04/02/2025
আমাদের পেইজের একজন সন্মানিত ফলোয়ার তার ইউএস ভিসা পাবার এক্সপেরিয়েন্স আমার সাথে শেয়ার করেছেন। তার ইউএস ভিসা পাবার এক্সপেরিয়েন্স ইনফরমেটিভ মনে হয়েছে আমার কাছে তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
ইউএস ভিসা রিলেটেড যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে এই পোস্টে করতে পারেন।
তাদের ট্যাগ করে দিব এতে পেইজের ফলোয়ার ফ্রী অফ কস্টে এক্সপার্টদের অপিনিয়ন জানতে পারবে।
------------------------------
আস সালামু আলাইকুম এভ্রিওয়ান। গত ৩০ শে জানুয়ারি আমার ইউএস B1/B2 ভিসা অ্যাপ্রুভ হয়। তো আজকে চলে এলাম আপনাদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে।
আমি আমার DS160 ফর্ম প্রথম সাবমিট করি গত এপ্রিল ২০২৪ এ এবং ইন্টারভিউ ডেট পাই ৩০শে জানুয়ারি ২০২৫ এ।
মুলতঃ আমি আবেদন শুরু করি সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর একটা ইভেন্ট টার্গেট করে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও উক্ত সময়ে ইন্টারভিউ ডেট ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হই। ইমার্জেন্সি আবেদন করি, কিন্তু সেটা অ্যাপ্রুভ হয়না। অতঃপর জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
বাকি সময়টুকুতে বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, ফেসবুক পোস্ট এবং ইউটিউব ভিডিও দেখতে থাকি। কিন্তু যতো দেখি ততোই কনফিউজড হতে থাকি এবং এক পর্যায়ে বাড়তি ঘাটাঘাটি এক প্রকার বন্ধই করে দেই।
এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ এ DS160 ফর্মের ব্যাপারে নতুন নির্দেশনা জারি করে ইউএস এম্বাসি।
সেগুলো হচ্ছে ইন্টারভিউ এর দিন ভ্যালিড DS160 কনফার্মেশন নাম্বার না থাকলে এবং ইন্টারভিউ ডেটের ৭ দিনের মধ্যে ফর্ম আপডেট করলে ইন্টারভিউ বাতিল বলে গৃহীত হবে।
তখন কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও পুনরায় দেখি।
একজন বিশিষ্ট ইউটিউবার, আপনারা অনেকেই তাকে চিনেন হয়তো, ঐযে সাবেক বিশেষ অফিসার!
তিনি তো এটার ব্যাখ্যা নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়ে ফেললেন যে ভ্যালিড DS160 ফর্ম মানে যে ফর্ম নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট সাবমিট করা হয়েছে ওটা ব্যতিত অন্য যেকোন ফর্ম নাম্বার থাকলে সেটা ইনভ্যালিড।
আমি তো এবারে মহা কনফিউজড হয়ে গেলাম কারন ফর্ম তো একবার সাবমিট করলে সেটা আর এডিট করা যায়না, এডিটের ক্ষেত্রে নতুন ফর্ম ফিলাপ করতে হয়।
এদিকে আমি তো প্রায় ৮ মাস আগে প্রথম ফর্ম সাবমিট করেছি এবং ভ্রমনের প্ল্যান সহ অনেক তথ্য পরিবর্তিত হয়ে গেছে এতোদিনে। তাহলে কি করা যায়?
