03/12/2024
আরেকটি বনের খবর। বিস্তারিত পড়ে নিলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
‘‘সবুজের ভিড়ে হারানোর সময় সঙ্গী হয় পাতার শব্দ আর পাখির কিচির-মিচির। বনের যত গহীনে যাওয়া যায় ততই প্রবল হতে থাকে বিস্ময়কর কিছু খুঁজে পাওয়ার আকর্ষণ। কখনো তা দুর্লভ প্রজাতির কোনও গাছ বা অদ্ভূত কোনও বন্যপ্রাণী। কখনো কেবলই শান্ত স্নিগ্ধ সুন্দর সবুজ প্রকৃতি। বাংলাদেশের পাহাড়ি বনগুলোতে এ সবকিছুরই দেখা মেলে।
এ রকম একটি বনের গল্প শুনব আজ। শুকনো ও চিরহরিৎ যে-বনটি সুন্দরবনের পরেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনভূমি। একই সঙ্গে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবেও স্বীকৃত এটি।
বনটির অবস্থান সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরত্বে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান।
ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন সমগ্র অভয়ারণ্যটির আয়তন ১ হাজার ৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। হবিগঞ্জ বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের রেমা, কালেঙ্গা, ও ছনবাড়ী- এই তিনটি বিট পড়েছে অভয়ারণ্যের মধ্যে। অরণ্যের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং পথে সিন্দুরখান ইউনিয়ন হয়ে পিচঢালা পথে শ্রীমঙ্গল পৌঁছা যায়।
বনে প্রবেশ করতেই স্বাগত জানাবে মনোরম একটি লেক। পাশেই সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে পুরো বনভূমি এক নজরে দেখে নেওয়া যায়।
এখানকার প্রধান আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে শকুন দর্শন। বনভূমিটি শকুনের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত।
এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, এবং ১৬৭ প্রজাতির পাখি। পাখি প্রেমিদের জন্য এই অভয়ারণ্য সর্বোত্তম জায়গা। তবে একসঙ্গে অনেক পাখির দেখা পাওয়ার জন্য খুব ভোরে বনের ভেতর ঢুকতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি ময়না, ভিমরাজ, কাও ধনেশ, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শালিক, শ্যামা, শামুক খাওরি, ও টুনটুনিসহ আরও দুর্লভ প্রজাতির পাখি।
এই বনে ৩ প্রজাতির বানরের দেখা মেলে। এগুলো হলো- লাল বানর, নিশাচর লজ্জাবতী বানর, এবং উল্টোলেজি বানর। কাঠবিড়ালী আছে ৫ প্রজাতির, যেগুলোর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি শুধুমাত্র এখানেই পাওয়া যায়। সাপের মধ্যে দেখা যায় দুধরাজ, কোবরা, দাঁড়াশ, এবং লাউডগা।
ট্রেকিং-এর জন্য রয়েছে ৩টি ট্রেইল। এই পথে দেখা হয়ে যেতে পারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাথে। এখানে মোট চারটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস- ত্রিপুরা, সাঁওতাল, উড়ং এবং তেলুগু।
এখানে ভ্রমণের সেরা সময় কখন : ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির যেকোনো দিন এখানে ঘুরে আসা যেতে পারে। এই বনভূমিতে বৃষ্টির মৌসুম বাদে বছরের যে কোনও সময়েই ঘুরতে যাওয়া যায়। বর্ষায় ৩টি ট্রেইলের ২টিই চলাচলের একদম অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই এই অভয়ারণ্য ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে পুরো শীতকাল আর বসন্তের শুরুর সময়টা। ’’
চল ঘুরি - এর শীঘ্রই ক্যাম্পিং হবে এই বনে; রেমা-কালেঙ্গা ও ছনবাড়ীর বনে। যাবেন?
জরুরি জ্ঞাতব্য :
- কোনোভাবেই উচ্চস্বরে গান বাজানো বা শব্দদূষণ হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না
- যেখানে-সেখানে পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলা যাবে না
-ফানুস ওড়ানো যাবে না
-বনের ভেতর আগুন ধরানো যাবে না
- স্থানীয় অধিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।