08/06/2024
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের ৫ পরামর্শ
Courtesy: প্রথম আলো
বিশ্বাস করুন! কাপড়চোপড়, টুকিটাকি জিনিসপত্রে ঠাসা ভারী ব্যাগটা কাঁধে নেওয়ামাত্রই শরীরটা কেমন হালকা হালকা লাগে। মনে হয় কোনো ডায়েট কিংবা ব্যায়ামের ঝক্কি ছাড়াই এক লাফে ওজন কমে গেল অনেকখানি। ব্যাগ কাঁধে কোনো ভ্রমণে বেরোনোর মুহূর্তে এই অ্যাড্রিনালিন রাশ, এই রোমাঞ্চটা বোধ হয় সব পর্যটকই টের পান। তাই ডলারের দাম, মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ভ্রমণপ্রেমীরা বেরিয়ে পড়েন ঠিকই।
ভিনদেশে বেড়ানোটাও এখন আর শুধু ধনীদের একচেটিয়া না। ‘বাজেট ট্রাভেলার’ কথাটা আজকাল বেশ প্রচলিত। একটু বুদ্ধি খাটালে বাজেট অল্প হলেও আপনি আশপাশের কয়েকটা দেশ অন্তত ঘুরে আসতে পারবেন। এমনকি সে জন্য কোনো ট্রাভেল এজেন্সির ‘কম দামি প্যাকেজের’ অপেক্ষায় থাকারও প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই সবকিছুর বন্দোবস্ত করে ফেলতে পারবেন।
কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের কয়েকটা উপায় জেনে নিই, চলুন।
টিকিট কাটুন আগেভাগে, চোখ রাখুন ওয়েবসাইটে
বিমানের টিকিট যত আগে কাটবেন, ভাড়া পড়বে তত কম। এ ছাড়া একেক এয়ারলাইনস একেক সময়ে ছাড় দেয়। এয়ারলাইনসগুলোর ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখলে ছাড়ের খবর পেয়ে যাবেন।
অনেক সময় আপনাকে হয়তো ‘কানেক্টিং ফ্লাইট’ বেছে নিতে হতে পারে। তাতে যাত্রা একটু লম্বা হয়ে যাবে, ট্রানজিটে একটা বড় সময় অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু টিকিটটা পাবেন কম দামে।
ভ্রমণ করুন অমৌসুমে
একেক দেশে ভ্রমণের মৌসুম একেক সময়ে। যখন মৌসুম চলে, তখন বিমানের টিকিটের দাম থেকে শুরু করে হোটেল ভাড়া, সবই বেড়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন অমৌসুমে ভ্রমণ করতে। থাইল্যান্ডে যেমন এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকের চাপ কম থাকে। মালদ্বীপে খরচ একটু কম থাকে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত। অন্যদিকে দুবাইতে যদি ঘুরতে যান রমজান মাসে, তাহলে খরচ কম পড়বে। দর্শনীয় জায়গাগুলোতে ভিড় কম পাবেন। আবার ভিন্ন একটা দেশে রমজান পালনের অভিজ্ঞতাও হবে। এভাবে ভ্রমণের সময়টা একটু এদিক–ওদিক করে নিলেই দেখবেন অনেক ক্ষেত্রেই টাকা বেচে যাচ্ছে।
কম খরুচে হোটেল, এয়ারবিএনবি
ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, নেপালের মতো দেশগুলোতে মোটামুটি অল্প খরচেই আপনি হোটেল পেয়ে যাবেন। বুকিং ডটকম, অ্যাগোডা, গুগলের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি সরাসরি হোটেলের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারেন। কখনো কখনো সরাসরি যোগাযোগ করলে দাম কিছুটা কম পড়ে। বন্ধুবান্ধব মিলে যদি ভ্রমণ করেন, হোটেলে না উঠে ‘ব্যাকপ্যাকারস হোস্টেল’গুলোতে উঠতে পারেন। নানা দেশের পর্যটকের সঙ্গে এক ঘরে থাকাও কিন্তু একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
হোটেলের ভাড়া অনেকটাই নির্ভর করে জায়গার ওপর। যেমন ধরা যাক আপনি যদি থাইল্যান্ডের ফুকেটে বেড়াতে যান, পাতং সৈকতের যত কাছাকাছি থাকবেন, ভাড়া তত বাড়বে। বড় বড় শপিং মলগুলোর কাছাকাছি যেসব হোটেল, সেগুলোরও খরচ সাধারণত বেশি। তাই একেবারে পর্যটকদের কেন্দ্রগুলোতে না থেকে ৫–১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে কোনো হোটেল বেছে নিন।
কোনো কোনো দেশে হোটেলের তুলনায় এয়ারবিএনবিতে খরচ বেশ কম পড়ে। এয়ারবিএনবিকে সহজ ভাষায় বলা যায় অল্প দিনের জন্য রেডি ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম। এয়ারবিএনবির ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ঘাঁটলেই নানা রকম ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
গণপরিবহন ও স্কুটার
বিদেশে ভ্রমণে গেলে উবার, গ্র্যাব, ট্যাক্সি ব্যবহার না করে যতটা সম্ভব গণপরিবহন ব্যবহারের চেষ্টা করুন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে যেমন পরিবহন পাস (এক ধরনের কার্ড) কিনে নিতে পারবেন। এই পাস ব্যবহার করেই এমআরটি, বাসসহ অধিকাংশ গণপরিবহনে চড়তে পারবেন।
শুধু গণপরিবহন ব্যবহার করেই কতটা সাশ্রয় করা সম্ভব, তার একটা উদাহরণ দিই। ধরুন আপনি মালদ্বীপে বেড়াতে গেছেন। মালে থেকে মাফুশি দ্বীপে যদি ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় স্পিডবোটে চড়ে যান, জনপ্রতি খরচ হবে ২৫ ডলার। অথচ ফেরিতে গেলে খরচ পড়বে মাত্র ৪–৫ ডলার। এক–আধ ঘণ্টা সময় বেশি লাগবে। তাতে কী? একটু বেশি সময় ধরেই নাহয় সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করলেন!
এশিয়ার দেশগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইদানীং স্কুটার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে মোটামুটি কম খরচেই স্কুটার ভাড়া করে নিতে পারবেন। যত বেশি দিনের জন্য ভাড়া নেবেন, খরচ পড়বে তত কম। স্কুটার ভাড়া করে নিলেও ঘোরাঘুরিটা অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়ে যায়। অবশ্য তার জন্য আপনাকে স্কুটার চালাতে জানতে হবে আর আপনার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় অ্যাপ
বিভিন্ন অ্যাপ আজকাল ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে বেশ কাজে লাগে। এসব অ্যাপে দর্শনীয় স্থানগুলোর টিকিট আপনি ‘বান্ডল প্যাকেজ’ হিসেবে কম খরচে কিনে নিতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ক্লুকের কথা। একেক দেশে বেড়ানোর ক্ষেত্রে ক্লুকে একেক রকম অফার পাবেন। তবে সব অফারই যে আপনাকে সবচেয়ে কম খরচের নিশ্চয়তা দেবে, তা নয়। ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব ঘেঁটে যাচাই–বাছাইটা আপনাকেই করতে হবে। সব মিলিয়ে আপনার ‘রিসার্চ’ যত ভালো হবে, খরচ হবে তত কম।
লিখেছেনঃ মো. সাইফুল্লাহ