19/05/2022
গজনী অবকাশ কেন্দ্র
গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রকৃতিপ্রেমিদের মনে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের সারি সারি গজারী, শাল ও সেগুন গাছের সারি প্রশান্তি এনে দেয়। শীতকালে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ এখানে ছুটে আসেন । পাহাড়ী ঝর্ণা, লেক, টিলা, ছড়ার স্বচ্ছ জল ও ঘন সবুজ বন এখানকার পরিবেশকে দিয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পাহাড়ী ঝর্ণার গতিপথে বাধ দিয়ে কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে। লেকের মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও লেক ভিউ পেন্টাগন, যা একটি দোদ্দুল্যমান ব্রীজ দিয়ে সংযুক্ত আছে। গারো পাহাড়ের চূড়ায় ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি আধুনিক রেষ্ট হাউজ রয়েছে। রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে যাবার জন্য রয়েছে পদ্মাসিঁড়ি নামক একটি আঁকাবাঁকা সিঁড়িপথ। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও খেলার মাঠ। পিকনিক করার জন্য এখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির নলকূপ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং রান্নার আয়োজন।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যা যা দেখবেন
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, এই টাওয়ার থেকে পাহাড়ি টিলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। এছাড়া আরো রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, ক্যাকটাস পল্লী, শিশু পার্ক, রংধনু ব্রীজ, ক্রিন্সেন্ট লেক, কৃত্রিম জলপ্রপাত, প্যান্ডেল বোড, পানসিতরী নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ স্মুতিসৌধ, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, পাতাল পথ, লাভলেইন এবং বিভিন্ন প্রানীর প্রতিকৃতি। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে আসা ভ্রমণকারীদের বাড়তি পাওনা হিসাবে রয়েছে গারো পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা।
প্রবেশ ফি
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী নিয়ে প্রবেশ করতে হলে উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে গেটপাস নিতে হয়। বাস ও ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মেক্সি ১৫০ টাকা, জিপ, প্রাইভেট কার ১০০ টাকা এবং সিএনজির প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা প্রদান করে গেটপাস নিতে হয়। এই গেটপাস সংরক্ষণ করুন কারণ সীমান্তে বিজিবির নকশী ক্যাম্পে গেটপাস দেখাতে হয়। এছাড়াও পার্ক এবং বিভিন্ন রাইডে চড়তে রাইডভেদে ৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত লাগবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকার মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল বাসে করে শেরপুর আসতে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া লাগবে। তবে মহাখালী থেকে দুপুর ২ টায় শেরপুর যাবার এসি বাস পাবেন, এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০ টাকা।
শেরপুর বাসস্ট্যান্ড হতে জনপ্রতি ১০ টাকা অটো রিক্সা ভাড়ায় খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর আসতে হবে। শাপলা চত্বরে গজনী-মধুটিলা যাওয়া অটো/সিএনজি রিজার্ভ পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য গজনী ও মধুটিলা ইকোপার্ক ঘুরে আসার অটো ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। প্রতি অটোতে ৬/৭ জন উঠা যায়।
শেরপুর থেকে মাইক্রোবাস যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে খরচ হবে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া শেরপুর থেকে লোকাল বাসে করে ঝিনাইগাতী উপজেলায় এসে আবার সেখান থেকে বাস, সিএনজি অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে সহজে যেতে পারবেন।
উত্তরবঙ্গ থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে হলে রেল বা সড়ক পথে জামালপুর হয়েও শেরপুর আসতে পারেন। শেরপুর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে গজনী অবকাশ কেন্দ্র অবস্থিত।
কোথায় থাকবেন
ঝিনাইগাতীতে উপজেলা ডাকবাংলো এবং বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ আছে। এগুলোতে পূর্ব অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। শেরপুর জেলায় ৫০ থেকে ৫০০ টাকায় সাধারণ মানের গেষ্ট হাউজের পাশাপাশি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় হোটেল সম্পদ, কাকলী, বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, ভবানী প্লাজা নামের বেশকিছু মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে। শেরপুরে সড়ক ও জনপথ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎ এর পৃথক পৃথক রেষ্ট হাউজ রয়েছে। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের রেস্ট হাউসের থাকতে হলে সময় ভেদে প্রতিটি কক্ষের জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হতে পারে।
ফোন নাম্বারঃ সার্কিট হাউজ – ০৯৩১-৬১২৪৫, হোটেল সম্পদ – ০১৭১২৪২২১৪৫, কাকলী গেষ্ট হাউজ – ০১৯১৪৮৫৪৪৫০, হোটেল সাইদ – ০৯৩১-৬১৭৭৬।
কোথায় খাবেন
খেতে চাইলে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর কিংবা শেরপুর চলে আসা সবচেয়ে ভাল। ঝিনাইগাতীতে হোটেল সাইদ ও হোটেল জোসনায় খাবার খেতে পারেন। আর শেরপুর খাবার খেতে চাইলে নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার এবং হোটেল প্রিন্সে যেতে পারেন।
পরামর্শ
গজনী অবকাশ কেন্দ্র ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন তাই কৌতুহলের বশবর্তী হয়েও সীমান্তের দিকে না যাওয়াই ভাল। জরুরী প্রয়োজনে শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় ফোন করতে পারেন। ফোন নাম্বারঃ ০৯৩১-৬১৯০০, ০৯৩১-৬১২৮৩, ০৯৩১-৬১৯৫৪