ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

  • Home
  • ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary 'Ghuru Ghuru Diary' is a tour related info page. We just give the info where we travel. Love you all.

যাত্রীবোঝাই...
06/12/2023

যাত্রীবোঝাই...

বাগদা বিচতৃতীয় তথা শেষ পর্বআজ সকালে খানিক দেরি করেই উঠলাম সবাই। তাই ঠিক হল একেবারে ব্রেকফাস্ট করে জলে নামব। সেইমত খাওয়া ...
08/11/2023

বাগদা বিচ

তৃতীয় তথা শেষ পর্ব

আজ সকালে খানিক দেরি করেই উঠলাম সবাই। তাই ঠিক হল একেবারে ব্রেকফাস্ট করে জলে নামব। সেইমত খাওয়া দাওয়া সেরে বেরলাম। বেশীক্ষণ থাকলে হবে না আজ। ৩ টের মধ্যে বেরোতে হবে এখান থেকে।

সময় মত ব্যাগ গুছিয়ে বসলাম। দুপুরের খাবারে জমিয়ে ইলিশ দিয়ে ভাত খাওয়া হল। তবে ইলিশটা আমার খুব একটা ভালো লাগে নি। মনে হল ঠিক সেই টেস্টটা যেন মিসিং। ওভারঅল বাকি সব ঠিক ছিল। এসব জায়গা একটু খরচ সাপেক্ষ। বিল মিটিয়ে একটা গ্রুপ ফটো তোলা হল। হাতে অনেকটা সময় আছে আমাদের। আমি আর আশিস পুরো রেসর্ট ঘুরে দেখে এলাম। এখানে সিঙ্গেল টেন্ট, ফ্যামিলি টেন্ট, কটেজ, ডিলাক্স কটেজের ব্যাবস্থা আছে। সব থেকে কম খরচ টেন্টে। ফ্রি ওয়াইফাই আছে। সুন্দর করে গোছানো পুরো জায়গাটা। খরচ বেশী হলেও ওদের আতিথেয়তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। এত মানুষজন অথচ কি সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করছে সবাই। ভীষণ তৎপর। কোন অসুবিধা বুঝতেই দেয় নি আমাদের। আপনার সময় পেলে ঘুরে আসুন একবার। ইতিমধ্যে আমাদের গাড়ি চলে এসেছে। বেরোতে হবে। রেসর্টের দাদাদের বাই বলে বেরিয়ে পড়লাম।

যিনি আমাদের নিয়ে এসেছিলেন সেই ড্রাইভার দাদাই আমাদের নিয়ে যাবেন। পুরো রাস্তা গল্প জুড়ে দিলেন। নিজে থেকেই ঐতিহাসিক বুড়িবালাম নদীর ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। আশপাশ দেখিয়ে বললেন ইতিহাসের জায়গা দাদা। কিছু ছবি তুলে নিন। এগুলোই মনে থাকবে। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এর পাড়েই বাঘা যতীন শহিদ হয়েছিলেন।

আমরা এসে পৌঁছে গেলাম বালেশ্বর স্টেশনে। আমরা ফিরবো বন্দে ভারতে। নাম শুনেছি খুব এবার চেপে দেখি। একটু লেটে ট্রেন ঢুকল। নিজে থেকেই গেট খুলে গেলো। আমরা উঠে নিজের নিজের সিটে বিসে পড়লাম। বেশ ভালো ট্রেন। ভালো স্পিডে চলছে। কিছুক্ষণ পর সার্ভিস বয় এল স্ন্যাক্স নিয়ে। খাবারে মান ভালো। ক্যাটারিং সার্ভিস খুব ভালো। ঝটপট রেসপন্স করছিল। এর পর এল চা বা কফি। আমি চা, জবা কফি নিল। তবে মানতে হবে এরকম জঘন্য স্বাদের চা বা কফি আমি খাই নি অনেকদিন। কোনোরকমে খেলাম সবাই। প্রায় ঠিক সময়ে ট্রেন ঢুকে পড়ল হাওড়া। যেটা বুঝলাম বন্দে ভারত ওভার হাইপ্‌ড ট্রেন। বাকি সব ভালো।

রাতের ট্রেন ধরে আমরা যখন বাড়ি পৌছালাম তখন রাত প্রায় ১২ টা। বেশ ভালো একটা ট্রিপ হল এবার। এরকম আরও ট্রিপের গল্প আসছে খুব তাড়াতাড়ি।
© ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

বাগদা বিচদ্বিতীয় পর্বঅ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ভোরে উঠে বিচে যাবো। যথা সময়ে ঘুম ভেঙ্গে বাকিদের ডেকেডুকে তুলতে আরও অনেক স...
07/11/2023

বাগদা বিচ

দ্বিতীয় পর্ব

অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ভোরে উঠে বিচে যাবো। যথা সময়ে ঘুম ভেঙ্গে বাকিদের ডেকেডুকে তুলতে আরও অনেক সময় পেরিয়ে গেলো। সবাই মিলে টুক টুক করে হাঁটা লাগালাম। ফুরফুরে কি সুন্দর হাওয়া আসছে একটা। বালির রাস্তা পেরিয়ে ঝাউ বন দেখেই মন খুশিতে ভরে গেলো। অনেকদিন পর এসব আবার। আহা। কিন্তু আকাশে মেঘ আছে তাই সূর্যোদয় দেখা হবে না। বিচে ঢোকার ঠিক আগে রাস্তার বাঁ হাতে একটা চায়ের দোকান। পেতে রাখা বেঞ্চে বসে লাল চা, বিস্কুট খেতে খেতে শুনতে পাচ্ছি সমুদ্র গর্জন করছে খুব।

বিচে চলে এলাম। বিচে নোংরা আছে অনেক। একপাশে ঝাউবন। নানারকমের ঝোপ, লতানো গাছ। মানুষের সাথে সাথে কিছু কুকুর প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছে। এখন জোয়ার আসে নি। একটু পরেই জল বাড়বে। হাত জাল নিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে ঢেউয়ের সাথে নাচতে নাচতে। আর অনেক মাঝি নৌকা নিয়ে ফিরে আসছে। তারা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মাছ ধরেছে। সবার মুখ বেশ হাসি খুশি। সমুদ্র কাউকে নিরাশ করে না।
সমুদ্রের গর্জন, ঠাণ্ডা হাওয়া, আকাশে মেঘেদের আনাগোনার মাঝে আমরা হাঁটছি বিচ ধরে। ফাঁকা ফাঁকা বিচ। দিঘা বা পুরীর মত ঠাসা ভিড় নেই। ভার্জিন বিচ আপাতত। জানিনা কতদিন থাকবে। বেশ ভালো লাগছে সক্কাল সক্কাল এই মজা নিতে। ওখানে বসে এই ফাঁকে খানিক প্রাণায়াম করে নিলাম, বিশুদ্ধ বাতাস যতটা টেনে নেওয়া যায়।

