15/12/2023
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে কথাগুলো আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কেউ আগে বিষয়গুলো নিয়ে এত খোলামেলা কথা বলেনি যা আজকে আমরা বলতে যাচ্ছি। তাই ধৈর্য সহকারে পুরো পোস্টটি পড়বেন আশা করি। যা আপনার ভিসা পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করবে, আর আপনি পেতে পারেন আমেরিকার পাঁচ বছরের মাল্টিপল টুরিস্ট ভিসা ইনশাল্লাহ।
আমেরিকার ভিসা নিয়ে আমাদের অনেক কৌতূহল থাকে। আবার আমাদের অনেকের ড্রিম কান্ট্রি আমেরিকা। সবার একবার হলেও আমেরিকা যাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তাই হয়তো আমাদের সবার চেষ্টা থাকে আমেরিকা যাওয়ার। আর সত্যি কথা হচ্ছে আমরা চাইলেই আমেরিকা যেতে পারি, হ্যাঁ আমরা সত্যি বলছি, চাইলে আপনিও যেতে পারেন। এখন আপনি বলতে পারেন এতই কি সহজ আমেরিকা যাওয়া? আমরা বলবো হ্যাঁ আসলেই সহজ আমেরিকা যাওয়া। যদি আপনি আমেরিকা যাওয়ার একজন যোগ্য ব্যক্তি হন। আমরা কিন্তু আমেরিকার টুরিস্ট ভিসার কথা বলছি।
এখন বলি সঠিক যোগ্যতার মাপকাঠি কি? আসলে এই ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা নেই, ইউএস এম্বাসির ওয়েবসাইটেও এর কোন চেকলিস্ট বা ক্রাইটেরিয়াও নেই। যেইটা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে এই এই ক্রাইটেরিয়া ও চেকলিস্ট গুলো ফুলফিল করলে আমেরিকার টুরিস্ট ভিসা পেয়ে যাবেন। তাহলে আপনি বলতে পারেন আমি তাহলে কোন যোগ্যতার কথা বলছি? আসলে যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই এই ক্ষেত্রে আমি আপনাকে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি যেহেতু আমরা অনেক ফাইল প্রসেস করেছি তাই কেন ভিসা পেয়েছে বা রিফিউজ হয়েছে তা বুঝতে পারছি, তাই একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবার যে বিষয় গুলো মেনে তার প্রোফাইল গুলো ঘুছাতে পারলে তার কাঙ্খিত ভিসাটি পেতে পারে, তার একটি বিস্তর ধারণা আমেরিকার টুরিস্ট ভিসাটি মূলত ইন্টারভিউ নির্ভর একটি ভিসা। ৫ থেকে ৭ মিনিটের ছোট একটি ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে ভিসাটি হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশের মতো ডকুমেন্ট ভিত্তিক ভিসা নয়। ইন্টারভিউটি আপনি বাংলা অথবা ইংলিশে দিতে পারবেন।
আপনি আপনার দেশে প্রতিষ্ঠিত, প্রতিষ্ঠিত মানে হচ্ছে আপনি বাংলাদেশে একজন ব্যবসায়ী বা ভালো কোন জব করেন, আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল আপনার আমেরিকাতে গিয়ে টাকা পয়সা খরচ করার মতো সামর্থ্য আপনার আছে, এর মানে আপনি আমেরিকাতে যাবেন এবং ফিরে আসবেন। আমার এই কথাটি পড়ে হয়তো চিন্তা করছেন অনেক টাকা থাকলে বা অনেক টাকা ইনকাম করলে হয়তো আমেরিকায় যেতে পারব। তাই না? কথাটি যদিও সত্য, কিন্তু আমরা যারা ভালো কোন দেশে যাওয়ার চিন্তা করি, তখনি যখন এটলিস্ট কিছু ভালো পরিমাণ টাকা আমাদের কাছে থাকে। তাহলেই আমেরিকার ভিসা নিয়ে চিন্তা করি। সেক্ষেত্রে আমরা ভালো জব বা ভালো ব্যবসা দেখাতে পারি। হয়তো আমি কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝতে পারছেন।
যাইহোক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্পটি এই কারণেই বললাম। বলার কারণ কি জানেন? ভিসা অফিসার চিন্তা করেন আপনি আপনার দেশে যে পরিমাণ টাকা উপার্জন করেন, হয়তো সেখানে গিয়ে আরো ভালো পরিমাণ টাকা উপার্জন করলে আপনি দেশে ফিরবেন না। এটা চিন্তা করে ভিসা অফিসার আপনাকে ভিসাটি নাও দিতে পারে। ইউএস এম্বাসির ওয়েবসাইটে লেখা আছে আপনি যখন নন ইমিগ্রেন্ট তথা টুরিস্ট ভিসায় (B1/B2) আবেদন করেন, ইন্টারভিউর আগের সময় পর্যন্ত ভিসা অফিসার ধরে নেন আপনি আমেরিকাতে গিয়ে আর ফিরে আসবেন না।
