02/03/2024
জাপানিরা সবচে পছন্দ করে যে ভাত খায় সেটা স্টিকি। মানে ভাতের দানা একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে। আমার ধারণা ছিল স্টিকি ভাত কাঠি দিয়ে সহজে খাওয়া যায় বলেই জাপানিরা এটা এত পছন্দ করে।
আমার সাত বছরের জাপান জীবনের শুরুর দিকে আমি এই ভাত খেতে একদমই পছন্দ করতাম না। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো জাপানের বাজারে জাপানি কৃষকদের উৎপাদিত এই বিশেষ ভাতের চালের দামই সবচেয়ে বেশি।
বাজার থেকে কয়েকবার বিভিন্ন ধরণের চাল কেনার পর বুঝলাম এই চাল যদি জাপানিরা নিজেরা উৎপাদন না করে আশেপাশের কোন দেশ থেকে আমদানি করতো তাহলে এর দাম বেশ কম পড়তো। আমি কৌতুহলী হয়ে আমার সুপারভাইজার প্রফেসর কামিজিমাকে একবার জিজ্ঞেসই করে ফেললাম
আমিঃ আচ্ছা প্রফেসর, তোমরা এই চাল বিদেশ থেকে আমদানি করো না কেন? আমদানি করলে তো দাম অনেক কম পড়তো!
কামিজিমাঃ তা হয়তো পড়তো!
আমিঃ তাহলে!
কামিজিমাঃ সরকার ইচ্ছে করেই কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদন খরচের অনেক বেশি দামে এই চাল কেনে।
আমিঃ কেন?
কামিজিমাঃ কৃষকদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
আমিঃ মানে?
কামিজিমাঃ কৃষক যদি ভালো দাম না পায় তাহলে কি ওরা আর কৃষিকাজ করবে? পেশা বদলে ফেলবে না!
আমিঃ তাই বলে সরকার এত বেশি দামে চাল কিনবে কৃষকদের কাছ থেকে?
কামিজিমাঃ শোনো, আমরা আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা ভুলিনি। জাপান একটা দ্বীপরাষ্ট্র। ঐরকম একটা যুদ্ধ যদি আবার কখনো লাগে আর শত্রুরা যদি আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে! তখন কী হবে ভেবেছ?
আমিঃ বুঝলাম না!
কামিজিমাঃ বাইরে থেকে কোন খাবার জাপানে আসতে পারবে? আমরা কি তখন এই ধরো টয়োটা গাড়ি খাব? কৃষক যদি না বেঁচে থাকে তাহলে ঐসময় আমরা বাঁচব?
আমি অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম কামিজিমার কথা শুনে।
আমরা কী অবলীলায়ই না আমাদের কৃষকদেরকে মেরে ফেলার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করছি!
সংগৃহীত