চরৈবেতি-the Wanderlust.

চরৈবেতি-the Wanderlust. কম খরচে ঘুরে বেড়ানো
(1)

08/04/2023
মাই কি মন্ডপ
13/11/2022

মাই কি মন্ডপ

আমি ❤️❤️
13/11/2022

আমি ❤️❤️

দুধধারা ফলসে
12/11/2022

দুধধারা ফলসে

কথা ছিল হেঁটে যাব ছায়াপথ
09/11/2022

কথা ছিল হেঁটে যাব ছায়াপথ

অমরেশ্বর শিব মন্দির
08/11/2022

অমরেশ্বর শিব মন্দির

চালানোর ক্ষমতা নেই, যদিও এতে পড়ার চান্স নেই🤣
08/11/2022

চালানোর ক্ষমতা নেই, যদিও এতে পড়ার চান্স নেই🤣

এখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। কি ভালো লাগছিল, বলে বোঝানো যাবে না, ছবিতে বোঝা যাচ্ছে না, ঝিলটা বিশাল বড়
08/11/2022

এখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। কি ভালো লাগছিল, বলে বোঝানো যাবে না, ছবিতে বোঝা যাচ্ছে না, ঝিলটা বিশাল বড়

Jain temple, Amarkantak
07/11/2022

Jain temple, Amarkantak

দুর্গাপুজোয় উত্তর, কালীপুজোয় দক্ষিণ, থাকি পূর্বে, তাই এবার যাত্রা পশ্চিমে.... অমরকণ্টকের পথে.... নর্মদে হর 🙏🙏
04/11/2022

দুর্গাপুজোয় উত্তর, কালীপুজোয় দক্ষিণ, থাকি পূর্বে, তাই এবার যাত্রা পশ্চিমে.... অমরকণ্টকের পথে.... নর্মদে হর 🙏🙏

28/10/2022

Sunset

অসাধারণ লাগলো, আবার আসবো❤️
28/10/2022

অসাধারণ লাগলো, আবার আসবো❤️

পছন্দের ছবি
27/10/2022

পছন্দের ছবি

দক্ষিণের প্রথম মন্দির দর্শন
27/10/2022

দক্ষিণের প্রথম মন্দির দর্শন

সারাদিন আল্লেপীতে ঘুরে বেরিয়ে রোদের তাপে ভূতের খুকি হয়ে এখন রাতের ট্রেন ধরলাম....গন্তব্য ত্রিবান্দ্রম
26/10/2022

সারাদিন আল্লেপীতে ঘুরে বেরিয়ে রোদের তাপে ভূতের খুকি হয়ে এখন রাতের ট্রেন ধরলাম....গন্তব্য ত্রিবান্দ্রম

যার যেখানে বসার কথা আর কি!!!
26/10/2022

যার যেখানে বসার কথা আর কি!!!

জায়গাগুলোতে একটা অদ্ভুত শান্তি আছে, সকাল সকাল Alleppey থেকে চলে এলাম....
26/10/2022

জায়গাগুলোতে একটা অদ্ভুত শান্তি আছে, সকাল সকাল Alleppey থেকে চলে এলাম....

গঙ্গোত্রী যমুনোত্রি 🛕🏞️দ্বিতীয় পর্ব: পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা গঙ্গোত্রী মন্দিরে পুজো দিতে গেলাম। মন্দিরটি একেবারে...
23/10/2022

গঙ্গোত্রী যমুনোত্রি 🛕🏞️

দ্বিতীয় পর্ব:
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা গঙ্গোত্রী মন্দিরে পুজো দিতে গেলাম। মন্দিরটি একেবারেই আমাদের ঘরের সামনে, কয়েক হাত দুরত্ব। কেদারে মারকাটারি ভীড় হলেও এখানে একেবারেই ভীড় নেই, লাইনে সব মিলে ১০-১২ জন দাঁড়িয়ে। পুজো দিয়ে তীব্র খরস্রোতা গঙ্গার সামনে বসে রইলাম কিছুক্ষণ, এত সুন্দর প্রকৃতি যে উঠতেই ইচ্ছে করছিল না। আলুর পরোটা খেয়ে গমুখের জন্য যাত্রা শুরু করতে ভীষণই দেরী হয়ে গেল, প্রায় ১০-৪০। যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি স্যাকে ভরে বাকি জিনিস একটা ব্যাগে পুরে ধর্মশালার ম্যানেজারের কাছে গচ্ছিত রেখে গেলাম। বেলা বেড়ে যাওয়ার জন্য রোদের তেজও খুব বেশি ছিল। কয়েক কিলোমিটার যেতেই বেশ কিছুটা সময় চলে গেল, আমাদের পিছনে আর কেউ নেই, আমরা গাইড ছাড়া এগোচ্ছি। আকাশে আস্তে আস্তে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেল, চিরবাসা তখনও পৌঁছতে পারিনি, হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলে অবস্থা ভীষণই খারাপ হতে পারে, কাল এত রাস্তা একবারে আসার ফলে শরীরটাও একটু ক্লান্ত ছিল, টেনশন হচ্ছিল, এসব ভেবে না এগিয়ে আমরা ফেরার সিদ্ধান্ত নি।

পরের দিন সকালে পাণ্ডব গুহা দেখে আমরা ৩০ কিমি দূরে হরশিল পৌঁছলাম। জায়গাটা অভাবনীয় সুন্দর, তবে বেশ কস্টলি। পৌঁছে হোমস্টে বা হোটেল খুঁজছিলাম, তবে gmvn এর লোকেশন দেখে অন্য কোথাও থাকতে ইচ্ছে করলো না। তবে অনলাইন বুকিং না থাকলে ওরা কোনোমতেই ঘর দিতে চাইলো না। আমি ওখানে বসেই অনলাইন বুকিং করে রুম নিলাম। gmvn এর রুম নিয়ে কিছু বলার নেই, যেমন ভালো লোকেশন, তেমনই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একদম নদীর পাড়ে ঘর, জানলায় বসে নদী উপভোগ করা যায়, তাছাড়া বাইরে সুন্দর কাচের ঘর করা আছে, বসার জন্য। যদিও আমাদের ওসবে পোষাবে না, আমরা সাজুগুজু করে নদীর পাড়ে বসলাম, সেখানে শুধু আমরাই আছি, আর কেউ নেই। অদ্ভুত লাগল, যারা ঘুরতে এসেছেন, আর gmvn এ থাকছেন, তারা কেউই নদীর পাড়ে আসার জন্য ২ মিনিটের পরিশ্রম না করে ওই কাচের ঘরে বসে বা নিজেদের রুমে বসেই এনজয় করছেন, আমার কাছে এগুলো ভীষণই বোকা বোকা লাগে, এত্ত সুন্দর একটা জায়গায় এসে কেউ কীকরে রুমে বসে থাকতে পারে, আমার জানা নেই।

জায়গাটা অভূতপূর্ব সুন্দর, অনেকটা পেহেলগাওয়ের মত ভিউ, সাথে পাহাড়ি নির্জনতা। দূরদূরান্ত অবধি মানুষ প্রায় নেইই, সামনে বরফগলা জলের ভাগীরথী নদী, যা আর কিছুটা পর থেকে গঙ্গা নাম ধারণ করে বইবে, নদীর পাড়ে প্রচুর নুড়ি পাথর, ওপারে পাইনবন, তার পিছনে বরফে ঢাকা পাহাড়। এখানে বসে বসে দিন কেটে যায়, আমি সিল্কের শাড়ি পড়েছিলাম, হাওয়ায় শাড়ি উড়ছে। ওই বরফগলা জলে নেমেই বেশ কিছু ছবি তুললাম, ভিডিও কলে কাছের মানুষদের দেখালাম জায়গাটা। সন্ধ্যার পর রুমে ফিরলাম, ইচ্ছে ছিল এখানে আরেকটা দিন থাকার, পাপিয়ার ইচ্ছে ছিল না। পরে শুধু হরশিলে এসেই ৩ দিন থাকবো প্ল্যান করলাম।

