01/01/2022
গোড়াপদ্মা..
বছরের শেষ রাত আবার বছরের শুরুটা এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মায়াজালে জড়িয়ে, আমরা ৯ জনের একটা টিম চলে যাই গোড়াপদ্মার গভীর জঙ্গলে।
আমরা প্রকৃতমতে, প্রকৃতির দিনের সৌন্দর্য উপভোগ করি কিন্তু আমাদের জন্য রাতের প্রকৃতি সম্পূর্নই নতুন অভিজ্ঞতা ছিলো।আর অভিজ্ঞতা অর্জনে আমাদের সঙ্গী ছিলো Arifur Rahman ভাইয়া,যার সম্পর্কে আপনারা সকলেই কম বেশি জানেন।আমি অল্প করে বলে দেই একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ, টুর এবং টুরিস্ট দের নিয়েই তার জীবন। আর তিনিই ছিলেন আমাদের গাইড।
আমরা রাত ৮টায় আমরা একটি মাহিন্দ্র ভাড়া আর নিজস্ব মটর বাইক নিয়ে রাত ১০টায় গোড়াপদ্মা জঙ্গলে পৌছাই।স্পটে পৌছে শুরু হয় জঙ্গলকে সাজানো। আগুন জ্বালানো,তাবুঘর তৈরি,মোমবাতি।
এর মধ্যে বলে নেয়া ভালো আমাদের সকলের মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ছিলো নিভু নিভু,কারো হাত ছিলো উঁচু করা,একি সত্যিই কি নেটওয়ার্ক থাকবে না!!পাওয়া, না পাওয়া চলতে চলতে শুরু হলো ছবি তোলা,ভিডিও ধারণ। বড়রা তাবুঘরে গান গাচ্ছে, কেউ আগুন পোয়াচ্ছে আর গল্প হাসিতে মেতে যাচ্ছে,আর কেউ আবার আগুনের জ্বালানি যোগাচ্ছে। এ ঘোরটা কাটিয়া কেউ এই দৃশ্যের দিকে তাকালে মনে হবে কোন এক পৌরানিক গ্রামীণ ছোয়া। তবে এবার ঘোর কাটান,
যোগ হলো কিছু ফানুস, পুরনকে বিদায় দিয়ে, নতুনকে বরণ করার অপেক্ষা।বলে নেয়া ভালো লোকালয় থেকে দূরে ফানুস উড়ানো উত্তম।আর আমরা তারই মধ্যে।
শেষ হতে না হতেই কানে আসলো চারিপাশে ঘুরে বেরানো শিয়ালের একতাবদ্ধ আওয়াজ,অল্প সময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেও কেমন যেনো মিশে গেলাম আমরা এই জঙ্গলে।মনে হলো ওদের মতো আমাদেরও বসবাস এই জঙ্গলে। এরই মধ্যে আমাদের জন্য রান্না করা রুটি পিঠা আর মাংস নিয়ে হাজির হলো স্থানীয় ভাইয়েরা,এখানে টুরিস্টদের জন্য স্থানীয় মানুষ খুবই আন্তরিক,তাদের ভালোবাসা পেতে হলে আপনাদের তাদের সাথে মিশে যেতে হবে,এখানে সবাই-ই আরিফ ভাইয়ের কাছের মানুষ প্রানের মানুষ। খাবার ছিলো বেশ মজাদার অনেক ঝাল আর রুটি মাখিয়ে খেয়ে নিতে, অনেকের অবস্থা বেতাল তবুও খাবারের স্বাদ দারুণ ছিলো বলে সবাই কেমন তৃপ্তি মিটিয়ে খেলো।খাওয়া শেষ হলো কিছু গল্প আর অভিজ্ঞতার বর্ণনা। কখন যে ঘড়ির কাটায় ২টা বাজলো খেয়াল ছিলো না।এবার ঘুমের পালা কারন ভোরটা মিস করা যাবে না,কিন্তু কি করার তাবু ঘরেতো গল্প করা হলো না।আবার শুরু হলো গল্প গান আর খানা পিনা। এক বোতল জুসের ভাগিদার তিন,পই পই করে হিসাব হচ্ছে জুসের।শেষ তবে লাইট অফ।
সব চুপ হতেই মনে হলো যেনো ছোটবেলার কোন লুকোচুরি খেলছি আমরা। রাত বাড়তে বাড়তে আর রাতে তাবুর আলো নিভে গেলে জঙ্গলের অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।চার দিকে শিয়ালের ডাক,আবার রাতে শিয়াল তারানো, প্রানিদের হাটার শব্দ,পাখিদের রাত্রি যাপনের কথপোকথন......এ এক চরম অভিজ্ঞতা, সাথে নিয়ে নিজেদের সাবধানতা।হইছে ধরেন এরপর আমি ঘুমাইয়ে গেছি।সকাল হতেই তাবু খুলতেই পেলাম এক সজীবতা,তবে কি মায়াজালের চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে এরা!রাতের আকাশে অগণিত তারা আর অস্তিত্বের উপস্থিতির একরুপ! আহ তৃপ্তি তৃপ্তি!! ভাবতেই ভালো লাগে।দোলনায় দোল খেয়ে,অনেক অনেক ছবি তুলে জঙ্গল ঘুরে ঘুরে রওনা দিলাম লোকালয়ে নিজেদের ঘরে।তবে নাস্তা করতে ভুলি নাই করে নিলাম গঞ্জ থেকে।
আরো এই অভিজ্ঞতার মাইলফলক হিসেবে ছিলো রহমান আরিফ ভাইয়ের তৈরি করা জল তরণী । আর একই সাথে এই গল্প ভাগ বসিয়ে নিলো তার "চর উৎসবের" পাতায়।
লেখা - তৌসিফ (৯ সদস্যদের মধ্যে একজন)