18/08/2021
#কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিশ্বের দীর্ঘতম ও প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতটি হলো কক্সবাজার। যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি ১২০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। সৈকতটি সাধারনত বালুকাময় এতে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। লম্বা ছুটি উদ্যাপনের গন্তব্য হিসেবে সবার পছন্দের তালিকায় এখনো শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার।
কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
প্রায় সারাবছরই এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লক্ষিত। শীতকাল তথা অক্টোবর থেকে মার্চ মাসকেই ধরা হয় কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সময়। সমুদ্রও এই সময় অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির থাকে। পরিবেশে থাকে এক প্রকার শীতল আমেজ। পর্যটক বেশি থাকায় এই সময় থাকার জন্য খরচটাও তুলনামূলক বেশিই করতে হয়।বৃষ্টি-বাদলের সময় লোকজন সমুদ্রবিলাসে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করে না ফলে থাকার খরচটা অনেক কমে যায়। তাছাড়া এ সময় হোটেলগুলোর ভাড়া এবং প্রায় সবকিছুতেই ছাড় পাওয়া যায়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা-কক্সবাজার প্রায় সবভাবেই যাওয়া যায়। বাস,ট্রেন,বিমান যে কোন মাধ্যমে। বাস এ যাওয়ার ক্ষেত্রে নন-এসি, এসি-ইকোনমি ক্লাস,আর এসি-বিজনেস ক্লাসে করে যেতে পারেন গন্তব্যে এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।ঢাকা থেকে যদি আপনি ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনি কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাস পাবেন।আকাশ পথে যেতে চাইলে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা সহ বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে সহজেই আপনি কক্সবাজার যেতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
থাকার জন্য কক্সবাজারে রয়েছে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে সস্তার বের্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন মানের হোটেল এবং মোটেল। যার সংখ্যা প্রায় ৫০০র ও বেশি।বিভিন্ন বিচভিও হোটেল ও বিদ্যমান। একদম সস্তা হোটেলগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটারির হোটেল রয়েছে কক্সবাজারে।
প্রিমিয়াম ক্যাটারির রিসোর্ট: - মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ বিচ রিসোর্ট, সি-গাল, সি প্যালেস, রয়্যাল টিউলিপ, হেরিটেজ, কক্স টুডে ইত্যাদি। এগুলোর রুম ভাড়া পড়বে ৬০০০ থেকে ১২০০০ হাজার টাকার মধ্যে।
এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরির রিসোর্ট: -হোটেল সি ক্রাউন, কোরাল রিফ, নিটোল রিসোর্ট, বিচ ভিউ রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি। এগুলোর রুম প্রতি ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে।
স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির রিসোর্ট: - সি ওয়ার্ল্ড, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট, হোয়াইট বিচ রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি। এসব হোটেলের ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।
তাছাড়া অফ সিজনে বুকিং না দিয়ে গেলেও সিজনে রুম বুকিং না করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া উচিত হবেনা।
অটোরিকশা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ নিয়ে কোনো হোটেলে যাওয়া ঠিক হবে না । এতে করে আপনার হোটেল ভাড়া নিশ্চিতভাবেই বেশি পড়বে। কারণ হোটেল থেকে সিএনজিওয়ালা কমিশন নিয়ে থাকে । তাছাড়া মেইন বিচ থেকে যতটা দূরে হোটেলের অবস্থান হবে, রুম ভাড়াও ততটা কম পড়বে। কক্সবাজারের প্রায় প্রত্যেকটা হোটেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। আপনি চাইলে অগ্রিম বুকিং দেওয়ার জন্য সেগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফ্যামিলি নিয়ে কক্সবাজার গেলে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে চাইলে ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়েও আপনি থাকতে পারেন৷ দুই তিন চার বেডরুমের ফ্ল্যাট আছে কক্সবাজারে। এসি, নন এসি ও ক্যাটাগরি ভেদে এগুলোর ভাড়া পড়ে ২৫০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
কি করবেন
