14/07/2018
সম্মানিত হাজীগণ, আসসালামু আলাইকুম:
আজ শুরু হলো প্রথম হজ ফ্লাইট। সময় থাকলে এক নজর দেখে নিন:
আর কোনরকম সহযোগিতা লাগলে আমাদের সাহায্য নিন : ০১৭৬৯৬৯০৭৪৫, ডিউটি অফিসার (এএসপি)।
হজে যাওয়ার আগে:
পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও তারিখ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। নিয়ম মেনে ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে নিন। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন।
অথবা যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁরা হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। হজের কোনো বিষয়ে বিভিন্নতা দেখলে ঝগড়া করবেন না। আপনি যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তার সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন, তবে সে মতে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না।
প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন: ১. পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, ২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়। ইহরামের কাপড় সাদা, সুতি হলে ভালো হয়) আর নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড় ৩. নরম ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল, ৪. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট), ৫. গামছা, তোয়ালে, ৬. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পাজামা, পাঞ্জাবি (আপনি যে পোশাক পরবেন), ৭. সাবান, পেস্ট, ব্রাশ, মিসওয়াক, ৮. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা, ৯. থালা, বাটি, গ্লাস, ১০. হজের বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক, ১১. কাগজ-কলম, ১২. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা (ভিড় বা অন্য কোনো কারণে ভেঙে গেলে ব্যবহারের জন্য), ১৩. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য), ১৪. নারীদের জন্য বোরকা, ১৫. যত দিন বিদেশে থাকবেন, সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ নেবেন, ১৬. মোবাইল সেট (সৌদি আরবে ব্যবহার করা যায়, তেমন সিম কিনে নিতে হবে) ১৭. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস (তালা-চাবিসহ) নিতে হবে। বাংলাদেশের পতাকা খচিত ট্রলি ব্যাগ (৫৬ সে.মি x২৫ সে.মি x ৪৫ সে.মি ) ও হাতব্যাগ নিজ দায়িত্ব সংগ্রহ করুন। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।
ঢাকার হজ ক্যাম্প
বিমানে যাত্রার আগে হজ ক্যাম্পে যত দিন অবস্থান করবেন, আপনার শরীর ও মালপত্রের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে নিন।
ব্যাগেজ নিয়মকানুন
বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন: রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
জরুরি কাগজপত্র
১০ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকা কার্ড। নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ। সরকারি চাকরিজীবী হলে অফিস আদেশ বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে দেখাতে হয়। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। ১০ সংখ্যার ট্র্যাকিং নম্বরটি প্রাক নিবন্ধনের সময় কম্পিউটারের দেওয়া নম্বর যেমন N11709F1E2C জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওয়েবসাইটে ওই হজযাত্রীর তথ্য পেতে পারেন সহজে।
সৌদি সরকার হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। এই ভিসা পাসপোর্টের সঙ্গে লাগানো থাকে না। কাগজে প্রিন্ট করে দেবে। ফলে হজযাত্রীদের এটি আলাদা সংরক্ষণ করতে হবে। আগে পাসপোর্টের সঙ্গে ভিসা লাগানো থাকত বলে আলাদা করে ভিসা সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো না।
ইহরাম
আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়—তা জেনে নিন। যদি মদিনায় হয়, তাহলে এখন ইহরাম করা নয়; যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম করতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান। বিমানে যদিও ইহরামের নিয়ত করার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে। ইহরাম গ্রহণের পর সাংসারিক কাজকর্ম নিষেধ—যেমন সহবাস করা যাবে না, পুরুষদের জন্য কোনো সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি পরা বৈধ নয়, কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না, কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না, কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না, ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে। ক্ষতি করে না এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
ঢাকা বিমানবন্দর
উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মালপত্র দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মালপত্র রেখে এর টোকেন দিলে তা যত্ন করে রাখবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখালে সেই ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে। ইমিগ্রেশন, চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র যত্নে রাখুন।
বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্নে রাখুন। সময়মতো বিমানে উঠে নির্ধারিত আসনে বসুন।
জেদ্দা বিমানবন্দর
বিমান থেকে নামার পর দেখবেন, একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। অবতরণ কার্ড, হেলথ কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র বের করুন। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার।ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবে। বিমানের বেল্টে মালামাল খুঁজে নিরাপত্তা-তল্লাশির জন্য মালামাল দিন। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। প্রত্যেক মক্তব বা মোয়াল্লেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে। মোয়াল্লেমের কাউন্টার থেকে মিলিয়ে নেবেন তঁার অধীন কোন কোন হজযাত্রী সৌদি আরবে এসে পৌঁছেছেন।
লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ পৌঁছাবেন। হজ টার্মিনাল শুধু হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধু হজের সময় (জিলকদ, জিলহজ ও মহররম মাসে) এটি চালু থাকে। বিমানবন্দর টার্মিনালের চারদিক খোলা। ঐতিহ্যবাহী তাঁবুর নকশায় করা ছাদ। এই হজ টার্মিনালের স্থপতি কিন্তু বাংলাদেশি। নাম ফজলুর রহমান খান, যিনি এফ আর খান নামে পরিচিত।
হজ টার্মিনাল
হজ টার্মিনালের ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ গিয়ে অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে, ধৈর্য হারাবেন না। সেখানে অজু করা, নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বসার জন্য চেয়ারও রয়েছে।
প্রতি ৪৫ জনের জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা। মোয়াল্লেমের গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর (আরবিতে লেখা) কবজি বেল্ট দেওয়া হবে আপনাকে, তা হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, হজ এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝোলাবেন।
জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া পড়ুন (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...)।
মক্কায় পৌঁছানোর পর
মক্কায় পৌঁছে আপনার থাকার জায়গায় মালপত্র রেখে ক্লান্ত থাকলে বিশ্রাম করুন। আর যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়, নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে দলবদ্ধভাবে ওমরাহর নিয়ত করে থাকলে ওমরাহ পালন করুন।
মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) অনেক প্রবেশপথ আছে। সব কটি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশপথের নাম আছে, যেমন ‘বাদশা আবদুল আজিজ প্রবেশপথ’। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হবেন। সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরে ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।
কাবা শরিফে জুতা-স্যান্ডেল রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, নির্দিষ্ট স্থানে জুতা রাখুন। যেখানে-সেখানে জুতা রাখলে পরে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রতিটি জুতা রাখার র্যাকেও নম্বর দেওয়া আছে। এই নম্বর মনে রাখুন। চাইলে জুতা বহন করার ব্যাগ সঙ্গে রাখতে পারেন।
