05/02/2023
" স্মারকলিপি প্রতিবেদন "
মাননীয় জাতিসংঘের মহাসচিব,
সম্মানিত অ্যান্টোনিও গুতেরেস.
ইউনাইটেড নেশন, হেডকোয়ার্টার, ইউএসএ ।
বিষয়ঃ- পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নকরণ করার বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। এর সাথে সাথে তিন পার্বত্য জেলা থেকে সেনাবাহিনীর সেনাশাসন বন্ধ করা,1979 সাল হইতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী পূর্ণবাসন করা বাঙালির সেটলার ও অস্থায়ী সোনাবাহিনীর সেনাছাউনি তিন পার্বত্য জেলা থেকে সম্মানজনক প্রত্যাবাসন বা প্রত্যাহার করে নিয়ে বাংলাদেশের সমতলে জেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করার জোর দাবি দাবী জানাচ্ছি। যদি বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না করে থাকে। পাহাড়ের জুম্মজাতি আদিবাসী সর্বসাধারণজনগণ তিন পার্বত্য জেলাকে বিভক্ত রেখে আলাদা জুম্মল্যান্ড নামে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র ঘোষণা দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। এর জন্য দায়ী থাকবে বাংলাদেশ সরকার। তাই সম্মানিত মহাসচিবকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী জনগণের উপর সদয় হয়ে, পাহাড়ের জুম্মজাতি আদিবাসী জনগণের বহুদিনের প্রত্যাশা জুম্মল্যান্ড নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার যথাযথ সাহায্য সহযোগিতার আবেদন জানাচ্ছি।
মাধ্যমঃ মাননীয় সম্মানিত জাতিসংঘের মহাসচিবের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপর স্মারকলিপি পেশ করার আবেদন করার বার্তাটি জানিয়ে দেওয়া হোক।
সম্মানিত জাতিসংঘের মহাসচিবঃ-
সম্মানিত,
জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্দেশ্য করে সদয় বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি যে, আমরা তিন পার্বত্য জেলার নিরীহ পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী র্সবসাধারণ জনগণ। তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী জনগণ প্রায় 15 লাখের উপর । তিন পার্বত্য জেলার জুম্ম পাহাড়ি আদিবাসী জনগণ মোট দশটি ভাষায় কথা বলে, 24টি জুম্ম আদিবাসী জাতিসত্ত্বা। আমরা জাতিতে হলাম " পাহাড়ির জুম্মজাতি আদিবাসী" আর আমাদের জাতীয়তাবাদ হচ্ছে " জুম্মজাতীয়তাবাদ "।
জুম্ম জাতির মধ্যে মোট 24টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা আছে , সেই জাতিগুলো হচ্ছে-
1. চাকমা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
2. মারমা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
3. ত্রিপুরা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
4. তংচঙ্গা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
5. রাখাইন আদিবাসী জুম্ম জাতি।
6. বম আদিবাসী জুম্ম জাতি।
7. খিয়াং আদিবাসী জুম্ম জাতি।
8. লুসাই আদিবাসী জুম্ম জাতি।
9. পাংকো আদিবাসী জুম্ম জাতি।
10.ম্রো আদিবাসী জুম্ম জাতি।
11. সাঁওতাল আদিবাসী জুম্ম জাতি।
12. গারো আদিবাসী জুম্ম জাতি।
13. মনিপুরী আদিবাসী জুম্ম জাতি।
14. অহমিয়া আদিবাসী জুম্ম জাতি
15.খুমি আদিবাসী জুম্ম জাতির।
16.চাক আদিবাসী জুম্ম জাতি।
17.হাজং আদিবাসী জুম্ম জাতি।
18.ওরাও আদিবাসী জুম্ম জাতি।
19.কোচ আদিবাসী জুম্ম জাতি।
20. রাজবংশী আদিবাসী জুম্ম জাতি।
21.পাহাড়িয়া আদিবাসী জুম্ম জাতি।
22.সেন্দুজ আদিবাসী জুম্ম জাতি।
23.মুন্ডা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
24.ঊড়িষ্যা আদিবাসী জুম্ম জাতি।
এই 24টি আদিবাসী জুম্মজাতি, জুম্ম জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশ সরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদ জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশি হতে পারি। কিন্তু আমরা বাঙালি নয়। বাংলাদেশের বাঙালি ছাড়াও এদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা 52টি জাতি আদিবাসী বসবাস করে আসছে।বাংলাদেশের লোক বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশের বাঙালি ছাড়াও 52 টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে, সমগ্র জাতিসত্তাসহ বাংলাদেশ সরকার তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের নিরীহ জুম্ম জনসাধারণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার বলতে শুরু করেছে, তোমরা সবাই বাঙালি হয়ে যাও, তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জনসাধারণ সবাই বাঙ্গালী হয়ে যাও।
