Hajj Bangladesh হাজ্জ কাফেলা

Hajj Bangladesh হাজ্জ কাফেলা হাজ্জ সম্পকিত যাবতিয় পরামর্শ দেওয়া হ?

12/06/2024
30/03/2024

হজ্বের সাধারণ গাইড (যারা হজ্বের নিয়ত করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে লেখা)

পটভূমিঃ

আর্থিক ও শারীরিকভাবে সচ্ছল সকল মুসলমানদের উপর হজ্ব ফরজ। ইসলামের পাঁচটা মূল স্তম্ভের একটি হলো এই হজ্ব। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বৎসর এক লাখের বেশি মুসলিম হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যায় যার একটি বড় অংশ জীবনের সকল উপার্জনের বিনিময়ে হজ্ব পালন করেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মুসলমান নিজে কোরআন, হাদিস না পড়ে অন্যের কথায়, হুজুরের বা গাইডের কথায় ধর্ম পালন করি। আর সেই গাইড হুজুররা কেন যেন অনেক কিছু বলেন, কিন্তু মূল কথাটা বলেন না। সুতরাং হজ্ব পালন করতে গিয়ে দেখা যায় হজ্বের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতের চেয়ে অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে থাকি। পরে হয়তো অনেকে আফসোস করি যদি বুঝতে পারি; বেশিরভাগ আবার সেটাও বুঝতে পারি না। আমি কোন আলেম, ধর্মীয় ব্যাপারে উচ্চ জ্ঞানের কেউ নই। ২০১৭ সালে আমি হজ্ব করে এসেছি এবং সেই আলোকে আমি নিম্নের লেখাটি উপস্থাপন করছি। কেউ চ্যালেঞ্জ করবেন না, ভুল হলে বলবেন আমি তর্ক করব না, শুধরে নিব।

প্রথমেই জেনে নেই হজ্বের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলো।
হজ্বের ফরজ তিনটিঃ
১. ইহরাম বাঁধা,
২. জ্বিলহজ্ব মাসের নয় তারিখের সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ও
৩. তাওয়াফ করা।

বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য যারা যান তাদের জন্য হজ্বের ওয়াজিব ৭ টি হলোঃ
১. জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো সময়ে মুজদালিফায় অবস্থান করা। (সুরা বাকারা,আয়াতঃ১৯৮)

২. সাফা-মারওয়ায় সাতটি দৌড়।একে সায়ী বলা হয়। দৌড় শুরু হবে সাফা থেকে আর শেষ হবে মারওয়ায়। (মুসলিম,হাদিস : ২১৩৭)
৩. জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা। (১০, ১১ ও ১২ ই জিলহজ্জ)

৪. হজ্বের কোরবানি করা। এই কোরবানির সাথে আপনার দেশের কোরবানির কোন সম্পর্ক নাই।

৫. কোরবানির পর মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করা। (বুখারি,হাদিস : ১৬১৩)

৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৫০)

৭. দম দেয়া; যদি কোন ওয়াজিব আপনি করতে ব্যার্থ হন তবে দম দিতে হবে। দম দেয়া হলো আরেকটা পশু কোরবানি করা। এটা পেনাল্টি টাইপ।

হজ্জের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
১. ইহরামের পূর্বে গোসল করা
২. পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা।
৩. তালবিয়াহ পাঠ করা
৪. ৮ই জিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা
৫. ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আ করা
৬. কেরান ও ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।
তবে কোন কারণে সুন্নত ছুটে গেলে দম দিতে হয় না।

এখন আসি আমরা কিভাবে সহজে আমাদের সারাজীবনের স্বপ্নের হজ্ব পালন করতে পারি।

হজ্বে যাবার আগের প্রস্তুতি। ধরে নিচ্ছি যে আপনি হজ্বে যাওয়ার জন্য রেজিষ্ট্রেশন, টাকা জমা দিয়ে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন আপনার করনীয় গুলো হলোঃ

১. মানসিক প্রস্তুতি নেন। আপনি সারাক্ষণ মনে করুন যে আপনি হজ্বে যাবেন, তওবা করুন, যিকির করুন, বেশি বেশি আমল করুন।

২. তালবিয়া; "লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক আলা সারিকা লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা, ওয়াইন্না মাতা, লাকাউল মূলক, লা শারিকা লাক।" মুখস্থ করে ফেলুন এবং এটা মনে মনে বা প্রকাশ্যে আওরান।

৩. সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। খাবার, ভ্রমণ ও অন্যান্য ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

৪. হজ্বের ফরজ, ওয়াজিবগুলো জানুন। আমি উপরে যেগুলো দিয়েছি সেটাই যথেষ্ট। পারলে হজ্বের সিকোয়েন্স (কোনটার পর কি করবেন) জানুন; না জানলেও খুব অসুবিধা নাই কারণ ওখানে সবাই যা করবে আপনি ফলো করবেন।
৫. আপনার দৈনিক কর্মকান্ডে একটা ধর্মীয় পরিবর্তন নিয়ে আসুন যেমন জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, নিজেকে সংযত রাখা, ধর্মীয় বিধিনিষেধ সুচারুরূপে পালন করা ইত্যাদি।

আপনি কেমন মানুষ, দিনে কি কি পাপ করেন, খারাপ কাজ করেন তা আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। চেষ্টা করুন নিজেকে সংশোধন করে নিতে।

কেনাকাটাঃ

হজ্ব করার জন্য খুব বেশি জিনিস দরকার হয় না। এখানে অনেক বড় একটা ব্যবসা আছে। আমি বায়তুল মোকাররম মার্কেটে হজ্বের কেনাকাটা করতে গিয়ে খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছি। দোকানিদের কাছে আপনি শুধুই একজন ক্রেতা। নিউ মার্কেটের জামদানী হাউজের সেলসম্যান আর বায়তুল মোকাররম বা অন্য যে কোনো হজ্ব সামগ্রীর দোকানের সেলসম্যান এক, তাদের লক্ষ্য যত বেশি লাভ করা যায়, যত বেশি জিনিস গছানো যায়। বরং এখানে হাজ্বিদের কোমল মন নিয়ে উনারা খেলা করেন (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। সুতরাং সে অনুযায়ী আপনিও কেনাকাটা করতে যাবেন। দরকারী জিনিসের অনেক লিস্ট আপনারা অনেক জায়গায় পাবেন তবে নিম্ন লিখিত জিনিস গুলো অবশ্যই দরকার:

