11/09/2024
মাজার শরিফ ভাঙার গোপন রহস্য।
মাজারওয়ালারা মূলত পাক পাঞ্জাতনের অনুসারী,ভক্ত এবং বংশধর। আর মাজার ভাংচুরকারীরা পাক পাঞ্জাতনের ঘোর বিরোধী এবং ইয়াজিদের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। এই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বটা মূলত ১৪০০ বছর ধরে সেই কারবালার ময়দান থেকে। যা যুগ যুগ ধরে দ্বন্দ্বটা আবহমানকাল ধরে সারাবিশ্বে বিরাজমান। এই দ্বন্দ্বটা গড়ে ওঠেছে বংশপরম্পরায় এবং আকিদাগত অমিল থাকার কারণে। আমি অতি অল্প মৌলিক কিছু আকিদাগত দ্বন্দ্ব তুলে ধরছি।।
১/ মাজার ভক্ত মানুষেরা দয়াল রাসূল পাক (সা:) কে নুরের তৈরি এবং সর্বপ্রথম সৃষ্টি মনে করে থাকে। পক্ষান্তরে মাজার বিরোধী মানুষরা রাসূলে খোদাকে মাটির তৈরি এবং সর্বপ্রথম কলম তৈরির কথা বলে থাকে।
২/ মাজার ভক্ত মানুষেরা দয়াল রাসূল পাক (সা:) কে সর্বজায়গায় হাজির-নাজির এবং গায়েব জানলেওয়ালা বিশ্বাস করে থাকে। অপরদিকে মাজার বিরোধী মানুষরা এগুলো বিশ্বাস করে না এবং এমন মতবাদকে কুফরি হিসাবে গণ্য করে।
৩/ মাজার ভক্ত মানুষেরা ভক্তিসহকারে দয়াল রাসূল পাক (সা:) এর উপর প্রতিনিয়ত কিয়ামসহ মিলাদ শরিফ পড়ে থাকে। এবং রাসূলে খোদার শুভ জন্মদিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ পালন করে থাকে। অপরদিকে মাজার বিরোধী মানুষরা এমন কাজকে গর্হিত, বিদআত এবং মারাত্মক গুনাহের কাজ মনে করে থাকে।।
এমন আরো অসংখ্য আকিদাগত অমিল রয়েছে, যা আজকে লিপিবদ্ধ করলাম না। শুধু মৌলিক তিনটি কারণ তুলে ধরলাম।। তাছাড়া মাজার ভক্ত মানুষেরা সবসময় শান্তিপ্রিয় ও রাজনীতি বিমুখ হয়ে থাকে। এরা সবসময় পীরের শিক্ষামতে ধ্যান সাধনায় মগ্ন হয়ে নিজকে নিজ চেনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। এরা ষড়রিপু অর্থাৎ সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য যুগের পর যুগ সাধনা করে থাকে এবং এটাকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত মনে করে থাকে। তাছাড়া এরা সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণে নিমজ্জিত থাকতে চেষ্টা করে এবং এটাকে দায়েমী সালাত বিশ্বাস করে থাকে। মাজার ভক্ত মানুষগুলো আল্লাহ, রাসূল এবং পীরের শানমান নিয়ে রচিত সামা,কাওয়ালী এবং ভাবসংগীতকে মনের খোরাক হিসাবে গণ্য করে থাকে। এরা অন্য্যন্য মানুষের মতো সমাজে বসবাস করলেও এরা সমাজনীতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতি থেকে বিমুখ। এরা বেহেশত এবং সোয়াবের আশা করে না বরং সবসময় আল্লাহ এবং রাসূলে খোদাকে রাজিখুশি এবং তাঁদেরকে কাছে পাওয়ার জন্য গ*লা*কা*টা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে থাকে। অপরদিকে মাজার বিরোধী মানুষগুলো যেকোনো মূল্যে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায়।হোক সেটা অরাজকতা অথবা যেকোনো উপায়। মাজার ভক্ত মানুষগুলো জীবন গেলেও দয়াল রাসূল পাক (সা:) কে নুরের তৈরি, হাজির-নাজির এবং গায়েব জানলেওয়ালা বিশ্বাস করে থাকে। কিন্তু মাজার বিরোধী মানুষগুলো এগুলো মানতে নারাজ এবং বিদআত, কুফর এবং মারাত্মক গুনাহ মনে করে থাকে। তাই উভয় পক্ষের মানুষ একই সমাজে বসবাস করলেও দুই মেরুর বাসিন্দা। উভয় পক্ষের লোক কোরআন ও হাদিস দিয়ে তাদের স্বপক্ষে দলিল পেশ করে থাকে। মাজার ভক্ত মানুষেরা তাদের নিজ নিজ পীরের মাধ্যমে এসব আকিদা পোষণ করে থাকে। অপরদিকে মাজার বিরোধী মানুষরা তাদের ধর্মগুরু আবদুল ওহাব নজদী, ইবনে তাইমিয়া এবং আবুল আলা মওদুদির ভাবাদর্শে বিপরীতমুখী আকিদায় বিশ্বাসী। দয়াল রাসূল পাক (সা:) কে কেন্দ্র করে আকিদাগত অমিল থাকার কারণে উভয় পক্ষ একে উপরকে শক্ত মনে করে থাকে। তবে সুফিবাদী লোকজন উগ্রতা পছন্দ করে না। তাদের মতবাদ মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে শিক্ষা দিতে চায়। অপরদিকে মাজার বিরোধী মানুষগুলো তাদের মতবাদ জোর করে কলা কৌশলের মাধ্যমে চাপিয়ে দিতে চায় এবং সুফিবাদী মতবাদ দমন করতে বিভিন্ন অজুহাতে হা*মলা করে থাকে। তাই তাদের রাগ ও হিংসা মাজার ওয়ালা ব্যক্তির উপর। এটাই একমাত্র অন্তর্নিহিত কারণ। তবে আরেকটি দুরভিসন্ধি কারণ রয়েছে, যেহেতু সুফিবাদী লোকজন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকে অপছন্দ করে এবং মাজার বিরোধীরা যেকোনো মূল্যে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায়, তাই দ্বন্দ্বটা অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুফিবাদী লোকজন মনে করে আগে নিজকে শুদ্ধ করতে হবে এবং চরিত্রই ধর্মের মূল। আগে নিজে শুদ্ধ, তারপর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র শুদ্ধ হবে। অপরদিকে মাজার বিরোধী লোকজন ইসলামি খেলাফত চালু করে জোর করে আইন করে সমাজে শান্তি আনতে চায়। কিন্তু সুফিবাদী লোকজন জোর জবরদস্তিতে বিশ্বাসী নয় বরং প্রেমের ধর্মে আত্মবিশ্বাসী এবং মানবসেবাকে পরম ধর্ম মনে করে থাকে। এদের বিশ্বাস মানুষের ভিতরে স্রষ্টার বসবাস, তাই মানবসেবার মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টির উত্তম উপায়। হোক সে হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান অথবা মুসলিম। তারা মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করে না বরং তাদের কাছে মানুষ হিসাবে সবাই সমান। এসব কারণেই উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বটা প্রকট আকার ধারণ করছে।।
Send a message to learn more