ্বল আলোতে ভরে গেছে। দেখলাম আসমানের তারকারাজি নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এমনকি আমার মনে হচ্ছিল যে, হয়তো এসব আমার উপর পরবে। [সীরাতুল মুস্তাফা ﷺ]।
মুসনাদে আহমদ ও মুস্তাদরাকে হাকিম-এ বর্ণিত। ইরবায ইবন সারিয়্যা রাদ্বি’আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভ জন্মগ্রহণের সময় তাঁর মা এক নূর দেখেন, যাতে সিরিয়ার প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে যায়। [সীরাতুল মুস্তাফা ﷺ]।
মুহাম্মদ ইবন সা’দ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইবন আব্বাস রাদ্বি’আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, আমিনা বিনত ওয়াহব বলেছেন, মুহাম্মদ আমার গর্ভে থাকাবস্থায় প্রসব পর্যন্ত তাঁর জন্য আমি বিন্দুমাত্র কষ্ট অনুভব করিনি। প্রসবের সময় তাঁর সঙ্গে একটি নূর বের হয়, যা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব আলোকিত করে তোলে। আমার গর্ভ থেকে বের হওয়ার সময় সে উভয় হাতে মাটিতে ভর দেন। অতঃপর হাতে এক মুঠো মাটি নিয়ে আসমানের দিকে উঁচু করেন। কারো কারো মতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাঁটুতে ভর করে হামাগুড়িরত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হন। আর তাঁর সঙ্গে এমন একটি আলো নির্গত হয় যে, তার আলোতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ ও হাট-বাজার সব আলোকিত হয়ে যায়। আমিনা বলেন, সেই আলোতে বসরার উটের ঘাড়সমূহ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। তখন শিশু নবীর মাথা আসমানের দিকে উত্থিত ছিল। বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইবন আবুল ‘আস রাদ্বি’আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে বলেন, আমিনা বিনত ওয়াহব শিশু নবীকে প্রসবের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সে রাতে আমিনার ঘরে আমি নূর ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি। আমি দেখতে পেলাম, আকাশের তারকাগুলো যেন এসে আমার গায়ের ওপর পড়ছে। [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া]।
কাজী ইয়ায আবদুর রহমান ইবন আওফ এর মা শিফা রাদ্বি’আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাতে ভর করে ভূমিষ্ট হয়ে কেঁদে ওঠেন। তখন আমি শুনতে পেলাম, কেউ একজন বলে উঠলেন: ‘আল্লাহ্ আপনাকে রহম করুন।’ আর তাঁর সঙ্গে এমন এক আলো উদ্ভাসিত হয় যে, তাতে রোমের রাজপ্রাসাদ সমূহ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া]।
ভূমিষ্ঠের সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অতি পূতঃপবিত্র। এ প্রসঙ্গে ইবন সা’দ ইবন ইসহাক ইবন আবদুল্লাহ-এর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, আমিনা বিনত ওয়াহব বলেন: “আমি তাঁকে পূত-পবিত্র অবস্থায় প্রসব করলাম। এ সময় তাঁর শরীরে কোন ময়লা বা মলমূত্র ছিল না।” [সীরাত বিশ্বকোষ]।
মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভূমিষ্ঠের সময় জ্যোতির্ময় আলো প্রকাশ নিঃসন্দেহে এই দিকে ইঙ্গিত বহন করে যে, এর দ্বারা সমগ্র জগতবাসী হিদায়াত লাভ করবে এবং শিরক এর অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করবে। - এ কথারই মর্মার্থের প্রতিফলন ঘটেছে মহান আল্লাহর বাণীতে: “অবশ্যই তোমাদের কাছে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। [৫:১৫-১৬]।
🌟 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতামহকে তাঁর জন্মের সুসংবাদ প্রেরণ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতামহকে তাঁর আম্মা তাঁর জন্মের সুসংবাদ প্রেরণ করেন। ইবন ইসহাক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হলেন, তখন তাঁর আম্মাজান তাঁর পিতামহ আবদুল মুত্তালিবকে খবর পাঠালেন যে, আপনার এক পৌত্র হয়েছে। আসুন দেখে যান। আবদুল মুত্তালিব এলেন ও তাঁকে দেখলেন। এই সময় আমিনা তাঁর গর্ভকালীন সময়ে দেখা স্বপ্নের কথা, নবজাতক সম্পর্কে তাকে যা যা বলা হয়েছে এবং তাঁর যে নাম রাখতে বলা হয়েছে, তা সব জানালেন। [সীরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]।
সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই মা আমেনা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট তার পুত্রের জন্ম গ্রহণের শুভ সংবাদটি প্রেরণ করেন। এ শুভ সংবাদ শোনা মাত্রই তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে সূতিকাগারে প্রবেশ করে নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে কাবাঘরে উপস্থিত হন। তারপর অপূর্ব সুষমামণ্ডিত এ শিশুর মুখমণ্ডলে আনন্দাশ্রু সজল চোখে তাকিয়ে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে থাকেন এবং তাঁর সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন। একান্ত আনন্দ মধুর এ মুহূর্তেই তিনি এটাও স্থির করে ফেলেন যে এ নবজাতকের নাম হবে মুহাম্মদ। আরববাসীগণের নামের তালিকায় এটা ছিল অভিনব একটি নাম। তারপর আরবের প্রচলিত প্রথানুযায়ী সপ্তম দিনে তাঁর খাতনা করা হয়। অথচ ইবন হিশাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাতনা করা অবস্থাই জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু ইবন কাইয়্যিম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর যাদুল মাবাদ গ্রন্থে বলেন যে, এ ব্যাপারে কোন প্রামাণ্য হাদীস নেই। [আর্-রাহীকুল মাখতুম]।
🌟 রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়ে অলৌকিক ঘটনা সমূহ:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়ে বেশ কছু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়। যেমন-
✨ ১. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময় ইবলীসের বিলাপ: সুহায়লী বর্ণনা করেন যে, ইবলীস জীবনে চারবার বিলাপ করে: ১. অভিশপ্ত হওয়ার সময়। ২. জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়। ৩. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়। ৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হওয়ার সময়। [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া]।
✨ ২. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাতের উপর ভর দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন: ভূমিষ্ঠকালীন প্রকাশিত অলৌকিক ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষকারী আশ-শিফা বিনত ‘আমর ইবন আওফ রাদ্বি’আল্লাহু আনহা হতে কিছু বর্ণনা সীরাত গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। আস্-সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি উল্লেখ করেন, আবূ নু’আয়ম আবদুর রহমান ইবন আওফ হতে, তিনি তাঁর মা আশ-শিফা বিনত ‘আমর ইবন আওফ রাদ্বি’আল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেন: সায়্যিদা আমিনার গর্ভ হতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাতের উপর ভর দিয়ে ভূমিষ্ঠ হলেন এবং কিছুটা শব্দ করলেন। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম- ‘মহান আল্লাহ্ আপনার উপর অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক আপনার উপর অনুগ্রহ করেছেন’। আশ-শিফা রাদ্বি’আল্লাহু আনহা বলেন, এরপর প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মধ্যবর্তী সকল স্হান জ্যোতির্ময় হয়ে গেল। ফলে আমি রোমের সকল অট্টালিকা দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি তাঁকে কাপড় পরিয়ে কাৎ করে শুইয়ে দিলাম। হঠাৎ দেখি, আমার ডান দিক হতে একটা অন্ধকার আমাকে ঘিরে ফেলল। ফলে দেহ-মন কেঁপে উঠল এবং ভিত হয়ে পড়লাম। তারপর আমি একজনকে বলতে শুনলাম, “তুমি তাঁকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?” উত্তরে অন্যজন বলল, আমি তাঁকে প্রতীচ্যে ভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছি। তারপর সে আমার নিকট হতে তাঁকে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আমার বাম দিক হতে অনুরূপ ও ভীতিকর পরিস্থিতি এলো, এরপর অনুরূপ প্রশ্নোত্তর শুনতে পেলাম। এবার তিনি বললেন, আমি তাঁকে প্রাচ্যে ভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছি। আশ-শিফা রাদ্বি’আল্লাহু আনহা বলেন, আমি এ ঘটনা প্রায়ই আলোচনা করতাম। অবশেষে মহান আল্লাহ্ তাঁকে নবুওয়াত দান করলেন। আর আমি তাঁদেরই একজন ছিলাম যাঁরা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। [খাসায়েসুল কুবরা]।
