03/06/2024
জার্মানিতে আসার পর অটোমোটিভে জব করার সুবিধাগুলো বলি?
প্রথম কথা হচ্ছে যে কোম্পানিতে জব করবেন, সে কোম্পানির সব লেটেস্ট মডেলের পার্সোনাল কার পাবেন। জেনারেলি যে কার ড্রাইভ করতে ৫০ হাজার ইউরো লাগবে, সে কার আপনি নামমাত্র খরচে পার্সোনালি ব্যবহার করতে পারবেন। ৬ মাস পর এই কার ভালো লাগছে না? জাস্ট কোম্পানির পোর্টালে ঢুকে নতুন কারের রিকোয়েস্ট দিয়ে নতুন কার নিয়ে নিবেন। যারা কার Enthusiast তাদের জন্যে মার্কেটের নতুন কার ড্রাইভ করা একটা ক্রেজ, এবং এই সিস্টেমে অলঅয়েজ আপনি লেটেস্ট কারগুলো ড্রাইভ করতে পারবেন।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, হোম অফিস। বেশিরভাগ কোম্পানিতেই হোম অফিস। বাসায় বসে, ঘরের খাবার খেয়ে, ট্রাফিকের প্যারা আর বরফের দিনে ওই ঠাণ্ডার কষ্ট ছাড়া জব করার শান্তি যারা হোম অফিস করে শুধু তারাই বোঝে।
তৃতীয় হচ্ছে, ইংরেজি মাধ্যম। জার্মানির নাম শুনলেই অনেকে এখনো ভয় পায় জার্মান ভাষা শিখার নাম শুনে। কিন্তু অটোমোটিভ কোম্পানিতে হাজার হাজার জব আছে ইংরেজিতে। কিন্তু শুধু মার্সেডিজ-ব্যাঞ্জেই যতগুলো ইংরেজি জব, সেগুলো এপ্লাই করে শেষ করতে করতে আপনার এক-দেড় মাস লেগে যেতে পারে।
চতুর্থ হচ্ছে, ইন্টার্নেশনাল কালচার। একটি টিমে বিভিন্ন দেশের মানুষ পেয়ে যাবেন। সবার থেকে তাদের কালচার, খাবার-দাবার, এবং ভাষা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আর ইন্টার্নেশনাল কালচারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনাকে কিছুর জন্যে জাজ করা হবেনা। আপনি চুল বড় রাখেন, বা হাফ প্যান্ট করে অফিসে জান, কারো কিছুই যায় আসে না।
পঞ্চম হচ্ছে, জার্মান ভাষা ফ্রীতে শেখার সুযোগ। জার্মানিতে জার্মান ভাষা শিখতে সাধারণত মাসে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু কোম্পানিতে জার্মান ভাষা ফ্রীতেই শেখানো হয়, তাও আবার অনলাইন বা অফলাইন - আপনার যেভাবে সুবিধা। কোর্স এবং পরীক্ষার সব খরচ কোম্পানির - তাতে আপনার যতদিনই লাগুক না কেনো।
ষষ্ঠ হচ্ছে, ক্যারিয়ার গ্রোথ। সাধারণত ভার্সিটির পর, ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্যে বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স এবং সার্টিফিকেশনের দরকার পর। প্রতিটা কোম্পানিতে সবাইকে প্রায় ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার লার্নিং বাজেট দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে আপনি যা ইচ্ছা শিখতে পারেন এবং সার্টিফিকেশন নিতে পারেন।
সপ্তম হচ্ছে, কোম্পানির টাকায় ঘুরাঘুরি, ঐ যে লার্নিং বাজেটের কথা বললাম? এটা দিয়ে অনেকে বিভিন্ন দেশ ঘুরেও আসে। কিভাবে? লার্নিং বাজেট হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। কোন কোর্স করতে এতো টাকা লাগে? কোর্স নেয়া যায় অন্য একটা দেশে, তাতে করে সেই দেশে যাওয়া, থাকা, কোর্স করা, এবং আনুষঙ্গিক সব খরচ এই টাকা দিয়ে কাভার করা যায়। আমার মনে হয় ২৫০০ ইউরো দিয়ে ইউরোপ, সুইজারল্যান্ড, বা ইউকে থেকে কোর্স করে আসতে এর চেয়ে বেশি খরচ লাগার কথা না। আর বাড়তি কিছু লাগলে আপনি নিজে কাভার করতে পারবেন।
অষ্টম হচ্ছে, প্রতি মাসেই আলাদা কিছু টাকা দেওয়া হয় Health Coverage এর জন্যে। যেমন জিম, Yoga - বা এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক খাতে এই টাকা আপনি ব্যয় করতে পারেন।
নবম হচ্ছে, জব সিকিউরিটি। জার্মান অটোমোটিভ কোম্পানিগুলোতে জব সিকিউরিটি অনেক হাই। ম্যাক্সিমাম কোম্পানিত IG Metall - এর আওতাভুক্ত। তাই জব সিকিউরিটি অনেক বেশি। এ ব্যপারে আরও জানতে 'IG Metall' দিয়ে গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
দশম হচ্ছে, জার্মানির বাইরে থেকেও জব করার সুযোগ। জার্মানির নিয়ম হচ্ছে, জার্মানিতে রিমোট জব করতে হলেও জার্মানিতে অবস্থান করতে হয়। তবে বেশিরভাগ কোম্পানিতে বছরে অন্তত ৩০ দিন জার্মানির বাইরে থেকেও জব করার পার্মিশন দেয়।
পরিশেষে একটা পয়েন্ট যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে আত্মতৃপ্তি। ঘরে বসে বসে কোন ফিচারে কাজ করছেন, কিন্তু বাইরে বেরুলেই যখন দেখবেন এই গাড়িগুলোতে আপনার কন্ট্রিবিউশনগুলো হাতছানি দিয়ে আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে, এই অনুভূতিতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আর ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স অনন্য। সারা জার্মানিতেই ওভারটাইম বা উইকেন্ডে কাজ করা তেমন একটা এপ্রিশেয়েট করা হয়না। ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স খুবই ভালো।
উল্লেখ্য শুধু অটোমোটিভ নয় জার্মানিতে অন্যান্য ইন্ড্রাস্ট্রিও এই সুবিধাগুলোর অনেকগুলোই দিয়ে থাকে। তবে আমি যেহেতু অটোমোটিভ আছি, তাই এই ইন্ড্রাস্ট্রি নিয়ে লিখলাম।
লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ❤
স্কেচ: এই পোস্টের জন্যেই স্কেচটি করেছি। দেখে মনে হতে পারে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি, কিন্তু আমার কাছে নিজেকে সেই আট বছরের বাচ্চাই লাগে যে মায়ের আঁচল ধরে খেলনা গাড়ির আবদার করতো। 😊