24/10/2021
গত ২৪ ঘন্টায় পাহাড় থেকে আসা দুঃসংবাদ নিয়ে অনেকে অনেকরকম লিখছেন, মতবাদ রাখছেন। যারা চলে গেলেন, তাদের প্রিয়জনদের ক্ষতি তো অপূরনীয়। আমরা হাজার হ্যাজ নামালেও সেটা মিটবে না। কিন্তু যে বিষয়টা নিয়ে একটাও লেখা দেখলাম না, সেটা হলো অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে লামখাগা পাস কেন?
একটা ৫,০০০ মিটার + পাস, যে ট্রেককে মোটামুটি moderate to difficult গোত্রে ফেলা যায় সাধারণ সময়ে, সেটা এই সময়ে কেন এটেম্পট করা হলো? প্রশ্ন শুধু তাদের নয়, প্রশ্ন এরকম আরও প্রচুর টিমকেই, যারা এরকম প্ল্যান করেন। আমরা আর কবে বুঝবো, যে ট্রেক সিলেকশন টা আমাদের ছুটি অনুযায়ী করা যায় না, করতে হয় সেই রুটে যাওয়ার আদর্শ সময় অনুযায়ী।
নভেম্বরে একটা দল বালি পাস যাবে। আজ সকালেই শুনলাম। এগুলো নিয়ে কবে কথা উঠবে? লোকাল গাইডরা কবে এই বুকিংগুলো তোলা বন্ধ করবে? বালি পাস তো ছেড়ে দিলাম, অক্টোবরের শেষে দেওটিব্বা বেসক্যাম্প, হামতা পাসের মতো আপাত নিরীহ ট্রেকগুলোও ছুঁড়ে দিতে পারে কঠিন প্রশ্ন। কারণ যেকোনো মুহূর্তে চলে আসতে পারে western disturbance. জলের সোর্স জমে গিয়ে মুশকিল হতে পারে ক্যাম্পসাইট সিলেকশন। অনভিজ্ঞ দল হঠাৎ প্রচুর বরফ দেখে নার্ভ ফেল করতে পারে।
ফেসবুকে রঙচঙে ছবি পোস্ট করে লাইক পাওয়ার লোভে আজ আমরা পাহাড়ের বেসিক ব্যাপারগুলোই ইগনোর করি। শুধু সান্দাকফুর অভিজ্ঞতা নিয়ে অনায়াসে প্ল্যান করতে থাকি খিমলোগা পাসের।
আবার পড়ুন। সান্দাকফু, তারপরেই খিমলোগা পাস। এবারে ধরুন সে চলে গেলো খিমলোগা, কোনোরকমে ফিরেও এলো। তার ছবি দেখে পরের বছর যে ৫টা তাজা ছেলে প্ল্যান করে ফেলবে একটা দুরূহ ট্রেকের, তাদের মধ্যে যখন ২ জন পাহাড়েই থেকে যাবে, তখন তাদের বাড়িতে জবাবদিহি করতে যাবে তো ওই খিমলোগা জয়ী?
বাপের জন্মে কোনোদিন মনে হয় লিফট না ইউজ করে তিনতলায় উঠেছেন, এমন একজন ভেবে নিয়েছেন প্রথম ট্রেকে যাবেন এভারেস্ট বেসক্যাম্প আর থ্রি পাস। এবারে ধরা যাক তাকে নিয়ে গেলো কোনো একটা দল। কস্ট শেয়ার হবে বলে। তারপর যদি বিপদ হয়, যেটার চান্স প্রচুর, সেটার কস্ট টা calculate হয় কোনোদিন?
'যেতেই হবে' বলে কিচ্ছু নেই পাহাড়ে, বিশ্বাস করুন। পাহাড়ে আটকে পড়ে ঠান্ডায় হাত-পা অসাড় হয়ে যাবে যখন, চারপাশের প্রকান্ড পাহাড়গুলোকে তখন আর সুন্দর লাগবে না। মনে হবে নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে ওরা আপনার মৃত্যুর জন্যই। তাজা প্রাণগুলো কষ্ট পেয়ে শেষ হয়ে যায়, আর কিচ্ছু না। থেকে যায় তাদের বাড়ির লোকগুলো। আর আমাদের মতো অসংখ্য মানুষের বাড়ির লোকও, পরের ট্রেকে বা এক্সপিডিশনে যখন নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবেনা তখন তাদের মনে অবধারিতভাবে আসবে দুশ্চিন্তা।
একটু ভীতু হই আমরা এবার, কেমন? বেশিদিন বাঁচবো।
লেখাটি লিখেছেন ঋদ্ধ দত্ত। ওনার লেখাটা তুলে ধরলাম, যাতে ভবিষ্যতে বিপদ আসার আগে আমরা সাবধানে থাকি।