আমেরিকান এম্বাসির একটি অনলাইন ফর্ম আছে ফর্ম টিকে বলা হয় DS-160, ভিসা অফিসারের সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করার সবথেকে বড় একটি মাধ্যম, তবে একটি দুঃখের বিষয় কি জানেন? আমরা DS-160 ফর্মটিকে নিয়ে অবহেলা করি। যেমন অনভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে DS-160 ফর্মটি পূরণ করানো এবং অনভিজ্ঞ কারো সাথে পরামর্শ নেওয়া। অনেকেই এই ক্ষেত্রে খরচ কমানোর জন্য যেখানে সেখানে মোটামুটি ব্রাউজ করতে পারে বা কোন এক কম্পিউটার দোকান থেকে DS-160 ফর্মটি পূরণ করে। এমন কারো কাছ থেকে পরামর্শ নেয় সে হয়তো আমেরিকা টুরিস্ট ভিসা সম্পর্কে তেমন অভিজ্ঞ নন, হয়তো বা তিনি একবার ভিসা পেয়েছে, কিন্তু ভিসা পাওয়ার মানে এই নয় যে তিনি সব ব্যাপারে জেনে গেছেন। তাই এরকম অনেকের পরামর্শ নিয়ে ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করে বা ইন্টারভিউ দিয়ে অনেকেই রিফিউজ হয়েছে। কেননা DS-160 ফর্মটি ওভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে যাতে করে ভিসা অফিসার আপনার সম্পর্কে যা জানার বা ডিসিশন নেওয়ার দরকার তা সব ইনফরমেশন DS-160 ফর্মটি থেকে পেয়ে যান।
ইন্টারভিউতে ভিসা অফিসারকে কনভেন্স করতে হবে যে আপনি যাবেন আবার ফিরে আসবেন, এজন্য অবশ্যই আপনার একটি বিশ্বাসযোগ্য গল্প থাকতে হবে। এটির মাধ্যমে ভিসা অফিসারকে বোঝাতে হবে -আমি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত, -আমেরিকা যাওয়ার আমার যৌক্তিক কারণ আছে এবং -আমি আমেরিকাতে গিয়ে ঘুরে ফিরে আসবো।
এই যে আমি বললাম আপনি যে ফিরে আসবেন, এটা কনভেন্স করতে হবে, এটা কনভেন্স করার উপায় কি? কাজ হচ্ছে DS-160 ফর্মটি সুন্দর ভাবে, নির্ভুল ভাবে পূরণ করা। অনেকেই (DS-160 ফর্ম ও ইন্টারভিউ) এই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিষয়কে আলাদাভাবে পার্সেন্টেজ করে। আমরা এই কাজটি করব না কারণ এই দুইটির কম্বিনেশনে কাঙ্খিত ভিসাটি আপনার হবে।
আমরা আরেকটা বড় ভুল করি ডকুমেন্টকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া ও প্রচুর ডকুমেন্ট রেডি করা, যেগুলো আসলে ইন্টারভিউতে ধরেও দেখবেন না, তবে কিছু ডকুমেন্ট ভিসা ইন্টারভিউর সময় নিয়ে যেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ থাকলে ভিসা অফিসার দেখতে চাইবে। অনেকের মাথায় চিন্তাটি থাকে ব্যাংক ব্যালেন্স কত থাকতে হবে, ট্রানজেকশন কেমন করতে হবে, ব্যাংকে কত টাকা রাখতে হবে। এই প্রশ্নের আসলে কোন উত্তরই নেই, ডকুমেন্ট এর মতো আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ব্যাংক ব্যালেন্সও ভিসা অফিসার ধরেও দেখবেন না। যদিও দেখে খুব রেয়ার কেসে। সঠিকভাবে আবেদন করে ও সঠিকভাবে ইন্টারভিউ দিয়ে আপনি পেতে পারেন আমেরিকার ভিসা।
সর্বপরি একটা কথা বলবো, আমেরিকার টুরিষ্ট ভিসার ক্ষেএে যদি DS-160 ফর্মটি একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা পূরণ করাতে পারেন, কারণ এই ফর্ম এর উপর আপনার ভিসা অনেকাংশ নির্ভর করে ও আমেরিকা যাওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেন। এবং ইন্টারভিউতে ভিসা অফিসারকে সন্তুষ্ট করতে পারলে, আপনার ভিসাটি হবে ইনশাল্লাহ।
আপনারা যারা ধৈর্য সহকারে পুরো পোস্টটি পড়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।