Sarbaniz Soliloquy

Sarbaniz Soliloquy Sarbaniz Soliloquy is an interactive blog page for travel and travel related conversations.

উত্তরবঙ্গের অপরূপ পাহাড় জঙ্গল রাজাভাতখাওয়া -চা বানানোর ফাঁকে মানসবাবুকে আমি  রাজভাতখাওয়া নামের উৎস সম্পর্কে, সেই পুরো...
13/10/2023

উত্তরবঙ্গের অপরূপ পাহাড় জঙ্গল
রাজাভাতখাওয়া -

চা বানানোর ফাঁকে মানসবাবুকে আমি রাজভাতখাওয়া নামের উৎস সম্পর্কে, সেই পুরোনো প্রশ্নটা করেই ফেলি। শুনে, মানসবাবু তো হেসেই খুন। বলেন এ তো সবার জানা, ইন্টার প্রিটেশন সেন্টারে গেলেই তো দেখতে পাবেন।
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৭৬৫ সালে, ত্রয়োদশ কোচ রাজা ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণের পিতা মহারাজ উপেন্দ্র নারায়নের সময় থেকেই বক্সা সংলগ্ন সমতল এলাকা ভুটানের বলে দাবি করে আসছিল ভুটানের রাজা দেবরাজ। ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ সিংহাসনে বসার সুযোগে সে দাবী জোরদার করে ভুটান রাজ তাঁর সেনাপতি পেন্সু তমের (Pensu Tome) সহায়তায়, ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ কে বন্দী করে রাজধানী পুনাখা তে নিয়ে যান। স্থায়ী রাজার অবর্তমানে, কোচ রাজ্য জুড়ে বিশৃংখলা দেখা দেয়। আর চিন্তা ভাবনা করে কোচ রাজার নাজির দেও খগেন্দ্র নারায়ণ, কোচ রাজার উদ্ধারে সহায়তার জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শরণাপন্ন হন। প্রথমে আমল না দিলেও, বন সম্পদ ভোগ দখলের কথা মাথায় রেখে তারা ভুটানের সঙ্গে বিনিময় চুক্তিবদ্ধ হয় আর ১৭৭৪ সালে ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ মুক্তি পান। মুক্ত কোচ রাজ ভুটান থেকে বক্সার অরণ্য পথে কোচবিহারের দিকে আসছিলেন, আর তাঁর রাজ্যবাসী তাঁকে অভ্যর্থনা জানতে উল্টোপথে যাচ্ছিল। দুই দলের দেখা হয় চেচাখাতার কাছে, অরণ্য মধ্যে আজকের এই জায়গায়; যেখানে মহারাজ ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণ অন্ন গ্রহণ করেন আর জায়গায় নাম হয়ে যায় 'রাজা ভাত খাওয়া।'
সুন্দর নাম ও নামকরণ! সত্যিই ভারী সুন্দর জঙ্গলে ঘেরা এই ছোট্ট জনপদ। ফরেস্ট বাংলোর পাশ দিয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রেল লাইনের ওপরে আছে রাজাভাতখাওয়া স্টেশন। ইচ্ছে করলে বাংলো থেকেই রেল লাইনের ওপর উঠে আসা যায়; কিন্তু সকালে আমি বড় রাস্তা দিয়ে লেভেল ক্রসিং পেরিয়েই স্টেশনে উঠেছিলাম। রাজা যে সময়ে এখানে ভাত খেয়েছিলেন, তখন পুরোটাই ঘন জঙ্গল ঢাকা ছিল, সন্দেহ নেই। দু পাশের মোটা গুঁড়ি, ঝোলানো ঝুরি ওলা গাছেদের উপস্থিতি এখনও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। স্টেশনের মেন গেট থেকে পথ চলে গেছে ছোট্ট খোলার ওপর দিয়ে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দিকে। টুকটুক করে হাঁটতে থাকি সেদিকে। বনকর্মীদের কোয়ার্টারের সামনে দিয়ে ডান দিকের রাস্তার ওপরে প্রথমে অর্কিড হাউজ, তার পাশে Nature Interpretation Centre ! পুরো জায়গাটা বক্সার জঙ্গলের অংশ। তবে এখন আর জঙ্গল নেই, একশ বছরেরও বেশী সময় ধরে 'সুন্দর' করে তা সাফ করে, চৌকো চৌকো রাস্তা বানিয়ে সাজানো বাগানের মতো চারপাশ। সোজা রাস্তা থেকে আবার ডানদিকে গিয়ে ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টারে ঢুকতে হয়। উদ্যোগের প্রশংসা না করে পারিনা। সুন্দর করে উদ্ভিদ, জীব বৈচিত্র্য থেকে বক্সার জঙ্গলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা আছে নানান মডেল আর স্টাফড জীব জন্তু দিয়ে।
পাশের অর্কিড সেন্টারে নাকি এক হাজারেরও বেশী অর্কিডের সংগ্রহ আছে, যা এইখানে ও সংলগ্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়।

- ম্যাডাম! আপনি ওপরে গিয়ে দেখবেন না?.. মানস বাবুর ডাকে হুঁশ ফেরে আমার। চারপাশটা কেমন যেন একটু আবছা আবছা লাগে।

থেকে থেকে এই বর্তমান থেকে অতীতে (তো সে near past কি long past যাই হোক!) যাতায়াত, আমার এক মনের ব্যারাম। একটুক্ষণ নাকি অনেকক্ষণ উদাস ছিলাম, কে জানে!
আমার অন্যমনস্কতার ফাঁকে, সুজ্জিমামা সবুজের মাঝে আগুন জ্বেলে সেদিনের মতো বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন ততক্ষণে। আমি একাই তার প্রতিটা মুহূর্ত তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি।
এর মধ্যে আসে দুঃসংবাদ। ফোনে এ ডি এফ ও সাহেবের কাছে এক মা হাতির মৃত্যু সংবাদ আসে। হাতিটিকে নাকি আহত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল গতকাল বেশ কিছু দূরে। যাই হোক, তার autopsy হবে, সেখানে সাহেবকে উপস্থিত থাকতে হবে। অতএব, সবাই আমরা উঠে পড়ি গাড়িতে। আমাদের বাংলোর সামনের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে সাহেবের গাড়ী চলে যায় মা হাতিটির কাটা ছেঁড়া প্রত্যক্ষ করতে।

Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay










উত্তরবঙ্গের অপরূপ পাহাড় জঙ্গল রাজাভাতখাওয়া -লেখা শুরু করেছি উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলবো বলে। অনেক গুলো...
07/10/2023

উত্তরবঙ্গের অপরূপ পাহাড় জঙ্গল
রাজাভাতখাওয়া -

লেখা শুরু করেছি উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলবো বলে। অনেক গুলো নাম মনের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে; চেনা নামের ভেতরে আছে রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, বক্সা ইত্যাদি। আর আছে আতিয়া মোচর (নাকি আতিয়ামো র চর), পাতলা খাওয়া, মেন্দাবাড়ী, মালঙ্গী, রায়ডাক, ভুটানঘাট... এমন কত্ত কি!
আমার সৌভাগ্য, রাত্রিবাস করার সূত্রে, আমি প্রায় এই সব কটা নামের সঙ্গেই পরিচিত।
উত্তরবঙ্গের তরাই অঞ্চলের ভ্রমণ, প্রায় সবই স্যারের রিসার্চ স্কলারদের স্টাডি ট্যুরের লেজুড় হয়ে। প্রতি বছরের চারটি ঋতুতে স্যাম্পলিং চলত; কিন্তু স্যার সব সময় উপস্থিত থাকতেন না। যেবারে থাকতেন, শত কাজের ফাঁকেও আমি জুড়ে যেতাম সঙ্গে।
তেমনই একবার আমরা পৌঁছেছি রাজাভাতখাওয়ায়।