কাবা ঘরের চারটি কোণের আলাদা নাম আছে: হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইরাকি, রুকনে শামি ও রুকনে ইয়ামেনি। হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোণ থেকে শুরু হয়ে কাবাঘরের পরবর্তী কোণ রুকনে ইরাকি (দুই কোণের মাঝামাঝি স্থান মিজাবে রহমত ও হাতিম)। তারপর যথাক্রমে রুকনে শামি ও রুকনে ইয়ামেনি। এটা ঘুরে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাওয়াফের এক চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে একে একে সাত চক্কর দিতে হয়।
তাওয়াফ শেষে সাফা–মারওয়া গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় িগয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দৌড়। এভাবে সাতটি দৌড় সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর দৌড় বা চক্করগুলো হবে)।
ওমরাহর নিয়মকানুন আগে জেনে নেবেন। এসব কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে হবে, যেমন: তাওয়াফের সাত চক্কর, নামাজ আদায় করা, জমজমের পানি পান করা, সাঈ করা (সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো—যদিও মসৃণ পথ এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রিত), মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করা। ওয়াক্তের নামাজের সময় হলে, যতটুকু হয়েছে ওই সময় নামাজ পড়ে আবার বাকিটুকু শেষ করা।
ওমরাহ
হিল (কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থান) থেকে অথবা মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে।
হজ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ। হজের মাসসমূহে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) ওমরাহর নিয়তে ইহরাম করে, ওমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে হজে তামাত্তু বলে।
হজের মাসসমূহে একই সঙ্গে হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে ওমরাহ ও হজ করাকে হজে কিরান বলে। আর শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদনকে হজে ইফরাদ বলে।
পরামর্শ
দেশে থাকাকালীন আপনার প্যাকেজের সুবিধাদি যেমন মক্কা, মদিনায় থাকা, খাওয়া, কোরবানিসহ অন্য সুবিধার কথা হজ এজেন্সির কাছ থেকে লিখিতসহ খুব ভালোভাবে বুঝে নিন। সৌদি আরব গিয়ে তা মিলিয়ে নিতে পারবেন।
কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য (৪৭৫ সৌদি রিয়াল) ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সৌদি সরকারের স্বীকৃত ব্যবস্থা। এতে সময় বাঁচে, নিরাপদ। হজের অন্যান্য কাজ সহজে সারতে পারবেন। এর বাইরে দেওয়া হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সৌদি আরবে অবস্থানকালে ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। সিগন্যাল পড়লে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার সময় অবশ্যই ডানে-বাঁয়ে দেখেশুনে সাবধানে পার হতে হবে। কখনো দৌড়ে রাস্তা পারাপার হবেন না।
কাবা শরিফ ও মসজিদে নবিবর ভেতরে কিছুদূর পরপর জমজম পানি (স্বাভাবিক ও ঠান্ডা) খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাণভরে জমজম পানি পান করুন।
কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় পড়লে বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল সদস্যের (চিকিৎসক) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
হজযাত্রীদের তথ্য, হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশনে অবস্থিত আইটি হেল্প ডেস্ক সাহায্য করে।
তাওয়াফ, সাঈ করার সময় অহেতুক কথা বলা বা ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। টাকাপয়সা নিরাপদে রাখুন।
মাহরাম (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা করা জায়েজ। যেমন স্বামী, বাবা, আপন ভাই, আপন চাচা-মামা, ছেলে ইত্যাদি) ছাড়া নারী হজযাত্রী এককভাবে হজে গমনের যোগ্য বিবেচিত হন না।
হজের সময় হজযাত্রীদের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়, আপনার হজ এজেন্সি আপনাকে যথাযথ সুবিধাদি (দেশ থেকে আপনাকে থাকা, খাওয়াসহ অন্য যেসব সুবিধার কথা বলেছিল) না দিলে আপনি মক্কা ও মদিনার বাংলাদেশ হজ মিশনকে জানাতে পারেন। এতেও আপনি সন্তুষ্ট না থাকলে সৌদির ওয়াজারাতুল হজ (হজ মন্ত্রণালয়) বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে পারেন।
মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসেন, তাহলে ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিতে হবে।
মসজিদে নববিতে নারীদের জন্য প্রবেশপথ ও নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা আছে। রিয়াজুল জান্নাতে নারীদের প্রবেশের সময়সূচি: সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১.৩০ টা, দুপর ১ টা থেকে বেলা ৩টা, রাত ৮ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত।
হজযাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড়ে পথ হারানোর আশঙ্কা থাকে। তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ ব্যাপারে হজযাত্রীদের সচেতন থাকতে হবে।
মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। মক্কার হোটেলগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল—সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে একজনের খাবার কিনলে বাড়িতে বসে অনায়াসে দুজন খেতে পারেন।
মক্কা-মদিনায় প্রচুর ফলমূল ও ফলের রস পাওয়া যায়। এগুলো কিনে খেতে পারেন।
মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কিনবেন।
মক্কায় ঐতিহাসিক স্থান হেরা গুহা, সাওর পর্বত, জান্নাতুল মা’আলা (কবরস্থান), মসজিদে জিন, মক্কা জাদুঘর, গিলাফ তৈরির কারখানা, লাইব্রেির, মিনায় আল-খায়েফ মসজিদ, আরাফাতের ময়দান, নামিরা মসজিদ মুজদালিফা, জামারা (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়ার স্থান) ঘুরে আসতে পারেন।
মদিনায় মসজিদে নববি (রিয়াজুল জান্নাহ), জান্নাতুল বাকি (কবরস্থান), ওহুদ পাহাড়, খন্দক, মসজিদে কুবা, মসজিদে কেবলাইতাইন, মসজিদে জুমআ, মসজিদে গামামাহ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাদশাহ ফাহাদ কোরআন শরিফ প্রিন্টিং কমপ্লেক্স ঘুরে আসতে পারেন।
হজের সময় লক্ষ করুন
হজের ৫ দিন মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মিনায় অবস্থান করবেন। তাই হাতব্যাগে এক সেট অতিরিক্ত ইহরামের কাপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র িনয়ে যাবেন।
কোনো কোনো হজযাত্রী হেঁটে হজের আমলগুলো করে থাকেন। যেমন মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। মুজদালিফা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। এসব স্থানবিশেষে হেঁটে যেতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
দিনের বেলা বাইরে বের হলে ছাতা সঙ্গে নেবেন। মুজদালিফায় রাতে থাকার জন্য প্লাস্টিকের পাটি ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার রাখতে পারেন। মক্কাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাতা, পাটি কিনতে পাওয়া যায়।
মিনার ম্যাপ থাকলে হারানোর ভয় নেই। মিনার কিছু অবস্থান চিনে নিজের মতো করে আয়ত্তে আনলে এখানে চলাচল করা সহজ হয়। যেমন জামারা (শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান), মসজিদে খায়েফ, মিনায় তিনটি ব্রিজ—বাদশাহ খালেদ ব্রিজ ১৫ নম্বর, বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিজ ২৫ নম্বর, বাদশাহ ফয়সাল ব্রিজ ৩৫ নম্বর। হাঁটার পথ (টিনশেড নামে পরিচিত)। এখানে সাতটি জোন রয়েছে। মিনার বড় রাস্তাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম ও নম্বর রয়েছে।
রাস্তার নাম ও নম্বর জানা থাকলে মিনায় চলাচল সহজ হয়। পথ হারানোর সুযোগ কম থাকে। বড় রাস্তাগুলো হলো: বাদশাহ ফয়সাল রোড ৫০ নম্বর রাস্তা, আলজাওহারাত রোড ৫৬ নম্বর রাস্তা, সুক্কল আরব রোড ৬২ নম্বর রাস্তা, কিং ফাহাদ রোড ৬৮ নম্বর রাস্তা। মিনায় রেলস্টেশন ৩টি। মুজদালিফায় রেলস্টেশন ৩টি। এ ছাড়া রয়েছে সুড়ঙ্গপথ, টানেল, পায়ে চলার রাস্তা, হাসপাতাল, মসজিদ, পোস্ট অফিস, মিনার বাদশাহ বাড়ি, রয়েল গেস্ট হাউস (রাজকীয় অতিথি ভবন) মোয়াচ্ছাসা কার্যালয়।
ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
মিনায় মোয়াল্লেম নম্বর বা তাঁবু নম্বর জানা না থাকলে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। ধরা যাক মিনার তাঁবু নম্বর ৮/৫৬ । ওপরের সংখ্যা তাঁবু নম্বর ৮, নিচের সংখ্যা ৫৬ নম্বর রাস্তা। মোয়াল্লেম অফিস থেকে তাঁবুর নম্বরসহ কার্ড দেওয়া হয়। তা যত্নে রাখতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময়ও কার্ডটি সঙ্গে রাখুন। সমস্যা এড়ানোর জন্য যে তাঁবুতে অবস্থান করবেন, সেই তাঁবু চিহ্নিত করে নিন।
