20/02/2022
বড়শুল পরিচিতি-
ঐতিহ্যবাহী এই বড়শুল গ্রামে ও তার চারিপাশে অনেক কিছুই আছে যেটা জায়গাটাকে আলাদা এক মাত্রা দেয়। একদিকে গায়েই দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ও হাওড়া-বর্ধমান মেইন এবং কর্ড লাইনের সংযোগকারী স্টেশন শক্তিগড়, অন্যপাশে দামোদর নদ। গ্রামটায় বরাবরই শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান মানুষদের বসবাস। অনেকগুলো স্কুল, পিটিটিআই ট্রেনিং সেন্টার, জমিদার বাড়ি ও পুরানো কিছু মন্দির আছে এই গ্রামে। তিন ফসলা উর্বর জমি আর পর্যাপ্ত জলসেচের ব্যবস্থা থাকায় উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রতিবছর ধান, আলু, সর্ষে ইত্যাদির ফলন এই এলাকায় হয়। সেই কারণে ঘানির খাঁটি সরষের তেল, বিভিন্ন রকমের চাল এখানে পাওয়া যায়।
বড়শুল জমিদার বাড়ির নিজস্ব সংগ্রহশালাটিও এককথায় অসাধারণ। জমিদার বাড়ির এক সদস্য খুব যত্ন করে সংগ্রহশালাটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। শুধু শীতে নয়, সারাবছরই এখানে দামোদরের ধারে পাখিপ্রেমীদের আনাগোনা থাকে। রেকর্ডেড তথ্য অনুযায়ী হ্যাবিটাট ও পরিযায়ী মিলিয়ে সারাবছরে এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তিনটে খুব বড় দূর্গাপুজা এখানে হয়, যেগুলো দেখতে বহুদূর থেকে মানুষজন আসেন।
পোড়া মাটি ও বাঁশের কাজ, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে হাতে তৈরি অলংকার এখানে অনেকে নিজ উদ্যোগে ছোটখাটো ভাবে করেন। বড়শুল পিওরস তাঁদের কাজ আরো বড় আকারে সমাজে স্বীকৃতি প্রদানের চেষ্টায় নিয়োজিত।
খুবই পুরানো গ্রাম হওয়াতে বরশুল তথা এর চারিপাশে অনেক আদিবাসী (আদি বাসিন্দা) সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। এঁদের মধ্যে বেশীরভাগই সাঁওতাল, এছাড়া কোঁড়া, দুলে, বাগদি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষরা থাকেন। এনাদের আয়ের মূল উৎস হলো চাষ ও বালিখাদে ঠিকাকাজ। অবসর সময়ে কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ এখনো নিজেদের সংস্কৃতিকে বহন করার চেষ্টা করে চলেছেন। আমরা বড়শুল পিওরসের তরফ থেকে তাঁদের যথাসম্ভব উৎসাহ দিয়ে থাকি যাতে তাঁরা তাঁদের ঘরানার নাচ, গান ইত্যাদি অব্যাহত রাখেন। তাহলে তাঁদের পরের প্রজন্মও তাঁদের এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বাউল সম্প্রদায়ের কিছু পরিবারও এখানে বসবাস করেন। অনুরোধ করলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদিকেও পাওয়া যায়।
বড়শুলের বাকি শিল্প সংস্কৃতির সাথে এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও তাঁদের শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চিন্তাভাবনা লকডাউনের আগেই শুরু করেছিল বড়শুল পিওরস। লকডাউনের জন্য দুটো বছর পিছিয়ে গেলেও আশাকরা যায় খুব শিগগির পাশে থেকে ওনাদের জন্য ভাল কিছু করা যাবে, বড়শুলের শিল্প ও সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে তুলে ধরা যাবে।