এরপরের গন্তব্য আমাদের বারকোট, জায়গাটি প্রায় ১২৫ কিমি দূরে। আমরা সকালে চেক আউট করে উত্তরকাশি যাওয়ার শেয়ার গাড়ির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে না পেয়ে এগোতে থাকলাম, পেয়েও গেলাম। কিন্তু আজ আমাদের কপাল খারাপ, ড্রাইভারটি বয়সে মাঝবয়সী হলেও সে নাকি নতুন চালানো শিখছে, সেদিন নিজের পরিবারের ৫ জন নিয়ে বেরিয়েছে, সাথে রাস্তায় প্যাসেঞ্জার পেলে তুলে নিচ্ছে। এবার তার যা গাড়ির গতি, আমাদের প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগলো। মাঝরাস্তায় অন্য গাড়ি পাওয়ার অপশন কম, তাই নেমে যেতেও পারলাম না, আর সে ধীরে সুস্থে উত্তরকাশি পৌঁছালো বিকেল সোয়া চারটেয়। রাস্তায় আসার সময় আমরা উত্তরকাশি জেলায় ঘটা দুর্ঘটনার কথা শুনলাম, যেটি গমুখ, তপবনের রাস্তায় ঘটেছিল, সরকারি হিসেবে ১৮ জন মারা গেছেন। ভাগ্যিস কাল ফিরে এসেছিলাম, নাহলে কি পোহাতে হত জানিনা, তার উপর গাইড ছাড়া যথেষ্ট সমস্যায় পড়তাম। ড্রাইভারটি গাড়ি এত্ত আস্তে চালাচ্ছিল,যে সব গাড়ি সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের ২.৫ ঘণ্টার জার্নি প্রায় ৬ ঘণ্টায় শেষ হল উত্তরকাশি পৌঁছে। পাপিয়া চাইছিল আরেকটু এগোতে, কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় বিশেষ করে বারকোটের দিকে আমি যাওয়ার ভরসা পেলাম না রাতের দিকে, যদিও গাড়িও ছিল না। কালি কমলি ধর্মশালায় থাকলাম। যদিও বেশ কিছুদিন পর বিকেলে পৌঁছে আমি মাংস ভাত খেলাম, মন ভালো হয়ে গেল।

পরদিন সকালে ৯-৩০ এ বারকোট যাওয়ার বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। প্রথম একঘন্টা পর থেকে রাস্তা আস্তে আস্তে মৃদু হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জন্য যথেষ্ট এমন দিকে এগোতে থাকলো। যথেষ্ঠ পরিমানে ধস নেমেছে জায়গায় জায়গায়, রাস্তা ভীষণই সরু, আর গোল গোল করে উঠছি একদম খাদের ধার ঘেঁষে, উল্টোদিক থেকে একটা গাড়ি আসলে আমাদের বাস তাকে সাইড করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কারণ রাস্তা এতটাই সরু। মাঝে ৩০ মিনিট ব্রেক দিয়ে আমরা প্রায় দুপুর ২-৩০ নাগাদ বারকোট পৌঁছলাম। ভাগ্যিস কাল রাতে এই রাস্তায় আসার দুঃসাহস দেখাইনি, নিজের দূরদর্শিতার জন্য নিজেই নিজের একটু পিঠ চাপড়ে দিলাম।

বারকোট পৌঁছে চিকেন ভাত খেয়ে একটা সুমোয় করে জানকী চটি পৌঁছলাম সন্ধ্যে ৬ টা নাগাদ। এখানে রাস্তায় বম্ব ফাটিয়ে পাহাড় ভাঙ্গা চলছিল, তাই বেশ কিছুক্ষণ এক্সট্রা সময় লাগলো। মাঝে দুবার উল্টোদিক থেকে দুটো গাড়ি ভুলভাল ভাবে এসে আর একটু হলেই আমাদের গাড়িকে ঠুকে দিচ্ছিল, দিলে দুটি গাড়িই খাদে পড়ত নিশ্চিত। এখানেও কালি কমলি ধর্মশালায় উঠলাম।

পৌঁছে গেছি চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মিনিট আগেই। এখন রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০-৫০ এ পরের ট্রে...
22/10/2022

পৌঁছে গেছি চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মিনিট আগেই। এখন রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০-৫০ এ পরের ট্রেন ১২৫১১ ধরবো, কাল সকালে এর্ণাকুলাম স্টেশনে পৌঁছব, মানে কোচি😀😀

রাজস্থান ভ্রমণ 🐫🏜️☀️🌄অষ্টম পর্ব: যোধপুর ভ্রমণ    বেরিয়ে অটো খুঁজছি আমার পরের গন্তব্য মেহেরেনগড় ফোর্ট যাবো বলে। যদিও তখ...
22/10/2022

রাজস্থান ভ্রমণ 🐫🏜️☀️🌄
অষ্টম পর্ব: যোধপুর ভ্রমণ

বেরিয়ে অটো খুঁজছি আমার পরের গন্তব্য মেহেরেনগড় ফোর্ট যাবো বলে। যদিও তখনও পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি। খাবারের কোনও দোকান চোখেও পড়ছে না। কারণ উমেদ ভবনের আশেপাশে খাবার দোকান রাখতে দেয়নি, তার জৌলুস কমে যাবে বলে হয়তো। মাত্র ৬ কিমি যাওয়ার জন্য অটো ৩০০ টাকা হাঁকাচ্ছে। এদিক সেদিক খুঁজছি, দেখি দুটো বাচ্চা ছেলে ২০-২১ এর শেয়ার অটো খুঁজছে। ভাবলাম ওদের সাথে কথা বলে দেখি, গন্তব্য এক হলে শেয়ারে চলে যাবো। কথা বলে জানলাম, ওরাও মেহেরানগড় ফোর্ট যাচ্ছে। অটোওয়ালা গুলো এমন জালি যে তিনজন দেখে এখন ৪০০ এর নিচে যাবে না বলছে। ওরা ততক্ষণে ওলা দেখছে। ভাগ্যক্রমে পাওয়া গেল, মাত্র ২২০ টাকা ভাড়ায় এসি গাড়িতে খুব ভালোভাবে মেহেরানগড় ফোর্ট পৌঁছে গেলাম।

