27/03/2022
কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার, কুমারখালী, কুষ্টিয়া
কাঙাল না কাঙ্গাল, কোন বানানটি সঠিক? যদিও শাব্দ দুটির অর্থ প্রায় অভিন্ন। হরিনাথ মজুমদার নিজেকে কাঙাল না কাঙ্গাল বলতেন; কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। হরিনাথ মজুমদারের বাস্তুভিটায় প্রতিষ্ঠিত যাদুঘরে লেখা আছে “কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি যাদুঘর” পাশেই সমাধিতে লেখা আছে “কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতিসৌধ”; আবার বাড়ির নাম “কাঙ্গাল কুটির”। কাঙ্গাল হরিনাথকে নিয়ে লেখা অধিকাংশ বই, গবেষণা গ্রন্থ, স্মৃতিচারণ, রেফারেন্স, প্রবন্ধ ও পোস্টারে কাঙাল লেখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হরিনাথ মজুমদারের পঞ্চম বংশধর দেবাশিষ মজুমদার বললেন, দুটিই সঠিক; তবে উনারা কাঙ্গাল লেখেন। হরিনাথ মজুমদার গানে ‘কাঙ্গাল’ নামে ভণিতা করতেন বলে এক সময় কাঙ্গাল শব্দটি তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। হরিনাথ মজুমদার, স্ব-নামের চেয়ে কাঙ্গাল হরিনাথ নামেই বেশী পরিচিত।
১৯৯৪ সালে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের বাস্তুভিটায় “কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি যাদুঘর” নামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু শরীকী মামলায় সেখানে ১৫ বছর কোন ভবন নির্মিত হয়নি।
২০০৯ সালে, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর, জেলা পরিষদ কুষ্টিয়ার উদ্যোগে সেখানে “কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি যাদুঘর ও পাঠাগার” প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ ভবনটি তালাবদ্ধ; কোন কার্যক্রম নেই।
২০১৬ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কুমারখালী পৌরসভা ভবনের কাছে “সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর” নামে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরী করেন। বর্তমানে কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি যাদুঘর বলতে এটিকেই বুঝানো হয়।
হরিনাথ বাবু দেশের প্রথম সংঘবদ্ধ বাউল দল ‘শখের বাউল’প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই বাউল সঙ্গীত স্থানীয় ভাবে প্রধান সঙ্গীতের ফর্ম হয়ে ওঠে। গানের সাথে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, পোশাক ও উপস্থাপনায় নতুনত্ব নিয়ে তাঁর দল ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। কাঙ্গাল হরিনাথকে অনেকেই কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ/ ফিকির চাঁদ / ফকির চাঁদ বাউল নামেও চিনতেন। তিনি কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ ফকিরের গিতাবলী নামে মোট ১৬ খণ্ডে বাউল সঙ্গীত প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত মোট ১৭টি আন্যান্য গ্রন্থ রয়েছে। ফকির লালনের সাথে কাঙ্গাল হরিনাথের সখ্যতা ও বেশ হৃদ্যতা ছিল; অনেকটা গুরু-বন্ধুর সম্পর্ক।
কাঙ্গাল হরিনাথকে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশ ও সাংবাদিকতা পেশারও পথিকৃৎ বলা হয়। ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ লেখা-লেখির মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিক জীবন শুরু (‘সংবাদ প্রভাকর’ প্রথম বাংলা পত্রিকা, ১৮৩১ সালে কলকাতায় প্রকাশনা শুরু হয়, সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত)। পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে তিনি দেশের প্রথম পত্রিকা “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা”-এর প্রকাশনা শুরু। দেশের প্রথম ছাপাখানা “এম. এন. প্রেস” প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বও এই কাঙ্গাল হরিনাথের।
হরিনাথ মজুমদারের ছাপা খানার আদি মুদ্রণযন্ত্র, টাইপ কেস ও তাঁর স্মৃতি সামগ্রী কোন সরকারী যাদুঘরেই সংরক্ষণ করা হয়নি। আদি মুদ্রণযন্ত্র, টাইপ কেস ও বিভিন্ন প্রিন্টেড স্যাম্পল দেখতে হলে তাঁর বাড়িতে তাঁর বংশধরদের সহযোগিতা নিতে হবে। এম. এন. প্রেসে তাঁর ব্যবহৃত মুদ্রণযন্ত্র, টাইপ কেস ও বিভিন্ন প্রিন্টেড স্যাম্পল পারিবারিক ভাবে সংরক্ষিত আছে। প্রেসের সাথে লাগোয়া তাঁর সমাধি ও বাসভবন। বাসভবনে বর্তমানে তাদের পঞ্চম বংশধররা বসবাস করছেন।
কাঙ্গাল হরিনাথের যাদুঘর ও বাস্তুভিটা খুব কাছাকাছি এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী শহরে অবস্থিত।