১. ইরহামের কাপড়। যেকোনো মানের কাপড়, দুটোই যথেষ্ট।
২. একটা কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ (দুই পাশে রশি দেয়া, আপনি যখন হোটেল থেকে মসজিদে যাবেন তখন আপনার স্যান্ডেল, জায়নামাজ, পানির বোতল ও হালকা খাবার রাখার জন্য)।
৩. একটা পাতলা জায়নামাজ - সবসময় সাথে রাখবেন।
৪. সেলাই ছাড়া স্যান্ডেল দুই জোড়া।
৫. সানগ্লাস - মাঝারি মানের কারণ রেগুলার লাগবে আবার হারিয়ে গেলেও যেন দু:খ না পান।
৬. মহিলারা পিরিয়ড কন্ট্রোল করার জন্য যাত্রার একমাস আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৭. মোজা - অপশোনাল
৮. পায়জামা পাঞ্জাবি- কমপক্ষে তিন জোড়া। মহিলারা প্রয়োজন মতো কাপড় নিবেন। অনেক হোটেল কাপড় ধোয়া ও শুকানোর সুব্যবস্থা নাই। সুতরাং আজকে একটা কাপড় ধুয়ে দিলে তা শুকাতে সময় লাগতে পারে। মনে রাখবেন পুরুষেরা ইহরাম পড়বেন সর্বোচ্চ ৭-৮ দিন। সুতরাং বাকি সময়ের জন্য আপনাকে পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট পরে থাকতে হবে।

৯. আন্ডার গার্মেন্টস - ব্যক্তিগত প্রয়োজন মতো।

১০. গোসলের সাবান, কাপড় কাচার সাবান, ওয়াশিং পাউডার আপনারা প্রয়োজন মতো নিবেন। তবে আপনি ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বা আগে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন না। সুতরাং সুগন্ধিহীন একটা সাবান নিয়ে যেতে পারেন। এটা বিশেষ করে মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় দরকার হয় যখন তিন দিন একাধারে ইহরাম বেঁধে থাকতে হয়।

১১. শুকনো খাবার আপনার প্রয়োজন মতো। আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন সে আপনাকে তিনবেলা খাবার দিবে। আর যদি আপনাকে কিনে খেতে হয় তাহলে আপনি যেখানে থাকবেন আর আশেপাশে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি হোটেল পাবেন যেখানে সবধরনের খাবার পাবেন।

১২. সুই-সুতা প্রয়োজন মতো।

১৩. প্লাস্টিকের ফুলানো বেড ও বালিশ। মুজদালিফায় একরাতের জন্য; যদি ব্যবহার করার সুযোগ হয়।

১৪. শেভিং আইটেম, নখ কাটার যন্ত্র, ছোট কাঁচি ইত্যাদি।

১৫. ছাতা- অবশ্যই একটা নিয়ে যাবেন। কেউ দিবে কিনা সেই আশায় থাকবেন না। তবে না নিলে মক্কা থেকেও কিনতে পারবেন।

১৬. তায়ম্মুমের মাটি একটা নিয়ে যাবেন এবং এটা হাত ব্যাগে রাখবেন।

১৭. নাইলনের দড়ি, ১৪-১৫ গজ (রুমের ভিতর কাপড় টানানোর দরকার হলে লাগবে)

১৮. লুঙ্গী বা রুমে ঘুমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক, টুথপেস্ট, ব্রাশ, মেসওয়াক, চিরুনি ইত্যাদি।

১৯. মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক, হিজাব, হাত/পা মোজা ইত্যাদি।

২০. আপনার প্রয়োজনীয় ঔষধ। প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক একটা সাতদিনের কোর্সের সমপরিমাণ, গ্যাসের সমস্যা থাকলে, ফ্লাজিল ইত্যাদি। সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ ঠান্ডা, গলাব্যথায় ভুগেন।

২১. কিছু শুকনো খাবার (৩-৪ দিন অনুমান)

**মোবাইলের ব্যপারে আমার উপদেশ হলো দেশের সীম রোমিং করে নিয়ে যান। খরচ কম, ওখানে গিয়ে সিম কেনা, পরিবর্তন, রিচার্জের ঝামেলা নাই।

হজ্ব যাত্রা:

বাসায় শারিরীকভাবে পরিস্কার হয়ে গোসল করবেন। তারপর ইহরাম বেঁধে দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তালবিয়া পাঠ করতে করতে বাসা থেকে বের হবেন। আপনার ফ্লাইট অনুযায়ী আপনাকে যখন যেখানে যেতে বলা হবে সেই অনুযায়ী সঠিক সময়ে সেখানে যাবেন। اَلْاِحْرَامُ (ইহরাম) শব্দটি حَرَامٌ (হারাম) শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো কোনো জিনিসকে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেয়া। আর এ ইহরামই হজ ও ওমরার প্রথম ফরজ কাজ। পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় আর নারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় শালীন পোশাক পরিধান করাই হলো ইহরাম। যদিও মিকাতের আগে (বাংলাদেশ থেকে হজ্বে গেলে কাবা শরীফ থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের জায়গা) বাঁধলেই হয় এবং প্লেনে মিকাতের আগমনী ঘোষণা করা হয়। তারপরও আমি অনুরোধ করব পুরুষেরা যেনো অবশ্যই বাসা থেকেই ইহরাম বেঁধে বের হন। এর দুটো কারণঃ

১. পরে ইহরাম বাঁধার ভালো জায়গা ও সুযোগ না-ও পেতে পারেন। প্লেনের ওয়াশরুমে ইহরাম বাঁধা কঠিন।
২. ইহরাম বেঁধে ফেলা মানে হলো আপনি হজ্বের অন্যতম ফরজে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছেন।