বাংলাদেশের বাঙালিরা, গায়ের জোর দেখিয়ে, গলাবাজি আওয়াজ তোলে, জাত্যভিমান দেখিয়ে, দাম্ভিকতা প্রয়োগ করে, অহংকার মত্ত হয়ে, তারা এমন ও ভুলে গেছে যে, পাকিস্তানরা 1971 সালের আগে এদেশের নিরীহ বাঙালি জনগণের উপর, হত্যা, নির্যাতন, নিপীরন, দমন-পীড়ন, নারীধর্ষণ, নারীহত্যা, শিশু ধর্ষণ, শিশুহত্যা, নির্মমআচরণ, নির্দয়ব্যবহার, বাংলাদেশের জনগণের উপর উর্দু ভাষা জোর করে চাপিয়ে দিয়েছেল পাকিস্তান সরকার। তখনকার পাকিস্তানীরা জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে থাকে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন বাংলার দামাল ছেলেরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবিতে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করে কত যে হাজার হাজার ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে বাঙালী তাদের হিসাব শেষ হতে না হতেই। বাংলা রাষ্ট্রভাষা দাবিটি 52ভাষা আন্দোলনের সময় এদেশের তখনকার বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের এই নির্মম নির্দয় জঘন্য ভাষাগত পার্থক্য চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকে কঠোর হস্তে দমন করেছিলেন বাংলাদেশের বাংলার দামাল ছেলেরা। সেইদিন আর বেশি দূরে নয়, এখন বাংলাদেশের বাঙালিরা তিন পার্বত্য জেলার জুম্ম পাহাড়ি জনগণের উপর একই পন্থা অবলম্বন প্রয়োগ গ্রহণ করে নিরীহ পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জনগণের ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা দ্বিগুণ চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচার। আদিবাসী জুম্মজাতির ওপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচার পাকিস্তানি অত্যাচার চেয়ে বেশি দ্বিগুণ হার মানিয়েছে অমানবিকতার বাঙালিদের জঘন্য পাশবিক নির্যাতনের অগ্নি লীলা শিখার কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যাচারের কাছে ।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের নিরীহ জুম্ম জনসাধারণ তারা জুম্ম জাতির আদিবাসীরা চিন্তা-চেতনায় গভীরভাবে মননে- পালনে- ধারণে- পালন করে আসছে দীর্ঘ 3000 বছর ধরে " জুম্ম জাতীয়তাবাদ আদিবাসী" হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার পাহাড়ের জুম্ম জাতীয়তাবাদ চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য। বাংলাদেশ সরকার 1979 সাল থেকে অবৈধভাবে বাঙালি সেটেলার পূর্ণবাসন করে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায় বাংলাদেশের সমতল জেলা থেকে বাঙালী সেটলার এই যাবৎ প্রায় মোট 9 লাখ বাঙালি সেটেলার পূর্ণবাসন বসতি ব্যবস্থা করেছিল।
যে কোন জাতিকে ধ্বংস করার পন্থা হচ্ছে- সেই জাতিকে জাতিগত সাম্প্রদায়িক সহিংস দাঙ্গা বাঙালীজাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করে উস্কে দিয়ে। তাই বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা সহিংস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জনগণকে বাঙ্গালীজাতি দ্বারা ধ্বংস করে চলেছে। এর সাথে জুম্মজাতি আদিবাসী বৌদ্ধধর্মাবলম্বীকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে নেওয়ার জোর জবরদস্তি মূলকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জুম্মজাতি অধিবাসী জাতিকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে দেওয়া হচ্ছে।
এইসব বাঙালি জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতার সহিংস থেকে উত্তরণ ও রক্ষা পাওয়ার জন্য, তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীরা একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছিলেন। সেই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলটির নাম হচ্ছে জেএসএস। জেএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সম্মানিত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা। জেএসএস সৃষ্টি হয়েছিল 1973 সালের। জুম্ম জাতির আন্দোলনকে ন্যাসৎ বা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, পাহাড়ের আদিবাসী জুম্মদের মধ্যে জুম্মদের বিপুল পরিমাণে টাকা-পয়সা লোভ লালসা দেখিয়ে, রীতিমত কোটি টাকার যোগান বরাদ্দ দিয়ে বিপথগামী আদিবাসী জুম্মজাতি স্ববিরোধী রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এতে বাংলাদেশ সরকার জুম্ম ভাইকে দিয়ে জুম্মকে হত্যা করাচ্ছে। জুম্ম বিরোধী আঞ্চলিক দল সৃষ্টি করে রীতিমতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেকিং স্কট সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। যাহাতে নিরহ জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক অধিকার দমন করা যায়, দমিয়ে রাখা যায়।