আশিস বলল- চল খেয়ে আসি। ততক্ষণে জল খানিক বেড়ে যাবে। স্নানে মজা আসবে।

কথামতো আমরা ব্রেকফাস্ট করতে এলাম। রুটি বা পরোটা বা মুড়ি, সাথে ঘুগনি আর গরম চা। সঙ্গে অল্প স্যালাড। পেট ভরে খেয়ে খানিক বসলাম আমরা। তারপর রেডি হয়ে আবার গেলাম সমুদ্রে। জলকেলি হবে এবার। এখানে একটা জিনিস আমাদের অনেকের হচ্ছিলো। জলে কিছু একটা মাঝে মাঝে কামড়ে দিচ্ছিল। সেটা কি কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। আমার আর ববির রক্ত বেড়িয়ে গেলো। পরে রেসর্টের ছেলেদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওরাও বলতে পারল না। তাই একটা ভয় ভয় নিয়ে স্নান করছিলাম। কিন্তু উঠে আসি নি। ছোটতে যেমন পুকুরে স্নান করতে করতে কখন সময় চলে যায় বোঝা যায় না এখানেও তাই হয়। কখন ২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে বোঝা যায় নি। খিদেটা চাগাড় না দিলে হয়ত আরও সময় কেটে যেত। চলো এবার ওঠা যাক।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কাপড় কেচে আমরা রেডি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। আজকে আমাদের দেবে পমফ্রেট। রুম থেকে সোজা এগিয়ে বাঁদিকে ডাইনিং। আরাম করে বসতেই খাবার এল। ভাত, ডাল, ভাজা, একটা সবজি, পাঁপড়, চাটনি, মিষ্টি আর সাথে পমফ্রেট মাখো মাখো মশলা দিয়ে। গরম গরম খাবার। অনবদ্য তার স্বাদ। সাঁটিয়ে খেয়ে ছোট করে একটা ভাত ঘুম। ঠিক হল বিকেলে হাওয়া খেতে বিচের দিকে যাবো।
কাউকে ঠিক সময়ে ঘুম থেকে তুলতে না পেরে আমি আর জবা বেড়িয়ে গেলাম। ওখানে কিছু ফটো তুলে বসে আছি অনেকক্ষণ হল এমন সময় বাকিদের আসা শুরু হল দল বেঁধে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নামল। দূরে অনেক দূরে দেখা যায় অনেক নৌকা, জাহাজ যাচ্ছে। টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের জলের সাথে আকাশের নীল রঙ মিশে একাকার। নীলাভ হয়ে যাচ্ছে চারদিক। এক দু ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়ছে। চমৎকার রোম্যান্টিক ব্যাপার। আমাদের সবার ভিতর একটা বাচ্চা লুকিয়ে থাকে তারা সময়ে সময়ে বেড়িয়ে আসে। আমরাও খানিক বাচ্চামো করলাম। বিচের বালির উপর লাভ সাইন দিয়ে নিজেদের নাম লিখলাম। নোনা জল পায়ের উপর দিয়ে পেরিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো সেই নাম। জল পায়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় একটা সুড়সুড়ি লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন দুই হাত দিয়ে টানছে আমাদের।

হাজারো আবোল তাবোল করতে করতে কটেজে ফেরার পথ ধরলাম। ঘন অন্ধকার ঝাউ বন। দেখেই ভয় ভয় লাগে। কেউ ভিতরে বসে থাকলে বাইরে থেকে কারোর সাধ্য নেই বুঝবার। ঝাউ বনের মাঝে রাস্তার পাশে একটা টিউবওয়েল আছে। কেমন একটা নোনতা নোনতা জল। পায়ের সব বালি ওই জলে ধুয়ে গেলো।

রুমে ফিরে মাচায় বসলাম। খানিক পর সার্ভিস বয় নিজেই এল চা নিয়ে, সাথে কমপ্লিমেন্টারি পকোড়া। একটা খাঞ্চা মত বড় থালায় কিছু কাঁচা কাঁকড়া, পমফ্রেট, ইলিশ, ছোট ছোট মাছ এনে জিজ্ঞেস করল এগুলোর মধ্যে আর কিছু খাবো কিনা তাহলে এক্ষুনি রেডি করে নিয়ে আসবে। তার সাথে জানিয়ে গেলো কাল দুপুরে আমাদের জন্য ইলিশ থাকছে। অর্ডার হল কাঁকড়া, পমফ্রেট আর একটা নাম ভুলে গেছি কুচো সাইজের মাছ ভাজা। তিনটেই অনবদ্য খেতে। একটা হালকা গ্রেভি দিয়ে পমফ্রেট আর কাঁকড়া বানানো হয়েছে। হালকা তেল দিয়ে কুচো মাছ ভাজা। সাথে গরম চা। এই তো জীবন কালিদা। এসবের মাঝে জমে উঠল আড্ডা

আশেপাশে যারা এসেছেন তারাও নিজেদের মত আড্ডায় মজেছেন। একটা বড় বাইকার টিম এসেছে। নিজেরা গান গাইছে। জমে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

রাতের খাবারের ডাক পড়ল। ভাত বা রুটি, সাথে ভাজা, ডাল, সবজি। আর চাইলে অন্য কিছু নেওয়া যায়। বেশী খাওয়া গেলো না। খানিক আগেই যা খেয়েছি আমরা। কাল আমাদের ফেরার পালা। সন্ধ্যা নাগাদ ট্রেন। দুপুর পর্যন্ত হইচই করে নেবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ি। গুড নাইট।
© ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

বাগদা বিচপ্রথম পর্বহাওড়া তে ওয়েট করবো ওয়েটিং রুমে। আরাম হবে তবে ভালো মতন একটা টাকা যাবে। রকি প্রস্তাব দিল।  আমরা বললাম ত...
06/11/2023

বাগদা বিচ

প্রথম পর্ব

হাওড়া তে ওয়েট করবো ওয়েটিং রুমে। আরাম হবে তবে ভালো মতন একটা টাকা যাবে। রকি প্রস্তাব দিল।

আমরা বললাম তাই হোক।

ও বলা হয় নি। আমরা ওড়িশা যাচ্ছি। বাগদা বিচ। আমরা বলতে যারা আমার লেখা পড়েন তারা মোটামুটি আমাদের গ্রুপটা চেনেন। রকি, ববি, আশিস, রজত, আমি আর জবা। বাকি মেম্বাররা যেতে পারে নি এবার। হাওড়া থেকে দুপুরে জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ধরবো। এখন হাতে প্রায় দু ঘণ্টা সময় আছে। তাই ল্যাদ খাচ্ছি ওয়েটিং রুমে। বেশ কটা ছবি তুললাম হাওড়া ব্রিজের।

নতুন দিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে আমাদের গাড়ি। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় যেন শেষ হয় না। এবং ট্রেন যথারীতি লেটে ছাড়বে। রজত এখনও আসে নি। বেশ অনেক পর হেলতে দুলতে নিউ টাউন থেকে ভদ্রলোক এলেন। গ্রুপ রেডি। লম্বা হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল। হুল্লোড় গল্প এসব চলছে। বড় জানলা দিয়ে আয়েশ করে বাইরে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর স্ন্যাক্স আর চা এল। ঠিকঠাক খাবারের মান। জমাটি আড্ডা চলছে পুরো দমে। অনেকদিন পর আমরা একসাথে বেরিয়েছি। আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমতে শুরু করল। বৃষ্টি হবে।

সন্ধ্যে নাগাদ ট্রেন আমাদের বালেশ্বর স্টেশনে নামিয়ে চলে গেলো নিজের রাস্তায়। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে এখন। ছাতাতে কিছুই আটকাচ্ছে না প্রায়। এভাবেই ভিজতে ভিজতে ১ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি আগে থেকেই বলা ছিল। ড্রাইভার বললেন- ঠিক স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। “মাই ইকো ক্যাম্প” বলে একটা রেসর্ট বুক করেছি আমরা। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম ঢোলা প্যান্ট ও হালফ শার্ট, পায়ে চপ্পল, মাথায় হালকা চুল, শ্যামলা বর্ণের বছর ৪০ এর এক ভদ্রলোক ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে। আমরা গাড়িতে উঠে বুঝলাম গাড়িতে টেঁকা দায়। দাদা ডিমের পেটি রেখেছেন গাড়ির ডিকিতে। গোটা গাড়ি ডিমের অদ্ভুত গন্ধে ভরিয়ে রেখেছে। ড্রাইভার দাদা আমুদে লোক। দিব্বি গল্প জমিয়ে দিলেন। বললেন হোটেলে ডিম আনতে বলেছিল। ও চলতে শুরু করলে কোন গন্ধ পাবেন না। সত্যি সত্যি গন্ধটা মিলিয়ে গেলো। কিন্তু জ্যামে যেই দাঁড়ায় অমনি গন্ধ আসে। কিছুক্ষণ পর পৌঁছে যাবো এই উত্তেজনায় সে গন্ধ সহ্য হয়ে গেলো। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগবে। রাস্তা কোথায় খারাপ তো কোথাও ভালো। চা খাবো বলতেই এক্ জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি।

গল্পে গল্পে অনেক রাস্তা পেরিয়ে গেলো। এবার শুরু হল নানা রকমের ভেরি, জলা জায়গা, জমিতে ছোট ছোট আল দিয়ে চিংড়ি চাষের জায়গা, ঝোপ জঙ্গল, ঝাউ গাছ মানে আমরা অলমোস্ট চলে এসেছি। একটা বাঁক ঘুরে গাড়ি দাঁড়ালো। দেখলাম একটা বিয়ে বাড়ির মত ব্যাপার। প্রচুর লোক। ঝিকিমিকি টুনি লাইট জ্বলছে। ইয়ো, আমরা পৌঁছে গেছি রেসর্টে।