এয়ারপোর্ট ফরমালিটিজঃ

আপনাকে প্রথমে হাজীক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আপনার বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন হবে, লাগেজ দিয়ে দিবেন। তারপর এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে গাড়িতে করে। এয়ারপোর্টে সৌদি ইমিগ্রেশন হবে। এখানে একটা অনুরোধ করব যে আপনারা হাত-ব্যাগ হিসেবে স্ট্রলার নিবেন না, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ নিবেন। পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে নিবেন। গ্রুপে থাকবেন, পন্ডিতি করবেন না। হজ্বের যাত্রা অন্য যাত্রার মতো না।

সবসময়ই মনে রাখবেন আপনি আল্লাহর মেহমান। গাড়িতে, এয়ারপোর্টে সবকিছু আপনার ইচ্ছেমতো হবে না। হাজার হাজার হাজী আপনার সাথে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাজী যান বৃদ্ধ বয়সে। আপনি এমন কিছু করবেন না যাতে বাকিদের মনোকষ্ট হয়, আপনার হজ্বের ক্ষতি হয়।

প্লেনে স্বাভাবিক থাকুন। যিকির করুন, কোরআন পড়ুন, ঘুমান, খাবার দিলে খাবার খান। একটু পরপর তালবিয়া পাঠ করুন। মিকাত এর দূরত্বের দিকে খেয়াল রাখুন {প্লেনে পাইলট, এয়ারহোস্টেস জানাবে তারপরও খেয়াল রাখবেন প্লেন কখন সৌদি আকাশ সীমায় প্রবেশ করে (যাদের পূর্বে আকাশভ্রমনের অভিজ্ঞতা আছে)}। প্লেনে অযু করতে নিষেধ করে, করা কঠিন এবং পর্যাপ্ত পানিও থাকে না। আপনি তায়াম্মুম করে নিতে পারেন। তবে মিকাত আসার পূর্বে আপনাকে অযু/তায়াম্মুম করতে হবে।

সৌদি আরবে ল্যান্ড করার পর তারা যা বলবে আপনি শুধু ফলো করবেন, আপনার বাকি হাজী ভাই-বোনদের সাথে থাকুন। আপনার মক্তব, হাজ্বি নম্বর অনুযায়ী যে বাসে উঠতে বলবে আপনি অবশ্যই সেই বাসে উঠবেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ আপনার পাসপোর্ট নিয়ে যাবে, দিয়ে দেন; হজ্ব শেষে দেশে ফিরে আসার পূর্বে আবার ফেরত পাবেন। তালবিয়া পাঠ করুন। বাস আপনাকে আপনার নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে যাবে।

আপনি যদি প্রথমে মদিনায় যান তবে আপনার গাইড যেভাবে বলবে, যা করতে বলবে সেটা ফলো করুন, গ্রুপে থাকুন। আর আপনি যদি প্রথমে মক্কা যান তবে আপনাকে ওমরাহ করতে হবে। সুতরাং হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ওমরাহ করতে চলে যাবেন। আপনি এখনও ইহরাম বাঁধা অবস্থায় আছেন। ওমরাহ করার জন্য প্রথমে তাওয়াফ করবেন, চেষ্টা করবেন যেন মেইন ফ্লোরে করতে পারেন। সাতবার তাওয়াফ করে সাফা-মারওয়া করবেন সাতবার। কোথায় দৌড়াবেন সেটা সবুজ বাতি দেখে বুঝবেন। আস্তে আস্তে বুঝে বুঝে করেন। আমার কাছে মনে হয় এই ওমরাহ আসল হজ্বের একটা প্র‍্যাক্টিস। সাফা-মারওয়া শেষ করে পুরুষের চুল কাটতে হবে। বাংলাদেশি, পাকিস্তানি সেলুন আছে, পাঁচ রিয়াল দিয়ে চুল কেটে নিবেন। আপনার মহিলা সঙ্গী থাকলে প্রথমে পুরুষের চুল কেটে তারপর সঙ্গীর চুল এক মুঠি পরিমান কেটে দিবেন (রুমে এসে)। তারপর আপনি গোসল করে ইহরাম ছেড়ে দিবেন। তারপর থেকে হজ্বের আগে আর ইহরাম পড়ার দরকার নেই (যদি না আবার ওমরাহ করতে পারেন)। সৌদি কর্তৃপক্ষ একবারই ওমরাহ করতে দেয়। তবে আপনি গোপনে, চুরি করে একাধিক ওমরাহ করতে পারেন। তবে চুরি করে, কর্তৃপক্ষের নিষেধ অমান্য করে ওমরাহ করলে সওয়াব হবে নাকি গুনাহ হবে সে বিচার আপনার।

তারপর থেকে আপনার কাজ হলো খাওয়া আর ইবাদত করা। রুমে থেকে অনেকে মক্কার সাথে জামাতে নামাজ পড়েন। এই জামাত হবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশ্যই চেষ্টা করবেন হারাম শরীফে গিয়ে আদায় করতে। নিজের রুমে, হোটেলের লবিতে, হোটেলের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, সামনে জায়গা ফাঁকা রেখে ছায়ায় নিজের ইচ্ছেমতো জামাত করবেন না দয়া করে। কোন কারণে যদি হারাম শরীফের জামাতে যেতে না পারেন তবে হোটেলে আলাদা জামাত হয় সেখানে যাবেন, তাও না পারলে রুমে আলাদাভাবে পড়েন। সবসময় মনে রাখবেন আপনি হজ্ব করতে গিয়েছেন, যত বেশি সম্ভব আমল করেন। দুনিয়ার কথা কম বলেন। খুব সহজেই আমরা গীবত করা শুরু করে দেই, নিজেকে নিবৃত্ত করুন।