কিন্তু এখানেই আমার মতিভ্রম হলো, আর প্ল্যানে গন্ডগোল করে ফেললাম। প্রথমত খিদে পেয়েছে, আর ফোর্টের আশেপাশে কোনও খাবারের দোকান নেই, তখন প্রায় ১২ টা বাজে, সকাল থেকে ঘুরছি, ফলে খিদেও যথেষ্ট পেয়েছে। ভাবলাম ফোর্টের কিছুটা আগেই (ওই হেঁটে ১০ মিনিট মত) রাও যোধা রক পার্ক রয়েছে, ওদিকটায় আগে ঘুরে আসি, কিছু না কিছু খাবার দোকান পেয়েই যাবো। কপাল খারাপ হলে যা হয়, একটা বিস্কুট অবধি পাওয়া গেল না কোথাও, এদিকে সামনে পৌঁছে গেছি। ভাবলাম এখানে আগে ঘুরে নি, তারপর বেরিয়ে কিছু খেয়ে তারপর ফোর্ট যাবো। ১০০ টাকা টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। টিকিটের সাথে এই রক পার্কে ঘোরার একটা রুট ম্যাপ দিল, সাথে বুঝিয়েও দিল। ভিতরে ঢুকে দেখি, আমরা ছোটবেলায় ভিডিও গেমে যেমন গলির ভিতরে গুহা, পাহাড়, জঙ্গল, জলপথ দেওয়া খেলা খেলতাম, জায়গাটা একদম তারই প্রতিচ্ছবি, অনেকটা ঝুলনের ছবির বাস্তবরূপ। ভিতরে গিয়ে দেখি, লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে, কিছু দূরে ৩ জনের একটা পরিবারের গলার অল্পস্বল্প আওয়াজ পাচ্ছি। রাস্তা যেখানে যেখানে বাঁক নিচ্ছে, পাথরের গায়ে সেখানে তীর চিহ্ন করা আছে, সেখানে আবার সবুজ, হলুদ, নীল, বেগুনি সার্কিট আলাদা। কিছুটা এগিয়ে বুঝলাম, ফেঁসে গেছি। খিদে পেটে পাথরের গা বেয়ে উঠতে মোটেই ভালো লাগছিল না, তার উপর তীর চিহ্ন ঠিকঠাক খুঁজে পাচ্ছিনা, আকাশ বেশ মেঘলা করে আসছে, ভিতরে একটা লোক নেই যে ঠিক পথে যাচ্ছি কিনা খোঁজ নেব, ফলে সময়, পরিশ্রম দুটোরই অপচয় হল। ছোট ছোট টিলা, জলপথ, কাঠের সাঁকো, জঙ্গল ঘুরে শেষ অবধি ভিউ পয়েন্টে পৌঁছতে পারলাম, এতটা পৌঁছতে প্রায় ৩৫ মিনিট চলে গেলেও এখান থেকে মেহেরনগড় ফোর্টের যে ভিউ পেলাম, তা এককথায় অসাধারণ। প্রায় দুপুর পৌনে একটা বেজে গেছে, কাল সন্ধেবেলা নান, বাটার চিকেন খাওয়ার পর এতটা জার্নি, রাত জাগার পর দুপুর গড়াতে চললো, আমার পেটে একটা দানা অবধি পড়েনি, তাই মাথাটা বেশ চক্কর দিচ্ছিল, কিন্তু এখান থেকে বেরোনো অত সহজ না, ফেরার সময় বেশ কয়েকবার পথ ভুল করে বেশ অনেকটা রাস্তা এক্সট্রা হাঁটলাম। দুটো ছেলে মেয়ের সাথে দেখা হল, ওরা আমার অনেক আগে বেরিয়ে এতটা ট্রেক করে আর রাস্তা ভুল করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে, বসে রেস্ট নিচ্ছে। রাস্তার ব্যাপারে আমার সেন্স বেশ ভালো, দিকনির্ণয় ছোট থেকে খুব ভালো করতে পারি। ওই বুদ্ধি খাঁটিয়েই বেরোতে পারলাম, ওরাও আমার পিছন পিছন এলো।

ততক্ষণে দুপুর প্রায় দেড়টা বাজে, গত দেড় ঘণ্টার ওই পরিশ্রমের পর আমার ভীষণ দুর্বল লাগছে। ওখান থেকে বেরোতেই জোর বৃষ্টি নেমে গেল। লোকজনকে খাবারের খোঁজ জিজ্ঞেস করায় জানলাম, প্রায় দু কিলোমিটার নিচে (যেহেতু জায়গাটি একটু পাহাড়ের উপর) কিছু খাবার দোকান আছে। দু কিমি হাঁটার তখন আমার আর জোর নেই, অটো করতে হবে, কিন্তু একটা অটোর দেখা নেই, এদিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে চলেছে। যেহেতু আমার পরের গন্তব্য মেহেরণগড় ফোর্ট, তাই সেখানকার ভিতরে কিছু খাবার পাওয়া যায় কিনা জিজ্ঞেস করলাম,কারণ বাইরে যে কিছু নেই, সেটা কিছুক্ষণ আগেই স্বচক্ষে দেখে এসেছি। জানলাম, বাইরে দোকান না থাকলেও ভিতরে কিছু খাবার পাওয়া যায়, তবে তার অতিরিক্ত দাম। যা হোক, খাবার পাওয়া যায় শুনেই খুশি হলাম। ছাতা মাথায় দিয়েই ফোর্টের সামনে এলাম, তখন বৃষ্টি একটু কমের দিকে।

বেশ ভালো চেকিং করে ঢুকতে হলো, ২০০ টাকার টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে একটা ছোট্ট ক্যাফে পেলাম, ১০০ টাকা দিয়ে একটা ভেজ বার্গার খেলাম। ততক্ষণে বৃষ্টি আর নেই, আকাশ পরিষ্কার, পেট না ভরলেও ক্ষিদের জ্বালা নেই, অতএব জায়গাটা মন ভরে দেখতে শুরু করলাম। এত বড় ফোর্ট আমি আগে কখনো দেখিনি, অসাধারণ সুন্দর কারুকাজ, বেশ ৪-৫ তলা এই ফোর্টের খিড়কি থেকে নীল শহর দেখা যায়, যোধপুরকে ব্লু সিটি বলা হয় কারণ এই শহরের প্রায় সব বাড়ি নীলচে রঙের। ফোর্টের মধ্যে মন্দির, মিউজিয়াম, কেনাকাটার মার্কেট, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট সবই আছে। ফোর্টের ভিতরে অস্ত্রশস্ত্র, পেইন্টিং, রাজাদের ব্যবহার্য সামগ্রী, পাল্কি, সিংহাসন, হওদা (হাতির উপরে বসার আসন), শিশমহল (সম্পূর্ণ কাচের কারুকাজ), ফুলমহল, মোতিমহলে চোখ ধাঁধানো কারুকার্য রয়েছে। ফোর্টের ছাদের উপরে প্রায় ১৪-১৫ টা কামান রয়েছে। চারিদিকে বিশাল উচুঁ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা সম্পূর্ণ ফোর্টটি, তার বাইরে জলাশয় দ্বারা চারদিকে ঘেরা, তাই ভীষণই সুরক্ষিত। সম্পূর্ণ ফোর্টটি ঘুরতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লেগে যায়। ওখান থেকে বেরিয়ে কাছেই যশবন্ত থাডায় গেলাম, পায়ে হাঁটা দূরত্বে।

গঙ্গোত্রী যমুনোত্রি 🏞️🛕প্রথম পর্ব:   ঠিক ১২০ দিন আগে জুন মাসের শুরুতে সকাল ৭-৫০ থেকে এক অলিখিত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ট...
22/10/2022

গঙ্গোত্রী যমুনোত্রি 🏞️🛕
প্রথম পর্ব:

ঠিক ১২০ দিন আগে জুন মাসের শুরুতে সকাল ৭-৫০ থেকে এক অলিখিত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে টিকিট কাটতে বসেছিলাম, ৮-০১ এ যখন কনফার্ম টিকিট সাথে পছন্দের সাইড লোয়ার সিট পেলাম, তখন স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধজয়ের হাসি। যেহেতু উত্তরাখণ্ড অনেকবার ঘোরা, আর সম্পূর্ণ ম্যাপ সম্মন্ধে বেশ পরিস্কার ধারণা আছে, তাই তেমন কিছু পড়াশুনা করার দরকার পড়েনি। প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় পূরবী দি আর সৈকতদাকে ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম। আমি যেকোনো ট্রিপ প্ল্যান করার সময় সবসময় প্ল্যান বি ব্যাক আপ হিসেবে রেখে দি, এবারও তার অন্যথা হলোনা। তবে বেশ কিছু কাজে পুজোর আগের শেষ কিছুদিন ভীষণ ব্যস্ত থাকায় ব্যাগটুকু অবধি গোছানোর সময় পাইনি যাওয়ার আগের দিন অবধি, তবে একদিন আগে একটা লিস্ট বানিয়ে রেখেছিলাম বটে, বেরোনোর দিন সেই লিস্ট মিলিয়ে ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দি।