দুইজন ছেলে আমাদের লাগেজ নিয়ে রিসেপশনের সামনে দাঁড়ালো। চারিদিকে অল্পবয়সী স্টাফ হাতে ওয়াকি টকি নিয়ে ঘুরছে। একটা শোরগোল ও ব্যস্ততা মাতিয়ে রেখেছে সবটা। অফিসিয়াল কাজকম্ম সেরে রুমে এলাম। মোট তিনটে কটেজ বুক করেছি আমরা। আমরা আর রকিরা পাশাপাশি, উল্টো দিকের কটেজে রজত আর আশিস। তোমরা ব্যাচেলর মানুষ একসাথে থাকো বাবা। একটা বড় বেড। চেয়ার টেবিল আর ঝকঝকে টয়লেট। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সব। আমাদের খুব মনে ধরল। ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খানিক পর সার্ভিস বয় চা আর পকোড়া দিয়ে গেলো। কটেজের সামনে বসার জন্য ছোট ছোট মাচা টাইপ বানানো। সেখানে জমল আমাদের আড্ডা। তবে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সমুদ্রের ধারে যেতে বারণ করে গেলো। একটা বড় ঘন ঝাউ বন পেরিয়ে সমুদ্র দেখা যায়। এই অন্ধকারে আমরাও আর গেলাম না। অনেক ধকল গেলো আজ।

গরম গরম রুটি, ভাত, পনিরের সবজি, ডাল, ভাজি, মিষ্টি, মাছ নিলে আলাদা পেমেন্ট করতে হবে। তৃপ্তি করে খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম আজ। সমুদ্র কেলি শুরু হবে কাল সকালে।
© ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি বাড়ির পাশেই লাভপুর, মাসির বাড়ি। যাতায়ত লেগেই থাকে। অনেকদিন ধরে ভাবছি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপা...
03/11/2023

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি

বাড়ির পাশেই লাভপুর, মাসির বাড়ি। যাতায়ত লেগেই থাকে। অনেকদিন ধরে ভাবছি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি দেখে আসি। এই ভাবনা নিয়েই একদিন চলে গেলাম, আমি আর জবা। লাভপুর স্টেশনের সাবওয়ে ধরে ডানদিকে ঘুরে একটু এগিয়ে উনার বাড়ি। বাইরে বাইক স্ট্যান্ড করে ভিতরে ঢুকতেই রাস্তার ডানদিকে শিল্পী পল্লব সিংহ এর বানানো তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তি দেখতে পেলাম। সোজা হয়ে বসে যেন বলছেন- “এলি তাহলে?” মূর্তির সামনে একটা ছোট্ট রুম আছে দেখতে অনেকটা ধানের গোলার মত। ওখানে লেখা পড়ে জানতে পারলাম লাভপুরের এই বাড়ি তাঁর পিতৃপুরুষের কাছারিবাড়ি ছিল। পরবর্তীকালে তিনি এই বাড়ির নামকরণ করেন “ধাত্রীদেবতা”।

সংগ্রহশালার ডানদিকে একটা ঘর আছে। ওটাই টিকিট কাউন্টার। ভিতরে উনার আঁকা কিছু ছবি, কিছু বই এসবের সঙ্গে অন্যান্য আরও অনেক বই ও লিটিল ম্যাগাজিন দেখতে পেলাম এর ঠিক পিছনে আছে হরিদাস ভবন যা এখন অতিথি নিবাস। টিকিট কাউন্টার থেকে বেড়িয়ে সামনে পড়ে আসল সংগ্রহশালা। নেমপ্লেটে লেখা আছে-

“ধাত্রী-দেবতা
সমস্ত জীবের যিনি ধাত্রী তিনি ধরিত্রী
জাতির কাছে তিনিই দেশ ।
মানুষের কাছে তিনিই তো বাস্তু।
তোমাকে চিনেই তো চিনেছি দেশকে
দেশকে চিনেই তো জেনেছি ধরিত্রীকে।
এবার চেনাও তুমি আকাশকে।”

সাদা ক্রিম কালারের একটা বাড়ি। জানলা দরজা সব সবুজ রঙ করা। গেট পেরিয়ে বাঁদিক থেকে শুরু হল সংগ্রহশালা। দেওয়াল জুড়ে ছবির সাথে ইতিহাস লেখা। লাভপুরের ব্রাহ্মণ জমিদার রাজচন্দ্র সরকারের কন্যা উমারানির সাথে রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। তাঁদের ছোট ছেলের নাম হরিদাস। তাঁর বিয়ে হয় সিন্ধুবাসিনী দেবীর। কিন্তু ১৪ বছর পর সিন্ধুবাসিনী দেবীর মৃত্যু ঘটলে প্রভাবতী দেবীর সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ হয়। এই হরিদাস এবং প্রভাবতীর বড় ছেলের নামই হল তারাশঙ্কর। কিন্তু এখানে আর একটি গল্প আছে। তারাশঙ্করের জন্মের আগে আর একটি সন্তান হয়েছিল সূতিকা গৃহেই মৃত্যু হলে সেখানকার ফুল্লরার উপাসক রামজি গোঁসাই পরামর্শ দেন তারা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। কথামতো গ্রামের শেষ প্রান্তে হরিদাস প্রতিষ্ঠা করেন মা তারার মন্দিরের। ঠিক তাঁর দশ মাস পর তাঁদের আর একটি পুত্র জন্ম নেয়। মা তারার কৃপায় জন্মেছে বলে শিশুটির নাম দেওয়া হয় তারাশঙ্কর, ডাকনাম হাবু। বড় হতে থাকে সেই শিশু। ছোট থেকেই প্রতিভাবান ছিলেন। পড়াশোনা শুরু হয় যাদবলাল স্কুলে। লেখালেখি, নাটক, সঙ্গীত চর্চা চলতে থাকে। সংগ্রহশালায় রয়েছে কাঠের উপর তাঁর হাতে বানানো নানা রকমের ভাস্কর্য। তাঁর ব্যবহৃত পেন, চশমা, লেখালেখির সরঞ্জাম, টেবিল, সোফা, পাজামা, পাঞ্জাবী এসব। উপন্যাসের অজস্র স্ক্রিপ্ট সুন্দর ভাবে সাজানো আছে। এক অদ্ভুত ইতিহাস রচিত হয়েছে পুরো বাড়িটা জুড়ে। সেসবের ছবি আমি এখানে দিলাম। কিন্তু কাঁচের মধ্যে জিনিসগুলো থাকার জন্য ছবিগুলো ভালো আসে নি। একবারে শেষ রুমটায় আছে বাংলা সাহিত্যের এক নক্ষত্রের আকাশে মিলিয়ে যাওয়ার কাহিনী। সালটা ১৯৭১, ২৯শে আগস্ট। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। চিকিৎসায় কিছুটা সারা দিলেও ১৪ই সেপ্টেম্বর সকাল ৬ টা ২৪ মিনিটে সমস্ত চেষ্টা বিফলে গেলো। ইহলোক ছেড়ে যাত্রা করলেন পরলোকের উদ্দশ্যে। আমরাও কিছুটা মনখারাপ নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম।
© ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

বেথুয়াডহরির গল্পমার্চের কোনো এক সন্ধ্যায় গল্প করছিলাম আমরা। কাল পরশু ছুটি আছে, আশেপাশে কোথায় গেলে হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ...
13/10/2023

