19/12/2023
হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল এবং দুটি কথা।
মানুষের একটা বড়ো দোষ হোল সারা পৃথিবীকে ভাতের হাঁড়ি মনে করা এবং একটা চাল টিপেই সমগ্রটা সিদ্ধ কি অসিদ্ধ সে ব্যাপারে দুমদাড়াক্কা মন্তব্য করে দেওয়া। এবার আমার কাজ হচ্ছে নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রমান করা তবে দোষ-গুন বাঁচিয়ে।
গতবছরও হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল অ্যাটেন্ড করতে গেছিলাম। মনে হয়েছিলো এত বৈচিত্র, এত ঘটনা, এত মানুষ, এত রঙ নিয়ে বোধহয় কূল করতে পারছি না, বুঝি আমার মধ্যে আর ধরছে না। এবারে গিয়ে মনে হলো আরো অথৈ জলে পড়লাম! এবং জলের উপরি ভাগেই হাত পা ছুড়ে ক্লান্ত হলাম। আরো সময় চাই, আরো গভীরতা চাই, বার বার চাই।
পার্থক্য যেটা মনে হল মানুষ অনেক বেশি বেড়েছে, সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাঙালি। এই জায়গা থেকেই একটু ভয় শুরু হলো। এ বছর ইউটিউবার এবং ভ্লগার প্রচুর দেখলাম। আমার হাতে অ্যাকশন ক্যামেরা দেখে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন আসছিল "কোন চ্যানেল"। আমার আপাতত কোনো চ্যানেল নেই সেটা বিশ্বাস করানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সব কিছুরই যেমন দুটো দিক থাকে, এই সোশ্যাল মিডিয়ারও সেম ব্যাপার। ভয় শুরু হলো।
গত বছর বোধহয় কপাল ভালো ছিলো, যত নাগা মানুষদের সংস্পর্শে এসেছিলাম সবক'জনই সুন্দর মনের এবং ভদ্র ছিলো। এবার গিয়ে এক একটু সামান্য ধান্দাবাজের সাহচর্যে এলাম। যাইহোক এমনও তো ঠিক নয় যে ধান্দাবাজি করার অধিকার শুধু আমাদেরই থাকবে।
নাগাল্যান্ড উত্তর-পূর্বের এক বর্ণময় রাজ্য। যেমন নিষ্কলুষ আকাশ-বাতাস তেমনই তার মানুষজন, লোকাচার, সংস্কৃতি। রাজ্যটার প্রায় আশি ভাগ মানুষই ব্যাপ্টিস্ট ক্রিশ্চান এবং আধুনিক কেতাদুরস্ত হলেও হাজার বছরের পুরনো নিজস্ব সংস্কৃতি কে দৈনন্দিন ভাবে জীবন্ত রেখে চলেছে এবং প্রচন্ড ভাবে রাখতে চাইছে, তার ফলশ্রুতি হিসেবেই ২০০০ সালে এই "হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল" এর সূচনা। এখন এটা সারা ভারত তথা সারা বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রচুর বিদেশি দেখছি।
এখন কোথাও কোথাও শুনছি আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও তো সংস্কৃতি-লোকাচার-আদিবাসীর অভাব নেই, তবে এখানেও তো এরকম কিছু একটা করা যেতেই পারে। আমি বলছি, না পারে না। না পারার মূল কারনই হলো ওখানকার মূল সমাজটাই চালায় আদিবাসীরা, আর এখানকার সমাজ চালাই আমরা, উড়ে এসে জুড়ে বসা কিছু মানুষ। ওখানে ওদের কথা ওরাই বলছে সোচ্চারে সারা বিশ্বকে, ওদের সমাজ ওদের রাজ্য সব একাকার, এজন্য কোনো অনুগ্রহ বা অনুপ্রেরনার প্রয়োজন নেই, এখানে তো সেই পরিবেশ নেই, তাই ওরকম লেভেলের কিছু করা অসম্ভব।
এখানে কারা আসবেন.... দেখুন আমি কোনো হরিদাস পাল নই যে ঠিক করে দেব কে আসবেন কে নয়। তবে গা বাঁচিয়ে কিছু বলতে চাই। একথায় হলো এই জায়গাটা সেই টিপিক্যাল ট্যুরিস্টদের জন্য আইডিয়াল নয়। যদি বলি আর কোথাও না গিয়ে একটা মেলা তিন দিন সারাদিন ধরে দেখবার জন্য ঠান্ডা চেপে বসে থাকতে হবে, তবে কেমন বোকা বোকা শোনাচ্ছে না!? যদি বলি ওখানকার মিডিওকার রেঞ্জের হোমস্টেগুলোর সব ঘরে অ্যাটাচড টয়লেট বা গিজার এখনো তৈরি হয় নি, আপনার ভাগ্যে যা খুশি পড়তে পারে। শুনে খুব সুবিধে হচ্ছে না হয়তো। এরকমই বেশ কিছু ব্যাপার আছে যা তথাকথিত "ট্যুরিস্ট" ফ্রেন্ডলি নয়। তবে ট্রাভেলার্সদের জন্য কিন্তু স্বর্গরাজ্য। ফোটোগ্রাফার, অ্যাডভেঞ্চারার, যারা নতুন কিছু জানতে - দেখতে - বুঝতে চান, যারা খাবার দাবার নিয়েও অ্যাডঞ্চারমনষ্ক, যারা মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করেন, তারা সবাই সুস্বাগতম। টিপিকাল ট্যুরিস্টদের বলছি, এখানে একটা সুযোগ আছে আপনারও 'ট্রাভেলার' হয়ে ওঠার।
সামনের বছরতো লোক আরো বাড়বে, দুই গুনও হতে পারে। ঠিকঠাক অ্যাকোমোডেট করতে হলে কিগয়েমাতে এখন থেকেই প্ল্যান কষতে হবে। স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের মাথায় আশাকরি বিষয়টা থাকবে।
যাইহোক, এতবড় লেখাতে আমি কোনোভাবেই স্বাচ্ছন্দ নই, সব "হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল" মাহাত্ম। তবে অনেক মনের কথাই বাকি রয়ে গেলো। সামনের বছর আবার যাবো সে তো বলাই বাহুল্য।
Hornbill Festival with The Traveller