পুজোর আগে শেষ অফিস ছিল চতুর্থীতে। সকাল সকাল রুকস্যাক গুছিয়ে অফিস গেলাম। পুরো অফিস শেষ করে অফিসের বাইরেই মেট্রো ধরে শিয়ালদা পৌঁছে বাস ধরে চতুর্থীর সন্ধেবেলায় শিয়ালদা হাওড়ার রাস্তায় যথেষ্ট জ্যাম অতিক্রম করে হাওড়া পৌঁছলাম ৭-২০ তে। আজ অবধি পুজোতে কখনো বাইরে যাইনি, গেলেও নবমীর আগে তো নয়ই, কিন্তু গতবছর ষষ্ঠীতে শ্রীভূমি আর সপ্তমীতে কুমারটুলি গিয়ে আমার পুজো দেখার আর ইচ্ছে হয়নি, বাকি দিনগুলো রেস্টুরেন্টে খেয়ে কাটিয়েছিলাম। তাই ঠিক করেই রেখেছিলাম এবারের পুজোটা পুরোটাই বাইরে কাটাবো। তবে এবারে আর আমি একা নই, আমার সঙ্গী পাপিয়ার সাথে ৮-০৫ এ দেখা হলো। দুজনে টুকটাক ছবি তুলে ট্রেনে উঠে পড়লাম, ৮-২৫ এ ট্রেন ছেড়ে দিল, এবারে আমার দুন এক্সপ্রেসে যাত্রা, যাতে পুরো সময়টার সঠিক ব্যবহার করতে পারি। তবে এই ট্রেনে প্যান্ট্রিকার নেই, তাই যথারীতি খাবারের সমস্যা। আর অদ্ভুতভাবে ট্রেন এতগুলো স্টেশনে থামছে, কিন্তু প্রায় কোথাও কোনও খাবার তো উঠছেই না, উপরন্তু স্টেশনে অবধি খাবার নেই। পাপিয়ার বাড়ি থেকে আনা খিচুড়ি খেয়ে প্রথম রাত্রি ভালো কাটলেও পরের সারাদিন আমাদের কপালে কেক, বিস্কুট, চিপস ছাড়া প্রায় কিছুই জুটলো না, রাতে যদিও পাপিয়া অনেক দৌড়ে শেষ অবধি কলা জোগাড় করেছিল, সেই দিয়েই ডিনার হলো।

প্রায় ৩৬ ঘণ্টার জার্নি শেষে সকাল সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও প্রায় ৮-৩০ এ পৌঁছলাম ঋষিকেশ স্টেশনে, স্টেশনটা দেখেই মন ভরে গেল, এত্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও এতটা সাজানো গোছানো একটা স্টেশন হতে পারে, আমি অন্তত প্রথমবার দেখলাম, স্টেশন থেকেই দূরে পাহাড় দেখা যায়। বেরিয়ে টোটো করে বাস স্ট্যান্ডে এসে উত্তরকাশি যাওয়ার বাসের টিকিট কেটে ভেজ বিরিয়ানি আর হাফ আলুর পরোটা সক্কাল সক্কাল খেয়ে বাসে উঠে বসলাম (গ্যাস অম্বলের সমস্যা নেই, তাই যা খুশি খাই)।

উত্তরকাশী পৌঁছলাম বিকেল ৪-৩০। প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যেই সমতল ছেড়ে ধীরে ধীরে উচ্চতায় উঠতে শুরু করলো আমাদের বাস। কেদার বদ্রির মত ভীড় একেবারেই নেই এই রাস্তায়, অল্প কিছু গাড়ি পার হচ্ছে, বাসে বাইরের টুরিস্ট বলতে শুধু আমরা দুইজনেই। রাস্তা বেশিরভাগ জায়গায়ই ভীষণ ভালো, ৫% ভাঙ্গা রাস্তা, তাও ধসের কারণে, যা অহরহ হতে থাকে এই রাস্তায়। মাঝে রাস্তায় একবার ব্রেক দিলেও তখনও ক্ষিদে একদমই না পাওয়াতে টুকটাক ছবি তুলে বাসে উঠে পড়লাম। ঠান্ডার সেরকম ভাব এখনও শুরু হয়নি, বরং রোদের তেজ যথেষ্ট। বাস যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে ভাগীরথী নদী নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, আমরা বেশ উপর থেকে বসে দেখছিলাম। এরপর রাস্তায় তেহেরি ড্যাম পড়ল, কি অসাধারণ সি গ্রিন জলের রং, আমাদের পাশ পাশ অনেকক্ষণ চললো, আর চারপাশের প্রকৃতি, এত্ত দুষণবিহীন অক্সিজেন নিচ্ছিলাম যে কলকাতার পুজোর কথা মনেই পড়ছিল না।

উত্তরকাশী পৌঁছে আর শেয়ার গাড়ি পাওয়ার আশা প্রায় ছিলই না, কারণ তখনও প্রায় ১০০ কিমি বাকি আর বিকেল হয়ে গেছে, কালি কমলি আর বিড়লা ধর্মশালা আছে দেখে রাখলাম, তবু শেষ চেষ্টা করতে প্রায় ৫০০ মিটার দূরের গাড়ির স্ট্যান্ডে একবার গেলাম। কপাল ভীষণই ভালো ছিল, স্ট্যান্ডে গিয়ে সাথে সাথে গঙ্গোত্রী যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পেয়ে গেলাম। দুপুর ৩ টে থেকে নাকি গাড়িটা দাঁড়িয়ে, ৮ জন প্যাসেঞ্জার নিয়ে বসে আছে, ২ জনের অপেক্ষা আমাদের দিয়ে পূর্ণ হলো। আমরা গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছাড়লো, তখন প্রায় ৫ টা বাজে। আমরা দুজনে গাড়ির সামনে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বড় ঝর্না পড়ল, আমরা গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে ছুটলাম। এখানে শেয়ার গাড়ি ওভাবে থামে না, তবে আমাদের জন্য থামলো।

গঙ্গোত্রী পৌঁছলাম রাত পৌনে ৯ টায়। এই শেষ ১০০ কিমি রাস্তা সত্যিই মনে রাখার মত ছিল, কারণ বেশ সরু রাস্তা, অল্প বৃষ্টি হচ্ছে, আর প্রথম ৩০ কিমি যাওয়ার আগেই সূর্য অস্ত গেছে। এই রাস্তায় যারা গেছেন, তারা জানেন রাতের দিকে এই রাস্তায় গাড়িতে যাওয়া কতটা রিস্কি, তবে সামনের সিটে বসে এই অ্যাডভেঞ্চার আমি বেশ এনজয় করলাম। কখনো আস্তে কখনো জোরে বৃষ্টি হতে থাকলো। অন্ধকার রাস্তা সাথে বৃষ্টি, ব্যাপারটায় একটা রোমাঞ্চ আছে, যদিও সরু রাস্তা যথেষ্ট, একটু বেকায়দা হলে ওখানেই শেষ। মাঝে রাস্তায় আমাদের সামনে এক গাড়ি আটকে গেল, কিছুতেই এগোতে পারেনা, শেষে আমাদের গাড়ির আরও কিছু ড্রাইভার মিলে কোনোভাবে গাড়িটাকে পার করল। বৃষ্টি বলে ঠান্ডা বেশ বাড়ছে, আমাদের হাতের কাছে কোনও গরম জামা নেই, যদিও গাড়ির ভিতরে অত অসুবিধে হচ্ছিল না।

সমতল থেকে প্রায় ২৭৬ কিমি পাহাড়ে উঠে গাড়ি থেকে নেমে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কালি কমলি ধর্মশালায় পৌঁছলাম রাত্রিবাসের জন্য। সকাল থেকে প্রায় কিছুই পেটে পড়েনি, ডাল আলুর তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে বেরোনোর সময় গঙ্গোত্রী মন্দিরের এক পূজারীর সাথে পরিচয় হল, উনি ওনার এক আত্মীয়ের কাছে নিয়ে গেলেন, যিনি গঙ্গোত্রীর সেক্রেটারি। উনি আমাদের জন্য লেটার প্যাডে লিখে দিলেন, ওটাই আমাদের পাস হয়ে গেল গোমুখ যাওয়ার। রাতে ঘরে ফিরেই শুয়ে পড়লাম।

দুর্গাপুজোয় উত্তরে গেলে কালীপুজোয় তো দক্ষিণে যাওয়া চাইই 😁😁আবার একাই বেরিয়ে পড়লাম, যদিও সেটাই পছন্দ (সাথে Durga Chat...
21/10/2022

দুর্গাপুজোয় উত্তরে গেলে কালীপুজোয় তো দক্ষিণে যাওয়া চাইই 😁😁
আবার একাই বেরিয়ে পড়লাম, যদিও সেটাই পছন্দ (সাথে Durga Chattopadhyay এর টিকিট ছিল, যেতে পারলো না)


