Kawsar Polas -কাওসার পলাশ

  • Home
  • Kawsar Polas -কাওসার পলাশ

Kawsar Polas -কাওসার পলাশ A Traveler, A blogger, A Story Teller
(3)

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।  #বালি_পাস চতুর্থ পর্ব ঃস্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতে ট্রাই করছিলাম কিন্তু কোন ভাবেই যেনো আমার ঘুম...
04/06/2022

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।

#বালি_পাস চতুর্থ পর্ব ঃ

স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতে ট্রাই করছিলাম কিন্তু কোন ভাবেই যেনো আমার ঘুম আসছিলো না। আমি এপাশ ওপাশ করতে ছিলাম। এর মধ্যেই হটাৎ করে প্রান্ত ভাইয়ের অনেক কাশি বেড়ে যায়। উনি কাশি দিলে মনে হচ্ছিলো পুরো ঘরটাই নড়ে উঠছিলো। তাতে মোটামুটি সবার ঘুমানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেলো। আমি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে গেটের পাশে শুয়ে পড়লাম। যাইহোক কোন রকমে রাতটা পার করলাম। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে সবাই ট্রেকিং এর জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। হটাৎ করে প্রান্ত ভাই এবং টিমের আরেকজন সদস্য আমাদেরকে জানালেন যে তারা আর সামনের দিকে যাবেন না। আজকে তারা এখান থেকেই পিছনের দিকে ফিরে যাবেন। আমরা তাদেরকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়ে আমাদের এজেন্সি কতৃপক্ষকে জানালাম তারপর তাদের পরামর্শ নিয়ে টিম থেকে ২ জন বিদায় নিলো। বাকী টিমে এখন আমরা মাত্র ৪ হয়ে গেলাম। আমরা সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম। আমাদের গাইড আমার হাটার গতি দেখে আমাকে জানালেন আমি যেনো সামনের Y জাংশন দেখামাত্রই দাড়িয়ে যাই।সাধারণত আমি বান্দরবান কোন টিম নিয়ে গেলে টিমের সবচেয়ে সামনেট মেম্বারকে এই কথা বলে থাকি। যাইহোক আমি গাইডের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে লাগলাম। এরমধ্যেই যতই সামনে যাচ্ছি প্রকৃতি যেনো আমাকে ততই মুগ্ধ করছে। প্রকৃতির রুপ সৌন্দর্যের টানেই আমি দেশের সীমানা পার হয়ে হাজার মাইল দূরের এক ট্রেইল ধরে হাটছিলাম। আমার কাছে বারবার মনে হচ্ছিলো আমার সব কষ্ট এবং টাকা সবকিছুই যেনো পরিপূর্ণতা পেয়ে গেছে। এই এক কঠিন নেশা যে নেশা আমাকে চুম্বকের মতো করে টেনে সামনে নিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে খোলা নীলাভ আকাশের যে কতটা বৈচিত্র্যময় রুপের আয়োজন। চারদিকের বিশাল আকৃতির পাথুরে খাড়া পাহাড়ের বুকে ঘন সবুজ বনের সমারোহ। মনে হচ্ছিলো পাহাড় গুলা যেনো সবুজ চাদরে নিজেকে আবৃত করে রাখছে এবং সেই চাদর গায়ে দেওয়া পাহাড়ের মাথায় সন্নাসীর মাথার পাগড়ির মতো বিশাল সাদা বরফ ঢাকা টুপি পড়ে পাহাড় গুলাও আমাদের সাথে হাটছে। আমার হাটার গতির তুলনায় ক্যামেরা ব্যাবহারের গতি ছিল অনেক বেশি। অসম্ভব সুন্দর এরকম নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক রুপ আমার হাটার গতিপথ রুদ্ধ করে চলছে। এরমধ্যেই একটা লম্বা উচু পথে উঠা শুরু করলাম, যতই উপরের দিকে উঠছি আর সামনে থেকে একটা ঝর্ণার পানির কলকল শব্দ যেনো আমাকে আরো জোরে টেনে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি ঝর্ণা প্রিয় মানুষ, এই শব্দের মোহ আমাকে চুম্বকের মতো টানছিল। আমি দ্রুত উপরে উঠেই দেখলাম বিশাল এক ঝর্ণা যা কিনা অনেক উচুতে সাদা পাহাড়ের চূড়া থেকে বরফ গলে গলে সবুজের বুকে চিরে নিচের দিকে সাদা দুধের মতো করে গড়িয়ে আসছে।

ট্রেইলে কখনো আমি আমার নিজের ছবি তেমন একটা তুলি না। কিন্তু এটা এমন স্বর্গীয় একটা ট্রেইল যার বুকে দাড়িয়ে নিজের ছবি থাকবে না এটা মানা যায় না। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার টিমের বাকী সবাই অনেক দূরে। কিছুক্ষণ পরে সজল ভাই আসলেন, উনাকে দিয়ে নিজের কিছু ছুবি উঠালাম এবং উনাকেও কিছু ছবি তুলে দিলাম।উনি বলতে লাগলেন " ভাই আপনি যেভাবে অনবরত ছবি তুলে যাচ্ছেন,আপনার মেমোরি কার্ডে মনে হয় না আর জায়গা ফাকা থাকবে"! আমি বললাম আজকে রাতে আবার ফাকা করে নিবো। আমরা ২ জন কথা বলতে বলতে সামনে একটা সমতল জায়গা দেখে পিছনের বাকী সবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। চারদিকে স্টেডিয়ামের গ্যালারির মতো বিশাল বড় বড় পাহাড়ের মাঝে একটা সবুজ সমতল মাঠ, যার এক কোণ দিয়ে বিশাল একটা ঝর্ণা উপর থেকে নিচে গড়িয়ে এসে নিচের দিকে বহমান নদীর বুকে আচড়ে পড়ছে। বরফ গলা সাদা পানির নদী এবং ঝর্ণার পানি, ২ টার সংমিশ্রণের শব্দ সবমিলিয়ে এই পরিবেশটার কাছে যেনো পৃথিবীর সকল রুপ সৌন্দর্য হার মানতে বাধ্য!! কিছুক্ষণের মধ্যেই টিমের বাকী সবাই চলে আসছে,আমরা সবাই ব্যাগ থেকে শুকনা খাবার বের করে খেতে লাগলাম। এদিকে আমার ফোনের ক্যামেরা চলমান, যদিও আমি আমার ফোনের ক্যামেরার উপর চরম লেভেলের বিরক্ত। বারবার বলছিলাম যদি জানতাম যে এতটা ভয়ংকর সুন্দর হবে তাহলে আমি হয়তো আগে ভালো একটা মোবাইল বা ক্যামেরা কিনতাম, তারপর এখানে আসতাম। নেক্সট টাইম আগে এটাই করতে হবে।