শারিরীক ভাবে শক্ত হলে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই বার তাওয়াফ করার চেষ্টা করুন। আমার সাজেশন হলো ফজরের পর ও এশার পর। তাওয়াফের জন্য ওমরাহ ব্যতীত নিচে আসল ফ্লোরে যেতে দিবেন না। সুতরাং দোতলা, তিন তলা বা ছাদে তাওয়াফ করতে হবে। দোতলা বা ছাদে সাত চক্কর দেয়ার জন্য ১ ঘন্টা ২০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগে (মহিলাদের সময় বেশি লাগবে একটু)। অন্য সময় ছাদে যাবেন না কারণ প্রচন্ড গরম থাকে। নীচে, দোতলায় খুব ভীড় থাকে তবে এসির কারনে গরম কম। আর ছাদে গরম থাকে তবে ভীড় কম। দু'একদিন তাওয়াফ করার পর নিজেই বুঝে যাবেন আপনার জন্য কোন অপশন ভালো। আমি বেশিরভাগ সময় ছাদে করতাম ফজর ও এশার পর।

হজ্বঃ

আপনার সকল আয়োজন হলো হজ্ব করা। হজ্বের দু-তিন দিন আগে থেকে তাওয়াফ কমিয়ে দিতে পারেন। একটু শক্তি সঞ্চয় করে নিন। অসুস্থ হতে পারেন এমন খাবার, ঠান্ডা পানি, লাবাং, অপরিচিত নতুন জায়গায় খাওয়া এড়িয়ে চলুন। হজ্বের জন্য যাত্রার আগে একটা ব্যাগ আলাদা করুন। ব্যাগে নিবেন ইহরামের কাপড়, এয়ার বেড, সানগ্লাস, টুথপেস্ট, ব্রাশ, মেসওয়াক, গন্ধহীন সাবান (ইচ্ছা) গামছা বা ছোট টাওয়েল, শুকনো খাবার, টয়লেট পেপার, দু-এক বোতল পানি, ঔষধ। এই ব্যাগ যত ছোট তত মঙ্গলজনক।

** এই ব্যাগ অবশ্যই কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, স্ট্রলার নয়।

আপনার এবারের যাত্রা হবে হজ্বের যাত্রা। প্রথমে যাবেন মিনা একদিন থেকে যাবেন আরাফাতের ময়দানে, একদিন থেকে সন্ধ্যার পর যাবেন মুজদালিফা, ফজরের নামাজ মুজদালিফায় পড়ে তারপর জামারাহ'য় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার জন্য। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে যাবেন মক্কা শরিফ এ তাওয়াফ করতে।তারপর সাফা-মারওয়া করবেন। সাফা-মারওয়া করে যদি কোরবানির এসএমএস পান তবে মাথা মুণ্ডন করবেন। হজ্বের ফরজ কাজ শেষ। নিজের হোটেল রুমে গিয়ে গোসল করে খাবার খান। এদিন আবার ঈদের দিন। রেস্ট নিন, গত চার-পাঁচ দিন অনেক শারিরীক ও মানসিক কষ্ট করেছেন।

৭ই জিলহজ্জ রাতে মিনা যাত্রার জন্য ইহরাম বেঁধে আপনার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করুন। তালবিয়া পাঠ করুন। সবার জন্য নির্ধারিত গাড়ি আসবে। এই যাত্রার শুরু থেকেই হাজ্বিগণ অসহিষ্ণু হয়ে যান। চারদিকে ঝগড়াঝাটি শুরু হয়ে যায়; কে আগে যাবে, কার বাস আসলো, কে আগে গেলো এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে নিজের বহুল আকাঙ্খিত হজ্বের ক্ষতি করবেন না। প্রথমে আপনাকে মিনায় নিয়ে যাবে। সবার জন্য নির্ধারিত তাবু আছে। কিন্তু গিয়ে দেখবেন আপনার তাবুতে অন্য হাজ্বি বসে আছেন, শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। ঘাবড়াবেন না, উত্তেজিত হবেন না। ওখানে কেউ লজিক্যাল কথাও শুনতে চান না। আপনার সমস্যার কথা আপনার গাইডকে বলুন। ধৈর্য্য ধরুন। এই মূহুর্তে জায়গায় জায়গায় ঝগড়া শুরু হয় নিজের তাবু কোনটা এটা নিয়ে। অন্য গ্রুপ খাবার খেয়ে ফেলল আর আপনি এখনও খাবার পাননি, পানি পাননি, আপনার তাবুর এয়ারকন্ডিশন ঠিক নাই, আরেকজনের তাবু আপনার তাবুর চেয়ে ঠান্ডা হচ্ছে কিন্তু আপনার তাবু কম ঠান্ডা হচ্ছে ইত্যাদি কারণে। এ সময় শয়তান খুব একটিভ থাকে; নিজেকে নিবৃত্ত করুন। আমি এমনও কথা বলতে শুনেছি যে, "হজ্ব দরকার হলে আগামী বার করব, এখন মাইরা লই"- আস্তাগফিরুল্লাহ্।

**আমি আমার তাবুতে গিয়ে দেখি অন্য হাজ্বি সাহেব গণ বসে আছেন। আমি শুধু বললাম যে ভাইজানরা এটা আমাদের তাবু- মনে হলো মৌচাকে ঢিল দিলাম। ৭-৮ জন আমাকে মারতে আসল!! মানুষ এতোই অধৈর্য হয়ে যায় তখন! আধা ঘণ্টা পরে কিন্তু সব ঠিক হয়ে গেলো।

মিনায় থাকা-খাওয়া অসুবিধা। তবে সবচেয়ে অসুবিধা হলো বাথরুম, টয়লেট। পর্যাপ্ত ও আধুনিক ব্যবস্থা থাকার পরও বাঙালী হাজ্বিগণের বাথরুম ব্যবহার বিধি না জানার কারণে আধা ঘন্টার মধ্যে আশেপাশের সব টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। বাথরুমে যাওয়ার সময় টয়লেট পেপার, পানি নিয়ে যাবেন। শারীরিক ভাবে সামর্থ্যবান হলে আশেপাশে বাঙালি তাবুর বাইরে একটু খবর নেন, কপাল ভালো থাকলে বেটার সুযোগ পেতে পারেন। মিনায় কোন স্পেসিফিক ইবাদত নাই তবে সারাদিন গল্প না করে যিকির করুন, কোরান তেলাওয়াত করুন, অন্যের সেবা করুন। এখানে আরেকটা জিনিস দেখবেন দেশী ভাইরাই একেকজন একেকভাবে নামাজ আদায় করছে; যেমন কেউ কসর, কেউ নরমাল, কেউ এদিকে সেজদা দিচ্ছে, কেউ আরেক দিকে ইত্যাদি। আমাদের সময় একই তাবুর ভিতর এক গ্রুপ জুমার নামাজ পড়েছে আরেক গ্রুপ যোহর নরমাল আরেক গ্রুপ যোহর কসর পড়েছে। এসব ঘটনা আপনার সামনেও ঘটবে তবে আপনার কাজ হলো কাউকে জ্ঞান দিতে যাবেন না। মারামারি, ঝগড়াঝাটি লেগে যাবে। যার যার ইবাদত তাকে করতে দেন। কবুল করার মালিক আল্লাহ্। সাথে মহিলা থাকলে উনারা কাছেই আলাদা তাবুতে থাকবেন। উনাদের দিকে খেয়াল রাখবেন।