✨ ৩. তাঁর ভূমিষ্ঠের সময় সমগ্র জগত আলোকিত হলো: সুবুলুল হুদা ওয়ার-রাশাদ গ্রন্থে সমগ্র জগত আলোকিত হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এ মর্মে ‘ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-র রিওয়ায়াত ইবন আবী হাতীম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তখন সমগ্র জগত আলোকিত হয়েছিল। [সীরাত বিশ্বকোষ]।
✨ ৪. নবূওয়াত বনী ইসরাঈল থেকে বিদায় নিয়েছে: ইয়কূব ইবন হাসান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আয়েশা রাদ্বি’আল্লাহু আনহা থেকে উত্তম সনদে বর্ণনা করেন যে, জনৈক ইয়াহূদী ব্যবসা উপলক্ষে মক্কায় অবস্থান করতো। যে রাতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করলেন, এরপর ঐ ইয়াহূদী কুরাইশদের এক সভায় উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এ রাতে কোন ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে? কুরাইশরা বললো, আমরা তো জানি না। ইয়াহূদী বললো, একটু খবর নিয়ে দেখ। কেননা আজ রাতে এ উম্মতের নবী জন্মলাভ করেছেন। তাঁর দু’বাহুর মাঝখানে একটি চিহ্ন (মোহরে নবূওয়াত) আছে। তিনি দু’রাত পর্যন্ত দুধপান করবেন না – এজন্যে যে, জনৈক জিন্নগ্রস্ত তাঁর মুখে অঙ্গুলী প্রবেশ করিয়েছিল। লোকজন দ্রুত ঐ সভা থেকে উঠে অনুসন্ধান শুরু করলো। জানা গেল যে, আবদুল্লাহ ইবন মুত্তালিবের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। ইয়াহূদী বললো, আমাকেও নিয়ে গিয়ে দেখাও। ইয়াহূদী যখন তাঁর দু’বাহুর মাঝখানে ঐ চিহ্ন (মোহরে নবূওয়াত) দেখলো, তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। হুঁশ ফিরে আসার পর সে বললো, নবূওয়াত বনী ইসরাঈল থেকে চলে গেছে। হে কুরাইশ, আল্লাহর শপথ! এই নবজাতক তোমাদের উপর এমনই আক্রমন করবে, যার খবর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। [সীরাতুল মুস্তাফা ﷺ]।
✨ ৫. আহমদের জন্মের নক্ষত্রের উদয়: ইবন ইসহাক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন যে, হাসসান ইবন সাবিত রাদ্বি’আল্লাহু আনহু বলেন, “আল্লাহর কসম! আমি তখন সাত-আট বছরের বালক হলেও বেশ শক্তিশালী ও লম্বা হয়ে উঠেছি। যা শুনতাম তা বুঝার ক্ষমতা আমার হয়েছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম জনৈক ইয়াহূদী ইয়াসরিবের একটা দুর্গের ওপর আরোহণ করে উচ্চস্বরে ‘ওহে ইয়াহূদিগণ’ বলে ডাক দেয়। লোকেরা তার কাছে সমবেত হয়ে বলল, ‘হায়, তোমার কি হল?’ সে বলল, ‘আজ রাতে আহমদের জন্মের নক্ষত্রটা উদিত হয়েছে।’” মুহাম্মদ ইবন ইসহাক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন: আমি হাসসান ইবন সাবিত রাদ্বি’আল্লাহু আনহু-র পৌত্র সাঈদ ইবন আবদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলাম: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন হাসসানের বয়স কত ছিল? তিনি জবাব দিলেন: ষাট বছর। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বয়স ছিল তিপ্পান্ন বছর। সুতরাং উপরোক্ত ইয়াহূদীর ডাক শোনার সময় হাসসানের বয়স ছিল সাত বছর। [সীরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]।
✨ ৬. পারস্য সম্রাটের প্রাসাদের চৌদ্দটি গম্বুজ ধসে পড়া এবং সাওয়া নহর শুকিয়ে যাওয়া: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের ঐ রাতে এ ঘটনাও সংঘটিত হলো যে, পারস্য সম্রাটের প্রাসাদে ভূ-কম্পন হলো এবং প্রাসাদের চৌদ্দটি গম্বুজ ধসে পড়লো আর পারস্যের হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডটি নিভে গেল এবং রাজকীয় অনুষ্ঠানাদি প্রদর্শন বন্ধ করা হলো। অবশেষে উযীরগণ ও রাষ্ট্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সভার আয়োজন করা হলো। ঐ দরবারেই এ সংবাদ পৌঁছলো যে, অগ্নিকুণ্ডটি নিভে গেছে। সম্রাটের পেরেশানী এতে বৃদ্ধি পেল। এদিকে এক সভাসদ দাঁড়িয়ে বললো, গত রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দুর্দান্ত উট আরবী ঘোড়ার দলকে হাঁকিয়ে নিয়ে দজলা নদী পার হয়ে সমগ্র রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্রাট তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি? সভাসদ বললো, সম্ভবত আরবের দিক থেকে কোন বিরাটকায় ঘটনা প্রকাশ হতে যাচ্ছে। সম্রাট শান্তি এবং স্বস্তির জন্য নুমান ইবন মুনযিরের নামে ফরমান পাঠালেন যে, কোন বিজ্ঞ আলিমকে আমার নিকট প্রেরণ কর, যে আমার প্রশ্নাবলীর জবাব দিতে পারবে।