রাজা ভাত খাওয়া! এ কেমন নাম? কোন রাজা এখানে ভাত খেয়েছিলেন? প্রাসাদ সম বাংলোয় ঢুকে আমি শুধোই, এ.ডি.এফ.ও. শ্রী চ্যাটার্জীকে। এই এ.ডি.এফ.ও., স্যারের প্রিয় প্রাক্তন ছাত্রদের অন্যতম। আমার বিস্ময়/ প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, রাজা ভাত খাওয়া নামের পেছনে প্রচলিত কাহিনী আছে, পরে বলবো 'খন।

এখানে আমি এই প্রথমবার। বিশাল জায়গা নিয়ে নতুন ফরেস্ট বাংলো তৈরি হয়েছে একপাশে। নতুন ক্যাম্পাসে ঢোকার আগে বাঁহাতে সুন্দর কাঠের দোতলা বাড়ীটা রাজাভাতখাওয়ার পুরনো বাংলো। সেখানে নতুনের মতো রাজসিক ব্যাপারস্যাপার কিছু ছিল না। এখনও ব্যাবহার হয়, তবে বড় দলের জন্যে, ডরমিটরি হিসেবে। নতুন বাংলোয় গেটের ডান দিকে দোতলা ক্যান্টিন। সেখানেই আমাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা।
খেয়ে বিকেলের দিকে বেরোলাম আমরা জঙ্গলের রূপ দেখতে। ফরেস্টের বড় সাহেবরা সঙ্গে থাকলে, ঘোরার সময় অনির্দিষ্ট। সাধারণত সাফারির হুড খোলা জীপ যে যে রাস্তায় যায়, তার উপরন্তু ঘোরা যায়, আর যে কোন ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার অনুমতি মেলে। রাজাভাতখাওয়া বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রবেশ দ্বার বলা যেতে পারে।
বনকর্মী, অফিসারদের সরকারী বাড়িঘর সব গেট বসানো ঘেরা জায়গার ভেতরে। সেখানে বনবিভাগের একটা প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও অর্কিড সেন্টার আছে। তবে এ.ডি.এফ.ও. র গাড়ী সেদিকে গেলনা। রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী ও বক্সা যাবার রাস্তার শুরুতেই চেকগেট। সেখানে বনকর্মীরা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় কোন গাড়ী কখন ঢুকছে, তার হিসেব রাখে। আমরা সেই চেক গেট ছড়িয়ে, কিছুদূর গিয়ে, ডান দিকের বনপথে নেমে গেলাম। সুন্দর শালের জঙ্গল (গাছ দেখে অন্ততঃ আমার তাই মনে হলো)।
ফরেস্টের সাহেবের গাড়ী, তিনিও রয়েছেন সঙ্গে, চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আস্তে আস্তে চলেছে গাড়ী। গাছের ডালপালা রাস্তাতেও আলোছায়া সৃষ্টি করেছে। হঠাৎ হাত দিয়ে চালককে স্থির হবার নির্দেশ দেন এডিএফও। আন্দাজ ৫০ ফুট দূর দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যায় জনা চারেক ইন্ডিয়ান গাউরের একটা দল। পার হওয়ার পরেও দাঁড়িয়ে রইলাম আমরা বেশ কিছুক্ষণ। অধৈর্য্য আমি গাড়ী এগোতে বলতেই ধমক খেলাম স্যারের কাছে। আমরা ওদের আস্তানায় অনুপ্রবেশকারী। ওদের মতো করেই ওদের থাকার অধিকার আছে। আমাদের উপস্থিতি ওদের বিরক্ত করে যে!
পথগুলো সব প্রায় সরলরেখায় ভাগ করেছে পুরো বনভূমিকে। মাঝে মাঝে (বন বিভাগ জানে কতদূর অন্তর অন্তর) চৌমাথার মতো ফাঁকা জায়গায় নজর মিনারের সঙ্গে, চৌকিতে থাকা বন কর্মীদের ঘর গেরস্থালি। গাড়ী গিয়ে থামলো তেমন এক নজর মিনারের পাশে। প্রত্যেক চৌমাথার একটা করে নাম আছে, তবে সেসবে আমার তেমন আগ্রহ নেই। এই যেমন গাউরের দল পার হয়ে প্রথম চৌমাথা থেকে গাড়ী বাঁয়ে জয়ন্তী বিটের দিক থেকে ঘুরে ফিরে এলো আবার সেই চৌমাথাতেই। আর জায়গাটা আমার বেশ ভালো লেগে গেল।

এক মানুষ সমান উঁচু থামের ওপরে একখানা ঘর; পাশ দিয়ে তিন ভাঁজে উঠেছে নজর মিনারের সিঁড়ি। একপাশে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আছে জ্বালানি কাঠের স্তূপ আর ফাঁকা চৌহদ্দির মাঠে নানান ফুলের গাছে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে রঙিন প্রজাপতি, ভ্রমর আর মৌমাছির দল!
স্যারেরা গভীর আলোচনায় ব্যস্ত! আমি খানিক মৌমাছি, প্রজাপতির পিছে ঘুরে, চৌকিতে রাতের পাহারাদার মানস বাবুর সঙ্গে আলাপ জমাই। কাছের কোন গ্রামেই ওনার বাড়ী। সন্ধ্যে ৬ টা থেকে পরদিন সকাল অব্দি ডিউটিতে থাকবেন। সঙ্গে আছে ওয়্যারলেস ফোন,একটা বন্দুক (মারার নয়, জীব জন্তুকে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর), লাঠি আর আগুন জ্বালানোর সরঞ্জাম।
"এখানে রাতে কি পাহারা দেন?" সরল প্রশ্ন আমার। "জীব জন্তুর কোন ক্ষতি না হয়, অনুপ্রবেশকারী কাউকে দেখলে কি আহত জীবের সন্ধান মিললে, সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ভ্যান সহ আর্মড টীম কে খবর দেওয়া, এই সব, আর কি!" সহজ করে বুঝিয়ে বলেন মানস বাবু।
" কি কি জন্তু দেখেছেন?" বোকার মতো জিজ্ঞেস করি আমি।
এক গাল হেসে মানস বাবু বলেন, "হাতি। গাউর, হরিণ, বুনো শুয়োর, খরগোশ, ময়াল, আর কত্ত রকমের পাখী!" তারপরে তর্জনী তুলে খোলা জায়গার শেষে বন রেখা দেখিয়ে বলেন "হাতির দল তো ওখান অব্দি চলে আসে।"
"কখন আসে?"
"এই তো আরেকটু পরেই শুরু হবে ওদের আসা যাওয়া। ওরাও রাতে বিশ্রাম নেবে তো!"
" কিছু তছনছ করেনা?"
"না। ওই দিকে ওদের খাবার মতো কিছু জঙ্গল বেঁচে আছে, তাই ওদিকটায় বেশী আসে। আর বিরক্ত না করলে, ওরাই বা কিছু নষ্ট করবে কেন?"
আসলে জঙ্গলের এই অংশে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। জঙ্গলের মাঝে স্থানে স্থানে লাগানো আছে ২৪ ঘণ্টা রেকর্ডিংয়ের ক্যামেরা। কিছুদিন আগেই নাকি এই অঞ্চলের ক্যামেরায় একটা কালো চিতা আর বাঘের (রয়াল বেঙ্গল টাইগার) ছবি ধরা পড়েছে, রাতের ক্লিপিংয়ে ! কথা বলতে বলতে মানসবাবু এডিএফও সাহেবের সঙ্গে আসা কর্মীদের সাহায্যে ইঁটের ওপর সসপ্যান চাপিয়ে কাঠ কুটো জ্বেলে চা বানিয়ে ফেলেন সবার জন্যে।

Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay










02/10/2023

সবকিছুই আপাতদৃষ্টিতে কোথাও না কোথাও শেষ হয়; কিন্তু জীবন সময়েরই মতো বহমান। তাই কখনো কখনো বিরতির প্রয়োজন আছে। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্যে, পুনরুজ্জীবিত করার জন্য।

আমাজনের গহীন অরণ্য থেকে এসে তাই আত্মকথন থেকে নিলাম বিরতি। তবে সবার জন্যে রইলো ব্রাজিলের তরল লয়ের, মন মাতানো সাম্বার ঝলক!