মিনা থেকে বিকেলে/সন্ধ্যায় আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। কর্তৃপক্ষ যখন নিবে আপনাকে তখনই যেতে হবে। আপনার কিছুই করার নাই। সারাক্ষণ দোয়া, দুরুদ ও তালবিয়া পাঠ করুন। মনে রাখবেন আপনি আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন। "জিলহজ মাসের নয় তারিখে৷ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানই হজ্ব!" এই সেই আরাফাতের ময়দান যেখানে আবার হাশরের দিন উপস্থিত হবেন!!!আরাফাতের ময়দানেও তাবু এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা মিনা'র মতো। অনেক বাথরুম আছে আশেপাশে, দূরে৷ আপনি দরকার হলে একটু খুঁজে নিন। সারাদিন নামাজ, দোয়া, দুরুদ, আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করুন। আপনি আসলে আরাফাতের জামাত, খুতবা সরাসরি শোনার সুযোগ হয়তো পাবেন না। চেষ্টা করে দেখুন তবে মনে রাখবেন সেটা করতে গিয়ে হারিয়ে যেনো না যান, গ্রুপে থাকুন। ঝুঁকি নিবেন না। খুতবা শোনা, ঐ জামাতে নামাজ পড়া ফরজ, ওয়াজিব কিছুই না, শুধুই মানসিক সান্ত্বনা। আপনার হজ্বের ফরজ ও ওয়াজিবের দিকে খেয়াল রাখুন যেনো এসব আবেগি ইবাদত করতে গিয়ে পরে ফরজ ছুটে না যায়। স্থির থাকুন, দরকার হলে সারাদিন তাবুতে কাটিয়ে দিন, আল্লাহকে ডাকুন, কান্নাকাটি করুন। আল্লাহ যেন আপনাকে কবুল করে নেন।

আসরের নামাজের পরপরই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য বের হবেন, অবশ্যই আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন সূর্যাস্তের পর, মাগরিব না পড়ে। এই জার্নিটা খুবই পীড়াদায়ক। আপনি বাসে যান আর মেট্রোতে যান; অনেক সময় লাগবে। হেঁটে গেলেও হয়তো দুই ঘন্টায় চলে যাওয়া যেতো কিন্তু আপনাকে কতৃপক্ষ যেভাবে নিবে সেভাবেই যেতে হবে। হাতের কাছে পানি রাখুন, শুকনো খাবার রাখুন; পরেরদিন দুপুর পর্যন্ত আপনার খাবার নাও জুটতে পারে৷ ধৈর্য ধরুন, বয়স্ক, অসুস্থদের সেবা করুন, কেউ হয়তো তার বেগ বহন করতে পারছেনা; পারলে সাহায্য করুন। অসংখ্য সওয়াব। আর যখনই পারেন তালবিয়া পাঠ করুন।

মুজদালিফায় পৌঁছে আরেক সাগরে পড়বেন। আরাফা থেকে আসার সময়ই পরিস্থিতির কারণে আস্তে আস্তে দলছুট হয়ে যাবেন। তবে কমপক্ষে ৫-৭ জন একসাথে থাকুন। মুজদালিফা এসেই এক তাকবিরে মাগরিব ও এশা পড়বেন। মুজদালিফা এসে খাবার পেতেও পারেন, নাও পারেন। সুতরাং সাথে নিয়ে আসা শুকনো খাবার খান, প্রচুর পানি খান। খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করুন। মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক কাজ করে না। আশেপাশে অনেক ছোট ছোট পাথর পাবেন; তিন দিনের জন্য নিয়ে নেন ৬০-৭০ টা। ফজরের নামাজের সময় হওয়ার আগেই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন। ফজরের সময় হলে সাথে সাথে নামাজ পড়ে জামারাহ'র উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবেন। আবারও মেট্রোরেলে যেতে হবে যদিও দূরত্ব খুব কম। যত আগে রওনা হবেন তত ভীর কম হবে এটা মনে রাখবেন। জামারাহ'য় পাথর মারতে হবে সুতরাং ওখানকার ভীর এড়াতে হলে দ্রুত যেতে হবে।

জামারহ যেতে যেতেই দেখবেন কিছু মানুষ পাগলামি করে, ছুটাছুটি শুরু করে। মনে হয় সামনে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। এদের থেকে দূরে থাকুন। এখন জামারাহ'র ব্যবস্থা অনেক সুন্দর। তালবিয়া পাঠ করতে থাকুন। দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন কোন দিকে ভীর কম সেই দিক দিয়ে গিয়ে পাথর মেরে আসুন। প্রথম দিন শুধু বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারবেন। পরের দুই দিন তিন শয়তানকেই সাতটি করে পাথর মারবেন। খেয়াল রাখবেন আপনার পাথর যেনো অন্য হাজ্বির গায়ে আঘাত না করে। আবার আপনিও এমন জায়গায় দাঁড়াবেন না যেখানে আপনার গায়ে অন্যের ছোঁড়া পাতর আঘাত করতে পারে। তিন শয়তানকে পাথর মারা শেষ হলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দোয়া করুন (অনেকে করেন তবে এটা আবশ্যিক না)।

