17/07/2015
সিলেটে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে আঘাতে আঘাত তিলে তিলে হত্যা করার সেই দৃশ্য ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে এখন দেশ ছড়িয়ে বিদেশে সমালোচনার ঝড় তুলছে। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত গঠনে লন্ডনে চলছে ‘জাস্টিস ফর রাজন’ নামে ফান্ডরাইজিং কর্মসূচি।
এদিকে এর আগে ১২ লাথ টাকায় রাজন হত্যাকারীদের বাঁচিয়ে দিতে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ গণমাধ্যমে চাউড় হলেও এখন শোনা যাচ্ছে ২৫ লাখ টাকায় পুরো মামলাটাই রফা করার চেষ্টা চলছে। এলাবাসী এ অভিযোগ করেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে।
মামলা রফা করার অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যারাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন তাদেরকেও মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ওসির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গত ৮ জুলাই চোর সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিশু রাজনকে। হত্যার এ দৃশ্য ফেসবুক ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশবিদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে প্রতিদিনই এলাকাবসী মিছিল মিটিং করছেন। বৃহস্পতিবারও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
এ ঘটনা ধামচাপা দিতে আসামি মুহিতকে ছাড়িয়ে নিতে ও তার ভাই আসামি কামরুলকে নিরাপদে বিদেশে যেতে সহায়তা করতে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। ছেলে হত্যার বিচার চাওয়ায় টাকা খেয়ে এসআই আমিনুল ইসলাম রাজনের বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তখন পুরো ১২ লাখ টাকায় পুরো বিষয়টি মিমাংসা করার খবর এলাকায় চাউর হলেও এখন এলাকাবাসী ২৫ লাখ টাকায় তা রফা করার চেষ্টা চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তারা জানান, এ টাকার মধ্যে ৫ লাখ রাজনের বাবাকে দেয়া হবে, বাকিটা মধ্যস্থতাকারীদের।
হত্যার তথ্য দিতে গিয়ে জেলে!: এদিকে রাজন হত্যার ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ—এরকম অভিযোগ কুমারগাঁওয়ের অনেকেরই। তারা বলেছেন, রাজন হত্যা সম্পর্কে তথ্য দিতে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা এখন মামলার আসামি। তাদের কেউ কেউ এখন জেলে।
কুমারগাঁওয়ের আজমত উল্লাহ ও তমজিদ আলী নামের দুই দিনমজুরের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও আদায় করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী বলছেন, রাজনের লাশ গুম করার সময় যারা খুনিদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়েছিল তাদেরকে এখন উল্টো মামলায় ফাঁসাচ্ছে পুলিশ। রাজনের লাশ গুম করার জন্য খুনিরা যখন মাইক্রোবাস নিয়ে কুমারগাঁও অভিমুখে যাচ্ছিল তখন তাদেরকে আটক করে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিল গ্রামের কয়েকজন যুবক। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেই এখন উল্টো মামলায় ফাঁসাচ্ছে পুলিশ। কুমারগাঁও জামে মসজিদের মোতায়াল্লি মাওলানা নূরুল ইসলাম, আলা উদ্দিন, কুতুব উদ্দিন, ফয়জুল মিয়াসহ অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা হলে কেউ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করতে ভয় পাবে।
রাজন হত্যা মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য দেয়ার আহ্বান জানালে কুমারগাঁওয়ের দিনমজুর আজমত উল্লাহ (৫৫) ছুটে গিয়েছিলেন থানায়। স্বজনরা জানান, সাক্ষ্য নেয়ার পর বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে আজমত উল্লাহকে মামলার আসামি সাজিয়ে কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। আজমত উল্লাহর ছেলে আব্দুস সালাম ও মেয়ে নাজমা বেগম জানান, তারা দিনমজুর। দিন আনেন দিন খান। এখন তারা মামলা মোকাবেলা করবে কীভাবে, আর খাবেই বা কী?
পুলিশ বলছে, আজমত উল্লাহসহ দুজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তাই তাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ওসি জানান, কোনো অপরাধ সম্পর্কে অবহিত হয়ে বা প্রত্যক্ষ করে যদি বিষয়টি পুলিশকে না জানানো হয় তাহলে সেটাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান: রাজন হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজা ম্যানশন ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে পশ্চিম জিন্দাবাজার এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ তানুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হোসেন খানের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা মো. আবুল বশর, আবুল কাশেম আহমদ, তৈয়বুর রহমান নান্নু প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা রাজন হত্যাকারীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের দাবি জানান। তারা রাজনের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান।
আন্তর্জাতিক উদ্যোগ: রাজনের পরিবারকে সহায়তার জন্য ‘জাস্টিস ফর রাজন’ নামে অনলাইনে চলছে ফান্ডরাইজিং কর্মসূচি। রাজনের জন্য আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগ নিয়েছেন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক ডেপুটি মেয়র, কাউন্সিলর ওলিউর রহমান। তার সাথে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। মাসব্যাপী এই কালেকশনে ইতোমধ্যে দুই হাজার ৮১৮ পাউন্ড সংগ্রহ হয়েছে। দিন দিন এই অঙ্ক দ্রুত বাড়ছে। একই সাথে রাজন হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত গঠনে নানামুখী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
লন্ডন থেকে এই তথ্য জানিয়েছেন ওলিউর রহমানের ভাই মনসুর আহমদ। তিনি জানান, রাজনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্বজনমত ও উদ্যোগের জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বরাবর ই-পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের এমপি রুশনারা আলীর কাছে।
ওলিউর রহমান বলেন, রাজন হত্যার লোমহর্ষক ভিডিও দেখে সবার মতো তিনিও মর্মাহত হয়েছেন। রাজন যাতে ন্যায়বিচার পায়, তার পরিবার যাতে অর্থনৈতিক সাপোর্ট পায় এজন্য সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই উদ্যোগ সম্পর্কে রাজনের মা-বাবার সাথেও তিনি কথা বলেছেন। সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
সুত্র :- http://www.amardeshonline.com/pages/details/2015/07/17/293009 #.Vakzr-Hw_IV
Description for my template