08/04/2024
অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় ও নিরাপদ দেশ হচ্ছে জার্মানি। এর পেছনের কারণ হচ্ছে ইউরোপের এই দেশটির শক্তিশালী অর্থনীতি, অভিবাসীদের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং চাকুরি ও কর্মসংস্থার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের স্বপ্ন থাকে জার্মানিতে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার। জেনে নেয়া যাক কী উপায়ে ঐতিহ্যবাহী জার্মানি যেতে হবে, ভিসার খরচ কেমন হবে এবং ভিসা পেতে কী কী কাগজ-পত্র (ডকুমেন্ট) লাগবে। সেই সঙ্গে দেশটির সাধারণ অভিবাসন নীতিমালা সম্পর্কেও জানা যাবে। 🇩🇪🇩🇪🇩🇪
জার্মানির ভিসা আবেদনের নিয়মঃ
শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যপূর্ণ এই দেশটিতে যেতে হলে অবশ্যই যৌক্তিক কারণ ও বৈধ ভিসা থাকতে হবে। বৈধ ভিসা ছাড়া কেউই জার্মানিতে যেতে পারবেন না। জার্মানি যাওয়ার কয়েক ধরনের ভিসা রয়েছে। এদের মধ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (কাজের ভিসা)। কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা, উদ্যোক্তা, পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং বাসিন্দা হওয়া এসব কারণে মূলত দেশটিতে যেতে চায় অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ভিসা প্রত্যাশীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা, হেলথ ইন্সুরেন্স ও জার্মান ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতা থাকতে হবে। 🇩🇪
পাঁচ ধরনের ভিসার আবেদনের পদ্ধতি আলাদা। প্রথমত, আপনাকে নির্দিষ্ট করতে হবে ভিসার ধরণ, অর্থাৎ কোন ভিসার মাধ্যমে আপনি যেতে চান।🇩🇪🇩🇪🇩🇪
ওয়ার্ক পারমিট ভিসাঃ 🇩🇪
আপনি যদি দক্ষ কর্মী হয়ে থাকেন তবে জার্মানির উদ্যোক্তা বা চাকরিদাতা আপনাকে স্পন্সরের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশটিতে নিয়ে যেতে পারেন। এভাবে আপনি মর্যাদাকর ‘জার্মান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’র মাধ্যমে দেশটিতে যেতে পারবেন। জার্মানিতে ব্যবসা পরিচালনা করে এমন কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন আপনি। এই ভিসার আওতায় সেই দেশটিতে থাকা ও কাজ করার অনুমতি পাবেন আপনি। এই ক্ষেত্রে ওই কোম্পানির দেয়া অফার লেটারটা সঙ্গে থাকা ভীষণ জরুরি। জার্মানিতে প্রায়ই দক্ষ অভিবাসী কর্মীর প্রয়োজন হয়৷ তাই জার্মান সরকার এই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু করে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিক দেশটিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে যেতে পারেন।
জার্মানিতে ভালো বেতনের পাশাপাশি ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নিচে দেয়া হলো। জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট কাজের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি কার্ড) ফটোকপি থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট কাজের উপরে প্রশিক্ষণ সনদ থাকতে হবে।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সাক্ষরিত সনদপত্র ও বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি কার্ড) ফটোকপি লাগবে।
জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে এই সব ডকুমেন্ট/ নথিপত্র প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, আপনি যদি জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট বা ওয়ার্ক ভিসা পেতে চান তাহলে আপনাকে ন্যূনতম সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস হতে হবে। তাছাড়া জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর জার্মানিতে যেতে হবে। এই সব যৌগ্যতার সমন্বয়ে আপনি হাতে পেয়ে যেতে পারবেন স্বপ্নের ওয়ার্ক পারমিট ভিসাটি।
চাকরিপ্রার্থী ভিসা (জব সিকার ভিসা)ঃ 🇩🇪
চাকরিপ্রার্থী ভিসার (জব সিকার ভিসা) মাধ্যমে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি জার্মানিতে এসে চাকরি/কাজ খোঁজার অনুমতি পেয়ে থাকে। এই বিশেষ ভিসার মেয়াদ ৬ মাস। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি চাকরি বা কর্মসংস্থান করে ফেলতে পারেন তবে তাহলে জব সিকার ভিসাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় উন্নীত হবে। অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি তিনি কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসাঃ 🇩🇪
জার্মান সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা সুবিধা দিয়ে থাকে। কেউ যদি দেশটিতে পড়তে যেতে চান, তাহলে তারা সরাসরি জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো অর্থ আয় করা যায়।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে, ভিসা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ মাত্র তিন মাস। এর পর এটি বৈধতা হারাবে। তবে ওই শিক্ষার্থী জার্মানিতে আসার পর যদি আরও বেশি সময় তার শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে চালিয়ে যেতে চায় তবে তাকে আলাদাভাবে রেসিডেন্স পারমিটের (বসবাসের অনুমতি) জন্য আবেদন করতে হবে। এর পর সেই নির্ধারিত কোর্সের (শিক্ষা কার্যক্রম) মেয়াদ শেষ হবার পর চাকরি খোঁজার জন্য রেসিডেন্স পারমিটে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময় জার্মানিতে অবস্থান করা যাবে। চাকরি পাওয়ার পর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।
স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে জার্মানির যে ইউনিভার্সিটিতে আপনি ভর্তি হয়েছেন তাদের দেয়া ‘অ্যাডমিশন লেটার’ হাতে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পড়াশোনা চালানোর মতো যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
উদ্যোক্তা হিসেবে অভিবাসন ভিসাঃ 🇩🇪
আপনার যদি অভিনব ও দুর্দান্ত ব্যবসায়িক আইডিয়া/প্রস্তাব থাকে তবে আপনি এন্ট্রাপ্রেনিউর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সেই ব্যবসাকে জার্মানিতে চালু করার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও নগদ অর্থ থাকতে হবে। এর সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ইউরো। শুরুতে অন্তত ১০ জার্মান নাগরিককে আপনার নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে হবে।
ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসাঃ 🇩🇪
আপনি যদি জার্মান বাসিন্দার পরিবারের সদস্য অথবা তার ওপর নির্ভরশীল (স্পাউজ বা সন্তান) হয়ে থাকেন তবে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। জার্মানিতে বসবাসরত পরিবারের মূল সদস্যের সঙ্গে থাকার আবেদন করতে হলে সন্তানদের বয়স ১৬ বছরের নীচে হতে হবে। তবে এমন নির্ভরশীল সদস্যের বয়স ১৬ এর বেশি হলে তাকে জার্মান ভাষার ওপর দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।
ট্যুরিস্ট ভিসাঃ 🇩🇪
যারা জার্মানি পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান তাদের অবশ্যই জার্মানির ট্যুরিস্ট ভিসা (পর্যটক) নিতে হবে।