ব্রিটিশ শাসনের সময় তিনটি জেলা পার্বত্য হিল ট্র্যাক্ট মেনুয়েল-1900 আইন নামে পরিচিত।
তিনটি পার্বত্য হিলট্র্যাক্ট জেলাগুলো হচ্ছে-
1.জেলা- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।
2.জেলা- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
3.জেলা-বান্দরবান পার্বত্য জেলা। এই তিনটির জেলার মোট আয়তন হচ্ছে 13055 বর্গমাইল।
বাংলাদেশের মোট আয়তনের দশ ভাগের একাংশ। তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের জুম্ম জনগোষ্ঠী দীর্ঘ 3000 বছর পূর্বে বসবাস করে আসছে এই তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জায়গার নাম ধারী হিসেবে। এই তিন পার্বত্য জেলায় একসময় ব্রিটিশ সরকার শাসন করেছিলেন, ব্রিটিশরা তিন পার্বত্য জেলারকে আলাদা শাসনব্যবস্থার আইন তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই আইনকে বলা হয় " হিল ট্টাক্ট মেনুয়াল-1900 আইন"।
হিল ট্রাক্টস মেনুয়াল 1900 আইন অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলাকে জুম্ম পাহাড়িদের আলাদা শাসন অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অাইনটি-1900 হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়াল অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার জুম্ম পাহাড়িদের আলাদা শাসন অঞ্চল হিসেবে স্বায়িত্ব শাসন অঞ্চল হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল। ভূমি, জমি-জায়গার, পাহাড়ের টিলা, মালিকানাধীন অধিকার দেওয়া হয়েছিল পাহাড়ীদের জুম্মজাতি আদিবাসীদের। কিন্তু ব্রিটিশ ভারতবর্ষ 1947 সালের দেশভাগের বিভক্ত ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার চলে যাওয়ার পর, তিন পার্বত্য জেলার ভারতের অংশের সাথে জুড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই অঞ্চল পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জুম্মজাতির অধিবাসীদের এক নির্মম কালো অধ্যায় শাসনকাল চলে আসে।
এরপর পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই এদেশের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ের নিরীহ জুম্ম আদিবাসী জনগণের উপর এক স্টিমরোলার সেনাবাহিনীর সেনাশাসন শুরু হয় আজ অবধি পর্যন্ত সেনাবাহিনীর শাসন চলছে ধারাবাহিকতায়। শুরু করা হয় বাঙালি সেটেলার ধারাবাহিক ভাবে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা, বাঙালি সেটলার বসতিস্থাপন। বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে জুম্ম আদিবাসী জনগণের উপর চড়াও ভাবে 23 বার গোপন গণহত্যা সংঘটিত করেছে, এতে এখনও প্রতিনিয়ত হত্যা, অপহরণ, গুম, মুক্তিপণ, মুক্তিপণ দাবি, মুক্তিপণ আদায়, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, দমন-পীড়ন, নারীধর্ষণ, শিশুধর্ষণ, নারীহত্যা, নারী শারীরিক ভাবে নির্যাতন, নারি মানসিকভাবে নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যা,।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটেলাররা পাহাড়ের জুম্ম জনগণের উপর 23 বার গোপন গণহত্যা চালিয়েছিলঃ-
নিরীহ পাহাড়ের জুম্ম জনগণের উপর গণহত্যার তারিখ ও সাল গুলো উল্লেখ করা হলোঃ- ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে-
সিরিয়ালঃ- তালিকাঃ- জুম্ম গণহত্যা তারিখ ও সালঃ- উল্লেখ করা হলোঃ-
১. শুভলং পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- রাঙ্গামাটি জেলায়, ৭ জানুয়ারি 1979, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনীর মিলিয়ে ১৬ জন জুম্ম পাহাড়ি আদিবাসীকে নির্মমভাবে গণহত্যা করেছিল, আহত হয়েছিল 12 জন, 300 এর অধিক বাড়িঘর আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, সব বাঙ্গালীরা লুটপাট, ডাকাত, লুটপাট, করে এনেছিল। পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী 5000 এর অধিক ভারতে মিজোরামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।
২. গুইমারা পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলায়, 27 এপ্রিল 1979 স্থানের নাম গুইমারা, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে পাহাড়ি জুম্ম গণহত্যা চালিয়েছিল, এই সময় নির্মমভাবে 27 জন জুম্ম পাহাড়িকে হত্যা করা হয়, জুম্ম পাহাড়ি আহত হয়েছিল 31 জন, সেটলার বাঙালি ও সেনাবাহিনীর মিলিয়ে তিনটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছিল, ঘরবাড়ি থেকে টাকা পয়সা, স্বর্ণ-রুপা, ধন সম্পদ, লুটপাঠ ও ডাকাত করে এনেছিল। পাহাড়ের জুম্ম 400 জন ভারতের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