রাতের গঙ্গা
02/10/2022

রাতের গঙ্গা

রাজস্থান ভ্রমণ 🐫🌅🏜️⛺☀️সপ্তম পর্ব:    পরশু সকালে বিকানির পৌঁছানোর পর সারাদিন বিকানির ঘুরে রাতের ট্রেনে মাঝরাতে বিকানির থে...
11/09/2022

রাজস্থান ভ্রমণ 🐫🌅🏜️⛺☀️

সপ্তম পর্ব:

পরশু সকালে বিকানির পৌঁছানোর পর সারাদিন বিকানির ঘুরে রাতের ট্রেনে মাঝরাতে বিকানির থেকে জইসলমির পৌঁছে সারাদিন জইসলমীর ঘুরে আবার রাতের ট্রেনে মাঝরাতে জইসলমির থেকে যোধপুর পৌঁছে যখন ঘুমোতে গেলাম রাত তখন প্রায় ৪ টে, পরেরদিন সকালে ৮ টার আলার্মটা দিতে এতটুকু ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু উপায় কি, আমাকে তো পুরো যোধপুর দেখা সন্ধ্যার মধ্যে শেষ করতে হবে।

সকাল সাড়ে সাতটার আগেই ঘুম ভেঙে গেল। কিছুক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে ৮ টায় উঠে স্নান সেরে সাজুগুজু করে সকাল ৯ টার আগেই বেরিয়ে পড়লাম। স্টেশনের বাইরে বেশ জমজমাট। বেশ কটি ছোটখাটো খাবারের দোকান, সেখানেও আগের দিনগুলোর মতোই পিয়াঁজ কচুরি বিক্রি হচ্ছে। গত দুদিন ওই তেলে ভাজা কচুরি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম, যদিও আমার গ্যাস অম্বলের সমস্যা নেই, তবু সকাল সকাল ওই ডুবো তেলে ভাজা খাস্তা কচুরি কাহাতক আর গলাধঃকরণ করা যায়। ভাবলাম, আজ সাধারণ কচুরি/পরোটা/পুরি/লুচি/রুটি বা হালকা কিছু খেয়ে নেব, যদিও এটা যে আমার জন্য কাল হবে, সেটা তখন ভাবিনি, সে কথা পরে বলছি।

স্টেশনের বাইরে প্রচুর অটো দাঁড়িয়ে, ছোটখাটো দোকানপাটও নেহাৎ কম নেই। টুরিস্ট বুঝতে পেরেই অটোওয়ালারা ছেঁকে ধরেছে, আমি ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছি, কারণ অটো রিসার্ভ করে ঘোরার পাবলিক আমি নই, তাতে সারাদিন কমপক্ষে ১.৫ থেকে ২ হাজার খরচ। একটু এগিয়ে যাকেই জিজ্ঞেস করি, তারা অটো রিসার্ভ করার কথাই বলছে। এক ফলওয়ালা মনেহয় আমার ইচ্ছেটা বুঝেছিল। উনি আমাকে একটি বাস ধরে একটা স্টপেজে নেমে পরের বাস ধরে উমেদ ভবন যেতে পরামর্শ দিলেন। আমিও ওনার কথামত প্রথম বাসে উঠে নির্দিষ্ট স্টপেজে নেমে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু পরের বাস আর আসে না, প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর অন্য একটি বাসে উঠে পড়লাম, সেটি উমেদ ভবনের বেশ কাছাকাছি দিয়ে যায়, ভাবলাম বাকিটুকু হেঁটে চলে যাবো।

বাস থেকে নামার পর গুগল দেখে হাঁটতে শুরু করলাম, কিছুটা এগিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করায় বললো, কিছুটা সামনেই গেট আছে, কিন্তু এখন ওখান থেকে মাঝে মাঝেই ঢুকতে দিচ্ছে না, আপনি চেষ্টা করে দেখুন, কারণ নাহলে প্রায় ৩ কিমি এক্সট্রা ঘুরে যেতে হবে। সকাল থেকেই আমার ভাগ্য আমার সাথে বিট্রে করছিল, তাই ওই গেট দিয়ে কিছুতেই ঢুকতে পারলাম না। উমেদ ভবনে তাজের রেস্টুরেন্ট আছে, যাদের সেখানে বুকিং আছে, শুধুমাত্র তারাই ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আমার মাথায় হাত, এখন প্রায় ৩ কিমি আমাকে এক্সট্রা ঘুরে যেতে হবে, আর ওই রাস্তায় অটো বা অন্য কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চোখে পড়ছে না। এতটা হাঁটা কম ব্যাপার না, তার থেকে বড় কথা, অনেকটা সময় চলে যাবে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও যখন অটো পেলাম না, তখন লিফ্ট নেওয়ার কথা ভাবলাম। ভাগ্যক্রমে এক মিনিটের মধ্যে পেয়েও গেলাম। একজন প্রায় ১১০ কিলোর মানুষ স্কুটি চালাচ্ছে, আমি পিছনে বসে, ছোটখাটো মানুষ বলে যেতে পারছি। উনি বললেন, উনি উমেদ ভবনের ওই দিকেই যাচ্ছেন, আমাকে গেটের মুখে ছেড়ে দিলেন। তবে উনিও নাকি গাইড, ১০০০ টাকায় সারাদিন ঘোরাবেন। কিন্তু সবাইকে দেখে সবসময় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করেনা, কাল ভগবান সিং জিকে এক দেখাতেই যেমন ভীষণ বিশ্বস্ত মনে হয়েছিল, এনাকে আমার সেরকম লাগলো না। যেহেতু শুনলাম উনি গাইড, তাই এই রাস্তাটুকুর জন্য আমি টাকা দিতে গেলাম, উনি নিলেন না, ফোন নম্বর নিলেন, বললেন উনি কাছাকাছি থাকবেন, উমেদ ভবন ঘোরা হয়ে গেলে আমি যদি ওনার সাথে ট্রিপ করি, তাহলে যেন ফোন করি।

যদিও আমি মনস্থির করে ফেলেছি, যে আমি এখানে একাই ঘুরবো, যেহেতু একেকটা জায়গার মধ্যে দূরত্ব কম, আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যথেষ্ট আছে বলেই জানি, তাই ১০০০ টাকা খরচ করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই।

উমেদ ভবনটি চিত্তর পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এখানে আসার সময় একটি অভিজাত অঞ্চলের পাশ দিয়ে এলাম, শুনলাম যোধপুরের বিত্তবানরা এদিকে থাকেন। ৬০ টাকার টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম। উমেদ ভবনটি মূলত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত, ১. রাজপ্রাসাদ, যেখানে রাজ পরিবারের মানুষরা থাকেন, ২. তাজ গ্রুপের হোটেল, এই অংশটি বর্তমানে তাজ গ্রুপ সামলাচ্ছে, উমেদ ভবনের এই অংশে থাকার খরচ দিনপ্রতি ৫০ হাজারেরও বেশি, ৩. মিউজিয়াম, যেখানে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারে, এখানে রাজার বিভিন্ন সামগ্রী রাখা আছে।

প্রায় ২৬ একর জমির উপর অবস্থিত এই প্রাসাদটি প্রায় ১৫ একর বাগান দ্বারা পরিবেষ্টিত। ১৯২৯ সালে তৈরি এই প্রাসাদটি তখনকার রাজা উমেদ সিংয়ের নামে নামাঙ্কিত, যিনি বর্তমান রাজা গজ সিংয়ের পিতামহ। প্রাসাদটির মধ্যে আছে সিংহাসন সহ দরবার, ৩৪৭ টি ঘর, বলরুম, ইনডোর সুইমিং পুল, ৩০০ মানুষ থাকতে পারে এমন banquet hall, প্রাইভেট ডাইনিং হল, লাইব্রেরী, বিলিয়ার্ড রুম, চারটে টেনিস কোর্ট, মার্বেলের দুটি স্কোয়াশ কোর্ট আরও কত কি। সাধারণ মানুষের জন্য মিউজিয়ামটি ছাড়াও একটি গাড়ির সংগ্রহশালা আছে, যেখানে ১০-১২ ক্লাসিক গাড়ি আছে। সবটা ঘুরতে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লেগে গেল।

