16/11/2024
কিভাবে কানাডার ১০ বছর মেয়াদি ভিজিট ভিসা পাবেন।
কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন প্রক্রিয়া:
আমার এই পর্যন্ত এপ্লাই করা সবচেয়ে ভেজাল এপ্লিকেশন প্রসেস ছিল কানাডার এপ্লিকেশন । তবে একটা সুবিধা বেশ সুন্দর, সেটা হলো ভিসার অবস্থান ট্র্যাক করার সুবিধা কানাডার প্রসেসে ইজি । আপনার এপ্লিকেশন কোন পর্যায়ে আছে বর্তমানে তার অবস্থা নিজে নিজে যাচাই করা যায় ।
কানাডায় ভিসার আবেদন করার আগে কি কি কাগজ লাগবে তা গুগল করে সহজেই জানা যায় । বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (স্টুডেন্ট, ভিজিটর, ব্যবসা ইত্যাদি) ভিসা দেয়া হয় । আপনি যে ক্যাটাগরিতে যেতে চান, সেটা সিলেক্ট করলে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, কত টাকা লাগবে সব তথ্য দেখাবে । তখন আপনি সেই অনুসারে কাগজপত্র রেডি করে তারপর ভিসার জন্য আবেদন পূর্ণ করবেন । আমি ভিজিটর ভিসায় এপ্লাই করেছিলাম । আজকে ভিজিটর ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে লিখব ।
এপ্লিকেশন প্রসেস: কানাডার ভিসার আবেদনের জন্য আপনাকে এম্বেসিতে যেতে হবে না । ঘরে বসেই ভিসার আবেদন করতে পারবেন । কানাডায় ভিসা এপ্লিকেশন করার জন্য আপনাকে প্রথমে IRCC তে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে । একাউন্ট ক্রিয়েট করার জন্য www.canada.ca ওয়েবসাইটে যাবেন । এখানে গেলে আপনি ভিসা আবেদনের বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেখতে পাবেন । যে ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে চান সেই ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে তা দেখাবে । প্রথমে আপনাকে একাউন্ট তৈরি করতে হবে ৷ একাউন্ট দিয়ে আপনি আপনার এপ্লিকেশন সাবমিশন করতে পারবেন ।
একাউন্ট খোলা: দুইভাবে খোলা যায় । আমি GCKey দিয়ে ওপেন করেছি । IRCC তে একাউন্ট Open with GCKey দিয়ে খুলবেন । যারা প্রথম একাউন্ট ক্রিয়েট করছেন তারা পাবেন " Don't have an account? এই অপশনের নিচেই রেজিস্ট্রার অপশন পাবেন । সেখানে গিয়ে একাউন্ট খুলবেন । একাউন্ট ক্রিয়েট করতে গিয়ে ইউজার নাম এবং পাসওয়ার্ড দিবেন । এখানে কিছু টার্মস এবং কন্ডিশন পাবেন, সেগুলো accept করবেন । একাউন্ট সাইন আপ করে (Not sign in, যিনি একদম নতুন একাউন্ট ক্রিয়েট করছেন তিনি Sign up) একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে । পাসওয়ার্ড (ক্যাপিটাল লেটার, স্মল লেটার, সাইন, সংখ্যা) দিয়ে করতে হয় । এভাবে GCKey একাউন্ট ক্রিয়েট হবে । এখানে কিছু রিকভারি প্রশ্ন থাকে। যদি আপনি ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে রিকভারি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে একাউন্ট উদ্ধার করতে পারবেন ।