মিনায় জামারা থেকে আপনার তাঁবুর অবস্থান, তাঁবু থেকে মসজিদুল হারামে যাওয়া-আসার পথ সম্পর্কে ধারণা নিন। ভিড় এড়াতে কেউ কেউ হেঁটে সুড়ঙ্গ (টানেল) পথ দিয়ে মসজিদুল হারামে পৌঁছান। হাঁটার পথ চিনতে স্থানীয় (বাংলাদেশি কাউকে বললে দেখিয়ে দেবেন) বা গুগল ম্যাপের সহায়তা (https://goo.gl/WPBR25) নিতে পারেন।
অনেকে ট্যাবলেট বা আইফোন নিয়ে যান। রাস্তাঘাট, অবস্থান ইত্যাদি জানতে হজ ও পিলগ্রিম অ্যাপসের সহায়তা নিতে পারেন।
আরাফাতের ময়দানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে খাবার, জুস, ফল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। ওই সব খাবার আনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়তে হয়। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
মিনায় চুল কাটার লোক পাওয়া যায়। নিজেরা নিজেদের চুল কাটবেন না, এতে মাথা কেটে যেতে পারে।
মিনায় কোনো সমস্যা হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের তাঁবুতে যোগাযোগ করবেন।
টিকা দেওয়া
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে, সেখান থেকে করতে পারবেন।
তথ্য
www.hajj.gov.bd ওয়েবসাইটে ১০ সংখ্যার ট্র্যাকিং নম্বরটি প্রাক নিবন্ধনের সময় কম্পিউটারের দেওয়া নম্বর যেমন N11709F1E2C জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওই হজযাত্রীর তথ্য পেতে পারেন সহজে। হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭ ফোন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা এখন থেকেই শুরু করুন। আপনার মালপত্র হালকা রাখুন। কারণ, আপনাকেই তা বহন করতে হবে।
নিয়মকানুন
হজের নিয়মকানুন জানতে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক পড়ুন। প্রথম আলো হজ গাইড সংগ্রহ করতে পারবেন হজ ক্যাম্প অথবা প্রথম আলো কার্যালয় থেকে। www.prothom-alo.com/hajj থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন।
তালবিয়া
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নিয়মাতা লাকা ওয়াল্মুলক, লা শারিকা লাক। (তথ্য প্রথম আলো।)
হাজিদের জন্য অনুসরণীয় পরামর্শ:
১. মক্কা-মদিনা পৌঁছার পর আপনার জন্য নির্দিষ্ট হোটেল/বাড়ির নির্ধারিত কক্ষে অবস্থান করতে হবে। লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাবেন না। হাজি অবস্থানের হোটেল/বাড়িতে রান্না এবং কাপড় ইস্ত্রি করবেন না।
২. মোয়াল্লেম অফিসের দেয়া কার্ড এবং হজ অফিস থেকে দেয়া বাংলাদেশের পতাকা খচিত ছবিসহ আইডি কার্ড, হাতের কবজি বেল্ট সবসময় সঙ্গে রাখবেন। কবজি বেল্ট এবং আইডি কার্ড ছাড়া হোটেলের বাইরে যাওয়া যাবে না।
৩. হোটেল/বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার সময় একা যাবেন না। সব সময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করবেন।
৪. চলা-ফেরার সময় পোশাক-পরিচ্ছদ এবং আচার ব্যবহারে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এ ধরনের কোনো কাজ করবেন না।
৫. হোটেল কক্ষে টাকা-পয়সা সাবধানে রাখতে হবে। তাওয়াফ/সায়ী এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে যাওয়ার সময়, হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বেশি টাকা-পয়সা সঙ্গে নেবেন না।
৬. সবসময় আপনার জন্য নির্ধারিত হজগাইডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।
৭. সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। খালি পায়ে হাঁটবেন না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। রৌদ্রে ছাতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি/ফলের রস পান করবেন। ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।
৮. জিলহজ মাসের ৭ তারিখ রাতে অথবা ৮ তারিখ সকালে মিনা যেতে হবে। যাওয়ার সময় সঙ্গে হালকা কাপড়-চোপড় ও প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নেবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বাদ বাকি টাকা-পয়সা মোয়াল্লেমের অফিসে রেখে রসিদ নেবেন।