এদিক-ওদিক ভেবে ফিডব্যাক সেকশন থেকে বার্তা পাঠাইলাম যে আমি এতোদিন আগে ফর্ম সাবমিট করেছি, এখন তো আমার অনেক ডাটা পরিবর্তিত হতে গেছে ওই সময়ের থেকে।
এখন আমার ডাটা আপডেটের জন্য কি করতে পারি? আমার ফর্মটা আনলক করে দেয়া সম্ভব কিনা যাতে আমি এটাকে আপডেট করতে পারি।
উত্তরে কনসুলার সেকশন থেকে জানানো হলো যে ফর্ম আনলক সম্ভব নয়। তথ্য আপডেট প্রয়োজন হলে আমি যেন নতুন আরেকটা ফর্ম পুরন করে এরপর সেটার নাম্বার দিয়ে CGI প্রোফাইল আপডেট করি এবং এপয়েনমেন্ট লেটার পুনরায় ডাউনলোড করে সেটা নিয়ে ইন্টারভিউতে আসি। আর এটি যেন কোনোভাবেই ইন্টারভিউ ডেটের ৭ দিনের মধ্যে না করি।
যাহোক, এটাই করলাম। দিন পেরুতে পেরুতে চলে এলো জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ। বিভিন্ন ভিডিও ও ফেসবুক পোস্ট মারফত জানতে পারছিলাম শুধু ভিসা রিফিউজের খবর। দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলো।
আরেকজন ইউটিউবার, তিনি তার এক ক্লায়েন্টের সাক্ষাতকার নিয়ে ভিডিও আপলোড করলেন, তাতে তিনি এটাই বুঝালেন যে ট্রাম্প প্রশাসন আসাতে এই গনহারে রিফিউজাল চলছে। এই প্রশাসন থাকা অবস্থায় কাউকেই ভিসা দেয়া হবেনা। অতএব এখন যাদের ইন্টারভিউ শিডিউল চলছে তাদের দুর্ভাগ্য ইত্যাদি।
সব দেখে তো ধরেই নিলাম যে ভিসা ফি টা জলে গেলো সাথে একটা রিফিউজাল হিস্টোরি যোগ হলো। একবার প্ল্যান করলাম যে ইন্টারভিউ ডেট পিছিয়ে দেই। CGI পোর্টালে লগিন করে দেখলাম যে আমার ইন্টারভিউ শিডিউল আর পেছানোর সুযোগ নেই। পরক্ষনে আবার ভাবলাম যে তাহলে কি ইন্টারভিউ বাদ দেব নাকি।
ভাই-ব্রাদারদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে যা থাকে কপালে, ইন্টারভিউ দেবই। ভিসা দিলে দিবে না দিলে নাই। দিলে তালগাছ, না দিলে চুল (হিন্দিতে পড়ুন) গাছ।
আমার ইন্টারভিউ ছিলো দুপুর ১ টায়। DS160 কনফার্মেশন, এপয়েনমেন্ট লেটার, ইভেন্টের ইনভাইটেশন লেটার, ট্যাক্স সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে চলে গেলাম সোয়া ১২ টার মধ্যে। সেখানে পৌছে দেখি সিকিউরিটি গার্ড ডাকাডাকি করছে যে যাদের ১ টায় ইন্টারভিউ, তারা দ্রুত গেটে চলে আসুন।
চলে গেলাম, গেট থেকে এপয়েনমেন্ট স্ক্যান করে পাসপোর্টের পেছনে ট্যাগ লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলাম।
এরপর ১ নাম্বার কাউন্টার থেকে ডকুমেন্ট চেক করে কিছুক্ষন বাইরে বসিয়ে রাখলো সিকিউরিটি গার্ড, বললো যে ফিঙ্গার দেবার জন্য ডাকবে, ডাকার আগ পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করতে। কিছুক্ষন পরে আরো কয়েকজন এসে জুটলো আমার পাশেই।
তত্মধ্যে এক ভদ্রলোক, তিনি অনেক দেশ ঘুরেছেন, ইউকেতে ছিলেন অনেকদিন। কথাবার্তায় বেশ স্মার্ট, আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে আমি কেন যাব।
আমি বললাম যে আগামী মার্চে একটা ইভেন্ট আছে আমি ওখানে যোগ দিতে যাব। উনি বেশ হেসে বললেন যে বাহ, বেশ বাহানা বের করেছেন আমেরিকা যাবার জন্য। ইভেন্ট জুটিয়েছেন দেখছি। আমি চুপ।
পুনরায় বললেন যে ইন্টারভিউ কি বাংলায় দিবেন নাকি ইংরেজিতে। আমি বললাম যে আমি ইংরেজিতেই দেব। উনি বললেন, তাহলে ইংরেজিতে বলুন তো কেন যাবেন আমেরিকাতে।
আমি আমার মতো করেই বললাম যে “I want to go to USA to attend…….” আমি শেষ করার পরে উনি আরেক চোট হাসলেন যে এটা কোন ইংরেজি হলো?