একাউন্ট হবার পর এবার আপনি sign in with GCKey তে গিয়ে যাবেন । এখানে গেলে Create an account option পাবেন । এখানে Given Name, Last Name, Email Address ইত্যাদি দিলে এরপর আপনি Start an application option পাবেন । এখানে পার্সোনাল চেকলিস্ট (ডকুমেন্টস কি কি লাগবে) পাবেন । এরপর Find out if you are eligible to apply এই অপশনে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন পাবেন, সেগুলো উত্তর দিয়ে কন্টিনিউ করতে থাকবেন ( এই অপশন টা ঠিক অটোমেটিক আপনাকে টার্গেটে নিয়ে যাবে৷। যেমন প্রথম শ্রেণির পর, ২য় শ্রেণি, তারপর ৩য় শ্রেণি ) । প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী কি উত্তর দিতে হবে আপনি নিজেই বুঝবেন । খুবই সিম্পল প্রসেস । এরপর আপনাকে খরচ দেখাবে (Visitor Visa Fee) । এরপর কন্টিনিউ করতে থাকবেন । এরপর আপনি Submitting your application option পাবেন ৷ এখানে আপনি Upload your documents option পাবেন । সব ডকুমেন্টস রেডি থাকলে আপনি তখনই আপলোড দিতে পারেন , না হলে পরে দিতে পারবেন । তবে ৬০ দিনের মধ্যে এপ্লিকেশন সাবমিট করতে হবে ।
যেসব ডকুমেন্টস দিতে হবে:
১. পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট এর ফ্রন্ট পেজ স্ক্যান কপি দিতে হবে । আপলোড অপশনে গিয়ে আপলোড দিবেন ।
২. ট্রাভেল হিস্ট্রি : আপনি যত দেশ ঘুরেছেন তার ভিসা এবং ইমিগ্রেশন সিল সহ আপলোড দিতে হবে । এখানে সব গুলো মিলে আপনাকে একটা ফাইল বানাতে হবে,যে ফাইলের সাইজ Not more than 4MB হতে হবে । কি সাইজ, কি ফরম্যাট তা ডকুমেন্টস অপশনেই বলা আছে । এরপর সব গুলো স্ক্যান করে একটা পিডিএফ ফাইল বানিয়ে নির্ধারিত সাইজের মধ্যে আপলোড দিবেন ।
৩. ফিনানশিয়াল স্টেটমেন্ট: এখানে আপনার Employment letter, ব্যাংক একাউন্ট সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, প্রপার্টি ভ্যালু, টিন সার্টিফিকেট, প্রফেশনাল সার্টিফিকেট ( যদি থাকে, যেমন আপনি ডাক্তার তার সার্টিফিকেট) ইত্যাদি একটা ফাইল করে আপলোড করে দিবেন ।
৪. নিজের ছবি:৪২০× ৫৪০ সাইজের নিজের ছবি আপলোড দিবেন ।
৫. পারপাজ অফ ট্রাভেল: এখানে তারা বিমান টিকেট, ভ্রমণ বর্ণনা ইত্যাদি চায় । তবে আপনি Statement of Purpose এই আকারে পারপাজ অফ ট্রাভেল দিতে পারেন । সেখানে আপনি ভ্রমণ কারণ লিখবেন, কান্ট্রি টাই দিবেন । কানাডায় আপনার থাকার ইচ্ছা নাই ইত্যাদি লিখবেন । নিজের ভ্রমণ খরচ নিজে বহন করবেন, নাকি যিনি ইনভাইটেশন দিয়েছেন তিনি করবেন এসব লিখবেন । আমি এসব লিখে ডক ফাইল আপলোড দিয়েছি । বিমান টিকিট এসব দেয়নি ।
৬. ইনভাইটেশন লেটার: আমার ইনভাইটেশন লেটার ছিল সেটা আপলোড করেছি । কানাডা থেকে মামাতো ভাই দিয়েছেন৷
৭. IMM 5645 ফর্ম পূর্ণ: এটা ইংরেজি এবং বাংলায় লিখতে হয় । পরিবারের সবার তথ্য । আমি অভ্র দিয়ে লিখেছি । লিখে ইংরেজিতে পুরো নাম Nazmul Islam লিখে দিয়েছি । আপনি চাইলে সিগনেচারও দিতে পারেন ।
