28/06/2024
উবার করে বাড়ি ফিরছি
চালক পেলাম একজন আফ্রিকান, নাম জামাল
উঠেই বললাম
বাহ্! তোমার নামটাতো সুন্দর, মুসলিম নাকি?
বললো হা!
বাড়ি ইথোপিয়া।
আরে! তুমি দেখি রাজা নাজ্জাশীর কাছের লোক!
উত্তর শুনে হেসে দিলো!
কিছুক্ষণের মধ্যেই কথা জমে গেলো
অনেক কথা হলো, দেশ পরিবেশ রাজনীতি আরো নানা বিষয় নিয়ে!
নামার কিছু পূর্বে তার ছেলের ছবি দেখালো
আবরারেরই সমান
হাস্যজ্বল! ডেসিংলি হেন্ডসাম আর কিউট
বারাকাল্লাহ!
নাম কি তার?
বিলাল!
বলো কি!
আমাদের প্রথম মুয়াজ্জিন!
তিনিও তো ইথোপিয়ানই ছিলেন!
হেঁসে জানালো হ্যাঁ! উনার নাম অনুসারেই তো তার নাম রাখা!
আরো কি কি যেন বলতে থাকলো
আমার কানে আর ঢুকলো না
কারণ আমি তখন চলে গিয়েছি ১৪০০ বছর পূর্বে
কানের ভিতর শুধু একটা ধোনিই বাজছিলো
আহাদ! আহাদ! আহাদ!
আরবের কাফিররা আল্লাহ কে মানত ঠিকই
মানত না শুধু আহাদ কে
বিলাল রা. উপর যত শাস্তি, যত নির্যাতন সব ওই এক আহাদের জন্যই
বেঁধে বেধর পিটাচ্ছে?
তবুও মুখে শুধু
আহাদ! আহাদ! আহাদ!
সকাল থেকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত বিনা পানিতে ফেলে রেখেছে
তৃষ্ণায় প্রাণ যায়,
মুখ থেকে ছুটেনি
আহাদ! আহাদ! আহাদ!
কিছুতেই কিছু হয় না
কয়েকজন মিলে এসে বড় এক পাথর বুকের উপর চাপায় দিলো
তবুও বলা ছাড়েনি-
আহাদ! আহাদ! আহাদ!
তার মনিব উমাইয়্যা তাকে প্রায়ই বলতো
দেখ! তোর কাছ খুব বেশি কিছু চাই না
তোকে টর্চার করতেও চাই না
জাস্ট একবার অন্য দেব দেবীর নামও মুখে আন, জাস্ট একবার
লাত উজ্জা যে কোনো একটার
কে শুনে কার কথা
তিনি জপেই যান
আহাদ! আহাদ! আহাদ!
"আহাদ" কম বেশি আমরা সবাই পড়ি
কিন্তু কখনো একটু চিন্তা করার সুযোগ হয়েছে এর বিষয়ে একটু গভীরে গিয়ে জানার?
আহাদের রাফ ট্রেন্সলেশন হলো "এক" বা অদ্বিতীয়
অর্থাৎ "ইউনিক"
তবে আরবিতে "এক" এর জন্য ফ্রিকোয়েন্টলি ব্যাবহার হয় "ওয়াহেদ" শব্দিটি
তাহলে আল্লাহ কেন বললেন না
কুল হুয়া আল্লাহু ওয়াহেদ?
কেন "কুল হুয়া আল্লাহু আহাদ" ই বলতে হলো?
আরবরা সাধারণত "আহাদ" কে না-সূচক বাক্যে ব্যবহার করে
আর হা সূচক বাচকের জন্য ব্যবহার করে "ওয়াহেদ" কে
তো না-সূচক বাক্যের মধ্যেও আছে আরেকটা ফেক্ট
কেউ যদি বলে
"ঘরে ওয়াহেদ মানুষ নেই"
এর মানে এই নয় যে
"ঘরে একজন মানুষও নেই"
এর মানে হলো
"ঘরে এক জন মানুষ নেই তবে একাধিক মানুষও থাকতে পারে"
উইয়ার্ড রাইট?
তবে যেই মুহূর্তে ওয়াহেদ কে আহাদ দিয়ে রিপ্লেস করে দিবেন
"ঘরে আহাদ মানুষ নেই"
তখন আর কোনো কনফিউশন থাকে না, ১০০% কনফার্ম যে
"এবার ঘরে আসলেই কোনো মানুষ নেই".
সূরা ইখলাসের এই হা সূচক বাক্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো এই আহাদ
অর্থাৎ ইউনিকনেসের মধ্যেও ইউনিক নেস!
মনে রাখবেন
আল্লাহর সব বিশেষণ এই আহাদের ফিল্টারে ফিল্টারড
যেমন
আমরা আল্লাহর অনেক বিশেষণ মানুষের উপর প্রয়োগ করি
যেমন রহিম গফুর কিংবা রউফ
কিন্তু যখন তাঁর নিজের জন্য বলি
তখন সেটা হয়ে যায় আহাদ স্কেলের, যেমন
তিনি রহিম তবে ইউনিকলি রহিম
তিনি গফুর তবে ইউনিকলি গফুর
তিনি রউফ তবে ইউনিকলি রউফ
আহাদের এই বুঝ বিলাল রা. যেভাবে বুঝেছিলেন সেটা ছিল অনন্য
তার এই আহাদের প্রতি ভালোবাসাই তাকে নিয়ে যায় অন্য এক উচ্চতায়
তিনি হয়ে উঠেন রাসুলের অন্যতম কাছের মানুষ
হয়ে উঠেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন
বিষয়টা এমন নয় যে
উনার গলার স্বর উঁচু ছিল শুধু এই জন্যে
কারণ রাসূলুল্লাহ জানতেন
বিলাল রাঃ যখন প্রতিবার "আল্লাহু আকবার" বলে ডাক দিবেন
তিনি যেভাবে এটাকে উপলব্ধি করতে পারবেন অন্যরা নাও পারে
কারণ তার সেই এক্সট্রিম এক্সপেরিয়েন্স ছিলো
বাই দা ওয়ে
তিনি কিন্তু শুধু মসজিদে নববিরই প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন না
ছিলেন বাইতুল্লারও প্রথম মুয়াজ্জিন
তাও কি! কাবায় চড়ে আজান দিয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের দিন
শুধু তাই না
রাসূলের মৃত্যুর পর তিনি মদিনা ছেড়ে দেন
তবে হজরত উমার রাঃ যখন জেরুজালেম জয় করেন
কি ভাবে কি ভাবে যেন তিনি সেখানে উপস্থিত হোন
তখন তিনি বিলাল রাঃ কে আবার আজান দেয়ার জন্যে রিকোয়েস্ট করেন
তিনি ফেলতে পারেননি
হয়ে যান বায়তুল মুকাদ্দাসেরও প্রথম মুয়াজ্জিন!
অর্থাৎ আমাদের প্রধান তিন তিনটা মসজিদের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন এই বর্ষীয়ান ইথোপিয়ান প্রিন্স!
আজ গল্পে গল্পে আমিও একটা রিকোয়েস্ট করতে চাই
আশা করি আপনারাও ফেলবেন না
নেক্সট টাইম সূরা ইখলাস যখন পড়বেন
হড়বড়িয়ে না পড়ে আহাদে এসে একটু দুটো সেকেন্ড পস দিয়েন
পস দিয়ে এর ইউনিকনেসটা একটু ফিল করার চেষ্টা করিয়েন
দেখবেন অদ্ভুত এক ঢেউ বুকের মধ্যে খেলে যাচ্ছে
গলাটা ধরে আসছে!