28/11/2023
ক্রিসতং- মেঘরাজ্যের অনন্যা পরী ---
পাহাড় চূড়ায়...............সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।.. কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।.. যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
গভীর জঙ্গল থেকে শোনা যাচ্ছিল নাম না জানা পোকার অদ্ভুত ডাক। বিষপিঁপড়ার কামড় আর পাহাড়ি কীটের কামড়ে হাত জ্বালাপোড়া করছিল। হাঁটতে হাঁটতে একসময় মনে হলো, এ পথের বুঝি শেষ নেই। ভ্রমণ আপনাকে আঘাত দিতে পারে কিন্তু, একাকীত্ব আপনাকে হত্যা করবে।মেঘের আস্তরণ ভেদ করে হালকা রোদ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিক। রোদ লেগে শরীরে ঘাম হচ্ছে। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার ধীরে ধীরে এগিয়ে চললাম। জীবনে বেচে থাকার জন্য অনেক সাহস দরকার। এই সাহস আপনাকে ভ্রমণ এনেদিতে পারে।
এগিয়ে যাচ্ছি গভীর থেকে গহীনে, পূরণ করতে আমার শপথ।
খুঁজে পেয়েছি শ্বেতশুভ্র মেঘকন্যা KISTON,
আমার অস্থিরতার কারণ জানে অন্তর্যামি
শুধু জানে না মেঘরাজ্যের KISTON অনন্যা।
হাজারো মেঘের ভিড়ে দেখেছি তাকে-সাথে সঙ্গ দিচ্ছে সখীদের দল,
উড়ে বেড়ানো মেঘকন্যা যেন সাদা পরী
উড়িয়ে চলছে ঝকঝকে শাড়ির আঁচল,
আমার যে শেষটা দেখা বাকী।
পথ এখানে একটু উঁচুতে উঠছে। নির্জন পরিবেশ। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছি। দূর থেকে ভেসে আসছে গাছে কুঠার চালানোর ঠকঠক শব্দ। অচেনা পথ উপরন্তু প্রায় জনমানবহীন। কেউ হারিয়ে গেলে কিংবা অপহৃত হলে দায় পড়বে সবার উপর। তাই এগিয়ে চলছি দ্রুত৷
ভ্রমণ সবসময় সুন্দর হয় না। এটা সবসময় আরামদায়ক ও নয়! কখনও কখনও ভ্রমণ ব্যাথা এবং হৃদয় বিদারকও হতে পারে।— এন্থনি বুর্দিন
সম্প্রতি গাছ কাটার হিড়িক পড়েছে এখানে। চারিদিকে গাছের বাকল, ডালপালা, পাতা ছড়িয়ে আছে। গাছগুলি আমাদের জন্য তাদের নিঃশ্বাস ছেড়ে দেয় যাতে আমরা বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে পারি। আমরা কি কখনও তা ভুলে যেতে পারি ? আমরা শেষ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে তাদের মনে রাখা উচিৎ ।
গাছগুলি এমন কবিতা যা পৃথিবী আকাশে লেখে( কাহলিল জিবরান).
যারা গাছ বাঁচিয়ে রাখবে না তারা শীঘ্রই এমন একটি পৃথিবীতে বাস করবে যা মানুষকে ধরে রাখতে পারে না ।—( ব্রাইস নেলসন) আমরা কী বোকাটাই না ছিলাম। এমন বোকা, যারা বিজ্ঞান বোঝে না, ধর্ম বোঝে না, অর্থ আর অনর্থ বোঝে না। কিন্তু সমাজ আমাদের বোকা থাকতে দিল না। সমাজ কাউকে বোকা থাকতে দেবে না। সমাজ শেখাবে অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, কালোটাকা, সাদাটাকা আরও কত কী! এত কিছু শেখার পরও এই নিদানকালে নিজেকে মনে হয় অসহায়। এখন এই জীবাণু-দিনে আমাদের বুকজুড়ে সমুদ্রের গর্জন। ফুসফুসের কোষগুলোর অক্সিজেনের জন্য করুণ কান্না। এক CORONAজীবাণু পুরো শরীরকে সমুদ্র বানিয়ে ফেলে। বুকের ওপর চাপা দিয়ে রাখে এক বিশাল পাহাড়।
আশেপাশের সব পাহাড় দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। চারিদিকে পাহাড়ের রাজ্য। নীল আকাশটা কালো হতে শুরু করেছে। আকাশের বুকে ফুটে উঠেছে সবুজ পাহাড়।
KISTON পাহাড় সৃষ্টি করেছিল এক মোহময়ী রূপ, উপভোগ করেছিলাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ শুধু নিজের অনুভবের।তখন মনে হচ্ছিল যে পৃথিবীটা অতি সুন্দর, বিস্ময়কর, অতি রহস্যময়।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সেই পাহাড়ের পায়ের
কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ
কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার
খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কন্ঠস্বর সেখানে কেউ
শুনতে পাবে না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,
প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-
এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
ভরদুপুরে ঝিঁঝির ডাক ঘুঘুর বিষণ্ন ডাকের চেয়েও নির্জন অনুভূতি দেয়। কখনো কখনো বনের ভেতর নির্জন রাস্তায় গা ছমছম করে ওঠে—ভূতের ভয়ে নয়, নীরবতায়। নৈঃশব্দ্য আর গাম্ভীর্য স্মরণ করিয়ে দেয়, অরণ্যের বিশালতা আর নিস্তব্ধতা অনুভব না করলে বনবিবির গুরুত্ব বোঝা সম্ভব নয়। প্রগাঢ় বনের অসীম শব্দহীনতায়, আলোছায়ার ভেলকিবাজিতে যারা বাঘের সামনে পড়েনি, তাদের কাছে দক্ষিণ রায় অথবা গাজী–কালু হাসির পাত্র ছাড়া কিচ্ছু নয়।
আমি মানুষ থেকে মেঘ হবো মৃত্যুর পরে
সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই আবেদন,
পৃথিবী ঘুরে বেড়াব বাতাসের ঢেউ-এ চড়ে
যদি মেঘকন্যা দেয় হৃদয়ে আসন।
গভীর বনের সীমাহীন নির্জনতায় আমরা শব্দ করে নিশ্বাস ফেলি। তারপর এগিয়ে চলি পাহাড়ের দিকে মস্তিষ্কের গাঢ়তম প্রদেশে গভীর অরণ্যের দৃশ্যপট ধারণ করতে করতে।
শরীরে লাগছে পাহাড়ি হাওয়া, চোখে শরতের নীল-সাদা আকাশ,
ডানা মেলে ধরি মুক্ত পাখির মতো, আবার দেখতে পাই যদি।
আমি বুকে টেনে নেই বিশুদ্ধ বাতাস, নিজেকে করি শুদ্ধ,
বিষ্ময়ে ভাবি এ আমার দেশ, বুনো বান্দরবানে আমি মুগ্ধ।
সব মিলিয়ে দুর্গম যাত্রা জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকল।মেঘ আর আকাশের মিলনমেলা তখন জমে উঠেছিল। নিজেদের মনে হচ্ছিল মেঘ-পাহাড়ের সই!
এমনি আরো হাজারো স্মৃতি মনে করে আবারো হয়তো ছুটে যাবো পাহাড়ে,
আহারে...
কবে যাবো পাহাড়ে..