অনেকক্ষণ রেস্ট করার পরে আমি উঠে দাড়ালাম, এবং কিছুদূর এগিয়ে গেলাম। এরমধ্যেই আমাদের সামনে একটা ব্লাক পিক করে আসা ফিরতি টিমের ক্যাম্প দেখা গেলো। আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরে তাদের টিম মেম্বারদের একেকজনের চেহারার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বরফের অত্যাচারের ভয়ংকর ছাপ স্পষ্ট হতে লাগলো। তাদের থেকে আমাদের গাইড জেনে নিলেন উপরের আবহাওয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো না। তবে আশা করা যায় যে কোন মুহূর্তেই ভালো হতে পারে। আমরা হাটতে লাগলাম আমাদের গাইড দ্রুত সবার সামনে চলে গেলেন। তিনি একটা জায়গায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।আমি ছবি তুলতে তুলতে সামনের দিকে যাচ্ছিলাম। বাম পাশে অনেক দূরের পাহাড়ের বুক ট্রেইল ধরে হারকিদুন যাওয়ার মুসাফিরদেরকে দেখা যাচ্ছিলো। মানুষ এবং গাদা গুলাকে পিপড়ার মনে হতে লাগলো। দূর পাহাড় থেকে এরকম দৃশ্য বেশ উপভোগ করার মতো ছিলো। আমাদের টিমের গাইডের সাথে দেখা হলো তিনি আমাকে নিচের দিকের জংগলের ভিতর দিয়ে নদীর পাশ ঘেঁষে এগিয়ে যাওয়া একটা রাস্তার দিকে ইংগিত করে সে পথে এগিয়ে যেতে বললেন এবং বললেন বাকী সবাইকে উনি নিয়ে আসছেন। আমি উনার কথা মতো দ্রুত নেমে যেতে লাগলাম। এখানে নামতে গিয়ে খেয়াল করলাম যে এই প্রথম কোন একটা পথ পেলাম যেটা আমাদের বান্দরবানের রাস্তার মতো কোন পাথুরে ভাজের মতো সিড়ি করা নাই। এখানের প্রতিটি উচু নিচু পথেই ছোট ছোট পাথর দিয়ে ভাজ করে সিড়ি করে রাখা, যাতে করে কারো উঠা বা নামাতে কোন প্রকার কষ্ট না হয়। সিড়ি গুলা এমন ভাবে করা যেগুলো আমাদের দেশের বিল্ডিংয়ের সিড়ির তুলনায় হাটা অনেক সহজ। দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো এরকম গহীন পাহাড়ের মাঝেও তারা যেহেতু ট্রেকারদের জন্য এতো দারুণ ব্যবস্থা করে রাখছে পারছে, তাতে করে এটা স্পষ্ট যে তাদের সরকার টুরিস্টদের নিয়ে কতটা চিন্তা করে!!
আর অন্যদিকে আমাদের দেশের অবস্থা কতটা ভয়ংকর!!! এমনকি তাদের ট্রেইল গুলা এতটা চমৎকার ভাবে বানানো যেখানে একজন নতুন মানুষের কখনো হারাবে না। যাইহোক আমি নামতে নামতে নদীর দিকে এগিয়ে গেলাম,সামনে গিয়ে আরো অবাক হলাম যে নদী পার হওয়ার জন্যও সেখানে কাট দিয়ে দারুণ ব্রীজ করে দেওয়া। অথচ তাদের পাহাড়ের ট্রেইলে সবুজ ঘন জংগল থেকে একটা গাছ ও তারা কাটে না। তারা কেবলমাত্র সেই গাছটা কাটে যেটা মরে গেছে বা বাতাসে পরে গেছে। টুরিস্টদের জন্য তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম আর আমাদের নিজেদের সাথে তুলনা করছিলাম। ট্রেইলের কোন জায়গায় কোন প্লাস্টিকের বর্জ্য নাই। আহা কি দারুণ সচেতন এই প্রদেশের মানুষ গুলা!! আমি ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে কুকার অংকিত ভাইকে দিয়ে আমার কিছু ছবি তুলে নিলাম। এরমধ্যেই হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলে অংকিত ভাই দ্রুত সামনের দিকে করতে চাইলেন।আমি বললাম আপনি যান আমি এখানে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় একটা পাথরের নিচে আশ্রয় নিবো। উনি দ্রুত চলে গেলেন আমি পাথুরের নিচে গিয়ে ব্যাগ রেখে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি নিয়ত করছিলাম ট্রেইলে আমি এই পঞ্চ ছাড়াই শেষ করবো। যখন একদম না ব্যবহার করলেই না তখন ছাড়া এই পঞ্চ ব্যবহার করতে আমি আগ্রহী না। যাইহোক কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি থেমে গেলে আমি আবার দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলাম।সম্ভবত ১০-১৫ মিনিট হাটার পরেই আমাদের এজেন্সি কতৃপক্ষকে দেখা গেলো।তারা গাদার মালামাল নামাচ্ছে এবং আমাকে দেখে বল্লো যে আজকে এখানেই আমাদের ট্রেকিং শেষ। আমি অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভেলা ১২ঃ৪৫ মিনিট!!! নিজেকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না,মাত্র ১২ টা বাজে আর তারা বলতেছে এখানেই নাকি ট্রেকিং শেষ। অথচ আমরা আমাদের দেশে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ট্রেকিং করে অভ্যস্ত! যাইহোক আমি ব্যাগ নামিয়ে একটা নদীর পাশে একটা ঘরে বসলাম ২০-২৫ মিনিট পরেই আমাদের টিমের বাকি সবাই চলে আসলো। তাদেরকে আমি জানালাম যে আজকের জন্য এখানেই ট্রেকিং শেষ। এটা শুনে কেউ বিশ্বাস করছিলো না।যাইহোক আমরা ব্যাগ রেখে সবাই গল্প করা শুরু করে দিলাম। অল্প কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম আমাদের জন্য খাবার ও প্রস্তুত। এখানে প্রচুর বাতাস ফলে ভয়ংকর ঠান্ডা লাগছিলো। সবাই দ্রুত আমাদের জন্য নির্ধারিত টেন্টে গিয়ে ডুকলাম। আমি কিছুক্ষণ পরে আবার বের হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর আবারো ছবি চারদিকের মায়াবী রুপ সৌন্দর্যকে ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। গাইডকে জিগ্যেস করলাম এই জায়গার নাম কি? উনি জানালেন এটা ওয়াটার ফলস এরিয়া, সামনে ওয়াটার ফলস।

চলবে.........

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।  #বালি_পাস ঃ তৃতীয় পর্ব ৮ মে ২০২২ সকাল সকাল সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ট্রেকিং...
31/05/2022