৯. মক্কা হতে হেঁটে মিনা-আরাফাতে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
১০. শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় দলবদ্ধভাবে যাবেন। পাথর মারার সময় কখনো স্যান্ডেল খুলে গেলে, পাথর হাত থেকে পড়ে গেলে কোনো অবস্থাতেই উঠানোর চেষ্টা করবেন না। কিছু অতিরিক্ত পাথর রাখবেন। অক্ষম, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের পক্ষে অন্যের দ্বারা পাথর নিক্ষেপ করা যায়।
১১. মিনা-আরাফাতে নিজের তাঁবু হারিয়ে গেলে হজ অফিসের তাঁবুতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এজন্য মিনা-আরাফাতের ম্যাপ সঙ্গে রাখবেন এবং আপনার তাঁবুর পাশের খুঁটি নম্বর জেনে রাখবেন।
১২. মিনা-আরাফাতে অবস্থানকালে পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করবেন। সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। ডায়াবেটিস রোগীরা সবসময় কিছু খাবার সঙ্গে রাখবেন।
১৩. মিনা-আরাফাতে অবস্থানকালে ধূমপান, হিটার ও আগুন জ্বালানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
১৪. মোজদালেফায় অবস্থানের জন্য বাস থেকে নামার পর পুনরায় কখন, কোনো জায়গা থেকে বাসে উঠবেন তা জেনে নেবেন। মোজদালেফায় দলবদ্ধভাবে অবস্থান করবেন।
১৫. কোরবানির টাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে জমা দেয়াই সৌদি সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ব্যবস্থা। অন্যথায় প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
১৬. সৌদি আরবে রাস্তা পারাপারের সময় দৌড় দেবেন না। ডানে বামে দেখে রাস্তা পার হবেন। সৌদি আরবে গাড়ি ডান দিক থেকে চলে।
১৭. বাংলাদেশ বিমানে দুই ব্যাগে ৪৬ কেজি মালামাল নেয়া যাবে। কোনো ব্যাগের ওজন ৩০ কেজির বেশি করবেন না।
১৮. জমজমের পানি লাগেজে নেবেন না। ফেরার পথে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বোর্ডিং পাস দেখিয়ে জমজমের পানি সংগ্রহ করবেন।
১৯. যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে মক্কা/মদিনা/জেদ্দা হজ অফিসে যোগাযোগ করবেন।
২০. বর্তমানে সৌদি আরবে মোবাইল সিম সংগ্রহ করতে পাসপোর্টে জেদ্দা ইমিগ্রেশন থেকে লাগানো স্টিকারে উল্লিখিত নম্বরের প্রয়োজন হয়। এ নম্বর প্রদর্শন করে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম কিনতে হবে।
আরো জানুন:
১. হজযাত্রীদের যাবতীয় তথ্য, দেশের পরিবার-পরিজনের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে সংবাদ পৌঁছানো যায়। হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশনে আইটি হেল্প ডেস্ক সাহায্য করে।
২. কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় পড়লে বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল সদস্যদের (চিকিৎসক) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩. আপনার ট্রাভেল এজেন্সি আপনাকে যথাযথ সুবিধাদি (দেশ থেকে আপনাকে থাকা-খাওয়াসহ অন্য যেসব সুবিধার কথা বলেছিল) না দিলে আপনি মক্কা ও মদিনার বাংলাদেশ হজ মিশনকে জানাতে পারেন। এতেও আপনি সন্তুষ্ট না থাকলে সৌদির ওয়াজারাতুল হজকে (হজ মন্ত্রণালয়) লিখিত অভিযোগ করতে পারেন।
৪. মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসেন, তাহলে ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিতে হবে।
৫. আরাফাতের ময়দানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে খাবার, জুস, ফল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। ওই সব খাবার আনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। তাই সাবধান থাকবেন।
৬. আরাফাতের ময়দান থেকে যদি হেঁটে মুজদালিফায় আসেন, পথে টয়লেট সেরে নেবেন। কেননা, মুজদালিফার টয়লেটে অনেক ভিড় লেগে যায়।
৭. হজ মন্ত্রণালয় মিনার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (যেখানে হজযাত্রীদের সহজে চোখে পড়ে) কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক বিলবোর্ডে পৃথিবীর প্রায় ১৮টি ভাষায় বিভিন্ন জরুরি দিকনির্দেশনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় প্রচার করে।
