16/06/2022
" Vacay Trips" ভ্রমণ সংস্হার ব্যবস্হাপনায় আমরা তিন জন গত ১৯/০৪/২০২২ তারিখে দার্জিলিং মেল-এ রওনা দিয়েছিলাম, দার্জিলিং ও কার্শিয়াং সংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম ভ্রমণে। পরেরদিন সকাল সাড়ে দশটায় (দুঘন্টা দেরীতে) নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছাই। সেখানে পাশাং দাজু ড্রাইভার টাটা সুমো গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। শুরু হলো আমাদের যাত্রা। প্রথম গন্তব্য সিটং।
সিটং-এর পথে গাড়ি তে যেতে যেতে অপরূপ মনোরম পাহাড়ের শোভায় মুগ্ধ হয়ে, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে কখন যে সিটং পৌঁছে গিয়েছি বুঝতে পারিনি। সেখানে অহল হোমস্টে তে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। হোমস্টেটি একেবারে নতুন এবং পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হওয়ায় সামগ্রিক পরিবেশ টি অপূর্ব মোহময় মনে হচ্ছিল। হোমস্টের মালকিনের সুব্যবহার ও ঘরোয়া খাবারের স্বাদ কোন দিন ভোলা যাবেনা।
দ্বিতীয় দিন আমরা অহলদারা ভিউ পয়েন্ট, লেপচা মনাস্ট্রী সহ আরো কয়েকটি জায়গা দেখতে গিয়েছিলাম। আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সুন্দর দেখা যায়।
ভ্রমণের তৃতীয় দিন আমরা সিটং থেকে তাকদা রওনা দিলাম সকাল ১১টা নাগাদ, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আমরা তাকদা পৌঁছে যাই।
তাকদা যাওয়ার পথে পড়বে রঙ্গলী চা বাগান, সে এক অপরূপ সৌন্দর্য, পাহাড়ী চা বাগানের মধ্যে দিয়ে গাড়ি টা যখন এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলেছে তখন মনে হচ্ছিল সবুজ মখমলের মধ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। পথেই পড়বে অর্কিড বাগান (টিকিট কেটে ঢুকতে হবে), সুন্দর মনোরম পরিবেশ। দেশী বিদেশী প্রচুর অর্কিডের সমারোহ এবং এপ্রিল মাসে গাছে কমলালেবু ঝুলতে দেখা এক বিরল অভিজ্ঞতা।
তাকদা-তে প্রবেশ করার পর মনে হলো আমরা কোন এক মেঘের দেশে ঢুকে পড়েছি। এখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল একটি হেরিটেজ বৃটিশ বাংলোতে (১৫ নং বাংলো)। বাংলো টি যেমন সুন্দর তেমনি বড়। ঘরের মধ্যে বৃটিশ আমলের কিছু আসবাবপত্র ও ফায়ার প্লেসটি মনে রোমাঞ্চ জাগায়। বাথরুমে অনায়াসে ফুটবল খেলা যায়, এতটাই বড়।
বাংলোর সামনে লনে বসে থাকলে সময় যে কোথা থেকে কেটে যাবে, বোঝাই যাবে না।
ভ্রমণের চতুর্থ দিন অর্থাৎ তাকদার দ্বিতীয় দিনে আমরা গিয়েছিলাম ভিউ পয়েন্ট, তিনচূলে, লামাহাটা ইকোপার্ক এবং লাভার্স পয়েন্ট। প্রতিটি জায়গা-ই অপূর্ব, দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, ফিরতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ফিরতে তো হবেই তাই ফিরে আসি বাংলোতে।
ভ্রমণের পঞ্চম দিনে আমাদের গন্তব্য হলো দাওয়াইপানি। পথে পড়লো সিক্সথ মাইল বাজার, খুব ই জমজমাট এক জনপদ। ঘন্টা দেড়েকের রাস্তা তাকদা থেকে দাওয়াইপানি, আমরা পৌঁছালাম দার্জিলিং এর নিকটবর্তী ছোট্ট একটি সুন্দর গ্রাম দাওয়াইপানি। নিরিবিলি, সুন্দর ছবির মতো একটি পাহাড়ী গ্রাম।
আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা হোমস্টে নামে একটি বাড়িতে, যে বাড়ির সামনে লনে দাঁড়ালে একদিকে সূর্যোদয় এবং অপরপ্রান্তে সূর্যাস্ত দেখা যায়। এখানে আমরা পায়ে
হেঁটে পাহাড়ী রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। দাওয়াইপানি থেকে রাতে আলোকজ্জ্বল দার্জিলিং শহরের দর্শন এক অনাবিল আনন্দ প্রদান করে। এখানে আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র একদিন, তাই যাওয়ার সময় মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল, আরও একটা দিন থাকলে খুব ভালো লাগতো।
এরপরে আমাদের গন্তব্য ছিল পাহাড়ের রানি, সর্বকালের অন্যতম সেরা ভ্রমণ ক্ষেত্র দার্জিলিং। দাওয়াইপানি থেকে মাত্র একঘন্টার পথ। পথে আমরা ঘুম মোনাস্ট্রী ও বাতাসিয়া লুপ দেখে হোটেলে গিয়ে লাঞ্চ করি। দার্জিলিং এ আমরা ছিলাম "দার্জিলিং প্যালেস হোটেল" - এ। হোটেল টি বেশ ভালো এবং ম্যালের খুব কাছে। খাবারের মান খুব-ই ভালো। অনেকদিন পর দার্জিলিং এ ভালো মাছ খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তাকদায় কিছু মাছ পাওয়া গেলেও সিটং ও দাওয়াইপানি তে মাছ পাওয়া যায় না, ডিম ও মুরগির মাংস ভরসা। সারা বিকেল ও সন্ধ্যা ম্যালে সময় কাটানো।
পরেরদিন সকালে টয় ট্রেন ভ্রমণ (জয় রাইড), দার্জিলিং থেকে ঘুম এবং ঘুম থেকে দার্জিলিং ফিরে আসে দেড় ঘণ্টার যাত্রায়। এরপরে কিছু দ্রষ্টব্য স্হান দর্শন করে হোটেলে ফিরে আসা এবং লাঞ্চের পর ম্যালে রাত পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করা।
ভ্রমণের শেষ অর্থাৎ অষ্টম দিন আমাদের ফেরার পালা। সকাল সাড়ে ১১টায় হোটেল ছেড়ে আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের দিকে রওনা দিই। পথে কিছু কেনাকাটা ও লাঞ্চ করে বিকেল চারটার সময় আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছাই, রাত ৮টা১৫ মিনিটের শিয়ালদহ গামী দার্জিলিং মেল ধরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
এই ছিল আমাদের অফবিট দার্জিলিং ভ্রমণের ইতিকথা।
এমন কোন বাঙালি নেই যে যিনি দার্জিলিং যাননি। আমরা-ও এর অন্যথা নই, একাধিকবার জমজমাট কোলাহল পূর্ণ দার্জিলিং ভ্রমণ করেছি কিন্তু গ্রামীণ দার্জিলিং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এই প্রথম এবং এককথায় অনবদ্য।
নিরিবিলি পরিবেশে, চারিদিকে সবুজের সমারোহ, পাখির কলতানি এবং কমলালেবুর বাগান ঘেরা হোমস্টে তে থাকা যেন প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া- এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।এর রেশ অন্তরে থেকে যাবে বহুদিন।
এটা সম্ভব হয়েছে "Vacay Trips" অন্যতম কর্নধার Ms. Titir Sengupta র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এবং তাদের সংস্হার অনবদ্য নেটওয়ার্কের কারণে। ধন্যবাদ Vacay Trips এর প্রতিটি সদস্যকে, আপনারা আরও এগিয়ে চলুন, আমাদের অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
The content above is by our happy customer. He is not available in Facebook, so through whatsApp he forwarded me his feedback. Cannot display the contact but have taken the screenshot of his feedback and copied the same from whatsApp.
Thank you is not enough for this lovely feedback. 😊🙏