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।

#বালি_পাস ঃ তৃতীয় পর্ব

৮ মে ২০২২ সকাল সকাল সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে ট্রেকিং এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিলাম। এরমধ্যেই একটা প্রব্লেম দেখা দিলো,টিমের প্রান্ত ভাই অসুস্থ বোধ করছিলেন। ফলে তিনি যাবেন না বলে আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন। কিন্তু আমরা কোন ভাবেই উনাদেরকে রেখে যেতে আগ্রহী ছিলাম না। সবাই মিলে উনাকে মোটিভেশনাল বাক্য প্রয়োগ দ্বারা মানসিক শক্তি দিতে চেষ্টা করতে লাগলাম। এদিকে আমাদের গাইড ( রানা ভাই) বারবার আমাদেরকে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে তাগাদা দিচ্ছিলেন। আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সকল মালামাল গাড়ীতে উঠিয়ে গাড়ী প্রস্তুত হয়ে আমাদের অপেক্ষায়। এদিকে অনেক বুঝানোর পরে
প্রান্ত ভাই যেতে রাজি হলেন। অবশেষে আমাদের পুরো টিম গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম। গাড়ীতে অনেক মালামাল উঠানোর কারনে আমাদেরকে কোন রকম কষ্ট করে গাড়ীর ছাদে গিয়ে বসতে হলো। গাড়ী চলতে শুরু করলো, আমরা ছাড়া ও গাড়ীতে অন্যান্য টিমের আরো কয়েকজন ট্রেকার ছিলেন। কে কোথায় যাবে এবং তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার কিছু গল্প ও শুরু হয়ে গেলো। আমি গাড়ীর ছাদে বসে চারদিকের ভয়ংকর রুপ সৌন্দর্য মোবাইলে বন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। গাড়ী এমন এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো যা দেখে ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে হচ্ছিলো যেনো এক ঝুলন্ত পাথর কাটা আঁকাবাঁকা রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ী এগিয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভার যদি কিঞ্চিৎ ভুল করেন,তাহলে আর কারো বেচে থাকার আশা করা বোকামি। এইভাবে করে প্রায় ৫০ মিনিট যাওয়ার পরে গাড়ী ছোট একটা গ্রামে গিয়ে থামলো। আমরা সবাই গাড়ী থেকে নেমে যার যার ব্যাগ নিয়ে দলীয় কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। তারপর আমাদের গাইড রানা ভাই আমাদেরকে কোন পথে কিভাবে যেতে হবে অল্প কথায় আমাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন। আমরা সবাই সেই গ্রাম থেকে হাটা শুরু করে দিলাম। শুরুতে কিছুটা নিচের দিকে নামলাম তারপর নেমে একটা নদীর পাশ ঘেঁষে হাটা শুরু করে দিলাম। ট্রেইলে নেমেই দেখলাম অনেক ট্রেকারদের যাতায়াত এখানে। কেউ সামনে থেকে শেষ করে আসছেন আবার কেউ যাচ্ছেন। তবে অধিকাংশই যাচ্ছেন। প্রায় ২০০ জন জন হবে যারা এই গ্রাম থেকে হাটা শুরু করছেন। এরমধ্যেই আমাদের সাথে কলকাতার একটা টিমের সাথে দেখা হলো। তারা ট্রেইলে এই প্রথম কোন বাংগালী টিম পেয়ে খুশি। তারা বলল ট্রেইলে কারো সাথে বাংলায় কথা বলতে পারবো এটা ভাবিনি। তাদের সাথে হাটতে হাটতে আমাদের অনেক গল্প হলো। তারা পুরো পরিবার নিয়ে হারকিদুন যাচ্ছিলেন। ওই ফ্যামিলির পুরুষ কর্তা যিনি তার বয়স ৬৩। ৬৩ বছর বয়সে উনি নিয়মিত ট্রেকিং করেন।ইতিপূর্বেই তিনি অনকগুলো ট্রেইল শেষ করছেন। ব্যাপারটা ভাবতেই আমি অবাক হচ্ছি। আর এখানে তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ১৩ হাজার ফিটের হারকিদুন সামিটে করতে আসছেন!
ওই টিমের সাথে আমরা কিছু ছবি তুল্লাম তারপর আমি আমার মতো করে হাটা দিলাম। আমি যতই সামনে যাচ্ছিলাম চারদিকের ভয়ংকর স্বর্গীয় রুপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আমার পায়ের তুলনায় মোবাইলের ক্যামেরা বেশি গতিতে ব্যবহার হচ্ছিলো। কোন৷ ছবিই যেনো আমার মন ভরছিলো না। যতই ছবি তুলি মন আরো বেশি ছবি তুলার জন্য ব্যাকুল!
আসলে কোন দৃশ্য কখনো এতটা সুন্দর আর মায়াবী হতে পারে তা ইতিপূর্বে কখনোই আমার কল্পনায় আসে নাই।

ট্রেইলে একটা দারুণ ব্যাপার ফলো করলাম, প্রতিটি মানুষ দারুণ আন্তরিক। সবাই ময়লা আবর্জনা এবং অপরের যেনো কোন প্রব্লেম না হয় এটা নিয়ে দারুণ সচেতন। তাদের এইসব চিন্তা ভাবনার সাথে আমাদের নিজেদের দেশের পাহাড়ের অবস্থা তুলনা কর‍তে গিয়ে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই। এইভাবে হাটতে হাটতে আমরা অনেক উচুতে দারুণ একটা গ্রামের নিচের কয়েকটা দোকান আছে সেখানে গিয়ে থামলাম। আমি সেখানে ব্যাগ রেখে ওজু করে যোহর নামাজ আদায় করে নিলাম। আস্তে-ধীরে আমার টিমের সবাই আসলো, তারপর নুডলস আর জুস খেয়ে নিলাম। সেখানে আমরা দীর্ঘ সময় রেস্ট করলাম তারপর আবার হাটা শুরু করলাম। রানা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের আর কতটা পথ বাকী উনি জানালেন ২ কিলোমিটারের মতো হবে। এরমধ্যেই আকাশ মেঘলা হতে শুরু করলো। আমি ভাবলাম আমি খুব দ্রুত যেতে চাই, বৃষ্টির আগেই আমি ২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে চাই। আমি দ্রুত হাটা দিলাম। এক কিলোমিটারের অধিক পথ হাটার পরে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি একটা ঝর্ণার সামনে ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম। এরমধ্যেই দেখলাম পুরো ট্রেইল প্রায় ফাকা হয়েছে গেছে, কারণ মাত্র ৩ -৪ টা টিম ব্যাতিত বাকি সবগুলো টিমই হারকিদুন যাচ্ছিলো। ফলে হারকিদুন যাওয়ার অধিকাংশ টিম গুলাই ওই গ্রামের আশেপাশের এলাকায় টেন্ট করতে শুরু করে দিলো। আর যারা বালি পাস যাবে, তারা আরো পথ এগিয়ে গিয়ে তারপর টেন্ট করবে। সাদা পাহাড়ের ট্রেইলে প্রথম বৃষ্টি উপভোগ করছি। অনুভূতি কতটা দারুণ ছিলো তা প্রকাশ করতে ব্যার্থ আমি। আমার টিমের সবাইকে দেখা গেলো, সবাই বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য পঞ্চ পড়ে নিলো।তাদের পঞ্চ পড়া দেখে আমার কেন যেনো এটা পরতে অস্বস্তি লাগলো। আমি ভাব্লাম বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে অপেক্ষায় থাকবো।তাও আমি এটা ব্যবহার করবো না। আমার টিমের সবাই আমাকে পাস করে এগিয়ে গেলো। আমি বৃষ্টি কমার অপেক্ষায়। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিশাল এই ঝর্ণার রুপে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি কমে গেলে আমি দ্রুত বের হয়ে হাটা শুরু করে দিলাম।১০ মিনিট হাটার পরেই দেখলাম আরেকটা গ্রাম দেখা গেলো এবং সেই গ্রামের নিচে বিশাল বড় বড় ২ টা বাড়ি। এই এলাকার নাম শেমা। টিমের সবাইকে সেখানেই দেখতে পাইলাম। বুঝতে পারলাম আজকের জন্য এখানেই আমাদের ট্রেকিং শেষ। কি সুন্দর একটা গ্রাম! লোকজন গ্রামের নিচের দিকে বিপরীতে একটা ঝুলন্ত ব্রীজ ধরে সবাই নদী পার হয়ে গ্রামে আসা-যাওয়া করে। আমি কাধের ব্যাগ নামিয়ে একটা জায়গায় রেখে আশেপাশের জায়গা ঘুরে দেখার জন্য বের হয়ে গেলাম। যতই দেখছি আমি যেনো ততই রুপ সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সন্ধ্যা গোধূলির আকাশের রঙের সাথে সবুজ এবং সাদা পাহাড়ের সংমিশ্রণের কতো বৈচিত্র্যময় আয়োজন! যেদিকেই চোখ যাচ্ছে প্রকৃতির রুপে মুন প্রান জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাথুরে পথ ঘেষা দুধের মতো সাদা নদীর কলতান শব্দের মধ্যে যেন যাদুকরী এক নেশার বিরাজমান!! মনে হচ্ছিলো দূরের উপরের আকাশ থেকে এই দুধসাদা পানি নেমে আসছে। অনেক দূরের পাহাড় চূড়া গুলা যেনো সাদা মুকুট পরে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। আমি একের পর এক ছবি আর ভিডিও করেই যাচ্ছিলাম। এইভাবে করেই যে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেলো টের পাইলাম না। আমি আস্তে-ধীরে আমাদের ক্যাম্পে ফেরত আসলাম। এসেই দেখলাম আমাদের জন্য বিকালের নাস্তা প্রস্তুত। তারপর খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। নাস্তা শেষ করে ভয়ংকর এই ঠান্ডা পানি দিয়ে হাতমুখ ভালো করে ধুয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলাম। এরমধ্যেই গাইড রানা ভাই আমাদেরকে জানালেন আমাদের রাতের খাবার ৮ টা সময় দিবে। আমরা যেনো ৮ টা সময় সবাই খাবার খেয়ে নেই। যথাসময়ে আমরা রাতের খাবার খেয়ে এবং আমি নামাজ শেষ করে স্লিপিং ব্যাগে রাতের ঘুমের জন্য নিজেকে ভরে ফেললাম।