বেথুয়াডহরির গল্প

মার্চের কোনো এক সন্ধ্যায় গল্প করছিলাম আমরা। কাল পরশু ছুটি আছে, আশেপাশে কোথায় গেলে হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরের দিন সকালে আমরা দুটোতে চলে গেলাম নদীয়া, দিদির বাড়ি। নেক্সট দিন যাবো বেথুয়াডহরি স্যাঞ্চুয়ারি। এটাই ছিল আসল প্ল্যান। আমাদের কোথাও যাওয়ার প্ল্যানগুলো দুমদাম হয়।
সকাল থেকে ভালো গরম আছে। টুকটুক করে যাচ্ছে আমাদের বাইক। এন এইচ ৩৪ ধরে এগোতে থাকলাম। বেশ কিছুটা চলে আসার পর সামনে এল বিশাল এক গেট। এটাই হল তাহলে বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য যা প্রায় ১৭০ একর জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে। বাইক স্ট্যান্ড করে টিকিট কাটলাম। গেটের ঠিক বাইরে বাগান থেকে সদ্য তুলে আনা কচি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছিলো। দাদা পেয়ারা কুচির সাথে নুন, লঙ্কা, কাসুন্দি দিয়ে বানিয়ে দিলো। মাখোমাখো করে চাপিয়ে খেলাম বেশ। তারপর ঢুকলুম ভিতরে। মোটামুটি গভীরতা আছে জঙ্গলের। ইঁটের তৈরি রাস্তা। আমরা হাঁটছি দুটোতে। ভ্যাপসা গরম পুরো। শুনেছি পাইথন সাপ জঙ্গলে ছাড়া আছে যদিও আমি এখন দেখলাম না, আগে একবার এসেছি তখনও দেখি নি। ঢুকেই প্রথমে রাস্তার বাঁদিক ধরে যেতে হয়। খানিকটা এগোতেই চোখে পড়বে একটা বড় পুকুর যেটা শক্ত মোটা তার দিয়ে ঘেরা আছে। ভিতরে দেখলাম পুকুর পাড়ে আরাম করে রোদ পোহাচ্ছে ঘড়িয়াল। ঘড়িয়াল ছেড়ে সোজা এগোতে এগোতে চোখে পড়ল দূরে কিছু হরিণ চড়ছে। এর মাঝে ঘটল বিপত্তি। জবার জুতোর একপাট সোল থেকে ছেড়ে বেরিয়ে এল। কোনোরকমে সুতো দিয়ে বেঁধে পা টেনে টেনে হাঁটতে লাগলো বেচারি। নিজেরাই হাসতে লাগলাম এসব দেখে। বিপত্তি যখন হল তখন খানিক বসা যাক। একটা সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চে বসে অল্প অল্প গাছের হাওয়া সঙ্গে জল, দুটোই খেতে থাকলাম।
এসব ছেড়ে একটু এগোতেই দেখলাম এক বিশাল এরিয়া ঘেরা আছে। তার সামনে বিখ্যাত পক্ষী বিশারদ সেলিম আলির ছবি। ভিতরে ময়ূর, ময়ূরী, নানা প্রজাতির টিয়াপাখি, আরও বিভিন্ন রংবেরঙের পাখি। আর রয়েছে একটা নীলগাই। শুনেছি এবং পড়েছি এখানে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, শেয়াল, ৫০ রকমের পাখি, বন্য মুরগি, খরগোশ, নানা ধরনের সাপ এসব আছে। যদিও সবকিছু আমাদের চোখে পড়েনি। একটা বড় ব্যানার বানানো যেখানে ট্রপিক্যাল ফরেস্টির জনক স্যার ডেইট্রিচ ব্রানডিস সম্পর্কে অল্প লেখা আছে।
মেন গেট থেকে ঢুকেই একটু বাঁদিকে একটা বড় মিউজিয়াম আছে। ভিতরটা বেশ সুন্দর। আগে এত ভালো ছিল না। এখন অজস্র মডেল বানিয়ে সাজানো হয়েছে ভিতরটা। মডেলের মাধ্যমে বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, ফরেস্ট অফিসারদের কাজ করার পদ্ধতি, পলাশী যুদ্ধের প্রান্তর, নদীয়ার বিখ্যাত সরভাজা ও সরপুরিয়া তৈরিরত ময়রা এসব সুন্দর করে গুছিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে। আর রয়েছে ফরম্যালিনে সংরক্ষণ করা কচ্ছপের, ময়াল সাপের ডিম, নোনা জলের কুমির এসব। সমস্ত দেখা শেষ হল তখন রোদ খানিকটা কম লাগছে। বাইরে বেরিয়ে এসে সামনের দোকানে বসে চা চিপস আর বিস্কুট খেলাম। ভালো লাগলো ঘুরে কিন্তু মনে হল অভয়ারণ্যকে এরা যত্ন করে না। দেখভাল ভালো করে হয় না। নীলগাই যেন ধুঁকছে। পাখিগুলো কেমন অযত্নে থাকে। এর আগে একবার গেছিলাম, দুটো সময়কে কম্পেয়ার করলে এখন অবস্থা আরও খারাপ। আশা করি পরে গেলে আর ভালো করে যত্নের চিহ্ন দেখতে পাবো। এই আশায় রইলাম...

©ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

তপোবন ঘুরে এলাম  আজ রবিবারের সকাল। কথামত আমি বিবেককে ওর বাড়ি থেকে তুলব। বিবেক আমার কলিগ। একটা ব্যাগে শুকনো কিছু খাবার আর...
04/10/2023

তপোবন ঘুরে এলাম

আজ রবিবারের সকাল। কথামত আমি বিবেককে ওর বাড়ি থেকে তুলব। বিবেক আমার কলিগ। একটা ব্যাগে শুকনো কিছু খাবার আর জলের বোতল নিয়ে সক্কাল সক্কাল ওর বাড়ি হাজির হলাম। যাবো তপোবন।

দেওঘর শ্রাবণ মাসে ভক্ত সমাগমে বড্ড উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। রাস্তায় যেতে যেতে সে দৃশ্য চোখে পড়ল। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বেঙ্গল, দিল্লী এসব জায়গার অনেক বাইক, গাড়ি দেখলাম, ভক্তরা বাবার মাথায় জল ঢালতে এসেছে। বিবেক বলল- তপোবনে তার মানে ভালো ভিড় হবে।

তপোবন দেওঘর থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত ছোট ছোট পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটা জায়গা। ওখানে গিয়ে বাইক রাখতেই চারদিক থেকে কিছু বাচ্চা ছেলে আমাদের ঘিরে ধরল। ১০ টাকার বিনিময়ে একটা করে প্যাকেট এগিয়ে দিচ্ছে। বিবেক বলল- আমাদের ওসব লাগবে না, আছে সঙ্গে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া অত সোজা নয়। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে নিজেদেরকে গাইড বলছে। তারা নাকি একদম পাহাড়ের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাবে। ২০০, ১৫০, ৩০০ যার যেরকম ইচ্ছে রেট বলছে। আমি প্রথমে হকচকিয়ে গেছিলাম। বিবেক লোকাল হওয়ায় ব্যাপারটা জানত। স্মার্টলি আমাকে নিয়ে এন্ট্রান্সে হাজির।

এবার আপনাদের মত আমারও কৌতূহল চেপে না রেখে জানতে চাইলাম ওগুলো কিসের প্যাকেট। বলল- দেখেন নি ভালো করে? বললাম- দেখতে দিলে কোথায়, ঝটপট হেঁটে চলে এলে এখানে। ও বলল- প্যাকেটে ২/৩ টে করে কাঁঠালের কোয়া আর কিছু ভেজানো ছোলা থাকে। ১০ টাকা করে নেয় দাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এগুলো আবার কোন পুজোতে ব্যবহার হয়? উত্তর এল- কোনো পুজোতেই নয়। উপরে হনুমানের প্রচণ্ড উৎপাত আছে। ওই ধরনের একটু খাবার দিলে বিরক্ত কম করে। আর ভক্তরা অতি ভক্তি করে ওদের খাওয়ায়। সেটার সুযোগ নিয়ে বাচ্চাগুলো এসব বিক্রি করে। তবে এখন অনেক ভিড় আছে তাই অতটা বিরক্ত করবে না। ও হ্যাঁ, চশমা, জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট এসব সাবধানে রাখবেন, সুযোগ পেলে হনুমানে এসব কেড়ে নেয়। আর গাইডের কোন দরকার নেই, ওখানে পুরোহিতরা সব বলে দেন এবং লেখাও থাকে। আমি কিছু পুজোর সামগ্রী কিনে নি। আপনি দু মিনিট দাঁড়ান।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আশপাশ একটু দেখে নিলাম। যেখান থেকে বিবেক পূজোর সামগ্রী কিনল সেখানেই আমরা জুতো, হেলমেট রেখে দিলাম।
চলুন ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভাঙ্গা যাক। আমরা উঠতে শুরু করলাম। অনেক ছোট পাহাড়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কিছু হনুমান চোখে পড়ল। সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে, ঝকঝকে আকাশ। দৃশ্য উপভোগ করতে করতে তপোবন নিয়ে কিছু গল্প আপনাদের বলি।

