03/04/2022
পবিত্র_রমজানে_ওমরাহ_পালন_হজের_সমান_সওয়াব
---------------------------------------------------------------------------
ওমরাহ শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাগৃহের জিয়ারতই মূলত ওমরাহ। ইসলামের ভাষায় পবিত্র হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরাহ বলা হয়।
#রমজানে_ওমরাহ_করলে_হজের_সমতুল্য_সওয়াব
পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালন করলে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। এই জন্য যাদের সুযোগ ও সামর্থ্য রয়েছে, তারা সম্ভব হলে রমজানে পবিত্র ওমরাহ পালন করা উচিত। এতে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও ইবাদত সুন্দরভাবে পালনের পাশাপাশি বিপুল সওয়াব লাভও হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের?’ ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি।’ নবী (সা.) বলেন, ‘আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরাহ করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৮২)
নফল ইবাদত যত বেশি আদায় করা যায় ততই সওয়াব। ওমরার ক্ষেত্রেও একই কথা। যতবেশি ওমরা আদায় করা যাবে সওয়াব ততবেশি হবে। ওমরার ফযিলত প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রথম ওমরা আদায়ের পর দ্বিতীয় ওমরা আদায় করার দ্বারা দুই ওমরার মাঝের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যথাযথভাবে হজ আদায় করার প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।’ (সহিহ বোখারি-১৭৭৩)। অবশ্য গুনাহ মাফের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে এর দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মাফ হবে আর কবিরা গুনাহ মাফের জন্য তওবা করা শর্ত।
#হজের_আগে_ওমরা_করা_কী_নিষেধ?
আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণার প্রচলন আছে। তা হচ্ছে, হজ করার আগে ওমরা করা যায় না। এই ভুল ধারণা হয়তো যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। তাই এই ধারণা দূর করার জন্য ইমাম বোখারি (রাহ.) সহিহ বোখারিতে একটি অধ্যায়ই রচনা করেছেন। তিনি সেখানে হাদিস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, হজের আগে ওমরা করা যায়। হজরত ইকরেমা ইবনে খালেদ (রহ.) ইবনে ওমর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হজের আগে ওমরা করতে কী কোনো সমস্যা আছে? ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) হজের আগে ওমরা করেছিলেন। তাই এতে কোনো সমস্যা নেই। (সহিহ বোখারি-১৭৭৪)।
#ওমরায়_যত_কষ্ট_তত_সওয়াব
বিদায় হজ্জের সময় হজরত আয়শা (রা.) হজের মধ্যবর্তী সময়ে ঋতুবর্তী হয়ে যান। তখন তিনি তওয়াফ ব্যতিত বাকি সকল কার্যক্রম চালিয়ে যান। ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পর তিনি তওয়াফ করেন এবং রাসূল (সা.)- কে বলেন, আপনারা হজ ও ওমরা করেছেন আর আমি শুধু হজ করব?
একথা শুনে হজরত আয়শার ভাই আব্দুর রহমান (রা.)-কে রাসূল (সা.) নির্দেশ দিলেন তানঈম নামক স্থানে তাকে নিয়ে যেতে এবং সেখান থেকে নতুনভাবে ওমরার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে। এবং একথাও বললেন, তুমি সওয়াব পাবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুযায়ী। (সহিহ বোখারি-১৭৮৭)। অর্থাৎ অন্যদের তুলনায় তোমার কষ্ট বেশি হয়েছে বিধায় তুমি সওয়াবও বেশি পাবে।
#ওমরা_আদায়ের_সময়
আম্মাজান হজরত আয়শা (রা.) থেকে একমাসে দুইবার ওমরা করা প্রমাণীত আছে। এক ওমরার পর দ্বিতীয়বার ওমরা করার দ্বারা উভয় ওমরার মাঝের গুনাহ মাফ হওয়ার কথা হাদিসেই বলা হয়েছে আর দুই ওমরার মাঝে কোনো সময়ের শর্তও যুক্ত করা হয়নি। হজরত আলী (রা.) মাসে একবার ওমরা আদায় করতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বছরে কয়েকবার ওমরা আদায় করতেন।
ইসলামের পূর্বে আরবরা হজের মাসগুলোতে ওমরা আদায় করাকে অপছন্দ করত। রাসূল (সা.) হজের মাসে ওমরা আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য ওমরাকে হজের মধ্যে দাখেল করে দেয়া হয়েছে।
হানাফি মাজহাব মতে জিলহজ মাসের পাঁচদিন ওমরা আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী। সেই পাঁচদিন হচ্ছে- জিলহজ মাসের নয়, দশ, এগার, বার ও তের তারিখ । তবে কেউ এই দিনগুলোতে ওমরা আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু গুনাহগার হবে। (কামুসুল ফিকহ, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪১৪)।
আসুন_জানার_চেষ্টা_করি
হযরত রাসূল (সা.) কতবার ওমরা করেছিলেন?
ওমরার আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে রাসূল (সা.) কতবার ওমরা করেছিলেন। এ জন্য হাদিস ও সীরাতের গ্রন্থসমূহে রাসূল (সা.) এর ওমরা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম বোখারি (রাহ.) এ ব্যাপারে সহিহ বোখারিতে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি এই অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন ‘রাসূল (সা.) কতবার ওমরা করেছিলেন?’