রাজস্থান ভ্রমণ 🐪🏜️⛺☀️🥳ষষ্ঠ পর্ব:জইসলমিরের গাদিসার লেক সকালের নরম রোদে নির্জন রূপে যেমন ভালো লেগেছিল, ঠিক তেমনি পড়ন্ত বি...
08/09/2022

রাজস্থান ভ্রমণ 🐪🏜️⛺☀️🥳
ষষ্ঠ পর্ব:

জইসলমিরের গাদিসার লেক সকালের নরম রোদে নির্জন রূপে যেমন ভালো লেগেছিল, ঠিক তেমনি পড়ন্ত বিকেলে আবিররঙা আকাশের রং যখন লেকের শান্ত জলের উপর পড়ছিল, আশেপাশে একগুচ্ছ মানব কপোত কপোতীর ভিড়ে ততটাই সুন্দর লাগছিল। ভগবান সিং জি আমাকে লেকের ধার দিয়ে একটা পাঁচিল পার করে একটু উচুঁ এক জায়গায় নিয়ে গেলেন। আমি হাঁ হয়ে থাকলাম সেই দৃশ্য দেখে, দেখি সম্পূর্ণ সোনার কেল্লা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, আর সূর্যমামা কেল্লার পিছনে অস্ত যাচ্ছে।

সন্ধ্যে তখন প্রায় পৌনে আটটা, এবার আমার ঘরে ফেরার পালা। আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে ভগবান জী চলে গেলেন। এই ট্যুরে ওনার সাথে দেখা হওয়া স্বয়ং ভগবানের সাথে দেখা হওয়ার মত, উনি না থাকলে একদিনের মধ্যে আমি সম্পূর্ণ জয়সলমীর এত সুন্দর করে ঘুরতে পারতাম না। স্টেশনের রিটায়ারিং রুমে আমি ছিলাম, ঘরে যখন পৌঁছলাম রাত ৮ টা বাজে, রাত ৮ টা অবধিই আমার রুম বুকিং ছিল। ঝটপট স্নান করে তৈরি হয়ে ৮-৪৫ নাগাদ রুম ছেড়ে দিলাম। চাবি ফেরৎ দেওয়ার সময় ওই বাচ্চা মত রেলের ছেলেটি যে কাল মধ্যরাতে আমাকে চাবি দিয়েছিল, তাকে ফেরৎ দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে নিলাম। ভারতীয় রেল নাকি বেশ কয়েক কোটি টাকা অনুমোদন করেছে এই স্টেশনের মান উন্নয়নের, পরের বার এলে আরও ভালো রুম পাবো সেই আশ্বাস দিল।

আজ রাতের ১০-৩০ এর ট্রেনে আমি জইসলমীর থেকে যোধপুর যাবো, যোধপুরে পৌঁছবে রাত ৪ টে নাগাদ, তবে শেষ কিছুদিনের হিস্ট্রি দেখে বুঝলাম, ট্রেনটি তার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১ ঘণ্টা আগে মানে রাত ৩ টে নাগাদ পৌঁছাবে। আবার ট্রেনটির গন্তব্য স্টেশন যেহেতু যোধপুর নয়, তাই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েও পড়তে পারবো না, নাহলে ঘুম ভেঙে হয়তো দেখবো আমি অন্য কোনও রাজ্যে পৌঁছে গেছি।

ট্রেনের তখনও ঘন্টাখানেক দেরী, স্টেশনে বসে আমি কিছু আকাশকুসুম কল্পনায় নিমজ্জিত, এমন সময় হটাৎ ৩ টি ছেলে উপস্থিত, একটি সামনে, বাকি দুটি পিছনে। দিনটি রাখি পূর্নিমার ছিল। সামনের ছেলেটি বলল যে দিদি আজ তো রাখি, আমাদের এখনও রাখি পরা হয়নি, যদি আপনি পরিয়ে দেন। কথাটা শুনে মুহূর্তের মধ্যে মাথার মধ্যে যেন কারেন্ট খেলে গেল, আমি আমার টাকা, মোবাইল, ক্যামেরার ছোট্ট ব্যাগটা খপাৎ করে ধরে নিয়ে কাঁধে পেঁচিয়ে নিলাম। আর মুখে না বলে কাটিয়ে দিলাম। কোনও ক্ষতি হয়নি ঠিকই, কিন্তু আমি নিশ্চিত ওরা ব্যাগ ছিনতাইয়ের প্ল্যানে ছিল। এমনিতেই আমি ওদের ভাষায় বিদেশি, তায় মেয়ে, অত রাতে স্টেশনে একা বসে, ওরা বুঝে নিয়েছিল, রাখী পরানোর অছিলায় ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেবে। আর রাখীর জন্য আমার দুই হাত বন্ধ থাকবে, ফলে ব্যাগ তুলে নিতে কোনও সমস্যাই হবেনা। কারণ এদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হত, স্টেশনে আমি ছাড়াও বেশ কিছু মহিলা ছিলেন পরিবার সমেত, তাদের কাছে গিয়ে তো এরা রাখী পরানোর কথা বলতে পারতো, তা তো বললো না, বরং আমি না করায় অন্য কাউকে এই কথা অ্যাপ্রোচ করতেও দেখলাম না।

তবে এই ঘটনার পরের ১ ঘণ্টা আমি আর স্টেশনের খোলা জায়গায় না বসে এসি ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করলাম। ১০-৩০ এ ট্রেনটি এখান থেকেই ছাড়বে, তাই ১০ টার আগেই ট্রেন দিয়ে দেওয়াতে নিজের বার্থ খুঁজে উঠে পড়লাম, এখানেও সাইড আপার। সামনের সিটের মহিলাটিকে বলে রাখলাম যে ট্রেন যোধপুর এলে যেন আমাকে ধাক্কা মেরে তুলে দেয়, সাথে ৩-৩০ এর অ্যালার্ম দিয়ে রাখলাম। সারাদিনের ক্লান্তি যথেষ্ট ছিল, ট্রেন ছাড়তেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাত ৩-১০, আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, পৃথিবী রসাতলে গেলেও টের পাব না। হটাৎ দেখছি, কেউ আমায় ধাক্কা দিয়েই চলেছে। উঠে দেখি, সামনের সিটের মহিলা। ট্রেনটি নিজের রেকর্ড মত ১ ঘণ্টা আগেই মানে রাত ৩ টেয় পৌঁছে গেছে। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে তখন ১০ মিনিট অলরেডি অতিক্রান্ত, আমি অবশ্যই টের পাইনি, ভাগ্যিস ওনাকে বলে রেখেছিলাম, যদিও ৪ টের আগে ছাড়বেনা, এটা নিশ্চিত।

ট্রেন থেকে নেমে দেখি যোধপুর বেশ বড়সড় একটা স্টেশন, রাত ৩টে তেও গমগম করছে। রিটায়ারিং রুম খুঁজে ঘরে ঢুকলাম। বেশ ভালো ঘর। ব্যগপত্তর সোফায় ফেলে এসি চালিয়ে ঘরটাকে একটু ঠাণ্ডা করতে দিয়ে জল খুঁজতে বেরোলাম। রেল পুলিশের অফিসের আকোয়াগার্ড থেকে ফ্রীতে ২ বোতল জল ভরে ঘরে ঢুকে স্নান করে বাকি ঘুমটুকু সম্পূর্ণ করতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

রাজস্থান ভ্রমণ 🌅🐫🏜️⛺☀️😀      পঞ্চম পর্ব: অমর সাগর লেক দেখে এরপর আমরা যাবো স্যাম স্যান্ড ডিউনস দেখতে। ভগবান সিং জি বেশ কি...
03/09/2022

রাজস্থান ভ্রমণ 🌅🐫🏜️⛺☀️😀

পঞ্চম পর্ব:

