05/03/2023
দার্জিলিং, সিকিম, শিলিগুড়ি।
৭ জন এর ট্যুর। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি।
কোন ট্রাভেল এজেন্সির প্রি-বুকিং ছাড়াই আমরা পুরো ট্যুর বাস্তবায়ন করেছিলাম। ২০০০ কিমি+ ভ্রমণ।
আমরা ঢাকা থেকে মাইক্রো রিজার্ভ করে এসেছিলাম বুড়িমারী তে এবং সেই রিজার্ভ মাইক্রোতেই বুড়িমারী থেকে দিনাজপুর হয়ে ঢাকা এসেছি আবার। আসার দিন দিনাজপুর এ ২ ঘন্টা ছিলাম। মাইক্রো ২০ দিন আগে থেকে বুক করেছিলাম ঈদের কারণে। মাইক্রো রিজার্ভের কারণ হলো নিজের মত করে আসা যাওয়া, বিরতি দেয়া এবং লাগেজ গুলো যত্ন করে নেয়া।
০৭.০৭.২০২২ রাত ৮ টা থেকে শুরু। ঈদ এর জ্যাম ঠেলে দীর্ঘ ১৯ ঘন্টা পর বিকাল ৪ টায় পৌছালাম বুড়িমারী। ৫ টার মধ্যেই ঢুকে গেলাম চ্যাংড়াবান্ধা এবং কাজ শেষ করে ইন্ডিয়ান ৫.৩০ টায় রওনা দিলাম শিলিগুড়ি। পৌছালাম ৬.৪০ এ শিলিগুড়ি জাংশন এ।
এই জ্যাম পুরো ট্যুরের প্যাচ লাগায় দিলো। ভাবলাম ট্যুর ভালো হবেনা। আমাদের প্ল্যান ছিলো প্রথমেই সিকিম, তারপর দার্জিলিং, তারপর শিলিগুড়ি। কিন্তু গ্যাংটক কোনভাবেই অত রাতে পৌছানো সম্ভব না। তাই ইন্সট্যান্ট ব্যাক আপ প্ল্যান নিয়ে এগোলাম।
প্রথমে দার্জিলিং গেলাম। রাত ৯.১৫ তে রওনা দিয়ে পৌছালাম রাত ১২.৩০ টায়!! দার্জিলিং এ তখন হাফ ঘুম সবার হয়ে গেছে। দার্জিলিং যাবো, কোন হোটেল বুকিং ছাড়াই, এটা নিয়ে টেনশনে ছিলাম। অবশেষে রাত ১০ টায় একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে কোন রকম মানের একটা হোটেল ঠিক করে ফেলি ২ রুম, মাত্র ৩৫০০ টাকাতে। সেখানেই উঠেছিলাম এবং ২ রাত থেকেছিলাম।
১০ তারিখ সকাল ৮ টায় রওনা দিয়ে গ্যাংটক পৌছাই দুপুর ১২.৩০ টায়। এম.জি মার্গ এ গিয়ে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম কারণ সব কিছুই অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ মনে হলো। পরে নাম. নাং রোডে মেরু হোটেল খুজে পেলাম। অফ সিজন এর জন্য ৮০০০ টাকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট রুম পেয়ে যাই মাত্র ৩৫০০ টাকা তে৷ এক রুমেই ৭ জন দারুন আরামে কাটিয়েছিলাম আমরা৷ আর রুম টা ছিলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ সহ।
১০ তারিখ সারাদিন গ্যাংটক সাইট সিইং করে পরের দিন ১১ তারিখে রওনা দেই নর্থ সিকিমের উদ্দেশ্যে। আমরা মাত্র ১৫০০০ টাকাতেই পুরো ১ রাত ২ দিনের প্যাকেজ নিয়ে নেই।
প্যাকেজ এ প্রথম দিনের লাঞ্চ+ ডিনার ও হোটেল এবং ২য় দিনের ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ ইনক্লুড ছিলো।
(নর্থ সিকিম এবং স্যাংমো/সাঙ্গু লেক এর জন্য সিকিম এর লোকাল এজেন্সি ছাড়া পারমিশন পাওয়া সম্ভব না, এটা বাধ্যতামূলক)
১১ তারিখে সন্ধ্যায় লাচুং পৌছায়। একটু ঘুরে নিলাম ছোট্ট লাচুং শহর। জিপ লাইন বন্ধ আছে এসময়ে। ১২ তারিখ সকাল এ চলে যাই ইয়ামথ্যাং ভ্যালি ও জিরোপয়েন্ট। জিরোপয়েন্ট এবং জিরোপয়েন্ট এর নিকটেই উষ্ণ প্রস্রবণের একটি হট স্প্রিং দেখে নিয়েছিলাম এক্সট্রা ৫০০০ দিয়ে৷ জিরো পয়েন্ট এ ১ ঘন্টার বেশি ছিলাম আমরা।
১৩ তারিখ সকাল ৭.৩০ টায় রওনা দিয়ে সাঙ্গু লেক ঘুরে পরে বিকাল ৩ টার মধ্যেই গ্যাংটক চলে আসি। কিছু সময় রেস্ট নিয়ে এরপর আমরা গ্যাংটক এ অনেক হাটাহাটি করি, শপিং করি ও রিফ্রেশমেন্ট। সাঙ্গু লেক এর প্যাকেজ ছিলো ৬০০০ টাকা, যা একটু বেশি মনে হয়েছে।
১৪ তারিখ সকাল ৭.৪৫ টায় রওনা দিয়ে শিলিগুড়ি চলে আসি ১২ টায়। এসেই শিলিগুড়ি জাংশনেই একটা মাঝারী মানের হোটেল নিয়ে নিই ২ রুম এর। ২ টা এসি রুম ভাড়া পড়েছিলো ৩০০০ টাকা। শিলিগুড়ির মানুষ গুলোকে খুব ধান্দাবাজ ও স্বার্থপর লেগেছে আমার কাছে। সিকিম দার্জিলিং এর মানুষ গুলো খুব ই হেল্পফুল এবং অমায়িক। বাঙ্গালীদের মধ্যেই কি আসলে সমস্যা বেশি???