সাগর এবং পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী দেখতে পাওয়া যায় এখানে। একই সাথে মায়াবী ও রূপময়ী এই সমুদ্র সৈকত। বালুর আঁচলে যেন ঢেলে দেয়া হয়েছে বাংলার সবরুপ। এই সৈকতে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে সাগরের উওাল গজন। বিশাল জলরাশির মতো হৃদয়েও উদ্বেলিত হয় তরঙ্গ এর চোখ ধাঁধানো সূর্যাস্ত আপনার মনকে প্রশান্তি দিবে! সমুদ্রে গেলে মনে এক অসীম অদৃশ্য অস্তিত্বের দ্বারা আন্দোলিত হবে। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল যেন এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।প্রত্যুষে এবং মধ্যাহ্নে এর রূপ ভিন্ন।পর্যটকরা এখানে আসে সী-বীচের সাথে আলিঙ্গন করতে, স্নান করতে, এর সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে আর নির্ভেজাল নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস খেতে। রৌদ্রস্নানসহ সাঁতারের সুযোগ- সুবিধাগুলি পর্যটকদের আকর্ষেনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ফেনাযুক্ত বিশাল ঢেউয়ে সাঁতার কাটা সম্ভব । প্রিয়জনের সাথে সমুদ্রঢেউ অনুভব করতে পারবেন এখানে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় বালুকাময় সমুদ্র সৈকত এর একটি বিশেষত্ব ফুটে উঠে। এই সময়ে আপনি সহজেই প্রকৃতির সাথে হারিয়ে যেতে পারবেন। যখন সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত হয় তখন মনে হয় রক্তিম গোলাকার পৃথিবী যেন সমুদ্রের ভিতর থেকে ভেসে উঠছে!এখানে বিচে বেশ কয়েকটি স্পিডবোট চলে। মেইন বিচ থেকে এগুলো চলাচল করে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত। এছাড়াও খোলা স্পিডবোটের সাহায্যে চলে লাইফ বোট। তিন চাকার বেশ কয়েকটি বিচে চলার উপযোগী বাইকও কক্সবাজার সাগর সৈকতে চলাচল করে। এসব সুবিধা আপনারা চাইলেই গ্রহন করতে পারবেন ।সাগর-পাহাড় কেন্দ্রীকও নানা আয়োজন লক্ষ করা যায় কক্সবাজারে বিশেষ করে সার্ফিং, প্যারাসাইলিং, স্কুভা ডাইভিং এর মতো অ্যাডভ্যাঞ্জার একেবারেই ভিন্নতর। তবে এরকম আয়োজনগুলো এখনও খুবই সীমিত পরিসরে রয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুমে শ দুয়েক বিচ ফটোগ্রাফার পর্যটকদের ছবি তুলে থাকে। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এসব ছবি প্রিন্ট করে নেগেটিভসহ পর্যটকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে। লাল পোশাক পরা এসব বিচ ফটোগ্রাফারদের প্রত্যেকের রয়েছে একটি করে আইডি কার্ড। এদের সাহায্যে আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে পারবেন।
সমুদ্রে নামার আগে সতর্কতা
সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিতে হবে । জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসলে নামা নিরাপদ কিন্তু ভাটার সময়ে তা বিপজ্জনক ভাটার টানে মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। জোয়ারের সবুজ পতাকা এবং ভাটার সময় লাল পতাকা ওড়ানো হয়। এই সময় সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকাই উওম। প্রয়োজেন পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লাইফ গার্ডের সহায়তা নিন।
কি খাবেন
এখানে প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেল বা হোটেলের আশেপাশে রেস্টুরেন্ট বা খাবার হোটেল রয়েছে। সাগরের বিভিন্ন মাছের মেন্যু বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে। খাবারের মেনু অনুযায়ী একেক রেস্টুরেন্টে একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা থাকে।মধ্যম মানের বাজেট সম্পন্ন রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম কিংবা বেশী হতে পারে। এছাড়াও লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন হান্ডি রেস্তারা অল্প টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরাণী চেখে দেখতে পারেন। এছাড়া কেওএফসি তো আছেই।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি আর মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এখানে আরও দেখে নিতে পারেন কিছু দর্শনীয় স্থান
যেমনঃ মেরিন ড্রাইভ,রেডিয়েন্ট ফিশ একুরিয়াম,
কলাতলী বিচ,লাবনী বিচ,হিমছড়ি,ইনানি বিচ,সোনাদিয়া,রামু ,মহেশখালী, আদিনাথ মন্দির,ডুলাহাজারা,টেকনাফ,কুতুবদিয়া,মাতার বাড়ি, শাহপরী, সেন্টমার্টিন।
ব্যস্ততম জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রায় সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে । আপনিও চাইলে সামনের কোনো ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কাটিয়ে আসতে পারেন জীবনের সেরা কিছু সময়। আবার চাইলে আমাদের ০১৯৫৭৫৮৬৩৫৫, সাথেও ঘুরে আসতে পারেন ।