অমর সাগর লেক দেখে এরপর আমরা যাবো স্যাম স্যান্ড ডিউনস দেখতে। ভগবান সিং জি বেশ কিছুটা শর্টকাট রাস্তা ধরে চললেন রাস্তা ছেড়ে মাঠের উপর দিয়ে, কিছুটা পথ গিয়ে দেখি জলের ধারা, ফিরে আসতে হলে আবার ৪/৫ কিলোমিটার এক্সট্রা যেতে হবে, তাই সাহস করে ওই জলের উপর দিয়েই বাইক ছোটানো হল, ভীষণ দক্ষ হাতে গাড়ি চালিয়ে জলের ধারা, আমাদের গভীরতাহীন ছোটখাটো পুকুরের মত জায়গা পার করলেন। আমি তো ভয়ে ছিলাম, এই বুঝি পড়ব, আর স্নান করে উঠবো, তবে এই যাত্রা জলের ছিটেয় ওই জুতোটুকুই ভিজলো। আরও বেশ কিছুটা মেঠো পথ ধরে গিয়ে বড় রাস্তায় উঠলাম। প্রায় ৩৭ কিমি দূরে এই স্যাম স্যান্ড ডিউনস। মরুভূমি বলতে আমরা যে দূর দূরান্তব্যাপী বালিয়াড়ি বুঝি, এটি সেই জায়গা। এখানে বেশ কিছু টেন্ট আছে, ভাড়া পাওয়া যায়, থাকা খাওয়া সমেত একেকজনের মোটামুটি ২-৩ হাজার টাকা খরচ, এটা আরও বাড়তে পারে সিঙ্গেল থাকলে। বেশিরভাগ মানুষই এখানে সূর্যাস্ত দেখে রাত্রিবাস করেন। কিন্তু যেহেতু আমি একা, তাই কিছুটা সেফটি ইস্যুর জন্য রাত্রে থাকলাম না। তবে পরে কখনো অন্তত দুজন এলেও অবশ্যই একরাত থাকবো। এখানে কিছুটা দূরে দূরে বিভিন্ন এজেন্সির তাঁবু খাটিয়ে রাখা আছে, স্যাম স্যান্ড ডিউনস তাদেরই একটি, তবে এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এখানেই থাকেন। তবে রাস্তায় ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে বেশ ৩/৪ টে ৩ তারা ৫ তারা হোটেল আছে, যেগুলি দেখতে একেকটি প্রাসাদের মত। আমি যখন বালিয়াড়িতে পৌঁছলাম, তখন প্রায় দুপুর ৩ টে বাজে। দূর দূর পর্যন্ত আমি ছাড়া অন্য কোনও টুরিস্ট নেই। ভগবান সিং জি একটু দূরে তাঁর এক বন্ধুর দোকানে বসে একটু জিরোচ্ছেন। আমি একা একা বেশ কিছুদূর অবধি বালিতে ঘুরে বেড়ালাম। দেখি এক উটচালক রাজস্থানি পোশাক পরে গলায় রংবেরংয়ের স্কার্ফ জড়িয়ে উটের পিঠে চড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। প্রথম থেকেই ভেবে গিয়েছিলাম, যে উটের পিঠে আমি চড়ব না, আমার ওদের দেখলে কেমন মায়া হয়। এদিকে উটচালক সমানে আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে চলেছেন, বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে রাজি করাতে না পেরে নিজেই সরে পড়লেন। এখানে কখনও রোদের তীব্রতা বাড়ছে, কখনো সূর্যমামা পাতলা মেঘের চাদরের আস্তরণ গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছে বলে রোদের তেজ কমছে, তবে তাপ অব্যাহত। কিছুক্ষণ পর ভগবান সিং জি এসে বেশ কিছু ছবি তুলে দিলেন আমার। তখনই অল্প অল্প বালির ঝড় শুরু হলো বলে আর না এগিয়ে ফেরার জন্য রওনা দিলাম। ওই কয়েক মিনিটেই আমার চোখে মুখে মাথায়, জামায়, জুতোর ভিতরে, এমনকি আমার ছোট্ট সাইড ব্যাগের মধ্যে পর্যন্ত বেশ কিছুটা বালি ঢুকে গেল। এরকম শুকনো আবহাওয়ায় হটাৎ এরকম বালির হালকা ঝড় শুরু হতে পারে, এটা আমার একেবারেই ধারণা ছিল না।

এরপর আমার আজকের পরবর্তী ও অন্তিম গন্তব্য ছিল কুলধারা গ্রাম। প্রায় ১৫০ বছর আগে হটাৎ এক রাতে সম্পূর্ণ গ্রাম খালি হয়ে যায়। লোকমুখে শোনা যায়, গ্রামটি তেরোশ শতাব্দীতে ব্রাহ্মণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং গ্রামটির অধিকাংশ বা সকলেই ব্রাহ্মণ। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনও এক ক্ষত্রিয় রাজা (বা দেওয়ান) এই গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করার জন্য জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়, ব্রাহ্মণ পরিবেষ্ঠিত গ্রামের মানুষ এই বিয়ে মানতে পারেননি, তাই সেই রাজা (বা দেওয়ান) আসার আগেই নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি ওখানেই ফেলে রেখে প্রায় কপর্দকশূন্য হয়ে সেই রাতেই গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন। তাদের অভিশাপে আজ অবধি কেউ ওই গ্রামে বসবাস করতে পারেননি। এত বছর আগে ওখানকার ঘরবাড়ির নক্সা দেখলে আজও অবাক লাগে। জয়সলমিরের মত গরম জায়গায়ও ঘরগুলোর ভিতরে আজও কি ঠান্ডা। ঢুকলে মনে হয় যেন কুলার চলছে, এতটাই ঠান্ডা, বাইরে তখন ৩৬-৩৭ ডিগ্রি হলেও ঘরের মধ্যে ২৪-২৫ মত। একটা জানালাবিহীন অর্ধকার ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম, আমার পায়ের শব্দে ঘরের ৪-৫ টা বাদুর ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে উড়ে গেল আওয়াজ করতে করতে, আকস্মাৎ এরকম হওয়ায় একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম, সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছি ঘরটি থেকে। বাড়িগুলোর ছাদে ঘুরে বেড়ালাম, ছাদ থেকে পুরো গ্রামটা দেখা যায়। এরপর পায়ে হেঁটে পুরো গ্রামটা ঘুরে দেখলাম। কিছু মুনাফালোভী মানুষ এই গ্রামটিকে ভুতুড়ে বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন, যদিও এখানে ভূতের কোনও ব্যাপার নেই। ভগবান সিং জি পুরো গ্রামটা আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গল্প বলতে বলতে চললেন। এখানে স্থানীয় এবং বিদেশি কিছু টুরিস্ট দেখলাম। ভগবান সিং জি দেখি কিছু স্প্যানিশ মানুষের সাথে ওদের ভাষায় কিসব গল্প করছেন। তাঁর কথার অ্যাকসেন্ট পর্যন্ত ঠিকঠাক, অত ভালো অ্যাকসেন্টে আমি তো হিন্দি অবধি বলতে পারিনা। গাইড হিসেবে ওনার মত মানুষ পাওয়া এই ট্যুরে আমার সবচেয়ে বড় পাওনা ছিল। আমার সাথে উনি হিন্দি ইংরেজিতেই কথা বলছিলেন। এত জ্ঞান ওনার, দেখেও ভালো লাগে। উনি বিদেশের বেশ কিছু দেশে কিছু বছর করে কাটিয়েছেন, তাই ভাষার উপর দারুন দক্ষতা।

কুলধারা থেকে জইসলমীর প্রায় ৩৫-৩৬ কিমি দূরে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়া জোটেনি আমার, এমনিতেই তখন বিকেল ৫-৩০/৬ টা মতন বাজে, তাই ফেরার সময় একেবারে ডিনার করে ফিরবো ঠিক করলাম। যদিও তার আগে জইসলমিরের স্থানীয় দোকান থেকে দুটো রাজস্থানি ওড়না কিনলাম, যেগুলো অন্যান্য দোকানে সকালে প্রায় দ্বিগুণ দাম হাঁকাচ্ছিল, সেটাই ওনার সাজেস্ট করা দোকানে প্রায় অর্ধেক দামে একটুও বার্গেন না করে পেয়ে গেলাম। ভগবান জি বললেন, স্থানীয় মানুষরা ওই দোকান থেকেই কেনাকাটা করেন। গোটা রাজস্থানে আমিষের দোকান খুবই কম, হাতে গোনা যেই কটি আছে, তাদের খাবারের মান খুব একটা আহামরি না। ভগবান জি আমাকে নিয়ে গেলেন একটি রেস্টুরেন্টে, এখানে মালিক এবং কর্মচারীরা প্রায় সবাই উত্তরাখণ্ডের। এখানে আমি নান, বাটার চিকেন অর্ডার করলাম, মাত্র ৩০০ টাকায় খেয়ে আমার মন ভরে গেল।