পাথর নিক্ষেপ শেষ করে আপনি (প্রথম ও শেষ দিন) যাবেন কাবা শরীফে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া করার জন্য। রোড সাইন, বড় করে ইংরেজিতে লেখা আছে কোন দিকে যাবেন, সেটা ফলো করুন। তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাঁটুন। কিছু দূর যাওয়ার পর কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস রাস্তায় পেতে পারেন মক্কা যাওয়ার জন্য। অনেক ভাড়া চায়, দামাদামি করে নিতে পারেন যদি দরকার হয়। তবে শরীর কুলালে হেঁটে যান; খুব বেশি দূর না। হেঁটে ১:৩০ ঘন্টায় সহজেই পৌঁছাতে পারবেন। (তুলনামূলক ভাবে পাকিস্তানী ড্রাইভার ভালো হয়, সৌদি গুলো সবচেয়ে কম ভালো আর বাঙালি কেমন আমরা সবাই জানি)

মক্কা পৌঁছে যদি শরীর ভালো থাকে তবে তখনই ফরজ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া করে ফেলুন। এর মধ্যে আপনার কোরবানি হয়ে যাবে (হয় মেসেজ পাবেন অথবা জানিয়ে দিবে যে এই সময়ের মধ্যে কোরবানি হয়ে যাবে; সেটা ফলো করুন)। এবার মাথা মুণ্ডন করুন। আজ অনেক ভীর হবে সব স্যালুনে, টাকাও আজ বেশি নিবে (প্রথম দিন যেটা ৫ রিয়ালে করেছিলেন আজ তা ২০ রিয়াল নিবে)। এই সব জায়গায় যত আগে আসবেন তত ভীর কম, তত সুবিধা।

***আলহামদুলিল্লাহ আপনার হজ্ব শেষ ***

আপনার আগের হোটেল রুমে গিয়ে রেস্ট করুন, খাওয়া-দাওয়া করুন। আজ কিন্তু ঈদের দিন! আবার কখন মিনায় যেতে হবে গ্রুপে জেনে নিন এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকুন। মিনায় আরও দুই দিন থাকতে হবে, জামারাতে পাথর মারতে হবে আরও দুই দিন। শেষ দিন পাথর মেরে মক্কা চলে আসবেন আপনার হোটেলে।

মক্কা ছেড়ে আসার আগে বিদায় তাওয়াফ করতে হবে; এটা ওয়াজিব। এর মাঝে প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মক্কা শরীফের জামাতে আদায় করার চেষ্টা করুন, বেশি বেশি তাওয়াফ করুন। আল্লাহর ঘর ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করুন, না হলে স্ব চোক্ষে দেখার চেষ্টা করুন, আল্লাহর কাচ্ছে কান্নাকাটি করুন। এই সুযোগ আপনার জীবনে আর নাও আসতে পারে।

কোরবানিঃ

কোরবানি নিয়ে অনেকেরই কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে যেমন কোরবানি নিজে করা যায় কিনা, টাকা দিয়ে দিলে কতৃপক্ষ ঠিকঠাক দেয় কিনা, কোরবানির মাংস খেয়েছেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এব্যাপারে আমার মনে হয় খুব বেশি চিন্তা না করাই উত্তম। আমার মতে সবচেয়ে ভালো হয় সৌদি হজ্ব কতৃপক্ষকে টাকা দিয়ে দেয়া। এর ফলে আপনার কোরবানির ধর্মীয় অংশ পালন হয়ে যাবে। কিন্তু এটা না করে যদি আপনি ওখানকার প্রবাসী বাঙালী বা হজ্ব গাইডের কথা শুনে ভিন্ন কিছু করেন তাহলে সেটা আরও খারাপ কিছুও হতে পারে। আশেপাশে এখন আমাদের দেশের মতো গরু/ছাগল/উট/ভেড়ার হাট নাই। ওদের কেনাকাটা কিভাবে হয় সে ব্যপারেও আপনার জ্ঞান নাই। এটা করতে গিয়ে যে আপনি প্রতারিত হবেন না এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিবে? সুতরাং আল্লাহর নাম নিয়ে কতৃপক্ষকে এই দায়িত্ব দিয়ে দেন।

মদিনায় হুজুরে পাক (সাঃ) এর রওজামুবারক পরিদর্শন আমাদের সকলের একান্ত কাম্য। এটা মদিনা শরীফে। অনেকে অনেক ধরণের বুদ্ধি দিবে তবে আপনি আপনার গাইডের কথা শুনুন, সে অনুযায়ী কাজ করুন। সে যদি ব্যার্থ হয় তবে নুসুক এপের মাধ্যমে চেষ্টা করুন। রওজা মোবারকে গিয়ে ওখানকার নিরাপত্তারক্ষী ও গাইডের কথা শুনুন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না, অন্যের অসুবিধা হয় এমন কিছু করবেন না। সওয়াব বেশি হবে না বরং বিপদে পরবেন।

ঘুরাঘুরিঃ
আপনি সরকারি ভাবে গেলে ঘুরাঘুরি নিজের মতো। সেক্ষেত্রে কোথাও (তাঈফ, হেরা পাহাড়, মদিনায় মদিনা ইউনিভার্সিটি, কোরান প্রিন্টিং প্রেস, জ্বীন পাহাড় আরও এমন অনেক স্থান আছে) যেতে চাইলে কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে যান। আর বেসরকারি ভাবে হলে গাইডের সাহায্য নেন। তবে সুস্থ থাকলে অবশ্যই ঘুরুন। ঘুরাঘুরি মূল হজ্বের পর করুন।

