09/08/2022
ঢাকা - চিটাগাং হাইওয়ের রাতের পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক!
(কোচের গাইডের মুখেই শুনুন লোমহর্সক সেই কাহিনী)
গাইড Musabbir Haque Fahim এর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করা।
খুলনা গাড়িকে পলাশ স্যার সেদিন ঘুরতে পাঠিয়েছিল ১২ আউলিয়ার পুণ্যভূমিতে।সেদিন সব শিডিউল এলোমেলো!খুলনার কোচগুলো চট্টগ্রামে,চট্টর কোচগুলো বেনাপোলে,সিলেটের কোচগুলো খুলনায়।পাইলট সব চেইঞ্জ,একজনের হাতের গাড়ি আরেকজনের কাছে,অন্যদিকে এক এক করে হেলপার ছাটাই।এক কথায় বিদঘুটে পরিস্থিতি।পরপর চারদিন দুই রুটে এসপির কোচে ডাকাতি তাও আগাম ফোনকল করে জানান দিয়ে ! পলাশ সাহেব নিরুপায়,কোনোকিছু করেও ডাকাতী ঠেকাতে পারছেন না।রাস্তায় বলে কয়ে কোচগুলোকে দাড় করিয়ে দিচ্ছে ডাকাতদল।ডাকাতির কবলে পড়া গাইডরা সাথে অন্য গাইডগুলোও ভয়ে একদিনেই সব চাকরী ছেড়ে চলে গেছে ফলে তীব্র গাইড সংকট।এদিকে আমরা হাতে গোনা কয়েকজন গাইড প্রচন্ড ভয়েও শিডিউল ঠিক রেখে ডিউটি করে যাচ্ছি।কাওকেই রেস্টে পাঠানো হচ্ছে না।ঢাকাতে এন্ট্রি করা মাত্রই কানেক্টিং ট্রিপে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে সবাইকে অন্যত্র। হেডঅফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হল সবার বেতন ডাবল।
এদিকে সেদিন সিলেট থেকে ঢাকা এসেই আমাকে তুলে দেয়া হল খুলনা থেকে সবে আসা ৬৮২২ এ পাইলট মুকুল ভাইয়ের সাথে।যাবো কোথায়? চট্টগ্রাম... আবার কোনো হেল্পার নাই! নাইট শিফটের রোমিং আর আমি মিলে পুরো কোচ ঝেড়ে মুছে ঠিক করে ব্লাঙ্কেট গুনে নিয়ে গাড়িসহ পার্কিং এ আসলাম। মালিবাগ থেকেই যাত্রীফুল ! ৫ মিনিটের মাথায় সমস্ত যাত্রী তুলে রউনা দিতে যাব ঠিক এমন সময় পলাশ স্যার হাত নেড়ে সামনে থেকে নির্দেশ দিলেন গাড়ি থামাতে। ঘটনা কি তা বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরী হল না।আমার আধাঘন্টা পেছনের শিডিউল ৬১৩১ এর গাইড এবং আমাকে পলাশ স্যার কাছে টেনে দাতে দাত চিপে যা বলার দরকার বলে দিলেন।আগাম সতর্কবার্তা! থরথর করে হাত পা কাপা কাপছিল।চুপ করে উঠে দরজা লক করে মুকুল ভাইকে বললাম মোবাইল মানিব্যাগ দেন। আমার আর মুকুল ভাইয়ের মোবাইল মানিব্যাগ নিয়ে গিয়ে রাখলাম ড্যাশবোর্ডের চিপায়। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে যাত্রী সবাইকে সতর্ক করতে যাবো এমনসময় মনে হল ওয়াইডলি এটা স্প্রেড করলে অবস্থা ভয়াবহ হবে।ধীরে সুস্থে ব্রিফিং শেষ করে পানির বোতল হাতে হাতে দিয়ে টিকিট পার্ট কাটতে শুরু করলাম।একজন একজন করে শেষ করছি আর আস্তে করে জানিয়ে দিচ্ছি হাতের কাছে রাখা মূল্যবান জিনিস সাবধানে রাখুন।গাড়ি তখন হানিফ ফ্লাইওভারের টোল বুথে,সব শেষ করে সামনে এসে বসে আছি।টেনশনে চোখের পলকই পড়তে চাচ্ছে না তারউপর আবার টানা ৪ দিন গাড়িতে।