আমাজনের অন্দরেফেরার দিনে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎআমাজনে আমাদের মেয়াদ গোনা গুনতি চার রাত তিনদিন। চতুর্থ দিনে ফিরে যেত...
24/09/2023

আমাজনের অন্দরে
ফেরার দিনে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ

আমাজনে আমাদের মেয়াদ গোনা গুনতি চার রাত তিনদিন। চতুর্থ দিনে ফিরে যেতে হবে মনৌস জেটি হয়ে সেখানের বিমানবন্দর আর তারপরে উড়ানে সাও পাওলো হয়ে দেশের পথে।
তবে ফেরার দিনের সকালেও এক আকর্ষণ রয়েছে আমাদের ভাগ্যে। Visit to Monkey Island.
ভাবছেন, এ আবার কি? সারা জঙ্গল জুড়েই তো নিউ ওয়ার্ল্ড মাংকি দের রাজত্ব। তবে আলাদা দ্বীপের কি প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে।
আমাজন জঙ্গল সংকোচন, প্রত্যেক জীব জন্তুর স্বাভাবিক জীবন যাপনে ছায়া ফেলেছে। কোথাও ফলমূল অপ্রতুল, কোথাও সবুজ, কোথাও বা থাকার জায়গাই গেছে হারিয়ে। তাই জঙ্গলের এই অংশে (এবং পৌঁছনো যায় এমন অন্যান্য অংশেও) একটা জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে বানরকুলের প্রিয় খাদ্য কলা সরবরাহ করা হয় বছর ভর। আমাদের আমাজন ইকো পার্ক থেকে সেই বানরদের খাবার দেওয়ার স্থলভূমি সামান্যই দূর। কিন্তু যেতে হবে নৌকায়, নদীর কোনও বাঁকে। রওনা হলো আমাদের বোট। ইকো পার্কের জেটি থেকে L বাঁকের বড় হাত ধরে। দেখি, বিশাল গাছের একটা গুঁড়ি জলের বুকে শুয়ে। তার চারপাশে জমেছে লতাপাতা, শেওলা। সব মিলে যেন মোড়ের মাথার ট্রায়াঙ্গল ডিভাইডার। গত তিনদিন ধরে নাগাড়ে এখন দিয়েই যাতায়াত করেছি, তাও চোখে পড়েনি, এর পাশেই লোহার পাতের মাথায় একটা বোর্ড লাগানো। এই ডিভাইডারের দুপাশ দিয়ে যাবার সময়ে দূরত্ব রেখে যেতে বলা আছে সে বোর্ডে। নইলে ধাক্কা লাগতে পারে।
আজও ব্রুনো আমদের সঙ্গে আছে। এর কারণ কি জিজ্ঞেস করি তাকে। তেমন কিছুই নয়। গাছ মরে নদীতে সমাধিস্থ, আশপাশে জমছে জঙ্গলের আশীর্বাদ। কালে কালে জমি হয়ে উঠবে এটাই। তাই আর কি। ওদের স্বাভাবিক গঠনে বিরক্ত না করলেই ভালো। আবার তাকিয়ে দেখি প্রকৃতির কারুকাজের দিকে। আমাজনের আকাশ আজ সাফ। নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের স্থম্ভ কালো জলে ছায়া ফেলেছে। অপূর্ব দৃশ্য।
বোট নিষ্কলুষ জলে ডিজেল মেশাতে মেশাতে চলল বানর দ্বীপের সন্ধানে। আর আমি নিরন্তর চলমান ছবিতে বেঁধে নিলাম অরণ্যের রূপ।
খানিক চলার শেষে, সরু এক জলধারার মোড়ে, প্রায় ডাঙার ভাঁজে মুখ গুঁজে স্থির হলো বোট খানা। তাকিয়ে দেখি, একেকটা বোট তার সওয়ারি নামিয়ে সরে গেলে পরের বোটের যাত্রীরা নামার সুযোগ পাচ্ছ। আমাদের আগেও কয়েকটা বোটের যাত্রী পাড়ের উঁচুতে দাঁড়িয়ে।
তক্তা বেয়ে ডাঙায় পা রেখে দেখি, দুপাশে পোঁতা খুঁটির মাথায় বিশাল এক বোর্ড টাঙানো। বোর্ড খানা বোধহয় ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের দান। সেখানে লেখা,
FUNDAÇO FLORESTA VIVA , নীচে আরও কিছু আছে। তারপরে ইংরেজীতে তর্জমা করে লেখা The Living Rainforest Foundation , Be a nature partner. Join Us!
বোর্ডের ডান দিকে আমাজন ইকো পার্কের লোগো। অর্থাৎ ইকো পার্ক কোনভাবে এর সাথে জড়িত। ব্রুনো বলে, পর্যটক আসুক বা না আসুক, দিনের সকালের দিকে ইকো পার্ক থেকে এখানে কলা দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রোজকার। আজও আমাদের বোটে করে বানরকুলের কলা এসেছে। বোর্ডের সামনে থেকে সামান্য হেঁটে একটা বেশ বড় চাতালের মতো জায়গা। চারপাশের গাছপালা বেশ ঘন। একদিকে সবুজ রঙের একটা কাঠের ছোট মঞ্চের মতো। ব্রুনো বা তার সাঙ্গপাঙ্গরা এ এলাকায় বেশ পরিচিত। অথবা এই একই সময় রোজ কেউ/ মানুষজন আসে এখানে। আর খালিহাতে তারা আসেনা।
ব্রুনোও সঙ্গে এনেছে দু বাক্স ভর্তি পাকা কলা। তাই আমরা সেই গাছ ঘেরা চাতালে পৌঁছনোর আগেই, গাছে গাছে চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে, কিছু না দেখেও সেকথা অনুভব করা গেল। সত্যিই কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। তার দুটো কারণ। প্রথম, ঘন পাতার আড়াল আর সম্ভবতঃ লুকিয়ে থাকা জীবেরা লাজুক। তাও কলার লোভ কি আড়ালে রাখতে পারে অনন্তকাল? নিউ ওয়ার্ল্ড প্রিহেনসাইল বা পাকানো লেজের বাদামী উলি বানরদল উঁকি ঝুঁকি শেষে পর্দা সরিয়ে বেরিয়েই এলো। তবে ক্ষনিকের ই জন্যে। লেজ ওপরের ডালে বেঁধে ঝুলে কলার ছড়া নিয়ে চম্পট দিল আবারও পাতার আড়ালে। দূর থেকে লাল মুখ ইউকেরি ভালো করে আমাদের মেপে লুকিয়েই রইলো। বোধহয় আমাদের প্রস্থানের অপেক্ষায়। এ ছাড়া সরাসরি আর কারো দেখা মিলল না। তবে লাজুক আরেকজনকে দেখা গিয়েছিল বটে, গাছের ওপর তলা থেকে ট্রাপিজের খেলা দেখাতে দেখাতে নীচের দিকে নেমে আসছেন। চলমান ছবিতে ধরা গেলেও স্থির চিত্রে তাঁকে পাওয়া গেল না। তিনি নাকি ক্যাপুচিন বানরের প্রতিনিধি ছিলেন আমাদের এই মিটিংয়ে (অবশ্যই ব্রুনোর আইডেন্টিফিকেশন)।
বানরদের চেহারা ওল্ড আর নিউ ওয়ার্ল্ডে অনেক তফাৎ। মুখের অবয়ব, লেজ, নাকের ফুটো এবং জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর পদ্ধতি সবেতেই বেশ ফারাক। কারা মানুষের বেশী কাছের? দেখি বিজ্ঞানীরা বলেছেন ওল্ড ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দারাই হমিনিডদের কাছের। তবে এই নতুন সাজের বানর কিন্তু নধর, চকচকে গা আর লেজ মোটা ও সুন্দর।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকিয়ে দেখি, কলার টাল পড়েই রয়েছে সবুজ প্ল্যাটফর্মে। লাজুক বানরদল আমাদের উপস্থিতিতে খাবারের কাছেও ঘেঁষতে এলো না। খাওয়া তো দূর। এসব দেখেই বোধহয়, ব্রুনো ওখান থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। আমরা থাকলে হয়তো ওরা কলা নিতে আসবেই না। আর সময় পেরিয়ে গেলে অভুক্ত থেকেই ফিরে যাবে জঙ্গলের গভীরে। আমরা তো ওদের দেখতে এসেছিলাম। বিরক্ত করতে নয়। তাই আবার গুটি গুটি পায়ে বোটের দিকে ফিরতে শুরু করি।
আমাজন বাসের স্মৃতি অক্ষয় হয়ে থাকুক ম্যাকাওয়ের সান্নিধ্যে, নিউ ওয়ার্ল্ড মাঙ্কি, আমাজন রিভার টার্টল আর টুকানা জীবনের ছবিতে ।।
...সমাপ্ত...
Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay










আমাজনের অন্দরেজঙ্গলের মাঝে মনুষ্য বসতিতে (Tucana বা Tikuna মানুষের সান্নিধ্যে)পিরানহা শিকার করে সবার মন খুশী। নিজেরা নাহ...
17/09/2023

আমাজনের অন্দরে

জঙ্গলের মাঝে মনুষ্য বসতিতে
(Tucana বা Tikuna মানুষের সান্নিধ্যে)

পিরানহা শিকার করে সবার মন খুশী। নিজেরা নাহয় পারিনি, কিন্তু ওদের থাকার জায়গা, মাংসের লোভে টোপ গেলা, ধরা পড়া, সবই যে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। আর সেটা হয়েছে তাদেরই বাস ভূমিতে। লাঞ্চ টেবিলে শুধু সেই আলোচনা। দুপুরে বিশ্রামের কোন গল্প নেই। যাওয়া হবে দূর নদী পাড়ের কোন বসতিতে। জঙ্গলের মাঝে মানুষ কিভাবে থাকতো বা নিরুপায় হলে এখনও থাকে, তার কিছু অন্ততঃ স্বচক্ষে দেখতে। আরও কিছু আছে। যা ব্রুনো খোলসা করে বলছে না।
দুপুর দুপুর আবার সেই বোটে করেই রওনা হলাম আমরা। এবারে সকালে যাওয়া দিকের উল্টো মুখে, নদী স্রোতের অভিমুখে। খানিক যাবার পরেই, নাও আবারও ঢুকে গেল নদীর কোন শাখার ভেতর। আবারও অলি গলি ঘুঁজি পেরিয়ে উঁচু পাড়ে বাঁধা হলো নৌকা। নাহ্। সেখানে কোন জেটি কি নৌকো বাঁধার মতো জায়গা ছিলনা। আমাদের বোট চালকদের একজন জলে নেমে, ডাঙায় শক্ত পোক্ত একটা খুঁটি পুঁতে দিল। আর সামনে থেকে দাড়ি টেনে নৌকো গুলোকে সেই খোঁটা য় বাঁধা হলো। নৌকো থেকে তেরছা করে কাঠের তক্তা ডাঙায় ফেলে দিতে, তার ওপর দিয়ে হেঁটে আমরা মাটিতে পা রাখলাম।
জল তল থেকে ডাঙ্গা বেশ অনেক উঁচু। এক প্যাঁচ উঠতে সামনে কাঠের দেওয়াল, টিনের চালের একটা কুটিরের দেখা মিলল। কুটিরের সামনের হাতায় ফুলের গাছ। পাশে চারপাশ খোলা, কাঠের খুঁটির ওপরে টিনের চালের একটা জায়গা। সেখানে বেশ কয়েকজন মানুষ আমাদের অভ্যর্থনা জানতে উপস্থিত। সেখানে পৌঁছতেই, তাঁরা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন বনের ফলের রসের কফি জাতীয় পানীয়। যে পাত্রে সেটা দেওয়া হলো, তা দেখে দুঃখ পেলাম। কারণ সেগুলো ছিল ছোট প্লাস্টিকের গ্লাস।
আমাদের সঙ্গে ব্রুনো এসেছে। সেই দোভাষীর কাজ করছে।
ওই ছাদ ঢাকা খোলা জায়গায় অপটু হাতে, কাঠে পেরেক ঠুকে বানানো তাকে নানান শুখোনো মাছ সাজানো। আমাদের মতো পর্যটকদের জন্যেই রাখা আছে হয়তো। নীচে পাখীর ডিম, মাছ ধরার ঘূর্ণির মতো জিনিসপত্র রাখা। ব্রুনো মাছ গুলোর নাম বলে আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছিল।

কাঁচায় বিষ ক্যাসোভা দিয়ে তৈরি হয় টিকুনা জনজাতির প্রধান খাবার, ম্যানিওক আটা (Manioc Flour)

আমরা সবাই ব্রুনোর চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তার কথা শুনছিলাম। একই সময়ে একজন বিশাল একটা পিপের মতো কাঠের পাত্রের ওপরে কি যেন নাড়াচ্ছিল। ব্রুনো এবারে আমাদের নিয়ে সেখানে হাজির হলো। ওই পিপে আকৃতির কাঠের আড়ালে নাকি ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। ওপরে কানা উঁচু চ্যাটালো পাত্রে হলুদ রংয়ের গুঁড়ো গুঁড়ো কিছু রয়েছে। ইয়া বড় একটা কাঠের খুন্তি দিয়ে প্রায় দু ফুট উঁচু করে সেগুলো ছড়িয়ে আবার ওই পাত্রেই ফেলছেন সেই রাঁধুনি। রাঁধুনি বললাম, কারণ, আমার ধারণা ওই পাত্রে কিছু রান্নাই হচ্ছে। কারণ, প্রতিবার ওই হলুদ গুঁড়ো নাড়া দেবার সাথে, পাত্রের চারপাশে বেশ আকর্ষক গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল।
ব্যস্ত ছিলাম গুঁড়ো নাড়া দেখতে। হঠাৎ দেখি ব্রুনো হাতে মোটাসোটা বড় নোড়ার মতো একটা ফল জাতীয় জিনিষ নিয়ে ফিরে এসেছে।
- দেখুন, এটা একটা ক্যাসোভা (cassova), এবং ক্যাসোভাটা মাটির নীচে থেকে তুলে আনা হয়েছে। এটি কাঁচা খাওয়ার অর্থ অসুস্থতা, মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, এই ক্যাসোভা থেকেই তৈরি হয় উপাদেয় ফ্লাওয়ার/ আটা। আর যে কোন আমিষ পদের সাথে সেটাই টিকুনা দের প্রধান খাবার?
এবারে লাইভ শো শুরু হলো বিষাক্ত ক্যাসোভা থেকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য তৈরির। এককালে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ক্যাসোভার (দক্ষিণ আমেরিকার টাপিওকা জাতীয় গাছ) মূল সংগ্রহ করে আনতো টিকুনারা। তবে সেই সুদূর অতীতেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানতে পেরেছিল, মাটির নীচে গাছের জমিয়ে রাখা এই খাদ্য কাঁচা খেলে তাতে শরীরের অনেক বিপদ হতে পারে। এতে বিষাক্ত কিছু থাকে, থাকে আরও কিছু ক্ষতিকর পদার্থ।
আমরা এবারে উপস্থিত লাইভ ডেমনস্ট্রেশনে মনযোগ দিই। ব্রুনোর দেখানো মোটকা ক্যাসোভা মূল খানাকে প্রথমে টুকরো টুকরো করে জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপরে, ফুটন্ত জলে তাকে সেদ্ধ করে, ঝিরঝিরে করে কুরে নিয়ে, দানার মতো আকারে এই জ্বলন্ত উনুনের আঁচে ঝরঝরে শুকনো করে নিয়ে, শস্য দানার মতো আকারে বড় বড় পাত্রে সঞ্চয় করে রাখা হয়। আমাদের সঙ্গী সাথীদের ভেতরে কয়েকজন ওই কুড় কুড়ে দানা উনুনের ওপর থেকেই দাঁতে কেটে পরখ করে দেখলেন ওখানেই দাঁড়িয়ে। ওনাদের মতে তা সত্যিই, চমৎকার ও স্বাদু।
টিকুনাদের প্রধান খাদ্যই হলো এই দানা (ম্যানিওক ফ্লাওয়ার), ঘরে তৈরি পানীয় আর সেদ্ধ মাছ।
মজার কথা, ওই কাঁচায় বিষ আর ওমনি করে দানা বানিয়ে নিলেই সুখাদ্য, এই বিষয়টা যাচাই করতে পড়াশুনো করেছিলাম। আজকের মেডিক্যাল সায়েন্সে একই পদ্ধতি অবলম্বনে ম্যানিওক/ ক্যাসোভাকে, তার ভেতরের বিষাক্ত সায়ানাইড মুক্ত করে সুখাদ্যে পরিবর্তিত করার কথা বলা আছে (Medical News Today 7th July, 2023)।