নু’মান ইবন মুনযির তৎকালীন জগতশ্রেষ্ঠ আলিম আবদুল মসীহ গাসসানীকে দরবারে প্রেরণ করলেন। আবদুল মসীহ দরবারে উপস্থিত হলে সম্রাট বললেন, আমি যে বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করতে চাচ্ছি, সে বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি? আবদুল মসীহ জবাব দিলেন আপনি প্রশ্ন করুন, যদি আমার জানা থাকে তো বলে দেব, অন্যথায় কোন বিজ্ঞ লোকের নিকট প্রেরণ করবো। বাদশাহ তখন সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। আবদুল মসীহ বললন, এর ব্যাখ্যা সম্ভবত আমার মামা সাতীহ দিতে পারবেন, যিনি বর্তমানে সিরিয়ায় বসবাস করছেন।
সম্রাট তাকে নির্দেশ দিলেন যে, আপনি স্বয়ং আপনার মামার কাছে গিয়ে এগুলোর ব্যাখ্যা নিয়ে আসুন। আবদুল মসীহ যখন তাঁর মামা সাতীহ-এর নিকট পৌঁছলেন, তখন তার অন্তিম সময় উপস্থিত। কিন্তু হুঁশ তখনো অবশিষ্ট ছিল। আবদুল মসীহ গিয়ে তাকে সালাম দিলেন এবং কয়েক পংক্তি কবিতা আবৃত্তি করলেন। আবদুল মসীহ-এর আবৃত্তি শুনে সাতীহ তার দিকে ফিরলেন এবং বললেন, আবদুল মসীহ দ্রুতগামী উটে চড়ে সাতীহ-এর নিকট এমন সময় পৌঁছলো যখন সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তোমাকে সাসানীয় সম্রাট তার প্রাসাদে ভূমিকম্প, অগ্নিকুণ্ডের নিভে যাওয়া এবং সভাসদের স্বপ্নের কারণে এখানে পাঠিয়েছেন। শক্তিশালী উট আরবীয় ঘোড়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দজলা নদী পার হয়ে সমস্ত শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। হে আবদুল মসীহ! মনযোগ দিয়ে শোন, যখন আল্লাহর বাণী বেশি বেশি তিলাওয়াত হতে থাকে, যষ্ঠিধারী প্রকাশ পায়, আসমানী প্রশ্বস্ততা প্রকাশ পায়, সাওয়া নহর শুষ্ক হয়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড নিভে যায়, তখন সাতীহ-এর জন্য সিরিয়া সিরিয়া থাকবে না; সাসানীয় বংশের কিছু পুরুষ ও কিছু স্ত্রীলোক শুধু গম্বুজের পরিমাণ বাদশাহী করবে। আর যে বস্তু আগমনকারী, তা সম্ভবত এসে গেছে।
এ কথা বলেই সাতীহ মৃত্যুবরণ করলেন। আবদুল মসীহ ফিরে এলেন এবং সমুদয় বিবরণ সম্রাটকে শোনালেন। সম্রাট তা শুনে বললেন, চৌদ্দজন সম্রাট অতিক্রান্ত হতে তো দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হতে আর কত দেরী? তাদের দশ জন সম্রাট তো মাত্র চার বছরেই গত হয়েছেন। আর অবশিষ্ট চার সম্রাট তো উসমান রাদ্বি’আল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতকাল পর্যন্ত শেষ হয়েছেন। [সীরাতুল মুস্তাফা ﷺ]। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
মহান আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দুনিয়াতে পাঠানো কারণ বলতে গিয়ে আল কুরআনুল করীমে বলেন: “আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি” [২১:১০৭]। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবার জন্যেই রহমতস্বরূপ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন মানব জাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রহমত”। [ত্বাবরানী, মুজামুল আওসাত, আস-সাগীর, মুস্তাদরাক হাকিম, মাজমাউয যাওয়ায়েদ]। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয় নি, আমাকে রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে।” [মুসলিম শরীফ]।
হে মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ্! আমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দিন। হে সৎপথে পরিচালনাকারী আল্লাহ্! আমাদের সৎপথে পরিচালনা করুন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত জানার, তাঁকে বোঝার এবং তাঁকে যথাযথ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। ইয়া আল্লাহ্! আপনি আমার অন্তরে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে-বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন। হে পরম দয়ালু আল্লাহ! আমাদের জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন। হে পরম করুণাময় আল্লাহ! আপনার রহমত দিয়ে আমাদের আবৃত করুন। হে মহারক্ষক আল্লাহ্! সারা বিশ্বের মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা ও সর্বোত্তম কল্যাণ দান করুন। আর আমাদের সকল নেক প্রচেষ্টা কবূল করুন। আমিন! ইয়া রাব্বিল ‘আ-লামীন।🤲