৩. কানুনগোপাড়া পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলায়, 22 এপ্রিল 1979, বাঙালির সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে নিরহ পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী উপর ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। 120 টি বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল, ওই এলাকায় বাঙালির সেটলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে বাড়িঘর লুটপাট, টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, স্বর্ণ-রুপা, লুটপাট ও ডাকাত করে এনেছিল। 2500 পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী ভারতের ত্রিপুরায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
৪. রামগড় পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলায়, 7ই নভেম্বর 1979, বাঙালি সেটলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, এতে প্রায় বন্দুকের বেয়নেট মাথা ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছিল। পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীর ১৮ জনকে গুরুতর অবস্থায় আহত করা হয়েছিল, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে 4 জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, এতে আদিবাসী জুম্ম পাহাড়ি ২০০০ জন অধিক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
৫. কাউখালি পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- রাঙ্গামাটি জেলায় কাউখালী ইউনিয়ন কমলপতি গ্রামে বাঙালিসেটলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী উপর গণহত্যা চালিয়েছিল 25 শে মার্চ 1980 সালে, তখনকার কর্তব্যরত জোন কমান্ডার পলিসি প্রয়োগ করে জুম্ম আদিবাসী পাহাড়িদেরকে শান্তির আলোচনা মিটিং এর নাম দোহাই দিয়ে জোন এলাকায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারপর নারী-পুরুষ প্রায়ই 330 জন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে গিয়েছিলেন, তখন পুরুষদেরকে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাঁড় করে সোজা দাঁড়িয়ে রেখেছিলেন, এবং নারীদেরকে আলাদা জায়গায় দাঁড়িয়ে রেখেছিলেন। তখন 300 জন পুরুষের উপর নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এবং 30 জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়। বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী বাড়িঘর লুটপাট করে টাকা-পয়সা ধন-দৌলত স্বর্ণ-রুপা, এরপর বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়, বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় পরিবর্তে এখন অনেকগুলো মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। বাঙালি ও সেনাবাহিনীদের অত্যাচারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে 1000 জুম্ম পাহাড়ের আদিবাসী শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ
৬. তবলছড়ি মাটিরাঙ্গা পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা থানায় তখন 27 শে মে 1981 সাল, সেনাবাহিনী ও বাঙালির সেটেলার মিলিয়ে 146 জন নিরীহ পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী এর উপর নির্মমভাবে গণহত্যা করা হয়েছিল। নির্মমভাবে দা বতি দিয়ে আঘাত করতে থাকে এতে 58 জন আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখনো পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী 18 জন নিখোঁজ অবস্থায় কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। ঐদিন ওই সময়ে বাঙালি সেটলার সেনাবাহিনী মিলিয়ে ঘরবাড়ি উপর অতর্কিত হামলা চালায়, হাজার হাজার পাহাড়ি ঘর বাড়ির উপর লুটপাট ডাকাতি করে, টাকা পয়সা, স্বর্ণ- রুপা লুটপাত করেছিল, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের 18000 জুম্ম জাতির আদিবাসী ভারতের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