হাদিস ও সীরাতের কিতাব থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) মোট চারবার ওমরা করেছিলেন। সহিহ বোখারিতে হজরত মুজাহিদ (রা.) এর সূত্রে এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত উরওয়া (রহ.) ইবনে ওমর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল (সা.) কতবার ওমরা আদায় করেছিলেন? তিনি চারবারের কথা বললেন এবং এ কথাও বললেন, কোনো একটি ওমরা রাসূল (সা.) রজব মাসে আদায় করেছিলেন। চারবার হচ্ছে যথা-
প্রথম: হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়। মদিনায় আসার পর ষষ্ঠ হিজরির ঘটনা। রাসূল (সা.) স্বপ্নে দেখেন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তিনি বাইতুল্লায় হজ আদায় করছেন। জাগ্রত হওয়ার পর তাই তিনি ওমরা আদায়ে সিদ্ধান্ত নিলেন। সাহাবায়ে কেরামের বিশাল এক জামাত নিয়ে ওমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে, মক্কার মুশরিক সম্প্রদায় দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন। এবং এখানেই ঐতিহাসিক হুদাইবিয়া সন্ধি হয়। সন্ধির শর্ত মোতাবেক রাসূল (সা.) ওমরা সম্পন্ন না করেই ফিরে আসেন। তাই রাসূল (সা.) এর প্রথম ওমরা অসম্পন্ন ছিলো।
দ্বিতীয়: হুদাইবিয়া সন্ধির কারণে প্রথমবার ওমরা করতে না পারায় নবী করিম (সা.) সপ্তম হিজরিতে ওই ওমরার কাযা আদায় করেন। আল কোরআনে বর্ণিত ‘আর তোমরা আল্লাহ তায়ালার জন্য হজ ও ওমরা পরিপূর্ণ কর।’ এর মর্ম রাসূল (সা.) আমলের দ্বারা দেখিয়েছেন। অর্থাৎ ওমরা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি তা সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তীতে তা পূর্ণ করতে হবে, যাকে শরয়ি পরিভাষায় ‘কাযা করা’ বলা হয়। অনেক ভাই মনে করেন নামাজ কাযা হয়ে গেলে তা আদায় করতে হয় না। কিন্তু রাসূল (সা.) আমাদের দেখালেন যে, আদায়যোগ্য কোনো কাজ কাযা হয়ে গেলে পরবর্তীতে তা আবার আদায় করতে হয়।
তৃতীয়: মক্কা বিজয়ের পর হুনাইনের যুদ্ধ সংগঠিত হয় । তাতে রাসূল (সা.) উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় ‘জির্আরানা’ নামক স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরা আদায় করেন। এই ওমরা আদায় করেছিলেন অষ্টম হিজরিতে।
চতুর্থ: দশম হিজরিতে নবী করিম (সা.) বিদায় হজ করেন। ওই হজে নবী করিম (সা.) ‘কিরান হজ’ করেছিলেন। ‘কিরান হজ’ বলা হয় হজ ও ওমরা একসঙ্গে আদায় করাকে।
হজের ন্যায় ওমরাও মুসলমানদের বড় একটি ইবাদত। সারা বিশ্বের লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলমান প্রতি বছর ওমরা আদায় করে।
হজ ও ওমরা আল্লাহর জন্য করা, লোক দেখানোর জন্য নয়। তাহলেই আমার হজ ও ওমরা আখেরাতে মুক্তির উসিলা হবে।
ইনশাআল্লাহ, মাহে রামাদান কারীমে, এবং ঈদ পরবর্তী, হযরত শাহ জালাল রাহ হজ্জ গ্রুপ (ব্যবস্থাপনায় ক্লাব ট্রাভেলস লিমিটেড লাইসেন্স নাম্বার ৭২০) সম্মানিত উমরা হাজী ছাহেবানদের গ্রুপ প্যাকেজ সমূহ যথাক্রমেঃ-
* ৯ ই এপ্রিল * ২২ শে এপ্রিল * ২৪ শে এপ্রিল * ৩০ শে এপ্রিল এবং ঈদ পরবর্তী ৭ এবং ১০ই মে
বিমান বাংলাদেশের মাধ্যমে সরাসরি আমাদের পবিত্র উমরা হাজীদের কাফেলা যাতায়াত করবে।
রাব্বুল আলামীন দয়াল রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পবিত্র আহলে বাইতে আতহারের উছিলায় আমাদের প্রয়াস সমূহ কবুল করুন।
---------------------------------------------------
আগ্রহী গণ যোগাযোগ করতে পারেনঃ-
মুফতী শাহ ফাইজুল কাবির চৌধুরী (বদরী) নীলফামারী।
01519444084 / 01723444084
(ব্যবস্থাপনায়, সেন্টার পয়েন্ট ট্রাভেলস লিমিটেড লাইসেন্স নাম্বার ২২৪ এবং ক্লাব ট্রাভেলস লিমিটেড লাইসেন্স নাম্বার ৭২০)