৮. হজের বেশিরভাগ সময় হজযাত্রীদের মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। তাই মিনাকে এক হিসেবে তাঁবুর শহর বলা যায়। চারদিকে তাঁবু আর তাঁবু। সব তাঁবু দেখতে একই রকম। মোয়াল্লিম নম্বর বা তাঁবু নম্বর জানা না থাকলে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। এ সমস্যা এড়াতে যে তাঁবুতে অবস্থান করেন, সেসব তাঁবু চিহ্নিত করে নিন।
৯. মোয়াল্লিম অফিস থেকে তাঁবুর নম্বরসহ কার্ড দেওয়া হয়; তা যত্নে রাখুন। বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখুন।
১০. হজযাত্রী সচেতন থাকলে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। অনেক বাংলাদেশি হারিয়ে যাওয়ার কারণে হজের আহকাম বা নিয়ম-কানুন ঠিকমতো পালন করতে পারেন না।
১১. মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল- সবই পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে বাড়িতে খাবার নিয়ে দু’জন অনায়াসে খেতে পারেন।
১২. মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন। তাই ভাষাগত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কিনবেন। এছাড়া হিন্দি ভাষা প্রায় সবাই বোঝেন। প্রয়োজনে কাজে লাগাবেন।
১৩. হজের সময় প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। পকেটে টাকা থাকলেও যানবাহন পাওয়া যায় না। এ কারণে হাঁটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।
১৪. মিনায় চুল কাটার লোক পাওয়া যায়। নিজেরা নিজেদের চুল কাটবেন না। এতে মাথা কেটে যেতে পারে।
১৫. মিনায় কোনো সমস্যা হলে হজযাত্রীদের সেবা দিতে বাংলাদেশ হজ মিশনের তাঁবুতে যোগাযোগ করবেন।
১৬. হজের আগে ও পরে আরও ওমরাহ করতে চাইলে ‘তানঈম মসজিদ’-এ (ওমরাহ মসজিদ) গিয়ে ওমরাহর নিয়ত করে আসা যায়। কাবা শরিফের বাইরে বাস অথবা ট্যাক্সিতে ওমরাহ মসজিদে যাওয়া যায়।
আরো জানুন:
হয়রানি এড়াতে সম্মানিত হাজীদের জন্য সবিনয় পরামর্শ:
#সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রিদের জন্যঃ
১. জেদ্দা এয়ারপোর্টে হজ্ব টার্মিনালের সামনে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ্ব মিশনে আপনার বোর্ডিংপাস দেখিয়ে জমজমের পানি সংগ্রহ করুন।
সতর্কতাঃ পাশ থেকে হয়তো শুনবেন যে, পানি শাহজালাল বিমানবন্দরে গেলে পাওয়া যাবে। এসব কথায় কান দেয়া যাবে না। সাউদিয়ার যাত্রিদের পানি হজ্ব মিশন থেকেই নিতে হবে। মুয়াল্লিম কিংবা অন্য কারো উপর ভরসা না করে নিজের পানি নিজেই সংগ্রহ করুন।
২. সংগৃহীত পানি এবং আপনার লাগেজ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে বুকিং দিয়ে পানি এবং প্রত্যেক ব্যাগের জন্য পৃথক পৃথক ট্যাগ সংগ্রহ করুন।
সতর্কতাঃ পানি বুকিং এ না দিয়ে সাথে নিয়ে বিমানে উঠতে যাবেন না। সেক্ষেত্রে পানি রেখে দেবে এবং কেবল বুকিং এ দেয়া পানিই বিমানে উঠানো হবে। কারো অনুরোধে অন্যের ব্যাগ নিজ নামে বুকিং এ দেয়ার ঝামেলায় বা রিস্কে যাবেন না। সবগুলো ট্যাগ যত্নসহকারে নিজ হেফাজতে রাখুন।
৩. শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সেরে বেল্ট থেকে আপনার পানি এবং ব্যাগ সংগ্রহ করুন।
৪. ট্যাগগুলো হাতে রাখুন এবং কাস্টমস চ্যানেলে ঢোকার পূর্বে নির্ধারিত বিমানকর্মীর কাছে ট্যাগ হস্তান্তর করুন।
সতর্কতাঃ ট্যাগ জমা না দিয়ে ব্যাগ কিংবা পানি কোনটিই নেয়া যাবে না।
৫. কোন কারণে আপনার বুকিংকৃত ব্যাগ কিংবা পানি না এসে থাকলে বিচলিত হবেন না। বিমানকর্মীকে জানান এবং লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেকশনে গিয়ে ট্যাগ জমা দিয়ে পিআইআর পেপার সংগ্রহ করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
#বাংলাদেশ বিমানের যাত্রিদের জন্যঃ
১. আপনাদের জমজমের পানি বিমান কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শাহজালাল এবং অন্যান্য বিমানবন্দরে এনে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। সুতরাং জেদ্দায় পানি সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। তবে বিমানে থাকা অবস্থায় পানির জন্য প্রত্যেককে একটি করে টোকেন দেয়া হবে। টোকেনটি সংগ্রহে রাখুন।
২. জেদ্দায় বিমানের কাউন্টারে গিয়ে নিজের লাগেজ বুকিং দিয়ে প্রত্যেকটি ব্যাগের জন্য পৃথক পৃথক ট্যাগ সংগ্রহ করুন। কারো অনুরোধে অন্যের ব্যাগ নিজ নামে বুকিং এ দিয়ে অযথা ঝামেলায় জড়াবেননা।