চলবে.....

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।  #বালি_পাস দ্বিতীয় পর্বস্থানীয় এজেন্সির মেসেজ পেয়ে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। নিমিষেই যেন...
25/05/2022

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।

#বালি_পাস দ্বিতীয় পর্ব

স্থানীয় এজেন্সির মেসেজ পেয়ে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। নিমিষেই যেনো সবাই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেলো! আমরা সবাই দ্রুত আলোচনা করতে লাগলাম বিকপ্ল ট্রেইলের খোজে। আমাদের কথা হলো যেহেতু আমরা ট্রেনে উঠেই গেছি সুতরাং আমরা যে কোন একটা ট্রেইলে যাবোই। আমাদের পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ ও ছিলো না কারণ এজেন্সির নির্ধারিত ইভেন্ট ফি আমরা কলকাতা থেকেই তাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিছি। আমরা Sourish Dev D ভাই এজেন্সিকে কল দিলেন এবং সেখানে রুপিন পাস ব্যাতিত অন্যান্য আর কি ট্রেইলে যাওয়ার অনুমতি আছে তা জানতে চাইলেন। তারা আমাদেরকে বালি পাস এবং আরো কয়েকটা ট্রেইলের কথা জানালে আমরা বালি পাস যাবো বলেই সাহস করে তাদেরকে জানিয়ে দিলাম। এর মধ্যেই আমি দেশে শরিফ ভাইকে মেসেজ এগুলো জানালে উনিও এটা নিয়ে চিন্তায় পরে গেলেন। শরিফ ভাইও বিভিন্ন ট্রেইলের সম্পর্কে বিস্তারিত খবরাখবর নিয়ে আমাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এদিকে আমরা লোকাল এজেন্সির থেকে বালি পাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তারা এটার উচ্চতা এবং কঠিনত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে জানান। তারা এটা ও জানান যে বালি পাসের তুলনায় রুপ সৌন্দর্য এবং কঠিন ট্রেইল বিবেচনায় রুপিন পাস কিছুই না। এগুলো শুনে আমি মনে মনে খুশি হতে লাগলাম। এদিকে বালি পাস যাবো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে টিমের একজন শুরু থেকেই নাখোশ ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন কোন সহজ ট্রেইলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু টিমের অধিকাংশ সদস্যদের মতের সাথে তার মতের মিল না ঘটায় সে মন খারাপ করে সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। যাইহোক এভাবে গল্প, বিভিন্ন আলাপ এবং শুয়ে-বসে আমাদের দীর্ঘ ৩০ ঘন্টা + ট্রেন জার্নির সমাপ্তি হলো। আমরা রাত ১০ টা নাগাদ উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন শহরে গিয়ে নামলাম। আমরা সবাই চরম ক্ষুধার্ত ছিলাম,সিদ্ধান্ত হলো ট্রেন থেকে নেমেই সবার আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারপর আমরা যা করার করবো। আমরা অনেকক্ষণ হাটাহাটি করে এক্টা রেস্টুরেন্ট খুজে সেখানে গিয়ে রুটি এবং ভাত খেয়ে নিলাম। sourish ভাই জানালেন আজকেই আমাদের শেষ গোস্তো খাওয়া। এরপর আবার ট্রেইল থেকে ফিরে দেরাদূনে এসে আমরা গোস্তো পাবো। আপাতত এখান থেকেই আগামী দিনগুলোর জন্য সবাইকে স্থানীয় নিয়মে সবজি খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বললেন। এরমধ্যেই লোকাল এজেন্সির প্রতিনিধি এসে আমাদের সাথে দেখা করলেন এবং সবার সাথে পরিচিত হয়ে পরবর্তী দিনের দিকনির্দেশনা দিলেন। উনার সহযোগিতায় রাতে থাকার জন্য আমরা একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম। হোটেলে প্রবেশ করেই সবার শুরুতেই আমি ব্যাগ থেকে গোসল করার সামগ্রী বের করে গোসলে চলে গেলাম। তারপর একে একে সবাই ফ্রেশ হয়ে আমরা ঘুম দিলাম।

পরেরদিন খুব সকাল সকাল আমাদের সাংক্রি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা গাড়ীর ড্রাইভারের কলে ঘুম শেষ হলো। উনি আমাদেরকে জানালেন ৭ঃ৩০ এর মধ্যে বের হতে না পারলে ঝামেলা হয়ে যাবে।আমরা সবাই খুব দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম। গাড়ী দেরাদূনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। আস্তে-ধীরে গাড়ী শহর ছেড়ে পাহাড়ের গা ধরে উপরে উঠা শুরু করলো। গাড়ীর গতির সাথে মনের আনন্দের পরিবর্তন হতে শুরু করলো। যতই সময় যাচ্ছিলো ততই যেনো আমি গাড়ীর জানালা দিয়ে এদিকসেদিক হয়ে মোবাইলে ভিডিও বা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। আস্তে-ধীরে আমরা বিখ্যাত পাহাড়ি মৌশরি শহরে প্রবেশ করলাম। দুর্গম এই কঠিন পাহাড়ি পরিবেশের মধ্যে এতটা সুন্দর একটা আধুনিক শহর কল্পনা করাও যেন আমার জন্য কঠিন ছিলো। যতই সামনে আগাচ্ছিলাম ততই যেনো বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চারপাশ নিয়ে আমি মুগ্ধ হচ্ছিলাম। বিশাল বড় বড় পাহাড় কেটে পাথরের গায়ের সাথে কোন রকমের হেলান দিয়ে তারপর এই রাস্তা গুলা করা। দেখে মনে হচ্ছিল যেনো পাথরের সাথে কোন রশি দিয়ে উপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা হইছে। যে কোন মূহুর্তে এক্টু ভুল করা মানেই যমদূতের সাক্ষাৎ!! টিমের কেউ সকালের নাস্তা করি নাই। সবাই ক্ষুধার্ত ছিলাম, ড্রাইভার সাহেবকে বলা হলো তার জানাশোনা ভালো কোন রেস্টুরেন্ট দেখে নাস্তার ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে থামলাম, যার যার পছন্দ অনুযায়ী নাস্তার অর্ডার করে সবাই গল্প করছিলো আর আমি এই সুযোগে আশেপাশের জায়গাটা ঘুরে দেখার জন্য বের হয়ে গেলাম। মিনিট দশেক পরে নাস্তা চলে আসলো সবাই দ্রুত খেয়ে আবার গাড়ীতে। গাড়ী পাহাড়ের বুকে আঁকাবাকা উচু নিচু কঠিন দুর্গম পথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো এর মধ্যেই আমাদের টিমের প্রান্ত ভাই কিছুটা অসুস্থ হয়ে গেলে আমরা গাড়ী থামিয়ে কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে বিশ্রাম নিলাম।