প্রাচীন যুগে ঋষি, মুনিরা এখানে ধ্যান করতেন তাই জায়গাটির নাম তপোভূমি বা তপোবন। কথিত আছে ঋষি বাল্মীকিও এখানে ধ্যান করে গেছেন। তপোবন পাহাড়ে অনেক মন্দির আছে যার মধ্যে বিখ্যাত হল শিব মন্দির, হনুমান মন্দির আর সীতা কুন্ড। সীতা কুন্ড একটি জলাধার যেখানে সীতা দেবী স্নান করতেন।

একটি একটি করে মন্দিরে প্রবেশ করি তারপর পরের মন্দিরে যায়। তারপর আবার সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠি। এরকম করে একদম উপরে উঠে এলাম। যেহেতু এখানে শিবলিঙ্গ আছে তাই ভক্তদের ভিড় থাকবেই তার উপর এখন শ্রাবণ মাস। কিছু গুহা রয়েছে সেখানেও পূজা চলছে। আমরা বেশ খানিক কসরত করে গুহা পেরিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় এলাম। দুটো চওড়া পাথর আছে। কিছু গাছ হেলে পড়েছে। এইতো চাই। ছাওয়ায় বসা হল। আরাম করে বিস্কুট আর জল খেলাম। গল্প করতে করতে কিছু ছবি তোলা হল। দিব্বি হাওয়া খাচ্ছিলাম কিন্তু সুখ কি আর বেশীক্ষণ থাকে। রোদ চলে এল একটু পর। চুপচাপ উঠে ধীরে ধীরে হেঁটে নিচে নেমে এলাম।

আপনারাও ঘুরে আসুন তপোবন। দেওঘর এলে একবার চলে যাবেন, কাছেই। তবে ওখানে পাণ্ডাদের খুব উৎপাত। মন্দিরের মুখে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের এড়িয়ে, মন্দিরের প্রণামী বাক্সে টাকা না দিয়ে আপনি উপরে যেতে পারবেন না। কিন্তু উপরে এরকম উৎপাত খুব একটা দেখলাম না, এটা পাহাড়ের নিচে যেখান থেকে মেন মন্দির শুরুর সেখানেই দেখলাম। এগুলো ম্যানেজ করে ঘুরে আসুন একবার। ভালো লাগবে।

©ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

পারশনাথ পাহাড়ে একদিন অফিসে দিব্বি কাজ করছিলাম। ফোনটা বেজে উঠল। জবা ফোন করেছে। রিসিভ করে যেটা বুঝতে পারলাম ভদ্রমহিলা সারপ...
28/09/2023

পারশনাথ পাহাড়ে একদিন

অফিসে দিব্বি কাজ করছিলাম। ফোনটা বেজে উঠল। জবা ফোন করেছে। রিসিভ করে যেটা বুঝতে পারলাম ভদ্রমহিলা সারপ্রাইজ দিতে আমার কাছে আসছেন। স্টেশন গিয়ে ওকে নিয়ে এলাম। বেশ খুশি খুশি ভাব এখন আমাদের। সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে গল্প করছি দুজনে আর প্ল্যান করছি কাল কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। প্রথমে ঠিক হল দেওঘর বা ত্রিকূট পাহাড়। কিন্তু একটার পর একটা প্ল্যান চেঞ্জ হতে হতে ঠিক হল

ঝাড়খণ্ডের সবথেকে উঁচু শৃঙ্গ পারশনাথ যাবো। শুধু এটুকু জানতাম যে পাহাড়ের উপরে একটা দারুণ জৈন মন্দির আছে। ২৩ তম জৈন তীর্থঙ্কর পারশনাথ এখানে নির্বাণ লাভ করেছিলেন। আশেপাশে আরও অনেক তীর্থঙ্করের মন্দিরও আছে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য শৃঙ্গ পারশনাথ। পথে বেরিয়ে বাকী দেখা যাবে কিভাবে যাবো।

টুক করে ব্রেকফাস্ট করে আমরা রওনা দিলাম। ম্যাপে দেখাচ্ছে গিরিডি পেরিয়ে বেশ অনেকটা যাওয়ার পর আসবে পারশনাথ। সুন্দর পরিবেশ, হালকা হালকা মেঘ। ফুরফুরে হাওয়া। গল্প করতে করতে এগোচ্ছি আমাদের বাইকে। গিরিডি ঢোকার আগে ব্রিজের মুখে একটা ধাবাতে পেট ভরে পরোটা আর তরকা খেলাম। সুন্দর খাবার, সাথে ধোঁয়া ওঠা চা। আহা! আমি আগের কিছু লেখাতে বলেছি ঝাড়খণ্ড যেহেতু ছোটনাগপুর মালভূমিতে অবস্থিত তাই রাস্তা যখন তখন নিচে নেমে যায়, উপরে উঠে যায়। হটাত টার্ন আসে। একটু সাবধানে চালাতে হয়। এমন সুন্দর রাস্তায় সময় কাটছে ভালোই। এক জায়গায় এসে দেখলাম একটা বিরাট গেট, ওটাই এন্ট্রান্স। গেট পেরিয়ে বেশ কিছুটা এগোতেই বোঝা গেলো জৈন অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকে গেছি। কারণ চারদিকে বড় বড় জৈন মন্দির। সুন্দর কারুকার্য করা বিভিন্ন জৈন নিদর্শন, বাড়ি। জায়গাটার নাম মধুবন। এটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জনবসতি এলাকা। অনেক জৈন ধরমশলা চোখে পড়ল। এসব কিছু পেরিয়ে একটা জায়গায় দেখলাম আর রাস্তা নেই। অথচ ম্যাপে দেখাচ্ছে অজস্র আঁকাবাঁকা পথ এখনও পেরোতে হবে তবেই মন্দির। প্রথমে বুঝতে পারি নি কতটা যেতে হবে। ভাবলাম গাড়ি এখানে স্ট্যান্ড করে দি। হেঁটে চলে যায়। বাইক দাঁড় করাতেই আশপাশ থেকে অনেক লোক তাদের বাইক নিয়ে চলে এল। বলল উপর পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। বাইক প্রতি ১০০০ টাকা লাগবে। একজন করে যাবে। আমাদের ২০০০ টাকা লাগবে। দরদাম করা যায় ওদের সাথে। কিছু না বলেই নিজেরাই ৬০০ টাকা পর্যন্ত রেটে নেমে এল। কতটা যেতে হবে ভাবছি, ম্যাপে দেখাচ্ছে প্রায় ১৫ কিমি। সাইনবোর্ডে লেখা আছে প্রায় ১০ কিমি। জবা বলল "আমরা নিজেদের বাইকে যাবো।" এখানে বলে রাখি ওখানে যে বাইকগুলো আছে তারা কিন্তু আপনাকে চরম ডিমোটিভেট করবে - "আপনারা যেতে পারবেন না, অনেক খাড়া পাহাড়, অসুবিধা হবে, আসুন কম টাকায় নিয়ে যাচ্ছি, বাঁদরের উৎপাত আছে…" এরকম অজস্র কথা উড়ে আসবে। কোন কিছুকে পাত্তা দেবেন না। জবা আর আমি আলোচনা করলাম নিজেদের বাইকে যাবো। কিছুটা গিয়ে দেখি কি হয়। অসুবিধা বুঝলে নেমে যাবো। তখন ওদের বাইকে যাবো।

শুরু করলাম যাত্রা। অল্প খাড়া, চওড়া বাঁক। কোন অসুবিধা হল না। জবা নিজের মনে মোবাইল বের করল ভিডিও করবে বলে। কিন্তু যেই না দুটো বাঁক পেরিয়েছি অমনি রাস্তা হয়ে গেলো হেব্বি খাড়া আর টার্ন হয়ে গেলো খুব ছোট্ট। হটাত এমন হওয়ায় নার্ভাস হয়ে গেলাম। পিছন থেকে একটা হাত আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল- "কোনো অসুবিধা নেই, ভালোই চালাচ্ছ। আসতে আসতে চলো, ঠিক পৌঁছে যাবো"। একটু যেন সাহস পেলাম। ধীরে ধীরে ওঠা শুরু হল। বেশ কিছুটা উঠে দেখলাম নার্ভাসনেসটা একদম কেটে গেছে। জবাকে জিজ্ঞেস করলাম ভয় পেয়েছিল কিনা। বলল হ্যাঁ, চরম ভয় লেগে গেছিল। হটাত অমনি খাড়া রাস্তা হয়ে যাবে বুঝি নি। মোবাইলটা কোনো রকমে ব্যাগে ভরে নিলাম না হলে পড়ে যেত। বললাম- আমাকে সাহস দেওয়া হচ্ছিলো যে খুব। উত্তর এল- আমি তো বুঝতে পেরেছি তুমিও ভয় পেয়েছো। এখন দুজনে ঘাবড়ে গেলে আর যাওয়াই হত না। তাই সাহস দিলাম। এই কারণেই আমাদের কেমিস্ট্রিটা বেশ জমাটি।

