28/12/2014
অনলাইনে পাসপোর্ট :
লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ও কমতে শুরু করেছে। পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষা, ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, কনফারেন্স, ব্যবসা, চিকিৎসা যে কোনো প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার জন্য দরকার একটা বৈধ পাসপোর্ট। আগে পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে আঞ্চলিক অফিসে যেতে হত। ফর্ম পূরণ করার পর আবার যেতে হত পাসপোর্ট অফিসে। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, জমা দেওয়া। এই চিত্র দিনদিন কমতে শুরু করেছে। হাতে পূরণ করা পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার লাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনে ফর্ম জমাদানকারীদের লাইনও চোখে পড়বে।
অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের সুবিধা সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইনে যেসব আবেদন জমা পড়ে সেগুলোতে ভুল কম হয়। ফর্ম জমা দেওয়ার আগে সব তথ্য আবেদনকারী নিজেই যাচাই করে নেন। এতে নিজেই ভুলগুলো শনাক্ত করতে পারেন। তথ্যগুলো কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হয়। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে হাতে পূরণ করা ফর্মের মতো তথ্যগুলো হালনাগাদ করতে সার্ভারে নতুন করে ইনপুট করতে হয় না। এতে সময় ও শ্রম বাঁচে। ভুলভ্রান্তিও কম হয়।”
অনলাইনে আবেদন পূরণ করতে প্রথমেই http://www.passport.gov.bd/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এখানে আবেদন ফর্ম পূরণ সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো আগে পড়ে নিন। পড়া শেষ হলে I have read the above information and the relevant guidance notes যুক্ত স’ানে টিক চিহ্ন দিন। এবার কনটিনিউ টু অনলাইন এনরোলমেন্ট-এ ক্লিক করুন।
অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথম পৃষ্ঠা দেখাবে। এখানে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য, স’ায়ী ও অস’ায়ী ঠিকানা, আপনার উচ্চতা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ আরও কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে। নাম লেখার সময় নামের সংক্ষিপ্তরূপের পরিবর্তে যেমন- মোঃ/MD.-এর স’লে মোহাম্মদ/MOHAMMAD লেখা অপরিহার্য। তাছাড়া পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী- মৃত হলে তাদের নামের আগে মৃত/মরহুম/LATE ব্যবহার করা যাবে না।
এ নিয়ম সম্পর্কে সিরাজ বলেন, “অনেকের সার্টিফিকেটে নামের সংক্ষিপ্ত রূপ লেখা থাকে। এছাড়া পাসপোর্টে নামের আগে কোনো পদবি বা নামের সংক্ষিপ্ত রূপ থাকলে কিছু দেশের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তবে কেউ চাইলে সার্টিফিকেট অনুযায়ী নিজের নাম ব্যবহার করতে পারেন।” প্রথম পৃষ্ঠা আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ পূরণ করার সময় ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে সেইভ করলে পরে যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই আবার শুরু করতে পারবেন। ইমেইলে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর ও পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হবে।
তৃতীয় পৃষ্ঠা পূরণের সময় পাসপোর্টের জন্য ফি জমা সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করতে হবে। এখানে ব্যাংক বা বাংলাদেশ মিশনের যে শাখায় আবেদন ফি জমা দিয়েছেন সে তথ্য, জমা দেওয়ার তারিখ ও রসিদ নম্বর পূরণ করতে হবে। তাই পাসপোর্ট তৈরির জন্য নির্ধারিত ফি আগে জমা দিয়ে তারপর ফর্ম পূরণ করতে বসুন।
পুরোটা পূরণ করার পর আপনার ইমেইলে ফর্মের একটা কপি চলে আসবে। এখান থেকে ২ কপি প্রিন্ট করে ছবিসহ জমা দিতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। এ সময় টাকা জমা দেওয়ার রশিদের কপিও জমা দিতে হবে।
“পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে আবেদনকারীকে সশরীরে উপসি’ত হতে হবে। এখানে আবেদনকারীর ২ হাতের আঙুলের ছাপও সংগ্রহ করা হয়। এতে কেউ পরপর ২টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে সহজেই ধরা পড়ে যাবেন”- বললেন সিরাজ।
আবেদনপত্রের সঙ্গে যা সংযুক্ত করতে হবে
পাসপোর্টের আবেদন করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি/জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি/ সরকারি আদেশের (জিও) ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)/ ছাড়পত্রের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)/ বিদ্যমান পাসপোর্টের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)/ টেকনিক্যাল সনদের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)/ টিআইএন সনদের ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)/পিডিএস বা অবসর তারিখের প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) জমা দিতে হবে।
ছবি তোলার সময় সাদা পোশাক, চশমা ও মাথায় টুপি পরে ছবি তোলা যাবে না।
পাসপোর্টের প্রকৃতি
পাসপোর্ট তিন ধরনের হয়। সাধারণ, অফিসিয়াল ও কূটনৈতিক। সবুজ, নীল ও লাল রংয়ের পাসপোর্টগুলোর একেকটি একেক ধরনের পেশাজীবীদের জন্য। যেমন, সাধারণ নাগরিকদের দেওয়া হয় সবুজ রংয়ের পাসপোর্ট। সরকারি চাকরিজীবীদের আবেদনপত্রের ধরন হবে অফিসিয়াল। তাদের নীল রংয়ের পাসপোর্ট দেওয়া হবে। যদিও এ পাসপোর্ট তিনি সাধারণ পাসপোর্টের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন। কূটনীতিকদের দেওয়া হয় লাল রঙের পাসপোর্ট। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়।
খরচপাতি আবেদন ফর্ম পূরণ করার সময় আপনাকে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে পাসপোর্টটি কী ধরনের হবে। সাধারণ হলে আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার ১৫-২৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যাবে। জরুরি পাসপোর্ট সাতদিনের মধ্যেই হাতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ আবেদনের জন্য ফি ৩ হাজার টাকা। জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার টাকা।