আমরা সবাই আবারো গাড়ীতে উঠে বসলাম। ২০ মিনিট যাওয়ার পরেই দেখলাম বিশাল এক অপরুপ মায়াবী ঝর্ণা। ঝর্ণার পাশে আবার কয়েকটা দোকানও ছিলো। ঝর্ণাটার চারদিকের সংরক্ষণ ব্যবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম তাদের দেশের সরকার প্রকৃতি এবং প্রকৃতি প্রেমি মানুষ নিয়ে কতটা গভীর ভাবে চিন্তা করে!! আমাদের দেশের সাথে তুলনা করতে গেলে আফসোস কেবলমাত্র আফসোস করতে হয়। আমরা সেখানে নেমে ঝর্ণা থেকে পানি নিলাম এবং দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করে নিলাম। সেখানে আরো একটা দারুণ ব্যাপার ছিলো যে এত্তো দুর্গম পাহাড়ের দোকান গুলাতে যে কোন পণ্যের দাম অতিরিক্ত এক টাকাও বেশি না। শহরের মতো পাহাড়ের দোকানেও সেইম দাম। আমরা আবারো গাড়িতে উঠে বসলাম গাড়ী কয়েক হাজার ফুট উচ্চতার পাহাড়ের গা ঘেঁষে রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো। উত্তরখন্ডের পাহাড়ের যতই গহীনে যাচ্ছিলাম আমিও যেনো ততই অবাক চোখে চারদিকে তাকিয়ে মুগ্ধতায় ডুবে যাচ্ছি। নতুন পাহাড়ের নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষের বৈচিত্র্যময় কালচার এবং জীবনযাপনের নতুন চিত্রের আগমন আমার কাছে দারুণ লাগছিলো। ২ঃ৪৫ মিনিটের দিকে আমরা আরো একটা নতুন পাহাড়ি শহরে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারো যাত্রা শুরু করলাম। এইবার কিছুদূর সামনে যাওয়ার পরে এমন একটা এলাকায় প্রবেশ করলাম যেখানের চারপাশের রাস্তাটা আমার কাছে মনে হলো আমি কল্পনার কোন দেশে আছি, যা কিনা আমার কাছে কখনো কাস্মীর আবার কখনো সুইজারল্যান্ডের কোন রাস্তাকে মনে হচ্ছিলো। মাঝেমধ্যে বিশাল বড় বড় মহিশের পাল দেখা যাচ্ছিলো। সবকিছু মিলেয়ে যা দেখছি সবই জীবনের প্রথম দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। এইভাবে করেই আমরা বিকাল ৫ টা নাগাদ সাংক্রি শহরে গিয়ে নামলাম। হটাৎ করেই sourish ভাই আমাকে দূরের বিশাল এক সাদা চূড়ার দিকে ইংগিত করে বললেন ভাই "ওই যে দেখেন আপনার প্রথম সাদা পাহাড়ের রুপ সৌন্দর্য " ।
সাংক্রি ছোট এবং অত্যন্ত গোছানো একটা গ্রাম, সেখানে নেমেই দেখলাম বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রচুর ট্রেকারদের আনাগোনা। এরমধ্যেই একজন স্থানীয় এসে আমাদের সাথে করমর্দন করে আমাদের গাইড বলে পরিচয় দিলেন এবং আমাদেরকে ২ টা রুম নিয়ে গেলেন। রুমে গিয়ে আমি ব্যাগ রেখে আসরের নামাজ শেষ করে দ্রুতই বের গেলাম গ্রামের চারপাশে ঘুরে দেখার জন্য। আমি একটা রাস্তা ধরে হাটা শুরু করলাম। যতই সামনে যাচ্ছিলাম প্রকৃতি যেন আমাকে ততই লোভ দেখিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। এতো সৌন্দর্য কখনোই আমি আশা করি নাই। চারদিকে সবুজের মাথায় যেনো এক খন্ড বিশাল সাদা টুপি। সবুজ যেখানে সমাপ্ত সাদা সেখান থেকেই শুরু।

চলবে......

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান। #বালি_পাস ঃ প্রথম পর্ব অনেকদিন আগে থেকেই আমাকে হাই অল্টিচুট টানছিলো। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ...
21/05/2022

আমার প্রথম সাদা পাহাড় অভিযান।

#বালি_পাস ঃ প্রথম পর্ব

অনেকদিন আগে থেকেই আমাকে হাই অল্টিচুট টানছিলো। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ ১ হাজার মিটারের পাহাড় থেকেই আমার পাহাড় সম্পর্কে সকল শিক্ষা দীক্ষা পাওয়া হয়। তবে অতি উচ্চতার সাদা পাহাড়ে কিভাবে কি করতে হবে বা কিভাবে হাটতে হবে সেটাও সম্পর্কে আমার জ্ঞ্যান অতিশয় শূন্যই বলা যায়। এমনকি দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য সকল প্রকার পেপার প্রস্তুত করে ভিসা আবদনের ব্যাপারটাও ছিলো আমার কাছে এক প্রকার আতংকের। যাইহোক চিন্তা করে দেখলাম ঘরে বসে থাকলে কাজ হবে না মাঠে নামলে ব্যবস্থা হবেই।