৭. বানরাইবারী বেলতলী বেলছড়ি পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায়, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনী মিলিয়ে অতর্কিতে পাহাড়ে জুম্ম আদিবাসী উপর নির্মম ভাবে গণহত্যা চালিয়ে 200 জন পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তখনকার সময়ে 40 জন নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের 2000 জন পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওই এলাকায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনীরা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার আগে স্বর্ণ-রুপা, টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত সবকিছু লুটপাট ও ডাকাতি করে নিয়ে আসা হয়।
৮. তেপালং- আসালং- গৌরাঙ্গ পাড়া - তবলছড়ি- বরনাল- পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গণহত্যাঃ- খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা থানায় বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনীর মিলিয়ে 18 সেপ্টেম্বর 1981 সালে, বাঙালি সেটেলার ও সেনাবাহিনীর মিলিয়ে নিরীহ পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জনগণের ওপর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা যজ্ঞ চালিয়েছিলেন, এই সময়ে নিরীহ পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী উপর 1000 জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘর বাড়ির উপর অত্যাচার করে টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, ধন-দৌলত লুটপাট ও ডাকাতি করে নেই। তারপরে 35 টি বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছিল। ঐসময় অগণিত পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের অগণিত পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জগনগ আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
৯. গোলকপতিমা ছড়া পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গণহত্যা:-মাইচ্যেছড়া:
তারাবনছড়ি গনহত্যাঃ ১৯৮৩ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ জুলাই মাসের ১১, ২৬ ও ২৭ তারিখ এবং আগষ্ট মাসের ৯, ১০ ,১১ তারিখ সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙ্গালীরা একত্রে গোলকপতিমাছড়া- মাইচ্যেছড়া – তারাবনছড়িতে পাহাড়ি-জুম্মদের গ্রামগুলোতে অগ্নি সংযোগ লুটতরাজ হত্যা ধর্ষণ , নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো। এই গনহত্যায় ৮০০ জুম্ম নিহত হয়েছিল। নিহতদের সিংহ ভাগ বৃদ্ধ, নারী ও শিশু। গনহত্যার পর সরকার সেখানে বাঙ্গালী বসতি স্থাপন করে।
(১০)ভুষণছড়া পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ ৩১ মে ১৯৮৪ সালে ভুষণছড়া গনহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। প্রথমে শান্তিবাহীনির সেনা ক্যাম্প আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বাঙালি সেনা সেটেলার হায়েনার দল ৩০৫ সেনা ব্রিগেড, ২৬ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বি ডি আরের ১৭ নং ব্যাটালিয়ন মিলে নিরস্ত্র পাহাড়ি গ্রাম ( হাটবাড়িয়া, সুগুরী পাড়া, তেরেঙ্গা ঘাট, ভূষণছড়া, গোরস্তান, ভূষণবাঘ)৬ টি আদিবাসী গ্রাম জালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। ৪০০ পাহাড়ি নিহত হয়েছিলো যার উল্লেখ যোগ্যা সংখ্যক ছিলো শিশু ও নারী। অনেক পাহাড়ি নারী সেনা দ্বারা গন ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছিলো। আর ৭০০০ জুম্ম আদিবাসী পাহাড়ি শরনার্থী হিসেবে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।
(১১)পানছড়ি পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ সেই দিন ছিল ১ মে ১৯৮৬ সাল এই গনহত্যা সংঘটিত হয় গোলক পদিমা ছড়া,কালানাল ছড়া,করমাপাড়া,শান্তিপুর,মির্জাবিল,হেদারাছড়া,পুঁজ গাঙ, হাতিমুক্তি পাড়া,মাতেশর পাড়া,নাবিদাপাড়া,ও দেওয়ান বাজারে গনহত্যা চালিয়েছিল। ২৯শে এপ্রিল শান্তিবাহীনি বি,ডি,আর ক্যাম্প আক্রমণ করেছিলো। তার ফলশ্রুতিতে সেনা আর সেটেলার বাঙ্গালীরা যৌথভাবে সেখানকার পাহাড়ি গ্রাম গুলোর মানুষজন কে ডেকে একটা মাঠে জড়ো করে নির্মমভাবে জবাই ও গুলি আর হত্যা। এতে ১০০ জনকে হত্যা করা হয় ও ২০০০০ জুম্ম পাহাড়ের আদিবাসী হাজারের অধিক ভারতের এিপুরা রাজ্যের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে।
(১২)মাটিরাঙা পাহাড়ের জন্য আদিবাসী গনহত্যাঃ
পানছড়ির ঠিক একদিন পর ২রা মে ১৯৮৬ সালে মাটিরাঙা তে পাহাড়ি রিফিউজি যারা ভারতে পালাচ্ছিলো, সেই নিরস্ত্র দেশত্যাগী মানুষের উপর এলোপাথারি গুলি চালিয়েছিলো বর্বর নরপশু সেনাবাহিনীরা এতে ৭০ জন পাহাড়ি বৃদ্ধ,, শিশু, নারী, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো।