..... ক্রমশঃ
Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay










আমাজনের অন্দরে...সবার ব্যস্ততার মাঝে আমদের বোট অন্ধকারের ভেতরে পাড়ি দেয়। সবাই নিশ্চুপ। মোটামুটি ঘণ্টা খানেক ধরে জলের এ...
10/09/2023

আমাজনের অন্দরে...

সবার ব্যস্ততার মাঝে আমদের বোট অন্ধকারের ভেতরে পাড়ি দেয়। সবাই নিশ্চুপ। মোটামুটি ঘণ্টা খানেক ধরে জলের এ গলি, সে গলি ঘুরে চলেছি আমরা। অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে জোনাকির আলো চোখে পড়ছে। যদিও গুমোট গরমে শরীরে কষ্ট হচ্ছে, তাও বেশ আবেশময় লাগতে শুরু করেছে রাতের আমাজন।
অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ কান্ডারী আমাদের বোট খানাকে গাছ পালার ভেতরে ঠেসে ঢুকিয়ে দিল। বোটের সামনের ছুঁচলো মুখটা গাছের ভেতরে। আমাদের গায়েও দুপাশের পাতার ছোঁয়া লাগছে। মনের অবস্থা, আরে করো কি! করো কি... গোছের।
স্থানীয় ভাষায় কি যেন বলে ওঠে অভিজ্ঞ গাইড আর অন্যজন অতর্কিতে স্পটলাইট ফেলে গাছের একটু উঁচু ডালে। দ্বিতীয় জন ডালের গা থেকে কিছু একটা হাতে করে ছাড়িয়ে আনে। স্পটলাইট স্পষ্ট হয়, সেটা একটা ট্রি- টোড শ্লথ। সঙ্গের গাইড বোঝাতে থাকে তার বিশেষত্ব। তিন আঙুল ওলা, Bradypus.
পেছন থেকে ঘাড়ের চামড়া খামচে ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে ছেলেটি ওই শ্লথ কে। মুখখানা বেচারা হলেও, ভয়ানক আপত্তি জানাচ্ছে সে স্পটলাইট মুখে নিয়ে এই অবস্থায় ঝুলে থাকা নিয়ে। সামনের হাতের নখ বের করে, হাত নাড়িয়ে প্রতিবাদী হয় সে। কিন্তু বাকি চার বোটের সদস্য দেরও দেখা শেষ হতে, তাকে আবার গাছের ডালে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। শ্লথ হলে কি হয়, গাছের আড়াল ফিরে পেতেই, চকিতে নিজেকে সবুজের ভেতরে লুকিয়ে ফেলে সে।
জঙ্গলে দিনে হোক কি রাতে, কথা বলে শব্দ তৈরি নিষেধ, যাতে বনবাসীদের অসুবিধে না হয়। কিন্তু শ্লথ দেখার পর, কোনো নিষেধের তোয়াক্কা নেই কারো। ফিরতি পথে কলবল করতে করতেই জেটিতে নামি। আমাজনে গোনা গুনতি দিন রাতের একটা গোটা দিন আর দু রাত শেষ। তো কি? বেশ পূর্ন লাগে নিজেকে সারাদিনের শেষে।

নদীতে পিরানহা শিকার

৩য় দিনে, সকালের খাওয়া দাওয়া সেরে আমাদের নদীর অলি গলি দিয়ে জঙ্গলের ঘ্রাণ নেওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছিল। আসলে এই দিনের সকালে আমাজন খ্যাত পিরানহা দর্শনে যাবার কথা । তার আগে অকারণে মোটরাইজড বোটে চেপে জঙ্গলের ধারে ধারে ঘোরা হবে কিছুক্ষণ, কোন ল্যান্ডিং ছাড়াই।
আমাজন ইকো পার্কের জেটি নদীর এক মোড়ে। সেখান থেকে ইংরেজীর L আকৃতিতে জলস্রোতের মূল ধারা আরও ভেতরের দিকে ঢুকেছে। নদী এঁকে বেঁকে যত ভেতরে যাচ্ছে, দুপাশ থেকে অজস্র ধারা এসে মিশছে মূল স্রোতে। সে সবেরই দু'ধারে ঝুঁকে আছে জঙ্গলের সবুজদল। কোথাও কোথাও গলি পথের মাথায় ডালপালার ছাদ। এমন গভীর ঘনসবুজ দু'পাশ। নৌকো চলেছে জল কেটে। তার অভিঘাতে পাশ দিয়ে জল পেছনের দিকে সরে যাচ্ছে। সঙ্গে ভেসে চলেছে ঝরা পাতা, ভেঙে পড়া ডালপালা কত্ত কি। কোথাও জলে স্রোত আছে, কোথাও বা জল প্রায় স্থির। তবে জলের রঙ সর্বদাই কালচে।
আন্দাজ আধ ঘন্টা এমন এলোমেলো ঘোরার পরে, নাও চলল পিরানহা সন্ধানে। আমাজন অববাহিকায় বেশ কয়েক ধরনের পিরানহা মাছ পাওয়া যায়। এই মাছেরা omnivor বা সর্বভুক। অর্থাৎ জলজ ঘাস পাতা থেকে শুরু করে, জীব জন্তু সবই এরা খেয়ে ফেলতে পারে। তবে খুব স্রোত ওলা জলে এরা তেমন সুবিধা করতে পারে না। মানে, স্রোতের বদলে আপাত স্থির জলে পিরানহা বেশী সজাগ ও সচল।
তাই পিরানহা সন্ধানে আমরা গলি - তস্য গলি - তস্য তস্য গলি করতে করতে পৌঁছলাম প্রায় অন্ধকার জলে ডোবা গাছপালা ঘেরা, আপাত বদ্ধ জলের জায়গায়। জায়গাটা বড় সড় গোলাকার প্রায়। এক সঙ্গে গোটা চারেক বোট আগু পিছু করে স্থির হলো। নৌকায় করে আমরা এনেছিলাম কাঁচা মাংসের টুকরো।
নৌকো একটুক্ষণ স্থির দাঁড়ানোর পরে, বিশাল বড় সুতো ওলা ছিপের ডগার বোঁড়শি তে অমন একেক টুকরো মাংস গেঁথে দূরে তা ছুঁড়ে ফেলা হলো। তারপরে ফাতনায় চোখ স্থির রেখে কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা।
ফাতনা একটু নড়লো কি নড়লো না, তড়িৎ গতিতে সুতো টেনে তুলতেই বোঁড়শিতে আটকানো লালচে দেহের পিরানহা ছট ফট করছে দেখা গেল। প্রথম শিকার প্রতি নৌকোর অভিজ্ঞ শিকারীরাই করে দেখলো। তারপরে আম জনতার হাতে ধরিয়ে দিল তারা ছিপের ডান্ডা। সবার সঙ্গে আমিও দুবার চেষ্টা করলাম। দু'বারই, চটপট টেনে তুলেও পিরানহা মিলল না। তবে প্রতিবারই মাংসের টুকরো গায়েব ছিল।
চারটে নৌকোয় নয় নয় করে গোটা দশেক পিরানহা ধরা পড়েছিল। যদিও পিরানহা মাছ নাকি সুস্বাদু, তাও একটা মাছও আমরা মারিনি। বোঁড়শি শুদ্ধু, বোঁড়শি থেকে ছাড়িয়ে তাদের, তাদের দাঁতের ছবি তুলে জলেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সবাইকে।
আমাদের কপাল ভালো, যে রেড বেলিড পিরানহার দল পেয়েছিলাম। আমাজন অববাহিকায় আন্দাজ ২০ রকমের পিরানহা মাছ আছে । তার ভেতরে গোটা চারেক species ভয়ংকর মাংসখেকো। আর তাদের নাটের গুরু এই Red- bellied Piranha বা Red Piranha.
ডিম ফুটে বেরিয়ে থেকেই এরা ক্ষুধার্ত, মাংসাশী। ছোট ছোট চিংড়ি জাতীয় প্রাণী, পোকা ইত্যাদি খেতে থাকে ক্ষুদেরা। প্রমাণ মাপের পুরুষ লাল পিরানহা লম্বায় প্রায় ১৫/১৬ ইঞ্চি অব্দি হতে পারে। একেকটা দেড় ইঞ্চি সাইজের পিরানহা আরামে অন্যান্য ছোট মাছ কি মেছো কুমীরের ছানা কি জলে পড়ে যাওয়া পাখীর ছানা খেয়ে ফেলে। মজার কথা, এরা কোন প্রাণীকেই মেরে খায় না। জ্যান্ত থাকতেই কামড়ে খেতে শুরু করে। সেটাই এদের ভীষনত্ব। আমাদের সঙ্গে আসা স্থানীয়দের একজন বলে, একবার তার কাকার একটা আঙুল কামড়ে খানিক মাংস তুলে নিয়েছিল পিরানহা। মাত্র তিন ইঞ্চি মাপ ছিল সে মাছটা। আঙুলের সে ঘা সারতে প্রায় ছ'মাস সময় লেগেছিল।
....... ক্রমশঃ
Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay











আমাজনের অন্দরে...আমাজন নদীর অ্যারাউ কচ্ছপইকো পার্কের উঁচু পাড় থেকে শুরু করে আমরা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকেছি। আমরা সে পথে যেমন...
03/09/2023

আমাজনের অন্দরে...

আমাজন নদীর অ্যারাউ কচ্ছপ

ইকো পার্কের উঁচু পাড় থেকে শুরু করে আমরা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকেছি। আমরা সে পথে যেমন খুশী চলেছি মনে করলেও, ব্রুনো ও সাথীরা একটা নির্দিষ্ট বৃত্তেই হাঁটিয়েছে আমাদের। যে পথ পেরিয়েছি, তা কমবেশী অর্ধ বৃত্তাকার। তাই ফিরতে হবে বৃত্তের ব্যাস ধরে সরলরেখায় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেদিকে। ঐ চলার পথে আমরা বেশ খানিকটা নেমেও এসেছি। তাই ফেরার পথে অনেক ছোট ছোট জলস্রোত, প্যাচ প্যাচে কাদার জায়গা পার হতে হচ্ছে। এমন পথের মাঝে ছোট্ট একটা ঝোরা কয়েক ফুট ওপর থেকে লাফিয়ে নেমে বেশ বড় একটা জলাশয়ের মতো তৈরি করেছে। তিরতির করে আরও নীচের দিকে নামছে সেই ধারা। চারপাশের মাটি কতকটা হলদেটে লাল। তাও অগভীর ঝোরার জল, কাদা গোলা নয়। বরং বেশ পরিষ্কার। আর তাতেই দেখা গেল, জলের ভেতর বিশাল আকৃতির কয়েকটা কচ্ছপ। মানুষের সাড়া পেয়ে তড়বড়িয়ে পা চালায় তারা জলের বাইরে। ব্রুনোর সঙ্গীরা ক্যামেরাম্যানদের উৎসাহ দিতে চটপট টোকা মেরে থামায় তাদের। একটুক্ষণ চুপচাপ থেকেই একপাশে কাত করা ঘাড় বাড়ায় বিশালাকৃতি Arrau Turtle এর দলের পান্ডা। অ্যারাউ কচ্ছপ কে দক্ষিণ আমেরিকার নদীর দৈত্যাকার কচ্ছপ (Giant River Turtle) বা আমাজন নদীর দৈত্যাকার কচ্ছপ নামেও ডাকা হয়। আমাজন ও তার অববাহিকা জুড়ে এদের রাজত্ব। ব্রুনো দেখায় বারবার কচ্ছপ গুলো গলাটা একদিকে কাত করে, খোলার ভেতর থেকে মাথা বের করছে। আসলে এটাই ওদের স্বাভাবিক আচরণ। তাই অ্যারাউ দের আরেক নাম সাইড নেক টার্টল। আমাদের সব রকম খেলা দেখানো শেষে, ব্রুনো আর তার সঙ্গীরা যত্ন করে অ্যারাউ পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যদের জলে নামতে সাহায্য করে দেয়।
জঙ্গলের পথে কয়েক ঘণ্টার সঞ্চয় নিয়ে আমরা ফিরলাম আমাজন ইকো পার্কে।

আমাজন ইকো ক্যাম্প

জঙ্গল থেকে ফেরার পরে দুপুর বিকেল জুড়ে তেমন কোন কাজ ছিলনা আমাদের, পায়ে হেঁটে ইকো পার্কের আনাচ কানাচে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া। এক সময় জঙ্গল ছিল, না বলে, ইকো পার্কটা জঙ্গলেরই ভেতর বললে ভালো হয়। কটেজ গুলোর ওপরে ঝুলে আছে বিশাল বিশাল সবুজের সারি। তাকিয়ে ছিলাম, সেই ঘন সবুজের ভেতরে। ঠাহর করার চেষ্টা করছিলাম, তার পেছনের অংশের। হঠাৎ ঝপাস করে কি যেন পড়লো বা গাছের ওপরের অংশ থেকে নীচের দিকে নামলো। কিছু বোঝার আগেই, লোমশ লম্বা হাতে গাছের কান্ডটায় ঝুলে সড়াৎ করে ঘন পাতার আড়ালে সরে গেল যে, সে আর কেউ নয়, কোন শ্লথ জাতীয় প্রাণী। আফশোষ হয়। কেন যে সজাগ ছিলাম না? একটু আগে হুঁশ হলে দেখতে পেতাম পুরোটা। পার্কের চারপাশ পাঁচিল ঘেরা। নদীর দিকে তিন চার ধাপে ঢালু হয়ে নেমেছে। জিগ জ্যাগ হাঁটা পথের ধারে ফুলগাছের সারি। টালি বসানো পথ আর ফুল গাছের মাঝে ইঞ্চি দুয়েক উঁচু সিমেন্টের আড়াল। কমলা লালে মেশানো ছোট ছোট ফুলে ছাওয়া অংশটায় চোখ পড়তে একটু দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ঠিক ওমনি কমলা কালো আর লালের ব্যান্ড ওলা ফুট তিনেক লম্বা একটা সাপ সেখানে শুয়ে। চটপট ক্যাম্পের এক কর্মীকে ডেকে আনি নিঃসন্দেহ হবার জন্যে, যে সে নির্বিষ। কিন্তু সেটা ছিল এক ব্যান্ডেড ক্রেট, বিষধর। সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে, সাপটাকে ওনারা যত্ন করে তুলে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে এলেন। কাছেই কোথাও খোলস ছেড়ে ক্লান্ত সাপটা বিশ্রাম নিচ্ছিল।
সন্ধ্যে আসন্ন প্রায়, তাই পায়ে পায়ে পার্কের জেটিতে গিয়ে দাঁড়াই। মানৌস থেকে রিও নেগ্রো ধরে উত্তর পশ্চিমে পাড়ি দিয়ে আমরা ঢুকেছি নেগ্রোর উপনদী Tarumã Acú হয়ে তারও কোন শাখায়। তাও নদী যেন নদী নয়, এত্ত বিশাল তার ব্যাপ্তি। জেটির ডাইনে, বাঁয়ে যেদিকেই তাকাই, গাছপালা ডুবে আছে জলে। স্থল ভূমি যেন দ্বীপের মতো। শুনেছি নেগ্রো আমাজনের মিলিত ধারা আরও ১৪/১৫০০ কিমি পথ পেরিয়ে আটলান্টিকের বুকে মিশেছে। কিন্তু এখানটাও তো দেখতে মোহনার ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মতো। যদিও গাছপালা গুলো দেখে ম্যানগ্রোভ বলে মনে হয় না। তাও এমন জলমগ্ন জঙ্গল আমি মোহনায় ছাড়া আরেক জায়গায় দেখেছিলাম। কম্বোডিয়ার টোনলে স্যাপে। কিন্তু সে তো মেকং নদীর জমা জলের লেক বা জলাশয়। নদী তো নয়।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে প্রকৃতির শোভায়ই বুঁদ হয়ে থাকি। জেটিতে দাঁড়িয়ে এক অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখি, আমাজনের দ্বিতীয় সন্ধ্যেয়।