কেনাকাটাঃ

বাঙালী বিদেশ গিয়েছে আর কেনাকাটা করবে না; এটা হতে পারে না। কেনাকাটা করার জন্য মক্কা-মদিনা দুই জায়গা উনিশ-বিশ। স্বর্নের দোকান ব্যতিত অন্য যে ধরনের কেনাকাটা আমরা সাধারণত করি তার বেশিরভাগ দোকানি বাঙালি, রোহিঙ্গা, পাকিস্তানি। সে যে দেশেরই হোক তার কাজ ব্যবসা করা। সুতরাং দামাদামি করে নিবেন। প্রথম কিছুদিন ভাব বুঝেন, কোথায় কি পাওয়া যায়, দামাদামি কেমন চলে ইত্যাদি জেনে নিন। তবে বড় বড় মলে সাধারণত দামাদামি চলে না। দুই-তিন দিনে কেনাকাটা করুন। মক্কা-মদিনা দুই জায়গা থেকেই কমবেশি কেনাকাটা করুন। না হলে মানসিক শান্তি পাবেন না। খেজুর কেনার জন্য মদিনাই মনে হয় তুলনামূলক সাশ্রয়ী।
স্বর্ণ কিনতে চাইলে অবশ্যই সাবধানে করবেন। একা যাবেন না। স্বর্ণের দোকানেও ভালোই দামাদামি করতে হয়। স্বর্ণ কিনতে গেলে দেশে এই মূহুর্তে ভরি কত করে চলে সে ধারণা এবং দাম তুলনা করতে পারে এমন কাউকে অবশ্যই সাথে নিবেন। দেশের দামের চেয়ে ভরি প্রতি দশ হাজার টাকা কম দাম বলবেন, এবং সাধারণত তাই হয়। স্বর্ণ কেনার ক্ষেত্রে ট্যাক্স এর ব্যপারে আগে ফয়সালা করে নিবেন। সব জায়গায় আপনাকে ঠকানোর জন্য লোক বসে আছে। আপনি তাদের নিকট নিতান্তই একজন কাস্টমার, হাজ্বি নন। ওখানে প্রয়োজন নয় এমন সকল কেনাকাটা মূল হজ্বের পরে করুন। আগে মন দিয়ে হজ্ব করুন।

হোটেল রুমে টাকা, ডলার, রিয়াল খুব সাবধানে, নিজ দায়িত্বে রাখবেন।

কত রিয়াল নিয়ে যাবেনঃ

খাওয়া যদি আপনার হয় তবে শুধু খাওয়ার জন্য তিনবেলায় কমবেশি দিনে ৫০-৭০ রিয়াল লাগবে প্রতি জনের জন্য। আর যদি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে যান তবে যেভাবে মেনু দিবেন সেই অনুযায়ী বিল আসবে। আর বাকিটা আপনার কেনাকাটার উপর নির্ভর করবে। খাওয়া ও সাধারণ কেনাকাটার টাকা দেশ থেকে রিয়াল করে নেয়াটা উত্তম। আর স্বর্ণ বা দামি কেনাকাটার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সহজতর। হজ্বে যাওয়ার আগে ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজনীয় কাজ করে যাবেন যেন ওখানে ব্যবহার করতে পারেন।

জমজমের পানি আপনি আপনার মতো আনতে পারবেন না। ঢাকা এসে আপনি এয়ারপোর্ট থেকে বের হবার সময় মাথাপিছু ৫ লিটারের জেরিক্যান পাবেন। সুতরাং ইমিগ্রেশনের সময়ই জিজ্ঞেদ করুন, চোখ-কান খোলা রাখুন যেন মিস না করেন।

ফিরতি ফ্লাইটঃ

ফিরতি ফ্লাইটের ব্যপার অবশ্যই জেনে যাবেন। তবে আপনার লাগেজের ওজনের দিকে খেয়াল রাখবেন৷ ওজন বেশি করে টেনশনে থাকার কোনো মানে হয় না। গল্প শুনতে পারবেন ওমুককে ধরে নাই, তমুকে ৩০ কেজির জায়গায় ৪০ কেজি নিয়ে এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব শুনে বিভ্রান্ত হবেন না। আরেকজন ধরা খায় নি বা পেরেছে বলে আপনিও পারবেন এর কোন গ্যারান্টি নাই।

বিশেষ অনুরোধঃ

আমাদের বেশিরভাগ হাজ্বি গিয়ে ঠান্ডা, গলাব্যথা ইত্যাদিতে ভোগেন। এর কারণ হলো তাওয়াফ করার সময় ঠান্ডা পানি খাওয়া। গরমের মধ্যে ঠান্ডা পানি খেতে অনেকেরই ভালো লাগে তবে মনে রাখবেন যে ঠান্ডা পানি খেয়েছেন তো ঠান্ডা-কাশিও নিয়ে নিয়েছেন। নিজেকে ঝগড়াঝাটি ও গীবত থেকে দূরে রাখুন অন্যকেও অনুপ্রানিত করুন।

**শুক্রবার দিন জুমার নামাজ মূল কমপ্লেক্সে পড়ার জন্য ১০ঃ৩০ এর মধ্যে অবশ্যই বের হতে হবে। না হলে রাস্তায় পড়তে হবে।

***মহিলারা যেন ঝগড়াঝাটি না করেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকেন সেদিকে খেয়াল রাখুন (যদি আপনার সাথে মহিলা থাকেন)। একরুমে ৪/৫/৬ জন থাকবেন, সমস্যা হবেই; মানিয়ে চলুন। ধরে নেন আপনি ঠিক এবং অন্যরা বেঠিক তাও পরাজয় মেনে নিন। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারলে নামাজে দাঁড়িয়ে যান; দেখবেন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলের হজ্ব কবুল করুন।

**হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খাওয়া সুন্নত। আপনি যদি সুযোগ পান তবে অবশ্যই চুমু খাবেন। তবে মনে রাখবেন হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খাওয়ার জন্য অন্য হাজ্বিকে যেন শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত না করেন। সেটা অনেক বড় গুনাহের কাজ।

** ফরজ, নফল তাওয়াফ করা অনেক বড় সওয়াব। পুরুষ ও মহিলা এক সাথেই তাওয়াফ করে থাকেন। এই ভীরের মধ্যে তাওয়া করতে গিয়ে নিজেকে অন্যের কাছ থেকে হেফাজত করা এবং একইভাবে অন্য কেউ যেন আপনার নিকট থেকে হেফাজতে থাকতে পারেন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। সারা দুনিয়া থেকে হাজ্বি আসেন, একেকজনের পোশাক, অভ্যাস, চলাফেরা একেক ধরণের। নিজেকে সংযত রাখুন।

