09/10/2021
জবানের অনেক গুনাহ রয়েছে; তার মধ্য থেকে গিবত সবচেয়ে বেশি ব্যাপক। এটি এমন এক ব্যাধি; যা আমাদের প্রতিটি আসরে, প্রতিটি মজলিসে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো আড্ডা আজ গিবত থেকে মুক্ত নয়। জনসাধারণ দূরের কথা, অনেক দ্বীনদার-পরহেজগারও এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। গিবত বলা এবং শোনা উভয়টিই মারাত্মক গুনাহ। গিবত মানে - কোনো মুসলমানের অগোচরে তার সম্পর্কে এমন কোনো মন্তব্য বা আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে।
এক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম, ৬৪৮৭)
কুরআনে কারিমে গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে ততটা রুক্ষভাষা ব্যবহার করা হয়নি। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে পছন্দ করো? অবশ্যই তোমরা তা পছন্দ করবে না।’ (সূরা হুজরাত, ১২)
হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির ধমকি এসেছে।
প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন আমাকে মেরাজে নেয়া হলো, সে সময় এমন কিছু মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, যা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশ খাঁমচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি প্রশ্ন করলাম, এরা কারা? (হে জিবরাইল!) তিনি বললেন, এরা ওইসব লোক যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গিবত করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ১৫৩৪)
গিবত একটি কবিরা গুনাহ, যা জেনার চেয়েও মারাত্মক। রাসূল (সা.) বলেন, ‘গিবত জেনার চেয়েও গুরুতর। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে গিবত জেনার চেয়ে গুরুতর? প্রতি উত্তরে নবীজি বললেন, ‘মানুষ জেনা করার পর তাওবা করে, ফলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, ৪১৫)
অর্থাৎ জেনাকারী নিজেকে অপরাধী ভেবে তাওবাহ করে, ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। আর গিবতকারী গিবতকে গুনাহ-ই মনে করে না এবং তাওবাও করে না, যার কারণে তার গুনাহ চিরকালের জন্য থেকে যায়। কাজেই এটিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আসুন! আমরা নিজেরা নিজেদেরকে নিরীক্ষণ করে দেখি যে, আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কত কথাবার্তাই না বলি, সেটি কি গিবতমুক্ত? কিছু লোককে বলতে শোনা যায়, তারা বলে, আমি তো তার গিবত করছি না; এ কথা আমি তার মুখের ওপর বলতে পারব। তার এই যুক্তি দেয়ার কারণ হলো, যখন আমি এ কথা তার মুখের ওপর বলতে সক্ষম; কাজেই আমার জন্য তার গিবত করা জায়েজ। মনে রাখবেন, আপনি এ কথা তার মুখের ওপর বলতে পারেন বা না-ই পারেন, যদি তার অনুপস্থিতিতে তাকে কেন্দ্র করে আপনার উচ্চারিত মন্তব্য তার মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটি গিবত বলে গণ্য হবে। গিবতের অনেক ক্ষতি রয়েছে; তার মধ্য থেকে একটি হচ্ছে গিবতকারীর অর্জিত নেকি গিবতকৃত ব্যক্তির আমলনামায় চলে যায়। গিবতের সামাজিক বড় ক্ষতি হলো, যার গিবত করা হয় সমাজে তার মান-সম্মান নষ্ট হয়। লাঞ্ছিত হয় সে মানুষের কাছে। একজন মানুষকে সমাজে হেয় করা তাকে হত্যা করার চেয়েও গুরুতর। কারণ লাঞ্ছিত হয়ে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। তাই কারো গিবত করা মানে তাকে জীবিত রেখে মেরে ফেলা।
গিবত থেকে বেঁচে থাকার কিছু উপায় :
• সব সময় চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলবে। চিন্তা-ভাবনাহীন আবোলতাবোল কোনো কথা যেন মুখ দিয়ে বেরিয়ে না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখবে।
• নিজের ওপর দণ্ড কার্যকর করবে : গিবত থেকে বাঁচার আরেকটি সহায়ক পদ্ধতি হলো, নিজের ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে যে, যদি আমি ভবিষ্যতে গিবত করি তাহলে এই পরিমাণ জরিমানা তথা সদকা দেবো। আর সে জরিমানা হতে হবে মানসম্মত।
• যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে বলুন, ভাই! আপনার ব্যাপারে এমন গিবত করেছি। যখন এটা বলতে যাবেন, তখন নিজের মনের মাঝে অবশ্যই হতাশা আসবে। হায়, আমি তার গিবত করেছি। এ হতাশা হৃদয় মাঝে অপারেশনের মতো কাজ করবে। দ্বিতীয় কথা হলো, যখন এভাবে তার কাছে বলবে, তখন এর দ্বারা ওই ব্যক্তির মনও নরম হয়ে যাবে এবং সে ভাববেÑ হায়, লোকটি লজ্জিত হয়ে আমার কাছে এসেছে। কাজেই আমি তাকে মাফ করে দিই।
আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন!
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লেখাঃ মুফতি আবুল কাসেম (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)