কই পাইছেন এই ইংরেজি। এটা ভুল, ওটা ভুল ইত্যাদি। আপনি ইন্টারভিউ বাংলায় দেন।
আমি বললাম যে আমি যেটুকু পারি আর জানি, আমি সেটুকুই বলবো, তাতে ভিসা হলে হবে আর না হলে না হবে।
তিনি আবার বললেন যে এর আগে কোন কোন দেশ ভ্রমন করেছেন।
আমি বললাম যে ইন্ডিয়া, ইতালি, ফ্রান্স… শেষ করার আগেই পুনরায় প্রশ্ন করলেন যে বলুন তো ফ্রান্সের রঙ কি?
আমি তো অবাক, তাকে উলটো প্রশ্ন করলাম যে ফ্রান্সের আবার কি রঙ?
দেশের কোন রঙ হয় নাকি?
উত্তরে তিনি বললেন যে হয় ভাই হয়, ফ্রান্সের রঙ লাল।
আপনি যে ফ্রান্স ভিজিট করেছেন তার প্রমান কি? অফিসার জিজ্ঞাসা করলে কি উত্তৃর দিবেন হ্যা?
আমি চুপ। ধরেই নিলাম অন্তত উনার ভিসা হবে।
এরপর ফিঙ্গারের জন্য ডাকা হলো। ঐ ভদ্রলোক খুব দ্রুত গিয়ে আমার সামনে দাঁড়ালেন। সম্ভবত ৭ নাম্বার কাউন্টার ছিলো ওটা, এক আমেরিকান ভদ্রমহিলা ফিঙ্গার নিচ্ছিলেন।
আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলছিলেন যে অমুক আঙুল বসান, এবারে অমুক হাতের চার আঙুল বসান। সেই ভদ্রলোক তো ঐ ভদ্রমহিলার সামনে গিয়ে তার বাংলা শুনে তাকেও কটাক্ষ করে একচোট হেসে নিলো। এরপর কিছুক্ষন বসে থাকা। সম্ভবত আমি বাদে আশেপাশের সবাইকেই নার্ভাস দেখলাম। আমার কথা সেই একটাই, দিলে তালগাছ।
এরপর ৮ নাম্বার কাউন্টারের সামনে দাড়াইলাম ইন্টারভিউ এর জন্য। আমার সামনে সেই ভদ্রলোক।
তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে আপনি কেন আমেরিকা যেতে চান। তিনি তো নেটিভ ব্রিটিশ ইংলিশে এক রচনা বলে দিলেন। কিন্তু তিনি রচনা বলে থামা মাত্র অফিসার সজোরে বলে দিলেন যে দুঃখিত আপনাকে ভিসা দেয়া যাচ্ছেনা।
বলেই দ্রুত সাদা রিফিউজাল ধরিয়ে দিলেন। এরপর আমি গেলাম, হাসিমুখে অফিসারকে বললাম যে, “শুভ দুপুর অফিসার, How are you?” উত্তরে উনি শুধু হাসলেন আর আঙুল ইশারা করে বললেন যে “If you don't mind, please wait 1 minute. I'm coming soon.” আমি মুচকি হেসে বললাম যে, “No problem, I’m waiting here.” এরপর উনি ভেতরে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষন পরে ফিরে এলেন। ফিরে এসে আমার পাসপোর্ট চেয়ে নিলেন।
উনার ডানপাশে মনিটর এবং বামে প্রথমে রিফিউজাল লেটারের বান্ডিল এবং তার পাশে অ্যাপ্রুভাল লেটারের বান্ডিল। এরপর দাড়িয়েই আমাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় প্রশ্ন করলেন, আপনি কেন আমেরিকায় যেতে চান।