আমাজনে রাতে নৌকা সফর

স্বপ্নের অরণ্য ভূমে (হোক সে পেরিফেরাল!), প্রথম দিনটা বেশ কেটেছে। তবে রাতে রহস্যাবৃত নাইট সাফারি আছে। আসলে জঙ্গলে দিনের বেলা আর রাতের রূপ আলাদা। দিনে ঘোরাফেরা করে যারা (জন্তু জানোয়ার), রাতে তারা সচরাচর বিশ্রামে থাকে। আর রাতের রাজারা আলাদা। তাই এই রাত সফরের জন্যে খানিক উত্তেজিত বোধ হচ্ছে।
একেকটা বোটে মোট ছ'জন অতিথির সঙ্গে চালক ছাড়া দুজন সাহায্যকারী গাইড। নৌকায় কোন আলো নেই, সঙ্গে সবার টর্চ আছে, কিন্তু জ্বালা নিষেধ। এমনকি মোবাইল স্ক্রীনের আলোও যেন জ্বালানো না হয়, এমন সাবধান বাণী শুনিয়ে নৌকো ছাড়লো। এমনিতে নৌকো মোটরাইজড। কিন্তু রাতের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ না করে, দাঁড় টেনেই নৌকো ভাসলো। মাঝ নদীর জল গভীর। পাড়ের কাছে নিশ্চই তল পাওয়া যাচ্ছে। তাই জেটি থেকে দাঁড় টেনে পাড়ের পাশে এনে লগি ঠেলে চলল নৌকা। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। মাথার ওপর নিকষ কালো আকাশ, চারপাশে দৈত্যাকার, অন্ধকার গাছের বন আর ঝিঁঝিঁর ডানা ঘষার আওয়াজে এক আধি ভৌতিক পরিবেশ।
প্রত্যেকটা নৌকোয় একটা করে স্পট লাইট দেওয়া আছে। অভিজ্ঞ চোখে কিছু ধরা পড়লে, স্পটলাইটে তা সবার দেখার ব্যবস্থা হবে। নৌকা চলছে, থামছে। গাছের গায়ে স্পটলাইট দিয়ে দেখে নিচ্ছেন নৌকোর গাইড, আবার ধীর গতিতে এগোচ্ছে নৌকো। বেশ খানিক আগে পিছে হয়ে চলেছে নৌকাগুলো।
হঠাৎ আমাদের বোটের গাইডদের একজন ঝপ করে জলে নেমে পড়লো। আমরা আতঙ্কিত। পড়েছি কাইমান (Caiman) নামের আলিগেটর গোত্রীয় কুমীরের বাস আমাজন অববাহিকায়। সেই সাংঘাতিক কুমীর থাকতে নদীর জলে নামা? বোটের সবাই নিষেধাজ্ঞা না মেনে হাঁ হাঁ করে উঠি সমস্বরে। এরই ভেতরে সেই ছেলেটি জলের ভেতরে হাত দিয়ে খপ করে গিরগিটির চেয়ে একটু বড় আকারের একটা কুমীর ছানা দুহাতে ধরে ওপরে ওঠে। অন্ধকারেও ওরা বুঝে গিয়েছিল ওখানের জলে বুড় বুড়ি কাটছে। তাই টপ করে নেমে হাত চালিয়ে খপ করে ধরে ফেলেছে একটাকে। ল্যাজ শুদ্ধু ছানাটা আন্দাজ ১২-১৫ ইঞ্চি লম্বা। আলো পড়ে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। সারা গা কালোয় হলুদে স্ট্রাইপ। মাথাটা চেপে ধরে থাকার জন্যে পেছনের পা জোড়া কেমন বেচারা হয়ে ঝুলে আছে।
- ছেড়ে দাও। ওকে ছেড়ে দাও। মরে যাবে যে... সবাই সমস্বরে বলতে থাকে।
- হাতে নিয়ে কেউ দেখতে চান? জিজ্ঞেস করে ছেলেটি।
কোন ভলান্টিয়ার পাওয়া যায় না। এদিকে কুমীর ছানা দেখতে বাকি সব বোট আমাদের কাছে এগিয়ে আসে।
.... ক্রমশঃ
Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay












30/08/2023

The Monarch of Amazon ❤️







আমাজনের অন্দরে..জঙ্গলের কথা আর জঙ্গলে কথা বলার উপায় -মাথার ওপর দিকে তাকালে আকাশের চাঁদোয়া দেখা যায়না, জঙ্গলের ক্যানোপ...
29/08/2023

আমাজনের অন্দরে..

জঙ্গলের কথা আর
জঙ্গলে কথা বলার উপায় -

মাথার ওপর দিকে তাকালে আকাশের চাঁদোয়া দেখা যায়না, জঙ্গলের ক্যানোপি এমনই ঠাস বুনোট। আমরা যেখানে আছি,সেখানেও। বিশাল বিশাল গাছেরা মাথা তুলেছে আকাশ ফুঁড়ে। বড় গাছের ভেতরে তুলো জাতীয় কাপোক (Kapok) বা লুপুনা (Lupuna), ব্রাজিলীয় মেহগনি, ব্রাজিল নাট, লোহা কাঠ সবই নাকি একশ ফুটের ওপর লম্বা হয়। আরও মজার মজার গাছ আছে এই জঙ্গলে। বড় পায়ের মতো মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা শেকড়ের চলন্ত পাম গাছ। আগেই দেখেছি বেরি ফলানো Açai পাম, ডুমুর জাতীয় স্ট্রাংলার Fig ট্রি। কাষ্ঠল লতা বা লিয়ানা (Liana)। আর নানান ফুলের বাহার। যার ভেতরে অর্কিড অনেক। শেষে যে গাছের কথা না বললে অন্যায় হবে, তা হলো রবার গাছ, Hevea brasiliensis, বা রবারের প্রাকৃতিক উৎপাদনের আকর। এই গাছের টানেই উনিশ শতকের শেষভাগে দলে দলে ইউরোপীয় আমাজনের জঙ্গলে হামলে পড়েছিল। আর এই হাভেয়া বীজ থেকেই রবার গাছ, প্রথমে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে তারপরে পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
গাছপালার সঙ্গে পরিচয় করার জন্যে যে সময়ের প্রয়োজন, আমাদের সে সময় কি ধৈর্য্য কোনটাই নেই। তার ওপরে সকাল গড়িয়ে প্রায় দুপুর। ইকো পার্কের বাগানের পেছন দিয়ে বেরিয়ে আন্দাজ পাঁচ কিমি হেঁটে আমরা বেশ ঘন জঙ্গলের ভেতরে। ব্রুনো আবারও সবাইকে জড়ো করে এক জায়গায়, যেখানে চারপাশে উঁচু গাছের সারি। হাতের মুগুরখানা ব্রুনোর ভালো ডেমো টুল। কাপোক গাছের নীচের দিকটা আমাদের দেশের শিমুল গাছেরই মতো। মুগুর দিয়ে গাছের কাণ্ডের মেলে থাকা দেওয়ালে একবার জোরে আঘাত করে ব্রুনো। ড্রাম বাজানোর মতোই আওয়াজ বেরোয় তাতে।
ব্রুনো বলে, এ জঙ্গলের ভেতরে দূরে দূরে থাকা মানুষের শব্দ সংকেতে যোগাযোগের প্রাচীন পদ্ধতি। এই গাছের গায়ে ভারী বস্তুর আঘাতে সৃষ্ট শব্দ কয়েক মাইল দূর অব্দি পৌঁছোয়। আর অদূর অতীতেও জঙ্গলের আদি বাসিন্দারা দিনের বেলায় নানান কাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার সময়ে প্রয়োজনে যোগাযোগের উপায় ছিল এই সাংকেতিক শব্দ।
দুবার আঘাতের শব্দের অর্থ, Hello ! মানে একজন আরেকজনের সাড়া নিচ্ছে।
উত্তরে যদি একবার আঘাতের শব্দ আসে - হ্যাঁ, বলো।
যদি এমন আঘাত চারবার আর দ্রুততায় করা হয়, তো তার অর্থ - তাড়াতাড়ি এসো।
শুনে মনে হয়, এ যেন জঙ্গলের টরেটক্কা, টেলিগ্রাফিক সংকেত। কিন্তু শহুরে মনে সন্দেহ জাগে, বলছে বটে, তবে দূর থেকে এ শব্দ শোনা যাবে তো?