শিলিগুড়ি তে ১৪ তারিখ বিভিন্ন শপিং করতেই সময় শেষ। শপিং এর জন্য বিধান মার্কেট এবং হংকং মার্কেট বেস্ট। দাম রিজোনেবল এবং অনেক আইটেম।
আর ব্র্যান্ড এর জন্য সিটি সেন্টার, কসমস, প্ল্যানেট মল আছেই। আর লেদার এর জন্য শ্রীলেদার রিকমেন্ডেড।
এই তো আর কি। হোটেল, গাড়ি ভাড়া, প্যাকেজ খরচ এ কমবেশি হলেই হিসাব আলাদা হয়ে যাবে। পিক সিজনে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) এবং (মার্চ-মে) এই খরচ আমাদের ৩০+ বাংলাদেশী টাকা হয়ে যেতো প্রতি জন।
খাওয়াদাওয়া তে আমরা কোন কম্প্রোমাইজ করিনাই। ভালো মত পেট পুরে খেয়েছি সবাই ই, সব ধরণের খাবার ই শেয়ার করে টেস্ট করার চেষ্টাও করেছি।
বর্ষায় সিকিম এর সৌন্দর্য অবিকল সুইজারল্যান্ডের মত। যা চোখে না দেখলে আসলে ছবি দিয়ে বুঝানো সম্ভব নয়। বেশির ভাগ সময় আমাদের ওয়াও ওয়াও করতে হয়েছে এইসব দেখতে দেখতে। আবার আমাদের ভাগ্যও ভালো ছিলো, কারণ ৮ দিনের মধ্যে ৫ দিন ই আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়েছি সকাল এ, এমন কি ১৫ তারিখ এ সকালে শিলিগুড়ি থেকে ফেরার সময়েও জলপাইগুড়ি তিস্তা ব্রীজ পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম।
আমাদের মোট খরচঃ
এসি মাইক্রো ভাড়া রাউন্ডঃ ৬০০০ টাকা
ইন্ডিয়া তেঃ ১৬০০০ রুপি = ১৮৮৮০ টাকা (১০০ রুপি = ১১৮ টাকা)
মোটঃ ২৪৮৮০ টাকা প্রতিজন। (সব ধরণের খাবার বা স্ট্রিট ফুড, আউটিং/সাইট সিইং, সিকিম এর এজেন্সি প্যাকেজ, সকল প্রকার গাড়ি ভাড়া, রাইড ফেয়ার, সকল প্রকার টিকেট ও পাস সহ, সিমকার্ড, বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধা তে আসা-যাওয়ার দালাল খরচ)
*** এই খরচ প্রতিজন ১৬ থেকে ১৭ হাজার বাংলাদেশী টাকা তেই সম্ভব এই অফ সিজনে।
✅✅খরচ কমানো সম্ভব✅✅
আপনি বাই রেল চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে ভিসা করে ট্রেনে যেতে পারেন এবং এতে আপনার একটা দিন সময় বাচবে। কিন্তু প্ল্যান করতে হবে ট্রেন এর শিডিউল অনুযায়ী।
কিংবা আপনি ননএসি বাস এ যাওয়া আসা করতে পারেন বুড়িমারী পর্যন্ত।
আর ইন্ডিয়া তে মাঝারি মানের হোটেলও পেয়ে যাবেন সহজেই। খাওয়া দাওয়া তেও কমানো সম্ভব। ম্যাগী, মোমো, চাওমিন, ভেজ/চিকেন থালি খেতে পারেন। দার্জিলিং এ স্ট্রিট ফুড দিয়ে চালিয়ে নিতে পারেন রাতের খাবার।
❌❌ লাচেন হয়ে কালাপাথর, গুরুদংমা লেক এ ভারতীয় নাগরিক ছাড়া সকল বিদেশী পর্যটক নিষিদ্ধ। তাই এই দিকে যাবার প্ল্যান করার চেষ্টা করিয়েন না।
সুন্দর ও শুভ হোক আপনার ভ্রমণ।
©️_Shuprio paul Shuvo