করোনার থাবায় জর্জরিত হবার দীর্ঘদিন পরে ভারতীয় স্থল বর্ডার গুলা খুলছে এই সংবাদ আসতে শুরু করলো। ভিসার জন্য যে সকল পেপাল গুলা প্রয়োজন ছিলো তা আমার কাছে পরিপূর্ণ ছিলো না। এই পেপার গুলা প্রস্তুত করাই যেনো আমার জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ালো। যাইহোক এই ক্ষেত্রে Salauddin Ahamed ভাইয়ের কিছু পরামর্শ কাজে লাগালাম। তারপর অধীর আকাঙ্খা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম ভিসা হাতে পাওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আমি ভিসাটা পেয়ে গেলাম। ভিসা হাতে পাওয়ার পরপরই আমার জন্য দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ আসলো আমি কোথায় যাবো সেটা নির্বাচন করা?। যেহেতু আমার সাদা পাহাড়ের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই, তাই এই ক্ষেত্রে আমাকে খুবই চিন্তা ভাবনা করেই কোথায় যাবো সেই স্থান নির্বাচন করতে হবে। শরিফ ভাই আর আমি একের পর এক রুট এই ট্রেইলে দেখা নিয়ে ব্যস্ত। কাজটা ছিলো আমার, কিন্তু চিন্তার রেখাটা ছিলো বেশি উনার। আমার অভিযান শতভাগ নিরাপদ এবং সফল করার জন্য উনিই আমার থেকে বেশি জোড়ালো ভূমিকা পালন করছেন। আমার কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে তা নিয়েও যেনো উনার চিন্তার কোন শেষ নাই!!
প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সালাউদ্দিন ভাই এবং তানভীর ভাইকে নিয়ে যাবতীয় প্রয়োজনীয় যা যা দরকার রোজার শুরুতেই তা কেনাকাটা করে ফেললাম।

ভিসা ও পাইলাম, অতি উচ্চতার সাদা পাহাড়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় শেষ অথচ তখনো আমি জানি না আমি কোথায় যাবো। ভারতীয় ট্রেইল গুলা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা এবং বিশ্লেষণের পরে শরিফ ভাই বললেন শুরুতেই ৪ হাজার মিটারের রুপিন পাস আমার জন্য নাকি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। আমি বললাম "ভাই আল্লাহ ভরশা এটাইতেই যাই, যা হবার হবে, তবে আমার মনে হয় আমি পারবো ইন শা আল্লাহ "। তারপর শরিফ ভাই রুপিন পাস নিয়ে ইউটিউব দেখে দেখে পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে আমাকে একে একে কি করনীয় সব দেওয়া শুরু করলেন। শরিফ ভাই শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি খবর নিতে শুরু করলেন ঈদের পরে বাংলাদেশ থেকে রুপিন পাস যাওয়ার মতো আর কেউ আছে কিনা তা জানার জন্য?। শেষ পর্যন্ত এই মানুষটার কষ্ট সার্থক হলো। আমাদের পূর্ব পরিচিত থেকেই উনি কয়েকজনকে খুজে পাইলেন যারা কিনা রুপিন পাস যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। কুয়েটের কয়েকজন ছাত্র রুপিন পাসের পরিকল্পনা করছিলো। শরিফ ভাই আমাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। অবশ্য এদের সাথে আমার অনেক আগে দলিয়ান পাড়ায় সাক্ষাৎ হয়েছিল। যাইহোক এদের থেকে Sourish Dev D ভাইয়ের সাথে আমার কথা হলো তিনি খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাকে উনাদের পরিকল্পনার কথা জানালেন, উনার পরিকল্পনা শুনে আমার খুবই ভালো লাগলো। উনারাও একে একে সকল প্রকার প্রস্তুতি মূলক কার্যক্রম শুরু করে দিলেন। পূর্বেই উনাদের ইন্ডিয়াতে যাওয়ার অনেক অভিজ্ঞতা ছিলো বলে আমার উপর প্রেশার অনেকটা কমে আসে। আমি তখন থেকে অধীর আগ্রহে কখন যাবো সেই কাংখিত সময়ের অপেক্ষায়। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো ঈদের দিন রাতেই আমরা বেনপাল দিয়ে কলকাতায় যাবো। অবশেষে সেই কাংখিত সময়ের আগমন ঘটলো। আমি বাসা থেকে সবকিছু নিয়ে সালাউদ্দিন ভাইয়ের বাসায় গেলাম। সেখান Md Mahbubur Rahman এবং Mohidul Islam Milon ভাইদ্বয় বাসা থেকে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসলেন, তারপর Tanvir Alam Doel ভাই, সালাউদ্দিন ভাই সহ আমরা সবাই মিলে এক সাথে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। খাবার শেষ হলে তানভীর ভাই আমাকে উনার বাইক করে শ্যামলী পর্যন্ত দিয়ে আসলেন। আমি কল্যানপুর চলে গেলাম সেখানে বাসের জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করতে থাকলাম। রাত ১০ঃ৩০ মিনিটে বাস আসলে আমি বাসে উঠে বসলাম। বাস চলতে শুরু করলো। পরের দিন সকালে বেনপাল গিয়ে নামার কয়েক মিনিটের পরেই আমার টিমের বাকী ৫ জনের সাথে দেখা। উনারা সবাই খুলনা থেকে একটা প্রাইভেট কারে সরাসরি বেনপাল গিয়ে সিরিয়াল ধরে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকে। sourish ভাই এসে আমাকে রিসিভ করেন এবং সবার সবার সাথে পরিচিয় করিয়ে দিলেন। তারপর একে একে পর্যায়ক্রমে আমরা একজন করে সিরিয়াল ধরে রেখে দীর্ঘ ৫-৬ ঘন্টা শ্রম দিয়ে দুই দেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করলাম। এর ফাকে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করেই কয়েকটা গ্রুপ ছবিও তুলে নিলাম। ভারতে প্রবেশ করেই শুরুতেই একটা মসজিদে গিয়ে যোহরের নামাজ শেষ করলাম। তারপর আমরা RaHul SaHa ভাইয়ের পরিচিত একজনের মাধ্যমে আমাদের টাকাকে রুপিতে কনভার্ট করে নিলাম। একটা অটো রিক্সায় করে আমরা বনগাঁয় গেলাম।সেখানে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলকাতার লোকাল ট্রেনে উঠে বসলাম। ট্রেনে উঠে বুঝতে পারলাম কলকাতার মানুষের ধৈর্য্য আমাদের দেশের মানুষের তুলনায় অনেক অনেক বেশি আর না হয় ট্রেনে এভাবে যার্নি করা অসম্ভব!!

যাইহোক একটা সময় আমরা কলকাতায় গিয়ে পৌঁছালাম।সেখানে গিয়ে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো রয়টার্স বিল্ডিং থেকে পরের দিন দেরাদুন যাওয়ার টিকেট কাটা। আমরা রয়টার্স বিল্ডিংয়ে গেলে আমাদেরকে সেখান থেকে টিকেট না দিয়ে বল্লো আর মাত্র ২ টা টিকিট আছে আপ্নারা অতি দ্রুত নেক্সট ভবনে যান। নেক্সট ভবনে গেলে ও আমাদের সেইম কথা বললে আমরা আবার তাড়াহুড়ো করে পরের ভবনে যাই।শেষ পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা টিকিট পাইলাম। সবাই খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেলো, রাহুল ভাইয়ের মারফতে আমাদের জন্য নিউমার্কেট এরিয়াতে কেউ একজন হোটেলের ব্যবস্থা করে রাখছিলেন। আমরা নিউমার্কেট এরিয়াতে গিয়ে প্রথমেই দেশে যোগাযোগ করার জন্য সীম কার্ড নিলাম। তারপর সবাই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে খাওয়া দাওয়া এবং কেনাকাটার জন্য বের হলাম। সেদিন রাতেই ছিলো রিয়াল মাদ্রিদ এবং ম্যানচেস্টার সিটির সেমি ফাইনালের ম্যাচ। সারারাত আমি খেলা দেখলাম। এই খেলাটা না দেখলে হয়তো আমাকে সারাজীবন আফসোস করা লাগতো। পরের দিন বিকাল ৫ টা সময় হাওরা রেল স্টেশন থেকে দেরাদুন যাওয়ার ট্রেন ছিল। আমরা যথাসময়ে গিয়ে ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন ও যথাসময়ে ছাড়লো। আমি জানালার পাশে বসে প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম। হটাৎ করেই সাংক্রির এজেন্সি থেকে আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো যেটাতে লিখা ছিলো একটা "বড় প্রব্লেম হয়ে গেছে, স্থানীয় সরকার ট্রেকারদের জন্য রুপিন পাস বন্ধ করে দিছে, সুতরাং রুপিন পাস যাওয়া যাবে না "।

চলবে......