(১৩)কুমিল্লাটিলা-তাইন্দং, তবলছড়ি জুম্ম পাহাড়ি আদিবাসী গনহত্যাঃ- ১৮ মে ১৯৮৬ তে, আগের গনহত্যাগুলির ক্ষত না শুকাতেই মাটিরাঙা থেকে প্রায় ২০০ জন ত্রিপুরা নারী পুরুষের দল যারা বাঁচার আশায় শিলছড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের দিকে পার হচ্ছিলো কিন্তু তাইদং , কুমিল্লাটিলা গ্রামের মাঝামাঝি এক সরু পাহাড়ি পথ পাড়ি দেবার সময় বাংলাদেশ বি ডি আর এর ৩১ ব্যাটালিয়নের নর পশু জোয়ানরা তাদের উপর হামলা চালায় যার ফলে প্রায় ১৬০ জনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় , এমনকি বর্বর পশু জোয়ান বাহীনির গুলির হাত থেকে বেচে যাওয়া আহত দের কে সেটেলার বাঙাল এনে বেয়নেট খুচিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঐ ঘটনার বেচে যাওয়া অল্প কিছু সাক্ষী আজো আছে।
(১৪)দিঘীনালা পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যা ঃ - খাগড়াছড়ি দিঘীনালা মেরুং -চংড়াছড়িতে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৬ সালে নিরীহ আদিবাসী পাহাড়ি মানুষ জীবনের ভয়ে ভারতে পালানোর সময় সেনাবাহিনীরা পেছন থেকে গুলি করে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে ৩০ জনকে।
(১৫)হিরাচর, সারোয়াতলী খাগড়াছড়ি,পাবলাখালী পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ
৮, ৯, ১০ আগস্ট ১৯৮৮ সালে হিরাচর, সারোয়াতলী, খাগড়াছড়ি, পাবলাখালীতে ১০০ পাহাড়ি জুম্ম কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। অনেককে গুম করা হয়।গণধর্ষণ করা হয় পাহাড়ি নারীদেরকে।
(১৬)লংগদু পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ
৪ঠা মে, ১৯৮৯ সালে লংগদু তে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ অজ্ঞাত নামা লোকের হাতে খুন হন। এর দায় চাপানো হয় শান্তিবাহীনির কাঁধে। এর জের ধরে সেনাবাহিনী সৃষ্ট ভি,ডি,পি ও সেটেলারদের ও সেনাবাহিনী একত্রে দলবেঁধে পাহাড়ী গ্রামে উপর হামলা করে। এতে নিহত হয় ৪০ জন আদীবাসি নারী পুরুষ শিশু। তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয়নি। পুড়িয়ে দেয়া হয় বৌদ্ধ মন্দির। এমন কি তৎকালীন সাবেক চেয়ারম্যান অনিল বিকাশ চাকমার স্ত্রী , সন্তান ও নাতি কে পর্যন্ত নির্মম হত্যা যজ্ঞের শিকার হতে হয়। সেটেলার হায়েনা রা আজো অনিল বিকাশ বাবুর সমস্ত জমি দখল করে রেখেছে।
(১৭)মাল্যে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ
২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তে মাল্য গনহত্যা সংঘটিত হয়। ঐ দিন মারিস্যাতে রাঙ্গামাতটি গামী যাত্রীবাহী লঞ্চে এক বোমা বিস্ফোরনে এক যাত্রী ও চালক নিহত হন। বাংগালী অধ্যুষিত মাল্যেতে লঞ্চটে পৌছা মাত্র সেখানে ঔত পেতে বসে থাকা সশস্র সেটেলারা পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী যাত্রীদের উপর হামলা করে। এটে ৩০ জন জুম্ম নিহত হন যার মধ্যে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এটে অনেক যাত্রী রাংগামাটি হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে এই ঘটনাটি আর্মিদের সাজানো পরিকল্পিত হত্যা কান্ড ঘটনা ঘটায় যাহা পরে গনমাধ্যমে শান্তিবাহিনীর উপর দোষ চাপানো হয়।
(১৮)লোগাং পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ
১০ই এপ্রিল,১৯৯২ সালে লোগাং-এ পাহাড়ির জুম্ম জাতির বিরুদ্ধে নির্মম হত্যা যজ্ঞ চলে। সেই দিন এক পাহাড়ী মহিলা তার গাবাদি পশু চড়াতে গ্রামের অদূরে গিয়েছিলো সেখানে দুই জন সেটেলার বাঙাল দ্বারা সে ধর্ষিত হয়। এতে এক পাহাড়ি যুবক বাধা দিলে সেটেলাররা তাকে সেখানেই হত্যা করে, পরে এই ঘটনা শান্তিবাহীনির উপর চাপানো হয় এর জের ধরে সেনাবাহিনীও বাঙালি-সেটেলার দলবেঁধে ১৫০০ পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামে হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ৪০০ জন পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী কে।এটে ৮০০ পাহাড়ি বাড়ি ঘরে, টাকা পয়সার স্বর্ণ-রুপা ধন-দৌলত লুটপাট ও ডাকাতি করে পরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশের গ্রামগুলো থেকে প্রায় ২০০০ জন পাহাড়িকে শরনার্থী হয়ে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
(১৯) ছোট ডুলু পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যা ঃ- রাঙ্গামাটি কাউখালীতে ছোট ডুলুতে সেনাবাহিনীরা আদিবাসী গনহত্যা সংঘটিত করেছে। ৩০মে ১৯৯২ সালে উক্ত গনহত্যায় ১২ জনকে হত্যা তাদের মধ্যে ৫ জনের লাশ পাওয়া যায়নি।৪০ টি মত ঘরবাড়ি টাকা-পয়সা স্বর্ণ-রুপা ধন দৌলত লুটপাট ও ডাকাতি করে নেই। এরপরে বাড়ীঘরগুলো অগ্নিসংযোগ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় ও ১ টি বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করা হয়।
