02/10/2023
গর্ভবতী একটি বাঘিনি একদিন একটি ভেড়ার পালে আক্রমণ করল । হরিন বা অন্য কোন প্রানী শিকার করার চাইতে পেতে বাঘের ছানা নিয়ে তাড়া করে শিকার করাটা কঠিন ছিল তার জন্য ।
এই দৌড় ঝাঁপ করার সময়ে, একটি ভেড়ার গুঁতো খেয়ে সে আছড়ে পড়ল । এবং সেই ব্যাথাতেই সে বাঘের ছানা প্রসব করে গর্ভ জটিলতায় আর আঘাতের কারনে মারাই গেল ।
ভেড়ার পালের মাঝে এতিম বাঘের ছানা জন্ম নিয়ে চারপাশে শুধু ভেড়াই দেখে ।
দয়া পরবশ হয়ে একটি ভেড়ী তাকে দুধ খেতে দিল । বাঘের ছানা, ভেড়ার পালের সাথেই বড় হতে লাগল ।
ভেড়ারা ভ্যা ভ্যা করে, সেও ভ্যা ভ্যা করে, ভেড়ারা ঘাস খায়, সেও ঘাস খায় । ভেড়ার পালে নেকড়ে বা অন্য কোন শিকারি প্রানী আক্রমন করলে ভেড়ারা পালিয়ে যায়, সেও ভয়ে পালায় ।
নিজেকে ভেড়া মনে করা বাঘের ছানা এভাবেই বড় হতে লাগল ।
এবং ৩ বছর পর যখন সে পুর্ন দেহ পেল, তখনো সে ভ্যা ভ্যা করে ডাক ছাড়ে, অল্পতেই ভয় পায় ।
এই সময়ে, আরেক বাঘ সেই ভেড়ার পালে আক্রমন করে বসে । ভ্যা ভ্যা করতে করতে সব ভেড়া পালিয়ে যাওয়া শুরু করল, সেই বাঘের ছানাও জান বাজি রেখে ভোঁ দৌড় ।
আক্রমন করা বাঘ দেখে, আরেক বাঘ ভেড়ার পালের উপর আক্রমন করেছে । মেজাজ চড়ে যাওয়ায় ভেড়ার পাল বাদ দিয়ে এই বাঘ ভেড়া বাঘের পিছনে দৌড় দিল ।
ভেড়া বাঘ দেখে, বাঘ তাকে ধরতে আসে - কাজেই জানবাজি রেখে ভোঁ দৌড় । সাথে সাথে ভ্যা ভ্যা চিৎকার ।
ক্ষুধার চাইতে কৌতূহল বড় হয়ে গেল, বাঘ সব বাদ দিয়ে ভেড়া বাঘের পিছনে, ভেড়া বাঘ দৌড়ায়, পিছনে বাঘ দৌড়ায় ।
শেষ পর্যন্ত ঘাস খাওয়া তুলনামূলক দুর্বল ভেড়া বাঘকে আসল বাঘ ধরেই ফেলল ।
ভেড়া বাঘ হাত জোর করে, থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে আসল বাঘকে বল্ল - আমি একটা নিরিহ ভেড়া আমাকে মেরোনা ভাই ।
আসল বাঘ একই সাথে হতবিহ্বল এবং অবাক হয়ে বলল- এই ব্যাটা, তুই ত একটা বাঘ । তাহলে তুই ভয়ে পালাচ্ছিলি কেন রে ?
ভেড়া বাঘ ঘাড় নেড়ে বলে, ন আ আমি নিরিহ ভেড়া, আমাকে ছেড়ে দাও ।
বাঘ, ভেড়া বাঘকে যতই বোঝায় যে সে বাঘ, কিন্তু ভেড়া বাঘ কিছুতেই স্বীকার করে না ।
না পেরে, বাঘ এই বাঘকে থাবার নিচে ধরে নিয়ে একটা লেকের পাড়ে নিয়ে গেল, এরপরে পানির কাছে নিয়ে বলল, নিচে তাকিয়ে দেখ ।
ভেড়া বাঘ ঘ্যান ঘ্যান করে বলে - আমি একটা নিরিহ ভেড়া...
ক্ষেপে গিয়ে বাঘ থাবা উচিয়ে আবার বলে নিচে দেখ ব্যাটা ।
ভেড়া বাঘ নিচে পানির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল । সে একবার পানিতে তাকায়, আরেকবার বাঘের দিকে
তাকায়,একবার পানিতে তাকায়, আরেকবার বাঘের দিকে তাকায় ...।
এরপরে, জীবনে প্রথম বারের মত সেই ভেড়া বাঘের গলা দিয়ে বাঘের গর্জন বের হয় । সে বুঝতে পারে যে সেও বাঘ, নিরিহ ভেড়া না ।
বুঝতে পারার পরেই, নিজেকে চেনার পরেই তার গলা থেকে গভীর গর্জন বের হয় ।
*** *** ***
সক্রেটিস বলেছিলেন, know thyself
নিজেকে তৈরি করার জন্য, উন্নতি করতে গেলে সবচে প্রথমে যা দরকার তা হল know thyself, নিজেকে জানা ।
ভেড়ার পালে আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে ভেড়া বলেই পরিচিত করি, আর সবার মত আমরাও ভ্যা ভ্যা করি । অন্যায়ের প্রতিবাদ করি না, ঘাস খাই ।
কিন্তু মানুষের যে বিপুল সম্ভাবনা আছে, সেটাকে না জেনেই আমরা ভেড়ার পালেই ভেড়া হয়েই জীবন কাটিয়ে দেই ।
*** *** ***
২য় বিশ্বযুদ্ধে হেরে বসা জাপান বা জার্মানী পরের ৫০ বছরে আবারো শক্তিশালী হয়েছে । অবরোধ, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আবারো তারা অর্থনইতিক পরাশক্তি হয়েছে ।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা জেনোসাইড এর পরের ২৫ বছরে আজ রুয়ান্ডা বিজনেস ইনডেক্স এ ৩৭ তম দেশ, স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপের অনেক দেশই তাদের পিছনে ।
তারা তাদের শক্তিকে কাজে লাগিয়েছে ।
আমরা আমাদের শক্তির যায়গাকে কবে চিনবো ?
বাঘের গর্জন কি আমরাও দিতে পারবো কোনদিন ?