পেছনে ৬১৩১ এর পাইলট বক্কর ভাই ওভারটেক করে এসে মুকুল ভাইকে বাম্পারে বাম্পারে আসতে বললেন।বলেই বক্কর ভাই সে কি টান!! দেখাদেখি মুকুল ভাইও শুরু করে দিলেন টান।কোনো লক টক ছিল না সেদিন,মাইল মিটারে তাকিয়ে দেখি ১২০!!,পুরো সাসটেইন।বক্কর ভাইয়ের ৬১৩২ এর সাথে টেনে কুলিয়ে উঠতে পারছিলোনা ৬৮২২।ডানে বামে কোনো কথা নেই,টেনেই চলছে দুজন।কোনো এক অজানা কারনে পুরো রোড সেদিন অদ্ভুত রকমের ফাকা। মালিবাগ থেকে হাইওয়ে ইনে এসে আমাদের পৌছুতে সময় লেগেছিল মাত্র পৌনে দুই ঘন্টা। হোটেলে ঢুকে বসে আছি সবাই। সত্য কথা সেদিন বক্কর ভাই,মুকুল ভাই,আমি,সেই গাইড কেউই একটা দানাপানি মুখে তুলতে পারিনি।হোটেল থেকে চেকআউট করে এসে বেরিয়ে দুটো সিগারেট ধরিয়ে সমানে টেনে যাচ্ছি।মুকুল ভাই হোটেল থেকে বেরুবার সাহস পাচ্ছিলো না,বক্কর ভাই এসে এক ধমক দিতেই সিটে গিয়ে বসে বললেন ফাহিমরে ওঠ! ,যা আছে কপালে। বলেই শুরু করলেন আবার টান! সেদিন আমার কোচে ছিল সৌদি থেকে আসা ১১ জন প্রবাসী আর তাদের পরিবার।আমার চিন্তাটা বেশী ছিল সেদিন তাদেরকে নিয়ে । কিছুক্ষন পরপরই ঢাকা অফিস থেকে কল আসছিলো। সাবধানে বুঝে শুনে যেতে বলা হছিলো বারবার। কিন্তু যা ভেবেছিলাম তা ঘটে যেতে খুব বেশী সময় লাগেনি।আমাদের দুটোগাড়ি তখন জোরারগঞ্জ পার হচ্ছিলো। দেখতে পেলাম জোরারগঞ্জ বাইপাস থেকে দুটো কাভার্ডভ্যান ফুলপিকআপে এসে একটা আমাদের সামনে আর আরেকটা পিছন পেছনে আসতে লাগল।পিকআপ ভর্তি মানুষ,বারবার গাড়ি থামাতে বলছে। মুকুল ভাই বললেন ফাহিম ভিতরে সামলা,আমি এদিকে দেখতেছি।কোচের সমস্ত লাইট জ্বেলে দিলাম। কোচের সবাই সেদিন এতজোরে দোয়াদুরুদ জিকির আজগার করছিলো যে ৪ হাত দূরে বসা মুকুলভাইয়ের সাথে কথা বলতেই আমাকে বেশ জোরে চিল্লাতে হচ্ছিলো। এদিকে দেখতে পেলাম বক্করভাই ফুলপিকআপ নিয়ে সামনের কাভার্ডভ্যানের বাম্পারে আস্তে করে টোকা মারলেন, ডাকাতদল এবার সোজা ৬১৩১ কে সাইড দিয়ে চাপ দিতে আসল আমাদেরকে। মুকুল ভাই চট করে স্টিয়ারিং সোজা ডানে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি গাইড সিট থেকে সরে এসে মাঝখানে এসে পড়লাম। এবার কিছুদূর যেতেই রাস্তার সাইড থেকে এসে সোজা ফ্রন্ট গ্লাসের ফ্রেমে বিঁধল লম্বা এক সাবল। মুকুল ভাই এবার খিচ টান টানতে লাগলেন। মাইলমিটারের দিকে তাকানোর ফুসরত সেসময় ছিল না। শুধু পেছনে তাকিয়ে দেখি যাত্রীরা একদিকে কাত হয়ে আরেকদিকে যাচ্ছে আবার আসছে।বক্কর ভাই তার গাড়ি টেনে কোথায় নিয়ে চলে গেছিলেন আর দেখিনি।
কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই খুব দক্ষতার সাথেই ডাকাতের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম সেদিন। চট্টগ্রাম আসার পর দেখি কাউন্টারে শ খানেক লোক দাঁড়িয়ে। সবার মুখে হাসি।
আমি দুঃখিত! আমি আর কিছু লিখতে পারছিনা এই মুহূর্তে......
Subscribe on YouTube
https://youtube.com/channel/UC8KZuB19mdHi7jP6FqU1vzw