(২০)নানিয়াচর পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গনহত্যাঃ ১৭ নভেম্বর ১৯৯৩ সালে নানিয়াচর বাজারে আদিবাসিদের শান্তিপুর্ন মিচ্ছিলে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বাঙ্গালি সেটেলারর-সেনাবাহিনীরা নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে হত্যা করে নিরীহ জুম্ম আদিবাসী পাহাড়ীদেরকে। এর নেতৃত্বে ছিলো সেটেলারদের সংগঠন পার্বত্য গনপরিষদ যা নেতৃত্বে ছিলো মোঃ আয়ুব হোসাইন নামক হায়েনা নেতা এবং তৎকালীন বুড়িঘাট ইউ,পি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ। এতে নিহত হয় ২৯ জন জুম্ম নাগরিক আহত হয় শতাধিক। এতে জুম্ম ছাত্ররা যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন সেনা ক্যাম্প হতে জুম্ম ছাত্রদের উপর উন্মুক্ত এলোপাথারি গুলি চালানো হয়।
(২১) তারাবনছড়ি পাহাড়ের জুম্মা আদিবাসী গনহত্যা ঃ তখন ছিল ১৯৮৩ সালে ২৬ জুন তারাবনছড়িতে আদিবাসী গনহত্যার সংঘটিত হয়। উক্ত গনহত্যায় ৮৭জনকে নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে হত্যা ৪জন নারীকে ধর্ষণ ও অসংখ্যা বাড়ি ঘর লুটপাট অগ্নি সংযোগ করা হয়।
এছাড়াও, ১৯৯৫ সালে মার্চে বান্দরবান সদর, ২০০১ সালের আগষ্টে রামগড়, ২০০৩ সালের আগষ্টে মহালছড়ি, ২০০৬ সালে এপ্রিলে মাইসছড়িতে, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঘাইহাটে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঘাইহাট-খাগড়ছড়িতে এবং সর্বশেষ গুইমারা-মাটিরাঙ্গা-জালিয়াপাড়ায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এভাবে একের পর এক গনহত্যায় রক্তে রঞ্জিত হয়েছে পাহাড়ী মানুষের পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেই গনহত্যারগুলির নিষ্ঠুর বর্বরতা এখনো জুম্মজাতিকে পিছু তাড়া করে বেড়ায়।
এইভাবে নির্বিচারে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা জোরপুর্বক বসতি স্থাপন একদিকে শান্ত পাহাড়কে নরকের দিকে ঠেলে দিয়েছে অন্যদিকে শান্তিপ্রিয় পাহাড়বাসীর জীবনকে করেছে বিপন্ন। এভাবে জুম্মজাতির প্রতি চাপিয়ে দেয়া জাতি হত্যার নীলনকশার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আরেক বার ৯৭ এর আগে ফিরে আসুক। এভাবে আর কত মা,বোন,ধর্ষণ,বাপভাই কে বিনাবিচার হত্যা সহ্য করবো আমরা। তাই পরিশেষে মাননীয় সম্মানিত জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে বলেতে চাই… তিন পার্বত্য জেলায় থেকে সেনাবাহিনী ও বাঙালির সেটলারদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়ে বাংলাদেশের সমতল জেলায় নিয়ে আসা হোক।
আর যদি মাননীয় সম্মানিত জাতিসংঘের মহাসচিব এই সমস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা ঘটনার সমাধান দিতে যদি ব্যর্থ হয়, তিন পার্বত্য জেলা থেকে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী গণ পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের আনাচে-কানাচে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে। আর যারা তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীরা পালিয়ে যেতে চাই না, তারা বাঙ্গালীদের সাথে সম্মুখী বা মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ পাহাড়ি জুম্ম আদিবাসী ও বাঙালি সেটেলার মারা যেতে পারে।
জুম্ম পাহাড়ি আদিবাসীদের ভূমি, জমি, পাহাড়ের টিলা, এইগুলো বাঙালি সেটলার ও সেনাবাহিনি মিলিয়ে জোর-জবরদস্তি করে জুম্ম পাহাড়ে আদিবাসী জনগণের ভূমি, জমি, পাহাড়ের টিলা, গুলো জোরপূর্বক ভাবে ভূমি বেদখল, জমি বেদখল, পাহাড়ের টিলা বেদখল করে ছিনিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্ত। শেষমেষ বাংলাদেশ সরকার জুম্ম পাহাড়ি আদিবাসীদের কে আদিবাসী শব্দটিঃ- আদিবাসী নাগরিক হিসেবে অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে ।
বাংলাদেশ সরকার পাহাড়ের নিরীহ জুম্মজাতির আদিবাসীর উপর এমন নিষ্ঠুর শাসনব্যবস্থা, নির্মম অাচারণ, কঠিন অত্যাচার, নিষ্ঠুর ব্যবহার, নিষ্ঠুর অত্যাচার, জঘন্য অপরাধ, স্টিমরোলার সেনাবাহিনীর সেনাশাসন চালিয়ে প্রশাসনের দৌরাত্ম্য, বাঙালি প্রশাসনের বিমাতাসুলভ দুর্ব্যবহার, বর্ণবাদেরঅপবাদ, বাঙালীজাতিগত সহিংসতা, পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জনগণের ওপর সেনাবাহিনী অপারেশন উত্তরণ নামে কালো অধ্যায় সেনাশাসন ও শোষণ করে আসছে উপনিবেশিক কায়দায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটলাররা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্ত।