16/04/2022

#খুম্বু_আইসফল

এভারেস্ট সামিটের জন্য সর্বমোট ১৮ টি রুট ম্যাপ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হিসেবে বিবেচিত নেপালের সাউথ কোল রুট এবং তিব্বতের নর্থ কোল রুট। তবে কোন দিক থেকেই এই ২ টা রুটকে সহজ বলার কোন উপায় নাই।এই ২ টা রুটেরই রয়েছে অনেক ভয়ংকর ভয়ংকর কিছু দুর্গম এবং বিপদজনক অংশ। আর এই নেপাল রুটেই রয়েছে এভারেস্টের সবচেয়ে বিপদজনক অংশ "খুম্বু আইসফল "। এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প -১ পর্যন্ত
পৌঁছাতে পার হতে হয় ভয়ংকর এই খুম্বু হিমপ্রপাত। এটা মূলত মূলত লোংসে ফেইসের ২৫০০০ ফিট উচ্চতা থেকে নেমে আসা খুম্বু হিমবাহের নিচের অংশ। খুম্বু মানে হচ্ছে বিশাল বড় বড় বরফের বোল্ডার। যা কিনা অতল গহ্বরে ক্রেভাস দিয়ে তৈরি বিশাল সাদা গোককধাধা। প্রতিদিন এই স্থান থেকে ৩-৪ ফিট করে প্রভাবিত হচ্ছে। আর তাতে করে
যে কোন মুহূর্তেই বিশাল বড় বড় ক্রেভাস( গর্ত বা ফাটল)
তৈরি হয়। আর এগুলো হুটহাট সরে যাওয়াতে উপর থেকে বরফ খন্ড ধেয়ে আসে, ফলে এখানে তৈরি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু । আর এই কারণেই খুম্বু আইসফল সবার কাছে ডেথ জোন বা মৃত্যুপরী হিসাবে বিবেচিত।

১৯৫১ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এভারেস্ট সামিট
কর‍তে গিয়ে যত মানুষ মারা গেছেন, তার মোট ২৫ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় এখানে। এই মৃত্যুপরী পার হওয়ার জন্য
সঠিকভাবে রুট ফিংক্সিংয়ের পাশাপাশি আবহাওয়ার অবস্থা
বুঝাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের বিকিরণ শুরু হবার আগেই এই ভয়ানক মৃত্যুফাদ পারি দিতে হয়। অনেক সময় এই অল্প এক্টু জায়গা পারি দিতেই ১০-১২ ঘন্টার বেশি সময় লেগে যায়। এই ভয়ংকর পথ পারি দিতে গিয়ে ফেইস করতে হয় অনেক প্রতিবন্ধকতা। শুধুমাত্র এতটুকু জায়গা ক্রস করতেই একজন পর্বতারোহীকে গুনতে হয় ৬০০ ডলার!!
যদিও বর্তমানে খুম্বু আইসফল পারি দেওয়ার জন্য "আইসফল ডক্টরস" টিম নিজেদের জীবনের সর্বোচ্চটা দিয়ে পর্বতারোহীদেরকে সবসময়ই সাহায্য করে যাচ্ছেন, তারপর ও খুম্বু আইসফল এখনো পর্যন্ত অনেকের কাছেই যেন একটা বিভীষিকা। ফলে অনেকেই আছেন, যারা কিনা শুধুমাত্র খুম্বু আইসফলের কারণেই এভারেস্ট সামিটের জন্য নেপাল সাউথ কোলের পরিবর্তে তিব্বত সাইটের রুটকে নির্বাচন করেন।

তথ্য ঃ অদ্রি

" আইসফল ডক্টরস টিম "হিমালয়ান ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নেপাল ...
14/04/2022

" আইসফল ডক্টরস টিম "

হিমালয়ান ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ১৯৫৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নেপাল দিক দিয়ে ( এভারেস্ট সামিটের ১৮ টা রুট প্লানিং এর মধ্যে একটা হলো এই নেপাল দিক) এভারেস্ট আরোহনের সময়
অসুস্থতারজনিত সমস্যা বাদে ১৭৬ টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ক্যাম্প -১ এর আগে খুম্বু আইসফলেই ঘটেছে ৪৪
টি। অর্থাৎ সর্বমোট সংখ্যার ২৫ ভাগ। এই হতভাগা ৪৪ জনের
মধ্যে ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন ক্রেভাসে পড়ে ( ক্রেভাস মানে
বরফের মাঝে হটাৎ ফাটল ধরে বিরাট খাদের সৃষ্টি হওয়া), আর ৯ জন সেরাক ভেংগে পড়ে আর বাকী ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন বরফ ধ্বংসের কবলে পড়ে। তাই তেজস্বী সূর্যের
বিকিরণ শুরু হবার আগেই এই ভয়ানক মৃত্যুফাদ পেরুতে হয়। কিন্তু রুট ফিক্সিংয়ে আলাদাভাবে নিবেদিত কোন লোক না থাকায় সঠিক সময়ে এই রাস্তা পার হতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হত। ফলে খুম্বু আইসফলের রাস্তা ফিক্স
করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ একটি দল অত্যাবশকীয় হয়ে গিয়েছিল।

১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শেরাপার এভারেস্ট আরোহনের পর থেকে খুম্বু এলাকা বেশ
জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ফলস্বরূপ এই অঞ্চলে প্রচুর টুরিস্ট এবং ট্রেকারদের আগমন ঘটতে থাকে। কিন্তু সঠিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কোন ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৮০ সালের
দিকে এভারেস্টের পরিবেশ চরম হুমকির মুখে পড়ে। খুম্বু
ভ্যালির স্থানীয় একজনের ভাষ্যমতে
" One can easily reach Evarest Base Camp by following the toilet peper trail "।

এসকল ময়লা অবর্জনা নিয়ন্ত্রণের জন্যই স্থানীয় নেপালিদের দ্বারা সাগরমাথা পলিউশন কন্ট্রোল সেন্টারের আবির্ভাব ঘটে ( স্থানীয়দের মতে এভারেস্টের নাম সাগরমাথা)। ১৯৯১ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়।কিন্তু এই ময়লা ব্যবস্থাপনার খরচ দিন দিন বেড়েই চলছিলো। ফলে এটা চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই ফান্ড রেইজ করার জন্য ১৯৯৭ সালে নতুন একটি প্রোজেক্ট শুরু করলো যার নাম "আইসফল ডক্টরস"।