উপসংহারঃ

পরিশেষে বলব আমরা বেশিরভাগ মানুষ জীবনে একবার-ই হজ্ব করি। যাবার জন্য মন স্থির করুন, মানসিক প্রস্তুতি নিন। মনকে নরম করুন, আল্লাহ রাসুলের দিকে মন নিয়ে যান। হজ্বের ফরজ, ওয়াজিব গুলো জেনে নিন। হজ্বের বিভিন্ন বই/গাইডে অনেক দোয়া, করণীয় দেখে ভয় পাবেন না। কোনো দোয়া না পারলে অসুবিধা নাই। মূল হজ্ব যেন ঠিকঠাক ভাবে করতে পারেন সেভাবে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।
সারা দুনিয়ার মানুষ সারা দুনিয়ার সকল ধরনের রোগ, জীবানু, ভাইরাস নিয়ে আসবেন। সুতরাং অসুস্থ হতে পারেন। মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন; আপনার ইচ্ছা। অন্যের প্রতি দয়াশীল হোন, একে অপরকে সাহায্য করুন। কার হজ্ব কিসে কবুল হবে আর কি জন্য বাতিল হয়ে যাবে আমরা জানি না। আমরা চেষ্টা করব যেন আল্লাহ আমাদের হজ্ব কবুল করেন।

আল্লাহ আপনার হজ্ব কবুল করুন।

আমাদের উপর মক্কার মসজিদগুলোর হক রয়েছে; তাই আসুন আমরা সেগুলোকে সালাতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করি এবং এতে বরকতের আশা করি।। ক...
20/03/2024

আমাদের উপর মক্কার মসজিদগুলোর হক রয়েছে; তাই আসুন আমরা সেগুলোকে সালাতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করি এবং এতে বরকতের আশা করি।। কারণ #মক্কা_পুরোটাই_হারাম।

04/02/2024

২০২৪ সনের হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বিশেষ বিবেচনায় শেষবারের মতো আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন অথবা প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যাবে।

প্রাথমিক নিবন্ধন করা হলে প্যাকেজের অবশিষ্ট মূল্য ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় এ বছর হজে যাওয়া যাবে না।

📞 ২০২৪ সালে হজে অংশগ্রহণের জন্য বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন : 01884493968, 01822333376 নাম্বারে।
🏢Address. 292, Inner Circular Road, Shatabdi Center (14/C), Fakirapool, Motijheel, Dhaka, 1000. Bangladesh

12/01/2023
08/01/2023
26/07/2022

👉মক্কায় প্রবেশের আদব হিসেবে তাওয়াফের পূর্বে কি কি কাজ আমাদের করণীয় আছে?
👉কাজগুলো নিম্নরূপঃ

(১) মক্কায় পৌঁছে সুবিধাজনক কোন স্থানে একটু বিশ্রাম করা যাতে ক্লান্তি দূর হয় এবং শক্তি অর্জিত হয়। তাছাড়া তাওয়াফের পূর্বে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হওয়া জরুরী। (বুখারী)

(২) সম্ভব হলে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। (বুখারী) সুযোগ না পেলে না-করলেও চলবে। তবে নাপাকী থেকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।

(৩) সহজসাধ্য হলে উঁচুভূমি এলাকা দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করাও মুস্তাহাব। (বুখারী) ‘‘বাবুস্ সালাম’’ গেট দিয়ে ঢুকা উত্তম। তা সম্ভব না হলে যে কোন দরজা দিয়ে ঢুকতে পারেন।

(৪) হারাম শরীফে প্রবেশকালে উত্তম হলো ডান পা আগে দিয়ে ঢুকা এবং নীচের দোয়াটি পড়াঃ

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ - اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

এবং মসজিদে হারাম থেকে বের হওয়ার সময় পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

এ দোয়াগুলো দুনিয়ার অন্যসব মসজিদেও পড়া সুন্নত।

(৫) ‘‘মসজিদে হারাম’’এর তাহিয়াহ হল তাওয়াফ করা। আর তাওয়াফের নিয়ত না থাকলে দু’রাকআত সালাত আদায় না করে মসজিদে কখনো বসবেন না। তবে, জামাআত দাঁড়িয়ে গেলে সরাসরি জামাআতে শরীক হয়ে যাবেন।

(৬) অসুস্থ ও মাযুর ব্যক্তিদের জন্য খাটিয়ায় চড়ে তাওয়াফ বা সাঈ করা জায়েয আছে। (বুখারী)

(৭) প্রথম তাওয়াফকে ‘তাওয়াফুল কুদুম’

(طواف القدوم) বা ‘তাওয়াফুল উমরা’ বলে।

06/06/2022

হজ্জের নিয়মকানুন
এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ্
হজ্জের ফরজ ৩টি

১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি

(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব

দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।
তালবিয়া

”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা,
(৫) নখকাটা,
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।
হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ

বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান

বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।
তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু

বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত

আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
শুধু হজ্জের নিয়্যাত

আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
তাওয়াফের বিবরণ

হাজীদের সর্বপ্রথম কাজই হলো (তামাত্তু ও ক্বেরান কারীগণ) নিজের মালছামানগুছিয়ে রেখে পাকপবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে ‘হারাম শরীফে’ হাজিরা দেওয়া এবং ‘তাওয়াফ’ করা। ওমরাহ এবং হজ্জের তাওয়াফ ব্যাতিত নফল তাওয়াফ ও করা যায়। যেমন: রাসূল (দঃ), সাহাবা-আওলিয়া, আহ্লে বাইত, মা-বাবা, পীর-উস্তাদ ও অন্যান্য মুরুব্বী বা সন্তানদের স্মরনে বা তাঁদের নামে তাওয়াফ করা।
তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ

(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী

(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।
তাওয়াফের নিয়্যাত

আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
সায়ীর নিয়ম

‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
সায়ীর সহজ দোয়া

সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
সায়ীর কুরআনী দোয়া

‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।

Address

Fulbaria

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Hajj Bangladesh হাজ্জ কাফেলা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Hajj Bangladesh হাজ্জ কাফেলা:

Share

Nearby travel agencies