চারদিক সবুজ, ঝকঝক করছে যেন। কিছু বুনো ফুলের গন্ধ হাওয়ায় ভাসছে। অনেক লোকজন যাচ্ছেন কেউ হেঁটে, কেউ ডুলিতে। ডুলি হল দড়ি বা ফিতে দিয়ে বানানো চেয়ার যার সাথে বাঁশ লাগানো থাকে। চারজন মানুষ কাঁধে বয়ে নিয়ে যান। ওজন হিসেবে ডুলি ভাড়া হয়। মিনিমাম ৩৫০০ থেকে স্টার্ট। এসব দেখছি, জবা নানা ফটো তুলছে। একটা জায়গায় এসে দেখলাম পাকা রাস্তা সোজা চলে গেছে আর তার ডান দিকে আর একটা কাঁচা রাস্তা। কি মনে হল একজনকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন- পাকা রাস্তা দিয়ে গেলে খানিক যাওয়ার পর আর রাস্তা নেই, সিঁড়ি আছে। হেঁটে হেঁটে যেতে হবে বাইক রেখে। আর যদি কাঁচা রাস্তা ধরেন, খানিক ঘুরপথ হবে কিন্তু মন্দিরের কিছুটা আগে গাড়ি রাখতে পারবেন, অল্প হাঁটতে হবে। ভাগ্যিস জিগাইলাম। রাস্তা কাঁচা কিন্তু সুন্দর যাওয়া যায়। আমাদের বাইকের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম হওয়ায় মাঝে মাঝে পাথর ছিটকে এসে লাগছে পায়ে।

অনেকটা উঠে আসার পর CRPF ক্যাম্পের পাশে বাইক রাখতে হল। এবার হাঁটতে হবে। হেলমেটগুলো আচ্ছা করে একটা গামছা মত ছিল ওটা দিয়ে ব্যাগের সাথে বেঁধে শুরু করলাম হাঁটা। এতক্ষণ বুনো ফুলের গন্ধ নাকে আসছিল। এবার একটা উগ্র ঝাঁজালো গন্ধ নাকে আসতে লাগলো। গন্ধটা কিন্তু খারাপ লাগছে না, খুব চেনা গন্ধ। খানিক এদিক ওদিক দেখতেই দেখা পেলাম বন্য তুলসী। অতি উগ্র গন্ধ, কিন্তু বেশ ভালো লাগছে। অল্প অল্প জল খাচ্ছি আর হাঁটছি। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এত খাড়া সিঁড়ি দিয়ে উঠবো কি করে। কিন্তু সব শেষে যখন চোখের সামনে ধবধবে সাদা বড় এক মন্দির, একটু দূরের একটা পাহাড়ে হেলিপ্যাড, যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ, ছোট্ট লাগছে দূরের মধুবন শহরকে … এসব দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। পারশনাথ আসা আমাদের সার্থক। ফুরফুরে একটা ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। আরামে মনে হচ্ছে মন্দিরের চাতালে ঘুমিয়ে যায়। কতক্ষণ ওখানে বসে ছিলাম খেয়াল নেই। আমিই জবাকে বললাম দেরি করলে নামতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। আমাদের সন্ধ্যের মধ্যে রুমে ঢুকতে হবে। চলো ধীরে ধীরে নামি। একটু নেমে একটা দোকানে পাহাড়ি ঝর্ণার জলে বানানো চা খেলাম। বাইক নিয়ে পাহাড়ে ওঠা সহজ, নামার সময় গণ্ডগোল হয়। বারবার ব্রেক করলে ব্রেক কাজ করে না অতিরিক্ত গরম হয়ে। তখন হয় তুমি বস সামলাতে না পারলে খাদে পড়বে না হলে চুপ করে বাইক বন্ধ করে বসে থাকতে হবে ব্রেক ঠাণ্ডা হতে। তাই এখানে ইঞ্জিন ব্রেকিং খুব ভালো কাজ দেয়। অল্প অল্প ব্রেক আর ইঞ্জিন ব্রেকিং করতে করতে নেমে এলাম নীচে। একরাশ আনন্দ, উচ্ছ্বাস নিয়ে শেষ হল আমাদের পারশনাথ মন্দির দর্শন।

পরবর্তী ভ্রমণ কাহিনী আসছে সামনের সপ্তাহে। আজ এ পর্যন্ত। বাই বাই। ভালো থকবেন সব্বাইকে নিয়ে।

©ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

দার্জিলিং ডায়েরিশেষ পর্ব এখন ঝটপট রেডি হতে হবে। সব প্যাকিং কমপ্লিট। আমাদের ড্রাইভার দাদাকে ফোন করা হয়ে গেছে। ঠিক সময়ে তি...
20/09/2023

দার্জিলিং ডায়েরি

শেষ পর্ব

এখন ঝটপট রেডি হতে হবে। সব প্যাকিং কমপ্লিট। আমাদের ড্রাইভার দাদাকে ফোন করা হয়ে গেছে। ঠিক সময়ে তিনি হাজির হবেন। ব্রেকফাস্ট সেরে দিদির থেকে নিয়ে নিলাম সম্পূর্ণ হিসেব। টাকা মেটানো হল। তারপর সেই বিখ্যাত প্যাসেজের সামনে সবাই মিলে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সবাইকে বাই বাই বলে আমাদের গাড়ি স্টার্ট হল।

একদিকে খাদ আর একদিকে ঘন সবুজ জঙ্গল। মাঝে ছুটছে আমাদের গাড়ি। মসৃণ চওড়া পাহাড়ি রাস্তা। জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তোলার ইচ্ছে ছিল। ড্রাইভার দাদা বারণ করে বলল- "অন্য সময় হলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে দিতাম। কিন্তু এখন যেও না। বর্ষার সময়, প্রচুর জোঁক থাকে। বুঝতে পারবে না গায়ে উঠলে।" আমাদের তাই দাঁড়ানো হল না। গাছগুলোর শেষ শুরু দেখতে পাচ্ছি না। লম্বা হয়ে যেন আকাশ ছুঁয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে আলো আঁধারের খেলা। মেঘ কুয়াশা মিলিয়ে কেমন এক ভৌতিক আবহ তৈরি হয়েছে। অনেকটা গিয়ে এক জায়গায় দাঁড়ালাম। লেখা আছে "গোলপাহাড় ভিউ পয়েন্ট"। এখানে অনেক বিখ্যাত চা বাগান আছে। চা বাগানের ভিতরে ঢুকে ছবি তোলা নিষেধ তাই আমরা আশেপাশে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম।

সামনে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। ওখানেই দাঁড়িয়ে চমৎকার চা সাথে কিছু স্ন্যাক্স খেয়ে নিলাম। গাড়ি ছুটল সাঁই সাঁই করে। কিছুক্ষণের মধ্যে মিরিক ঢুকে যাবো। পাহাড়ের একটু নিচে অবস্থিত বিশাল মিরিক লেক। তাকে ঘিরে এক বড় জনপদ গড়ে উঠেছে। শান্ত শীতল সেই জল। তবে হ্যাঁ, একটা আঁশটে গন্ধ মাঝে মাঝে হাওয়ায় ভেসে আসছে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়লাম। ড্রাইভার দাদা বলল "শিমুলবাড়ি চা বাগান পড়বে শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তায়, ওটা একবার দেখে নিও রাস্তার উপরেই।" বেশ অনেকটা যাওয়ার পর শিমুলবাড়ির সামনে দাঁড়ালাম। সুন্দর একটা ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। হালকা কিছু মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে মাথার উপর। রাস্তার পাশেই বসে পড়লাম। এত তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবো, বসেই থাকি না খানিক। ড্রাইভার দাদারও যেন অতটা তাড়া নেই। সেও আমাদের সাথে বসে দিব্বি গল্প করছে। আসলে গন্তব্যের থেকে যাত্রাপথ সবসময় আমার পছন্দের। প্রায় আধ ঘণ্টার উপর থেকে সেখান থেকে উঠলাম। সন্ধ্যায় ট্রেন। টোটো চলছে দেখে বুঝে গেলাম প্লেন এরিয়ায় চলে এসেছি। শিলিগুড়িতে নামিয়ে মস্ত বড় হাসি দিয়ে দাদা চলে গেলো।

অনেক স্মৃতি আর খানিক মন খারাপ নিয়ে আমরা ট্রেনে চাপলাম। বাড়ি ফেরার পালা...

©ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

দার্জিলিং ডায়েরিদ্বিতীয় পর্ব- সেই ভৌতিক রাতএখানে আমাদের খাতির যত্নের কোনো অভাব নেই। সন্ধ্যায় গরম গরম মোমো সাথে অনবদ্য চা...
12/09/2023

দার্জিলিং ডায়েরি

দ্বিতীয় পর্ব- সেই ভৌতিক রাত

এখানে আমাদের খাতির যত্নের কোনো অভাব নেই। সন্ধ্যায় গরম গরম মোমো সাথে অনবদ্য চা। এসবের মাঝে গল্প করতে করতে রাত হয়ে গেল। দিদির ডাক এল ডিনারের জন্য। চমৎকার মাছ রান্না, সাথে রুটি, সবজি, স্যালাড। এখানের সব্জির সাথে আমাদের সব্জির কিছু তফাত আছে। যেমন শশা, আমাদের এদিকে শশা ছোট ছোট হয়। এখানে একটা শশা প্রায় এক হাত লম্বা, যেটা থেকে খানিকটা কেটে আমাদের দেওয়া হল। দাল্লে বলে একধরনের ভয়ানক ঝাল লঙ্কা পাওয়া যায়, অনেকটা কুলের মত সাইজ। সে যে কি বিশাক্ত ঝাল ভুল করে রুটি দিয়ে অল্প আচার খেতে গিয়ে বুঝেছি। প্রথমে জানতাম না যে ওটা দাল্লের আচার। দিদি বললেন ওটা সহ্য হবে না তোমাদের, অল্প একটু নিয়ে টেস্ট করে দেখ। আর কোনোদিন দাল্লে টেস্ট করি নি আমি। চমৎকার খাওয়া দাওয়া সেরে উঠলাম।

রুমে এসে আমরা গল্প শুরু করলাম। নানা আবোল তাবোল গল্প চলতে থাকল। এমন সময় রকি বলে উঠল- এই পরিবেশে সব থেকে জমে উঠবে ভূতের গল্প। এখানে বলে নি আমরা আছি ৫ বন্ধু। রুম নিয়েছি দুটো। কাল একটা রুমে আমি, শর আর রজত ছিলাম। আমাদের এই রুমে টয়লেট আছে, পাশের রুমের টয়লেট রুমের বাইরে সিঁড়ির এক কোণে। ওই রুমে আশিস আর রকি ছিল কাল। কিন্তু আজ ওরা বলেই দিল গল্প করতে করতে অনেক রাত হবে, এখানেই ঘুমিয়ে যাবো সবাই। এটার যে একটা অন্য কারণ আছে সেটা রাত হলে বুঝলাম।

রকির ভূতের গল্পে সবাই ভোট দিলাম। এক এক করে সবার প্যাঁটরা থেকে ভূতের গল্প বেরোতে লাগলো। আমাদের গল্প চলছে আর রাতও বাড়ছে। এর মাঝে নিজেরাই দু বার চা বানিয়ে মেরে দিয়েছি। গল্প চলতে চলতে আশিস বলল- বাইরের অন্ধকারটা জানিস কেমন?

আমি- এখন?
আশিস- হ্যাঁ।
আমি- ভালোই অন্ধকার।
আশিস- নিজেকেই দেখতে পাবি না। মিশকালো বলতে যেটা বোঝায় এখন সেটা আছে বাইরে। একবার বাইরে বেরিয়ে ফিল নিবি নাকি?
আমি- নিলে হয়।
রকি- পাকামো করিস না। শোন ভাই, কেউ বাইরে যাস না। আমরা কাল গেছিলাম। ওই রুমে ছিলাম, মাঝ রাতে বেরিয়ে ছিলাম বাইরে একটু হেঁটে আসবো বলে। সাহসে কুলোয় নি। যাস না।
এতটা বলতেই আমাদের কৌতূহল বাড়ল। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রকি শুরু করল-

শোন। কাল আমি আর আশিস গল্প করতে করতে শুয়ে পড়লাম। আমার ঘুমটা লাগছে সবে এমন সময় দরজায় আওয়াজ হল একটা। কম্বল থেকে হালকা মাথা বের করে দেখলাম কেউ একজন আলো আঁধারে রুমে ঢুকছে। ভাবলাম আশিসকে ডাকি। কিন্তু আমি কিছুই বলছি না। চুপ করে শুয়ে আছি। ভয় লাগছে চরম। তারপর দেখলাম আগন্তুক লাইট জ্বালাল।
শর- লাইট জ্বালাল? কি দেখলি?
আমাদেরও এক প্রশ্ন।
রকি- দেখলাম আশিস মুখ মুছছে। শালা আমি ঘুমিয়ে যেতেই ও বাথরুম গেছিল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু আশিসকে কেমন একটু অদ্ভুত লাগলো, মানে ওর মুখটা। আমার চোখে চোখ পড়তেই দেখলাম হালকা একটা ভয় ভয় মুখ। কি হল জিজ্ঞেসও করলাম। কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। আমি চেপে ধরতে ও বলল বিশাল কিছু না কিন্তু একটু ভয় পেলাম আর কি। ব্যাপারটা এরকম- আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও হিসি করতে যায়। বাইরেটা ভয়ঙ্কর অন্ধকার, কোনো আলো নেই। পৃথিবীর সব অন্ধকার যেন পাহাড়ের এই ঘরের মধ্যে। সবাই ঘুমাচ্ছে। এই অন্ধকারে ও নিজেকেই ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। হিসি করে বাথরুমে জল ঢালার শব্দে চারদিক কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে। শুধু নিজের পায়ের আর নিঃশ্বাসের শব্দ ও নিজেই শুনতে পাচ্ছে। বাথরুম থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় দরজাটা যেন কিছুতেই খুলছে না। কোনোরকমে টেনে দরজা খুলে ও বেরিয়ে আসে। পরে বুঝতে পারে দরজাটা টাইট ছিল। ভয় এমনিতে হালকা পেয়েছে ও। বাথরুম পেরিয়ে একটা ছোট প্যাসেজ আছে। ওখানে ওই অন্ধকারে দেখে দুটো চোখ জ্বলছে। আশিস যত এগিয়ে আসে, চোখ দুটো হালকা হালকা নড়তে নড়তে ওর দিকে আসতে থাকে। একদম গেটের সামনে এসে আলো জ্বালাতেই দেখে দিদির পোষা কুকুর। হাঁফ ছেড়ে বেঁচে ও রুমে আসে। তারপরের গল্প তোদের আগেই বললাম। এখন ওকে জিজ্ঞেস করতে বলে যে এই অন্ধকারে বাইরে গেলে যে কেউ ভয় পাবে। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে একটু ফিল নেবার জন্য কিছুক্ষণ পর আমরা দুজনে বাইরে বেরলাম হাতে শুধু একটা দেশলাই বাক্স নিয়ে। ভাই বিশ্বাস করবি না পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের দেখতে পাচ্ছি না। পৃথিবীর সব অন্ধকার যেন আমাদের গিলে খেতে আসছে মনে হচ্ছে। ফস করে দেশলাই জ্বালালাম বারান্দার লাইটের সুইচটা খোঁজার জন্য। সেই আলোতে নিজেদেরকে দেখে এতটাই ভয় পেলাম যে দুজনেই ছুট্টে সোজা ঘরে। তারপর দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। ম্যাক্সিমাম আমরা বাইরে মিনিট দুই তিন ছিলাম। তাই বললাম ফিল নিতে বাইরে যাস না। এমন আনকেনি ফিলিং আসবে সারারাত ভালো করে ঘুমাতে পারবি না।
এক নিঃশ্বাসে যেন ও গল্পটা বলে গেল। তারপর বেশ খানিকটা জল খেল ঢকঢক করে। আমরা অন্য গল্প শুরু করলাম। কিন্তু আমার আর শরর মধ্যে বাইরে যাওয়ার একটা অদম্য জেদ চেপে গেল। কাল তো বাড়ি চলে যাবো। তার আগে এই ফিলটা নিলে মন্দ হয় না। শর আর আমার মধ্যে মাঝে মাঝে এই নিয়ে চোখে চোখে কথা হচ্ছে যে একবার বাইরে যাবি? রকি কিন্তু এটা দেখেছে। রকি, আশিস দুজনেই বারণ করল না যেতে। রজত এর মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু ও ঘুমিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে রেসপন্স করে মানে কিছু কথা ঘুমের ঘোরে শুনতে পায়। তরাক করে বিছানা থেকে উঠে কম্বলটা চেপে ধরে বলল- "বেশী পোঁদ পাকামো হচ্ছে তোদের দুটোর? দুজন মানা করছে কেন অচেনা জায়গায় এসে এসব করতে চাইছিস?" বলেই আবার ঘুমিয়ে গেল। আমরা বললাম- " যাহ্‌ শালা! মালটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গল্প শুনছে রে।" আমাদের বাইরে যাওয়া হল না। জোর কদমে আবার ভূতের গল্প শুরু হল। আড্ডা চলছে ভালোই। হিসি পেয়ে যাওয়ায় বাথরুম গেলাম। কাজ সারতে সারতে কি মনে হল বাথরুমের জানলাটা খুলে বাইরে তাকাতেই ভয় লেগে গেল। সেই ভয়ানক গা ছমছমে অন্ধকার। দূরে কিছু টিমটিমে আলো জ্বলছে পাহাড়ের গায়ে গায়ে। আর কেউ মনে হচ্ছে ওই অন্ধকারে মিশে যাওয়ার জন্য ডাকছে। সেকেন্ডের মধ্যে রুমে এসে খবর দিলাম- "শর ফিল নিতে হলে টয়লেটে গিয়ে জানলাটা খুলে খানিক বাইরে তাকা। দেখ কেমন লাগে।"