আট থেকে দশজন দক্ষ শেরপাদের নিয়ে এই টিম গঠন করা হয়। এরা সবাই প্রশিক্ষিত ও অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং তাদের সবার এই ভয়ংকর খুম্বু আইসফল নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান বা ধারণা রয়েছে। আইসফল ডক্টরসদের দল, ফিক্সড রোপ ও ল্যাডার ( মই) স্থাপন করে। এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প -১ পর্যন্ত ক্রেভাস ও সেরাক ভরপুর প্রাণঘাতী ভয়ংকর রুটটা পর্বতারোহীদের চলার উপযোগী করে তোলে।
এর সাথে সাথে এটাও চিন্তা করতে হয় কোন দিকটা সবচেয়ে নিরাপদ এবং কম সময়ে পৌঁছানো যাবে; যাতে করে সূর্যোদয়ের পর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বেই ক্যাম্প -১ পৌঁছে যাওয়া। অন্যথায় তুষারধ্বসের কবলে পড়ে মৃত্যু অনিবার্য।
শুধুমাত্র সময়ের কারণেই অনেক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়ে থাকে
এই স্থানে। ফলস্বরূপ এখনো ক্রেভাসের নিচে মৃত মানুষের
দেহাবশেষ খুজে পাওয়া যায়। সঠিকভাবে শরীর এক্লিমাইজড না থাকলে এই আইসফল পার হতে ১০-১২ ঘন্টা ও সময় লেগে যায়। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিনই তুষারধ্বস, প্রবাহমান আইসফল ও ক্রেভাসের মুখ খুলে যাওয়ার দরুন আগের দিনের ঠিক করে রাখা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই শেরপাদের টিম রোপ এবং মই কাধে নিয়ে।প্রতিদিনই ঢুকে পড়ে মৃত্যুপুরীতে। ভয়ংকর গ্লেসিয়ার,
ব্লু- আইস আর ক্রেভাসের গোলকধাঁধার মাঝে খুজে বের করে সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তাটি। তারপর তারা আইস ক্রো এবং স্নো পিকেট দিয়ে রোপ এবং মই নিরাপদ ভাবে ফিক্সড করে দিলে পর্বতারোহীরা জুমার লাগিয়ে অনায়াসে কম সময়েই এই ভয়ংকর পথ পারি দেয়। এই ভাবেই শেরপারা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভয়ংকর এই মৃত্যুপুরীতে নিজের
জীবনকে বাজী রেখে পর্বতারোহীদের জীবন রক্ষায় বীরদর্পে কাজ করে যাচ্ছে।

খুম্বু আইসফল রাস্তা পার হবার জন্য প্রত্যেক পর্বতারোহীকে
৬০০ ডলার করে ফি দিতে হয়। প্রতিবছরই এর সংখ্যা বেড়েই
চলেছে আর ফান্ড ও দিন দিন বড়ই হতে চলছে। কিন্তু যারা জীবনের নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন তারা সারাদিনের বিনিময়ে একজন পাচ্ছে মাত্র ১০ ডলার!!!!!
বাকী অর্থ নাকি ময়লা ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যয় হয়ে থাকে।
এদিকে আইসফল ডক্টরস টিমের সদস্যরা এই স্বল্প টাকাতেই
খুশি হয়ে পর্বতারোহীদের জন্য সর্বোচ্চ করে যাচ্ছেন। মাঝেমাঝে অনেকেই খুশি হয়ে তাদেরকে কিছু ডলার সম্মানী দিলে সেটাই তারা হাসিমুখে গ্রহণ করে।

২০১৪ সালে আভালাঞ্জের একটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় ১৬ জন শেরপা কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যায়। ১৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেলেও খুবই বিপদজনক হওয়াতে বাকী ৩ জনের লাস আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নেপাল সরকার
এই ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীনতা ছিলো। যাদের শ্রমের দ্বারা নেপাল সরকারের কোষাগার ফুলেফেঁপে যাচ্ছে এবং যাদেরকে ব্যাতিত কোন মানুষের পক্ষে এভারেস্ট সামিট করা সম্ভব না সেই "আইসফল ডক্টরস" টিম আজ ও পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলো!!

তথ্য ঃ অদ্রি

  ভারতের উত্তরখন্ড হিমাচল প্রদেশের সাংলা উপত্যকার রুপিন নদীকে ঘিরে এই রুপিন পাস। উচ্চতায় যা কিনা ১৫২৫০ ফুট। রুপ সৌন্দর্য...
06/04/2022



ভারতের উত্তরখন্ড হিমাচল প্রদেশের সাংলা উপত্যকার রুপিন নদীকে ঘিরে এই রুপিন পাস। উচ্চতায় যা কিনা
১৫২৫০ ফুট। রুপ সৌন্দর্যের ভিত্তিতে এটা ভারতের অন্যতম
সেরা একটা ট্রেইল হিসাবে বিবেচিত।
এই ট্রেইলের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো ঝুলন্ত এক গ্রাম!!

ভারতে যদি কোন ক্লাসিক ট্রেক থাকে তবে তা হলো রূপিন পাস। এই ট্র্যাকটি একটি অর্কেস্ট্রার মতো। প্রতিটি মুহূর্তে মুহূর্তেই যেনো বিস্ময়কর দৃশ্যে ভরপুর যা দ্বারা ট্রেইলে নিজের গতিবেগ পরিবর্তন হতে বাধ্য!!

প্রতিটি পদক্ষেপের সাথেই ট্রেইলটা পুরাপুরি শেষ করার জন্য
এক অদম্য নতুন মনোবলের জন্ম দিয়ে থাকে।
ট্রেকিং এর প্রথম দিন থেকেই একের পর এক চমক শুরু হয়। ট্রেইলে ২০ মিনিট অতিক্রম করার পরেই আপনি দেখতে পাবেন যে রূপিন নদী যেন আপনার পায়ের নীচে একটি প্রশস্ত বিছানার আকার ধারণ করে একটি প্রতিমূর্তি চেহারা তৈরি করেছে। এটা তো কেবল এখান থেকে শুরু মাত্র!!

ঝুলন্ত গ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত ট্রেইল একটা সময় গভীর পাইন বনে ডুবে যায়!!
তারপর ট্রেইলটি হিমবাহী তৃণভূমি, তুষার সেতু, হিমবাহ উপত্যকা, তুষারক্ষেত্র এবং শত শত জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে চলে গেছে আরো অনেক গভীরে!!
কি এক অদ্ভুত মায়াবী রুপ সৌন্দর্য, মুহূর্তেই যেনো সকল প্রকার কষ্টকে ভুলিয়ে মনে এক অজানা আনন্দের উঁকি দেয়!!

রুপিন পাস ট্রেইল হলো ভারতের অতি উচ্চতর একটি ট্রেইল। যদিও এটি উত্তরাখণ্ডের ধৌলা থেকে শুরু হয়, তবে বেশিরভাগই ট্রেইলই হিমাচল প্রদেশে সাংলায় গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ১৫২৫০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই রুপিন পাসকে ভারতে ট্রেকিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ উচ্চতার ট্রেইল গুলার মধ্যে অন্যতম একটি ট্রেইল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ট্রেকারদের কাছে এর জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র উচ্চতাই নয়, এছাড়াও এর বৈচিত্র্যময় দৃশ্য এবং পথের বিস্ময়কর অনেক প্রকৃতি মানুষকে আকৃষ্ট করে।

এইবার GDM এর লিস্টে নতুন করে যোগ হলো এই রুপিন পাস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশাকরি অতি দ্রুতই এই
ট্রেইলের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো ইন ইন শা আল্লাহ।

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Kawsar Polas -কাওসার পলাশ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Travel Agency?

Share