জুম্ম পাহাড়ে আদিবাসী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নাম জএসএস ও বাংলাদেশ সরকার এর মধ্যে একটি পার্বত্য শান্তি চুক্তি দ্বিপাক্ষিকভাবে সই হয়েছিল 2 ডিসেম্বর 1997 সালে।
এই পার্বত্যচুক্তির মধ্যে মোট 72 টি ধারা রয়েছে।
এই পার্বত্য চুক্তিটি ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকার দাবি করে আছে 72 টির ধারার মধ্যে 48 টি ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তারমানে মৌলিক বিষয়ের ধারাগুলো 24 টি ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে । কিন্তু পার্বত্য চুক্তির মধ্যে কোন ধারাই বাংলাদেশ সরকার আদৌতে বাস্তবায়ন করে নাই। বাংলাদেশ সরকার শুধু মুখে বড় বড় বুলি কথা বলে প্রপাগণ্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিন পার্বত্য অঞ্চলে মধ্যে মাত্র সেনাবাহিনীর তিনটি ব্রিগেড অবস্থান করার কথা ছিল।
এই সেনাবাহিনীর তিনটি ব্রিগেড গুলো হলঃ-
১. দীঘিনালা সেনাবাহিনীর ব্রিগেড,
২. রুমা সেনাবাহিনীর ব্রিগেড,
৩.আলীকদম সেনাবাহিনী ব্রিগেড।
কিন্তু তার অবস্থার বিপরীতে বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় মোট পাঁচটি সেনাবাহিনী ব্রিগেড অবস্থান করে যাচ্ছে সেইগুলো হচ্ছে ৪.গুইমারা সেনাবাহিনী ব্রিগেড.। ৫. রাঙ্গামাটি ঘাগড়া সোনাবাহিনী ব্রিগেড।
পাঁচটি সোনাবাহিনী ব্রিগেড এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ সেনাবাহিনী অবস্থান করে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায়। এছাড়া রয়েছে, 3টি বিজিবি প্লাটুন অর্থাৎ বাংলাদেশ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। এবং তিন পার্বত্য জেলার 24টি থানায বিশাল পরিমাণের পুলিশ বাহিনী অবস্থান করে যাচ্ছে। এর পরবর্তীতে শোনা যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায় Rab বাহিনীর সেনাছাউনি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাহলে মনে করেন তিন পার্বত্য জেলা পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী প্রতি একজনের পিছনে পাঁচ জন সেনাবাহিনী লেলিয়া থাকার প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশের এমন নিষ্ঠুর সেনাবাহিনীর শাসন, শাসনের উত্তরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার, ও মুক্ত হওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী জনগণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে বরাবর একটি শান্তি প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত করার জন্য স্মারকলিপি পেশ আবেদন জানিয়ে যাচ্ছি, এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে বরাবর পেশ করা হইল।
মাননীয় জাতিসংঘের মহাসচিব এর কাছে যদি এই প্রতিবেদনটি পৌঁছে যায়, অনুগ্রহপূর্বক দয়া করিয়া মাননীয় মহাসচিব আপনি স্বীকারোক্তিমূলক স্বীকার পত্র প্রদান দাখিল করিবেন।
সুপারিশঃ- তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটেলার অবস্থান করতে পারবে না??? যদি তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালী সেটলার ও সেনাবাহিনীর অবস্থান করে থাকে তাহলে পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসীরা অন্যত্র মাইগ্রেশন করবেন ??? এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
কারণঃ- পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তির শর্তের ও ধারার মোতাবেক দ্বিপাক্ষিকভাবে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তির আলোকে পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছিল, তার বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়ে আন্তর্জাতিক ইউনেস্কো সেরেস শান্তির পদক হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পার্বত্য চুক্তিকে দেখিয়ে এইভাবে ১৩টি আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্তির আলোকে প্রেক্ষিতে 13 টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
তাই বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।
এই স্মারকলিপি দেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সকলের মতামত গ্রহন করার জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের নিরীহ জুম্মআদিবাসী জনগণের পক্ষে।
কার্টেসিঃ- তুষার কান্তি চাকমা।
সেক্