৮. IMM 5257 ফর্ম পুর্ণ : এখানে সব প্রশ্ন পূরণ করে আপলোড দিতে হয় । এখানে যে সমস্যা ফেইস করতে হয়, তা হলো ফর্মটি ভ্যালিডেট করা । এটা শিখতে গিয়ে আমার টানা ৭ দিন লেগেছে । কোন তথ্য ভুল হলে বা অপূর্ণ থাকলে ভ্যালিডেট হয় না । ভ্যালিডেট করার জন্য আপনি ফর্মটি open with acrobat adobe reader দিয়ে ওপেন করবেন । এরপর ভ্যালিডেট করবেন ।
৯। প্রুফ অফ রিলেশনশিপ: এটা আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে আপনার সম্পর্ক কাগজ গুলো দিবেন । যেমন আমি আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট, মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিয়েছি ।
আপলোড ডকুমেন্টস করার পর পেমেন্ট অপশন পাবেন । পেমেন্ট হবার পর ফাইল সাবমিশন হবে । ইমেইলে পেমেন্ট রশিদ এবং ফাইল সাবমিশন কনফার্ম পাবেন । এরপর আপনার একাউন্টে ঢুকে পেমেন্ট রশিদ ডাউনলোড করে নিবেন । একদিন পর বায়োমেট্রিক ইন্সট্রাকশন লেটার পাবেন । এটা পাবার পর VFS Global Dhaka তে আপনি Appointment নিবেন বায়োমেট্রিক দেয়ার জন্য । VFS এ Appointment লেটারে কি কি নিতে হবে তার একটা বর্ণনা আছে ( বায়োমেট্রিক ইন্সট্রাকশন লেটার, পেমেন্ট রিসিপ্ট, বায়োমেট্রিক appointment লেটার, পাসপোর্ট মূল কপি, পাসপোর্ট প্রথম পাতা একটা ফটোকপি) । নির্ধারিত দিনে গিয়ে VFS এ বায়োমেট্রিক দিবেন ।
VFS কথকতা: VFS এ কোন টাকা লাগবে না । ক্লায়েন্টদের বলবে এই সার্ভিস কি আপনি একাই নিবেন, নাকি আমাদের হেল্প নিবেন? আসলে কোন কাজই না । একটা ট্র্যাপ এটা । আপনি বলবেন আমি নিজেই করব । একটা ফর্ম দিবে তারা(কনসেন্ট ফর্ম, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পাসপোর্ট আপনার প্রতিনিধি জমা দিতে পারবে, পাসপোর্ট কালেকশন করতে পারবে)৷ সেটা পুর্ণ করে ফটোকপি করে জমা দিবেন । এই ফর্ম চাইলে আপনি আগে থেকেও ডাউনলোড করে পুরণ করে নিয়ে যেতে পারেন । এরপর বায়োমেট্রিক এর জন্য অপেক্ষা । বায়োমেট্রিক দিয়ে আসার পর মূল অপেক্ষা শুরু ।
বায়োমেট্রিক দেয়ার পর করণীয়: আমার এপ্লিকেশন নিজে নিজে করার উৎসাহ দেন কানাডা প্রবাসী মামাতো ভাই । ৭ তারিখ ফাইল সাবমিশন করি । ৮ তারিখ বায়োমেট্রিক ইন্সট্রাকশন লেটার পাই । এরপর VFS এ ১৩ জুলাই বায়োমেট্রিক দেয়ার তারিখ পাই । আমি বায়োমেট্রিক দিয়েছিলাম ১৩ জুলাই । বায়োমেট্রিক দেয়ার ৯ দিন পর (২১ জুলাই) অরজিনাল পাসপোর্ট রিকুয়েষ্ট পাই । ২৩ জুলাই পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর VFS থেকে ইমেইলে নিয়মিত পাসপোর্ট এখন কি অবস্থায় আছে তা ইমেইলে জানতে পাই । ২৬ তারিখ পাসপোর্ট সিংগাপুর পৌঁছে । ২৭ জুলাই ভিসা স্টিকার মারা হয় । যথারীতি আমার IRCC ACCOUNT এ তখন এপ্লিকেশন স্ট্যাটাস চেইঞ্জ হয়ে যায় । কত বছরের ভিসা পেলাম তখনই IRCC ACCOUNT থেকে জানতে পারি । তারপর ৩১ জুলাই VFS থেকে পাসপোর্ট কালেকশন ইমেইল পাই । ১০ বছরের জন্য ভিসা পাই । সাধারণত পাসপোর্ট জমা দেয়ার ৭-১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট রিটার্ন পাওয়া যায় ।