ভগবান জি দুপুরেই বলছিলেন যে সূর্যাস্তের সময় আমাকে গাদিসার লেক নিয়ে যাবেন, সম্পূর্ণ অন্যরকম নাকি ভিউ থাকে ওই সময়। সকালবেলায় যেখানে হাতে গোনা ১০ জন ট্যুরিস্টও দেখিনি, এখন গিয়ে দেখি বেশ ভিড়। লেকের চারপাশ বাঁধানো, সিড়ি আছে, লোকজন লাইন দিয়ে বসে। ভগবান জি আমাকে লেকের একদম বিপরীত পাড়ে নিয়ে এলেন ভীষণই কঠিন ভাঙাচোরা কর্দমাক্ত লেকের ধার বরাবর রাস্তা দিয়ে বাইকে করে। কিন্তু পৌঁছনোর পর উপলব্ধি করলাম, এত কঠিন রাস্তা দিয়ে আসা সত্যিই সার্থক। এখানে কোনও টুরিস্ট নেই, সামনে একটি মন্দির, আরতি হচ্ছে, তারই পাঁচিলে বসে সূর্যাস্ত দেখলাম, পাঁচিলের গা বরাবর শুরু হচ্ছে লেকের জল, ওপাশে গাদিসার লেকের উপর মহলগুলি, তার পিছনে সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর সেই দৃশ্য, ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।

ক্রমশঃ

রাজস্থান ভ্রমণ ⛺🐪🏜️☀️😁চতুর্থ পর্ব: কাঁচের মত স্বচ্ছ আকাশ নিয়ে আমার জইসলমীরের একটু দূরত্বের সাইটসিইং শুরু হল। আগের পর্বে...
01/09/2022

রাজস্থান ভ্রমণ ⛺🐪🏜️☀️😁
চতুর্থ পর্ব:

কাঁচের মত স্বচ্ছ আকাশ নিয়ে আমার জইসলমীরের একটু দূরত্বের সাইটসিইং শুরু হল। আগের পর্বে পায়ে হেঁটে গাদিসার লেক, পাটওয়ান কি হাভেলি, সোনার কেল্লা, নাথমল কি হাভেলি, সেলিম সিং কি হাভেলি দেখে ফেলেছিলাম দুপুর ১২ টার আগেই। এরপর ভগবান সিং জীর সাথে প্রথমে গেলাম ৭ কিমি দূরত্বে অবস্থিত বড়া বাগ দেখতে। এখানে রয়্যাল পরিবারের মৃত মানুষদের কবরস্থ করা হত। এখানে আজকাল প্রি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি হয় যেটি বুক করতে নাকি ৮০০০ টাকা লাগে। জায়গাটি বড় রাস্তার পাশে রাজস্থানি ঘরানায় তৈরি ছোট ছোট একতলা চারদিক খোলা মন্দিরের আকৃতির বাড়ি সারিবদ্ধভাবে আছে, অনেকটা আমাদের দক্ষিণেশ্বরের শিবমন্দিরের মত পরপর অবস্থান করছে, তবে চারিদিক খোলা, শুধু পিলার আর গোলাকৃতি ছাদ ছাড়া কিছু নেই।

এখানে রাস্তায় বাস, বা শেয়ার গাড়ি একটাও চোখে পড়ছিল না। আসলে দূর দূর অবধি মনুষ্য বসতি প্রায় নেই বললেই চলে। দূরের গ্রামগুলোতে সামান্য কিছু বসতি গড়ে উঠেছে, যদিও তা বড় রাস্তা থেকে একেবারেই দৃশ্যমান নয়। এখানে মাটি অনেকাংশে বালুকাময়, খুব সামান্য ঝোপঝাড় ছাড়া সবুজ প্রায় নেই বললেই চলে, চাষ আবাদের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তবে হাওয়ার দাপট বেশ, সেইজন্য এখানে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, বেশ অনেকগুলো বায়ুকল লাগানো আছে জায়গায় জায়গায়। এই সময় টুরিস্ট ভীষণই কম, যা আছে তার ৯০ ভাগ বিদেশি। কিছুক্ষণ পরপর হাওয়ার গতি ভেদ করে কিছু গাড়ি যাচ্ছে, তা নাহলে একেবারেই সুনসান, মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে বেশ খানিকক্ষণ পরপর।

এবারে আমার পরবর্তী গন্তব্য হলো লোদূর্ভা। এটি প্রাচীনকালে যখন জইসালমীর নিজেই একটি রাজ্য ছিল, তার রাজধানী ছিল। জায়গাটি বড়া বাগ থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরত্বে। এখানে আসার সময়েও দু চারটে বাইক আর একটা গাড়ি ছাড়া প্রায় কিছুই চোখে পড়ল না। একটু মেঘলা হওয়ায় রোদের তেজ একটু কম, তবে যথেষ্ট শুকনো গরম রয়েছে, তার উপর বেশ গরম হাওয়া, শুনলাম গরমকালে মানে এপ্রিল মে জুন মাসে এদিকে ভীষণ লু বয়, তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তখন কোনও টুরিস্ট আসেনা। মরুভূমি হওয়ায় কোনও চাষ আবাদের ব্যাপার নেই, উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হল ট্যুরিজম। লোদুর্ভা জায়গাটি বেশ ভালো লাগল, প্রাচীন আভিজাত্যের চিহ্ন বহন করছে। এর বেশ কাছেই দেখলাম এক জৈন মন্দির। মন্দিরটির যিনি ট্রাস্টি, উনি ছিলেন মন্দিরেই, বেশ কিছুক্ষণ ওনার সাথেও কথা বলে বেশ কিছু ইতিহাস জানলাম।

এরপরে আমার গন্তব্য অমর সাগর লেক। এই লেকের বৈশিষ্ট্য হল লেকের জলের উপর আমাদের ম্যানগ্রোভের মত বেশ কিছু গাছ রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ওরকম মরু অঞ্চলে লেকের দেখা পাওয়াটাই অদ্ভুত, কারণ দূর দূর পর্যন্ত যেখানে জলের কোনও ছিটেফোঁটা অবধি দেখতে পাওয়া দুষ্কর, সেখানে আবার বেশ অনেকটা বড় লেকের জলের মাঝে মাঝে ৬/৭ ফুট উচ্চতার ঝোপের আকৃতির গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, জইসলমিরের মত জায়গায় এই দৃশ্য দেখা বেশ রোমাঞ্চকর। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার দুপাশে লেক, মাঝের রাস্তার উপর দিয়েও জল প্রবহমান। আমাদের বাইক ছুটে চলেছে জলের উপর দিয়ে চাকার দুধারে জলের ফোয়ারা উড়িয়ে। বাচ্চাদের মত খুশি হয়েছিলাম এই জায়গাটা দেখে, কারণ রাজস্থানের বাকি সবকিছুই প্রত্যাশিত আর ছবিতে দেখা, কিন্তু মরুভূমিতে এরকম কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত লেক দেখতে পেয়ে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম।
(ফোনে খুবই কম ছবি আছে, ক্যামেরা থেকে নিয়ে বাকিগুলো পরে পোস্টাবো)

Address

Sodepur
Kolkata
700112

Opening Hours

Monday 9am - 5pm
Tuesday 9am - 5pm
Wednesday 9am - 5pm
Thursday 9am - 5pm
Friday 9am - 5pm

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when চরৈবেতি-the Wanderlust. posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to চরৈবেতি-the Wanderlust.:

Videos

Share