12/06/2022
"পুরোনো লাইনে অচল ট্রেনের নতুন ইঞ্জিন"
ট্রেনের ইঞ্জিন-সংকট কাটাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি ৪৬টি নতুন ইঞ্জিন কিনেছে। এর মধ্যে ৩০টি মিটারগেজ এবং ১৬টি ব্রডগেজ লাইনে চলাচল করার কথা। পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলে মিটারগেজ ইঞ্জিনগুলো। কিন্তু এই অঞ্চলের অনেক শাখা লাইনের অবস্থা নাজুক বলে নতুন রেল ইঞ্জিন চলাচলের অনুমতি নেই। কারণ নতুন ইঞ্জিনের লোড নিতে পারে না এসব রেললাইন। ফলে প্রতিদিনই ছয়-সাতটি ইঞ্জিন বসে থাকছে। আর ইঞ্জিনগুলো নিয়মিত ব্যবহার না করলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে বলে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নতুন তিন হাজার মডেলের ইঞ্জিনের এক্সেল লোড আছে ৯২ টন। আর বর্তমানে চলা পুরোনো মডেলের ইঞ্জিনের এক্সেল লোড ৭২ টন। আবার নতুন ইঞ্জিনের গতিও পুরোনো ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি। পূর্বাঞ্চলের রেললাইন এবং ছোট-বড় সেতুগুলো পুরোনো হলেও এগুলোর ওপর দিয়ে আগের মডেলের ৭২ টন ইঞ্জিন চলতে পারে। কিন্তু ৯২ টন ইঞ্জিন চলাচল করতে পারে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়াই রেলওয়ে প্রকল্প নিচ্ছে, যার ফলে এত সমস্যা। বড় প্রকল্পের চেয়ে রেললাইন মেরামতে খরচ কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরোনো লাইন মেরামত করে নতুন ইঞ্জিন চালানোর উপযোগী করা উচিত।
জানা গেছে, তিন হাজার মডেলের নতুন মিটারগেজ ইঞ্জিনগুলো শুধুমাত্র পূর্বাঞ্চলের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মেন লাইনে চলাচলের অনুমতি আছে। ফলে ঢাকা থেকে সিলেট, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ-নেত্রকোনা, জামালপুর-কিশোরগঞ্জ রুট, ঢাকা থেকে নোয়াখালী রুট, চট্টগ্রাম থেকে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর, লাকসাম থেকে চাঁদপুর, লাকসাম থেকে নোয়াখালী, এবং আখাউড়া থেকে সিলেট রুটে নতুন রেল ইঞ্জিনে চলাচল করতে পারছে না। এসব রুটে চলাচলকারী পুরোনো ২৬০০ ও ২৯০০ মডেলের ইঞ্জিনের দক্ষতা কম হলেও চাপ বেশি পড়ছে। অন্যদিকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে।
ওই সব শাখা লাইনে রেলট্র্যাকের সমস্যার সমাধান করে নতুন ইঞ্জিন চলাচলের অনুমতি না দিলে চলতি ২০২২ সালের শেষের দিকে এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করার আশঙ্কা আছে বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন। পূর্বাঞ্চল রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইন এমনিতেই অনেক পুরোনো। তবে এই রুটের সব সেতুর অবস্থা খারাপ নয়। যেগুলোর অবস্থা একটু খারাপ সেগুলো চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা চলছে। আর যেসব শাখা লাইনে নতুন ইঞ্জিন চলার অনুমতি নেই, সেখানে লাইন সংস্কার করে পর্যায়ক্রমে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, কোন লাইনে ট্রেন চলছে না এটা তাঁর জানা নেই। তবে পর্যায়ক্রমে সব রেললাইনের মানোন্নয়ন করা হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরি দিক থেকে রেলের ইঞ্জিন বেশ জটিল হওয়ায় তা নিয়মিত চালু রাখতে হয়। যদি নিয়মিত চালু না থাকে তাহলে ইঞ্জিন বসে যায়। সব মিলিয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৮৬টি ইঞ্জিন চলে এখন। এর মধ্যে পুরোনো মডেলের ইঞ্জিনগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কালও শেষ হওয়ার পথে। এ কারণে, রেলের গতি বাড়তে নতুন ইঞ্জিনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।
© আজকের পত্রিকা
ছবি - জীবন