আমাজনের বুলেট (Bullet) পিঁপড়ে -

আমাজনবাসী প্রায় দু'শো প্রজাতির পিঁপড়ের ভেতরে নামকরা হলো লিফ কাটার বা ধারালো মান্ডিবল দিয়ে পাতা কাটার ক্ষমতাধর পিঁপড়ে। আর কুখ্যাত হলো ২৪ ঘণ্টা জ্বালা ধরানো বিষধর ' বুলেট ' পিঁপড়ে। চার পাঁচটা বুলেট পিঁপড়ে কয়েক মিনিটের ভেতরে একটা গোটা মানুষকে পেড়ে (grounded) ফেলতে পারে, এমন শক্তি তাদের হুলের বিষে। ব্রুনোর সঙ্গে টুকটাক কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলাম একসাথে। নীচের দিকে ঈষৎ ফোলা (অনেকটা অ্যাডেনিয়াম গাছের গুঁড়ির মতো) বড় একটা গাছের পাশে ব্রুনো হঠাৎ ব্রেক কষে দাঁড়ায়। সবার দিকে ফিরে বলে, "পিঁপড়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন? এ কিন্তু যে সে পিঁপড়ে নয়, কামড়ালে মাংস তুলে নেবার ক্ষমতা রাখে আর হুলের জ্বালা সত্যিকারের বন্দুক দিয়ে বেরোনো বুলেটের মতো কষ্টকর।"
-- বুলেট অ্যান্টস? জিজ্ঞেস করি আমি।
আমার দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে চোখের ইশারা করে হাসে ব্রুনো।
-- নেবে? তবে বাড়াও হাত।
ব্রুনো বলছে বটে এত কথা, কিন্তু একটাও পিঁপড়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। না মাটিতে, নাইই গাছের গায়ে। ওর সঙ্গীদের মধ্যে মিলিটারিদের মতো সবুজ কালো জংলী ছাপের জামা গায়ের ছেলেটি দেখি দু হাতে কালো কালো কি একটা মাখছে। পিঁপড়ে নেই, সঙ্গের ছেলেটির হাতে কি সব মাখা, সব কেমন যেন সম্পর্কহীন কাজ কর্ম বলে মনে হচ্ছিল তখন আমার। আচমকাই ব্রুনো তার হাতে ধরা লম্বা কৃপাণের ধারালো দিকটা ওই পেট ফোলা গাছটার গায়ে ঘষতে লাগলো। আর চক্ষের নিমেষে বিলবিল করে লালচে রঙের বড় বড় পিঁপড়ে গাছের গা ছেয়ে বেরিয়ে এলো।
গাছের নীচের দিকের ওই ফোলাটা নাকি গাছের নয়, তার ছালের ওপরে পিঁপড়ের বাসার জন্যেই ঐভাবে ফুলে থাকে ওপরটা। সে যাই হোক, পিলপিলিয়ে বেরিয়ে পিঁপড়ের দল কি খাই কি খাই ভঙ্গিমায় প্যারেড শুরু করে দিল পুরো গাছের গা বেয়ে। ব্রুনো, তার হাতে ধরা কৃপাণ খানা ঝুলিয়ে, কৌতুক করে সবার হাত ধরতে আসে, পিঁপড়ের ঝাঁকে ঠেসে ধরবে বলে। আর সাথেসাথে সবাই ভয়ে সিঁটকে পেছনে পালানোর চেষ্টা করে। এইবারে ব্রুনো সেই মিলিটারি জামার ছেলেটাকে হাত রাখতে বলে পিঁপড়ের ঝাঁকে। সে রাখে হাত।
পিলপিল করে পিঁপড়ের দল উঠে পড়ে তার হাতে। ভয়ে আমি কানে হাত দিয়ে চোখ বুজে ফেলি। দংশানোর জ্বালায় ছেলেটার চিৎকার শুনবো না আর কামড়ে মাংস তুলে নেওয়া হাত দেখবো না বলে।
- দ্যাখো ওর দিকে... " ব্রুনোর গলা শুনে, চোখ খুলে দেখি, ছেলেটি হাত ওপর নীচে নাড়িয়ে পিঁপড়ে গুলোকে যেন খেলাচ্ছে। ওরা শুধুই হেঁটে চলেছে তার হাত বেয়ে, কামড়াচ্ছে না তো!
- জঙ্গলে যেমন বিপদ আছে, তার থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায়ও আছে.. এই কাঠ পোড়ানো চারকোল মেখেছে ও দুই হাতে। এর গন্ধে পিঁপড়ে কামড়ায় না আর। কথার সাথে সাথে জয়ের হাসি ব্রুনোর মুখে।
আমারই মতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই। যাক বাবা, এযাত্রায় অন্ততঃ পিঁপড়ে কামড়ে, হুলের যন্ত্রণার কাতরানি দেখতে/ শুনতে হলোনা।
পুরো আমাজনের জঙ্গল জুড়ে এই পিঁপড়েদের রাজত্ব। জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসী সাতেরে মাওয়ে (Satere-Mawe) যুবকরা যোদ্ধা হয়ে ওঠার জন্য এই পিঁপড়ের দংশন সহ্য করে। পাতার দস্তানা বানিয়ে তার ভেতরে বেশ কিছু এই Paraponera clavata পিঁপড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপরে যোদ্ধা তকমা প্রার্থী যুবক সেই দস্তানা পরে, পিঁপড়ের কামড় খায়। এমন করে দশ থেকে কুড়ি বার যন্ত্রনা সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ চলে। যে সব যন্ত্রনা, কষ্ট সয়ে কাতর না হয়ে অবিচল থাকে, সেই প্রকৃত যোদ্ধা। আর এদের একটি হুলেই যাতনা প্রায় শরীরে বুলেট ঢোকার সমান। তাই এদের আদরের নাম বুলেট অ্যান্ট।

.... ক্রমশঃ
Copyright belongs to Sarbani Mukhopadhyay










Address

Rishra, Serampur Uttarpara
Rishra
712248

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sarbaniz Soliloquy posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share

Nearby travel agencies


Other Tourist Information Centers in Rishra

Show All