এতক্ষণ আমার মধ্যে যে উদ্দীপনা ছিল বাইরে যাওয়ার সেটা চুপসে গেল। রকি আর শর বাথরুম থেকে এসে একে অপরকে দেখতে থাকল। কি হল জিজ্ঞেস করতেই বলল- "ভাই সখ মিটে গেছে। কি ভয়ঙ্কর লাগছে রে। মনে হচ্ছে কোন অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের উপর। আমাদের দেখছে। চোখ পড়তেই যেন সরে গেলো।"

এরকম গা ছমছমে পরিবেশে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম সবাই। আশিস আর রজত ঘুমাচ্ছে। আমরা আবার হালকা স্বরে গল্প শুরু করলাম। এবার সত্যি সত্যি একটা ঘটনা ঘটল যেটা আমরা ভাবি নি। দিদির কুকুরটা হটাত করে ডেকে উঠল। পাহাড়ি কুকুরের সেই ডাক, চারদিক নিস্তব্ধ, সব কিছু ছাড়িয়ে বড় অদ্ভুত লাগলো। আমাদের রুমের সামনে একটা দরজা। বেডের মাথার কাছে বড় জানালা। পর্দা টানা আছে। জানলা খুললে পাশে একটা প্রাইমারি স্কুল চোখে পড়ে। এক দুবার ডেকে কুকুরটা চুপ করে গেলো। খানিক পর বাইরের প্যাসেজে একটা খসখস শব্দ হল তার সাথে বাড়তে থাকল কুকুরের ডাক। সে ডাকে তীব্র তেজ। কাউকে আক্রমণ করতে চাইছে যেন। আমি আর শর সোফায় এতক্ষণ বসে ছিলাম। তরাক করে বিছানায় চলে এলাম। আশিস এত ঘুমাচ্ছে যে ওকে ঠেলে সরাতে হল। রকি আর আমি বিছানায় ঢুকে কম্বল ঢাকা নিলাম। শর রজতকে ঠেলে তার পাশে শুয়ে পড়ল। দুমদাম আওয়াজ শুনে রজত ঘুম থেকে উঠে বলল-"কি হল রে? সব দুমদাম শুয়ে পড়লি কেন?" আমি বললাম- "বাইরে কুকুরটা অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করছে। চুপ করে শুয়ে থাক। একটা হাঁটার শব্দ আসছে। কিন্তু কুকুরটা কিছুতেই ওই হেঁটে যাওয়া যেই হোক তাকে ধরতে পারছে না। ছোটাছুটি করছে। চুপ চাপ শোন।" রুমের লাইট জ্বলছে কেউ উঠে অফও করছে না। শর শেষে অফ করল। এতক্ষণ কুকুরটা আমাদের দরজার সামনে ডাকছিল। ঠিক মনে হচ্ছে কেউ প্যাসেজে হেঁটে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। কুকুরটাও যেন তার পিছন পিছন তাড়া করে দরজার সামনে এসে ভোক ভোক করতে লাগলো। রকি বলল- "কেউ ভুলেও দরজা খুলে কি হচ্ছে দেখতে যাবার কথা ভাব্বি না। যা হচ্ছে বাইরে হতে দে।" বেশ খানিক্ষণ সেখানে ডাকল কিন্তু চুপ করল না। এবার আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি সেই হাঁটার শব্দ আমাদের ঘরের চারদিকে ঘুরছে। মানে দরজা থেকে সেটা আমাদের মাথার কাছে জানলা পর্যন্ত আসছে আবার ঘুরতে ঘুরতে জানলা থেকে দরজা পর্যন্ত আসছে। মানে আমাদের রুমের বাইরে সেটা টহল দিচ্ছে আর কুকুরটা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছে না। একবার মনে হল সবাই মিলে বেরিয়ে দেখি কি আছে। কিন্তু ততক্ষণে আমাদের হয়ে গেছে। চুপ চাপ শুয়ে আছি। আমাদের নিঃশ্বাস আর ঘড়ির আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে কেউ একজন বলে উঠছে- "এখনও চিৎকার করছে রে কুকুরটা, ঘুম আসছে না ভাই, ভয় লাগছে বে" এরকম ধরনের কথা। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি কখন জানি না। ঘুম ভাঙল সকালে রকির ডাকে। বলল- "কাল আমি যতক্ষণ জেগে ছিলাম ততক্ষণ এসব শুনেছি। এক এক করে সব ঘুমিয়ে গেলি। আমি মাঝে একবার ভয়ে ভয়ে বাথরুম যাবো না যাবো না করেও গেলাম। তারপর আর ওসব পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।"

আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। যেমন-
১। যদি ওটা কোন অন্য কুকুর বা কোন জানোয়ার হত তাহলে কুকুরটা মারামারি করত বা আক্রমণ করত। চেষ্টা করেও তাকে আক্রমণ করতে পারে নি।
২। আমাদের জানলার পাশেই স্কুল। ওদিকে যাওয়াটা সমস্যাজনক। তাহলে সেই নিশাচর ওদিকে বারবার যাচ্ছিল কি করে?
৩। আমরা যখন বাইরে বেরবো ঠিক করছি তখন থেকে এই আওয়াজ শুরু হল। আগে হয় নি কেন?
৪। বাইরে পরদিন সকালে কারোর কোন পায়ের ছাপ দেখি নি। বড় আশ্চর্য লেগেছিল আমাদের।
যাইহোক এসব নানা প্রশ্নের উত্তর আমরা আজও পাই নি। যেটা পেয়েছি সেটা হল দিদির অসামান্য আতিথেয়তা। আপনারা সেখানে গিয়ে থাকতে চাইলে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন। আমি ঠিকানা দিয়ে দেব। আপাতত দার্জিলিং টিয়ের মজা নি। খানিক পর মিরিক যাবো...

©ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ঘুরু ঘুরু ডায়েরি- Ghuru Ghuru Diary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Travel Agency?

Share