উত্তরে আমি খুব দ্রুত ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে (যেহেতু উনারা বাংলা বললে আমাদের কাছে ভাঙ্গা ভাঙ্গা মনে হয়, সেহেতু আমরা ইংরেজি বললেও হয়তো উনাদের কাছে সেটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিই মনে হয়) বললাম যে অমুক ইভেন্টে জয়েনের জন্য আমি আমেরিকা যেতে চাই। ইতিপুর্বে আমি অন্যন্য কয়েকটি দেশে উক্ত ইভেন্টে এটেন্ড করেছি। সাথে আমেরিকার ইভেন্টের জন্য ইনভাইটেশন লেটার পেয়েছি এবং তাতে যোগদান করতে চাই।
এরপর বললেন যে লেটারটা দেখান। আমি উনার হাতে দিলাম। এরপর ইভেন্ট অর্গানাইজার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে এরা কারা এবং এদের কাজ কি। আমি উত্তর দিলাম। এরপর উনি আমার পাসপোর্ট থেকে সেনজেন ভিসাটি বের করে বেশ উল্টেপাল্টে দেখলেন বসে বসে।
এরপর ইংরেজিতে পুনরায় প্রশ্ন করলেন যে আপনার মাসিক আয় কতো। আমি DS160 ফর্ম অনুযায়ীই বললাম যে আমার মাসিক আয় এতো টাকা।
এরপর অন্য একটি প্রশ্ন করলেন, কিন্তু আমি সেটা বুঝলাম না, এজন্য বললাম যে “Sorry, not getting.” উনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু আমি এবারেও বুঝলাম না, পুনরায় ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে জিজ্ঞাসু সুরে বললাম যে, “Sorry, not getting?” এবারে উনি বললেন যে, “Okay leave it. Are you going alone?” আমি বললাম যে, “Yes, I’m will go alone.”
এরপর উনি আমার দিকে না তাকিয়ে ৩ সেকেন্ডের মতো রিফিউজাল লেটারের উপর হাত ঘুরালেন। আমি ধরেই নিলাম যে ভিসা হচ্ছেনা। তাতে কার কি, হলে তালগাছ আর না হলে… মানে আমি নির্বিকার।
এবারে উনি রিফিউজাল লেটারের উপর হাত রাখা অবস্থাতেই আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে হাসলেন এবং হাত সরিয়ে একটা অ্যাপ্রুভাল লেটার হাতে নিয়ে হাসিমুখেই ইংরেজিতে বললেন যে কংগ্রাচুলেশন, আপনার ভিসা অনুমোদিত হয়েছে। আপনার পাসপোর্ট আমরা রেখে দেব, ২ সপ্তাহ পরে… (খুশির ঠেলায় বাকি কথা আর আমার কানে ঢুকেনি।) আমি উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যাপ্রুভাল লেটার ও বাকি কাগজপত্র নিয়ে এম্বাসি থেকে বের হয়ে এলাম।
আমার ধারনা, রিফিউজাল লেটারে হাত ঘুরানো সম্ভবত একটা পালস চেকিং যে অ্যাপ্লিক্যান্ট ঘাবড়ে যায় কিনা। ইন্টারভিউতে আমার অবজার্ভেশন ছিলো নিন্মরুপঃ
১। অল্পবয়ষ্কদের চাইতে বেশী বয়ষ্ক, মানে যাদের বয়স ৫০+ তাদের ভিসার হার বেশী।
২। ছেলেদের চাইতে মেয়েদের ভিসার হার বেশী। আনুমানিক ১ ঘন্টায় মোটামুটি ৫/৬ জন মেয়েকে ভিসা পেতে দেখলাম। অন্যদিকে ছেলে আমি সহ ২ জন।
৩। যারা খুব কম, বা খুব বেশী কথা বলে, তাদেরকে বাড়তি প্রশ্ন না করে দ্রুত রিফিউজ করে বিদায় করে দেয়া হচ্ছিলো।
-----------