28/03/2022
প্রতিটা কাজের পিছনেই আসলে কিছু না কিছু গল্প থাকে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যেও কিছু থাকে খুব আলাদা ধরনের। ঠিক তেমনই একটি গল্প আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। গোপন রাখার স্বার্থে তার নাম দিলাম তুলি।
যে কোন একটা মাধ্যমে তুলি আপু আমার সাথে যোগাযোগ করেন জানুয়ারীর 15/16 তারিখে। তিনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন 2021 সালের আগস্টের 31 তারিখে। ডেলিভারী স্লিপ অনুযায়ী সেটা হাতে পাওয়ার কথা সেপ্টেম্বরের 21 তারিখে।
কিন্তু ডেলিভারীতো দূরের কথা, তার আবেদন ঐদিন পর্যন্ত ব্যাকএন্ডেই আটকে আছে। রিকুয়েস্ট করলেন যেন দ্রুত পাসপোর্টটি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করি।
প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করলাম। দেখলাম বেশ কিছু সংশোধনসহ তিনি তার আগের পাসপোর্ট থাকার বিষয়টি গোপন করেছেন। যাবতীয় আলোচনা শেষ করে কাজ শুরু করে দিলাম। সময় নিলাম 17/18 দিন।
কাজ শুরুর প্রথমেই ধাক্কা। রি-ওয়ার্কে ফিরিয়ে এনে যখন নতুন করে সাবমিট করবো তখন বললো জিডি কপি লাগবে। কিন্তু পাসপোর্টতো হারিয়ে গেছে, সাপোর্টিং ডকুমেন্টসও নাই, পাসপোর্ট নম্বর ছাড়াতো জিডি করা যাবে না।
অনেক খোঁজাখুজির পরে একটা ফটোকপি পাওয়া গেলো, কিন্তু অস্পষ্ট। কোনমতে পাসপোর্ট নম্বরটা বোঝা যাচ্ছে। জিডি করলাম, জমা দিলাম। সময় পেরিয়ে গেলে মোটামুটি 12 দিন। রি-ওয়ার্ক ছাড়ে না।
আবার যোগাযোগ করলাম, যা শুনলাম সেটাতে চরম আকারের আশাহত হতে হলো। সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে জিডি পাসপোর্ট জমা হয় না। করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জানালো আগারগাও থেকে একটা রিপোর্ট হয়, সেই রিপোর্টে নম্বর উঠলে তবেই রি-ওয়ার্ক ছাড়বে।
অপেক্ষায় রইলাম, নম্বর উঠলো আরো 12 দিন পরে, তাও রি-ওয়ার্ক ছাড়ে না। আবার যোগাযোগ করলাম। এবার যা শুনলাম তাতে রীতিমত হাড় হিম করা সংবাদ।
জানালাম তুলি আপুকে। তিনি তো শোনার সাথে সাথে পারলে কেঁদেই ফেলেন। পাসপোর্ট অফিস থেকে বেশকিছু ডকুমেন্টস চাইলো। অনেক যুদ্ধ করে সেগুলো যোগাড় করে জমা দিলাম। সাথে তাকে বললাম চিন্তা না করে, আল্লাহর উপর ভরসা করতে।
বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে কথাও হলো। সর্বশেষ রি-ওয়ার্ক ছাড়লো মার্চের 16 তারিখে। আমিও নিশ্চিন্ত হলাম। এরপর ব্যাকএন্ড ছাড়িয়ে প্রিন্টে পাঠিয়ে 24 তারিখে ডেলিভারীর জন্য রেডি হয়ে যায়, এবং তুলি আপু গতকাল 27 তারিখ গিয়ে ডেলিভারী নিয়ে আসেন।
গল্পটি শেয়ার করার কারন হচ্ছে, আমি নারী দিবসে আমার পোস্টের মাধ্যমে যে কয়জন নারীর কথা উল্লেখ করেছিলাম, তার মধ্যে তুলি আপু একজন। যিনি তার দৃঢ় মনোবলের কারনে জীবনের কঠিনতম এক বিপদ থেকে ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
আমাদের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখার জন্য তুলি আপুকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তার অনাগত দিনগুলোর জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
আর পাসপোর্ট যেহেতু করেছেন, সেহেতু ঘুরতে তো অবশ্যই যাবেন। সো, হ্যাপি ট্রাভেলিং!!!
💗💗💗💗