৩. শাহজালাল, শাহ আমানত কিংবা ওসমানী বিমানবন্দরে লাগেজবেল্ট থেকে লাগেজ সংগ্রহ করুন এবং পাশের পানির স্টোরে টোকেন প্রদর্শন করে আপনার জমজমের পানি সংগ্রহ করুন।
৪. ট্যাগগুলো হাতে রাখুন এবং কাস্টমস চ্যানেলে ঢোকার পূর্বে নির্ধারিত বিমানকর্মীর কাছে ট্যাগ হস্তান্তর করুন।
সতর্কতাঃ ট্যাগ জমা না দিয়ে ব্যাগ নেয়া যাবে না।
৫. কোন কারণে আপনার বুকিংকৃত ব্যাগ না এসে থাকলে বিমান কর্মীকে জানান এবং লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেকশনে গিয়ে ট্যাগ জমা দিয়ে পিআইআর পেপার সংগ্রহ করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন। (তথ্য এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট।)
আরো জানুন:
হাজীদের নিজস্ব খরচের জন্য কিছু বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিতে হবে। ঢাকা আশকোনা হজ ক্যাম্পে এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আরো যে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনাকে নিতে হবে তা হলো— ১. হজের নিয়ম-কানুন সম্বলিত বই। ২. পাসপোর্ট, টিকেট, ডলার ও টাকা রাখার জন্য গলায় ঝুলানো ছোট ব্যাগ। ৩. ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট। ৪. দুই ফিতা বিশিষ্ট নরম স্পঞ্জের স্যান্ডেল। ৫. ইহরামের নিচের পার্ট কাপড় বাঁধার জন্য কাপড়ের বেল্ট। ৬. গামছা ও তোয়ালে। ৭. নিজের পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক পোশাক, যেমন- লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা ও পাঞ্জাবি সঙ্গে নিবেন। মহিলারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক সেলোয়ার কামিজ ও যে ধরনের কাপড় পরে থাকেন তা নিবেন। ৮. সুই-সুতা ও নখ কাটার জন্য নেইল কাটার। ৯. সাবান (সুগন্ধী ব্যতীত), টুথপেস্ট, ব্রাশ, মিসওয়াক ও খিলাল। ১০. থালা, বাটি ও গ্লাস। ১১. এক সেট শীতের কাপড়। কারণ মদীনায় ঠাণ্ডা পড়ে বেশি। ১২. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। ওষুধ কিছু বেশি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্রও সঙ্গে রাখুন। ১৩. চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা নিয়ে নিন। কেননা ভিড় বা অন্য কোনো কারণে হারিয়ে বা ভেঙ্গে গেলে তা কাজে আসবে। ১৪. বাংলাদেশি টাকা। কেননা দেশে ফেরার পর বিমান বন্দর থেকে বাড়ি যাওয়ার জন্য কাজে লাগবে। ১৫. মোবাইল সেট সঙ্গে নিতে পারেন। সৌদি আরবে আপনি সে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সীম সংগ্রহ করতে পারবেন। ১৬. নারীদের জন্য বোরকা বা পর্দা হয় এমন পোশাক। ১৭. মালপত্র নেয়ার জন্য ব্যাগ বা সুটকেস (তালা-চাবিসহ)। ব্যাগ ও লাগেজের উপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট নাম্বার, হজ এজেন্সীর নাম, সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সীর প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর লিখতে হবে। লাগেজে কোনো চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন— রান্না করা খাবার, ফলমূল, পান-সুপারি দিবেন না, এগুলো নেয়া নিষেধ। ১৮. জরুরি কাগজপত্র যেমন— ১০ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্ট্যাম্প সাইজের ৬ কপি, পাসপোর্টের ১—৫ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকাকার্ড। নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদ। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সীর নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। এই নম্বরটি জানা থাকলে হজযাত্রী ও তার আত্মীয়-স্বজনরা ওয়েবসাইটে ওই হাজীর তথ্য সহজে পেতে পারেন। সৌদি আরবে জেদ্দা, মক্কা ও মদীনায় বাংলাদেশ হজ মিশন কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে হাজীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকে। মসজিদুল হারামে (কা’বা শরীফে) প্রবেশের অনেকগুলো গেট রয়েছে; সব ক’টি দেখতে প্রায় একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশ পথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশ পথের নাম লেখা আছে, যেমন বাদশা আব্দুল আজী
পবিত্র হজ উপলক্ষে প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজন