03/01/2025
প্রিয় শর্মিষ্ঠা,
পৌষের কুয়াশামাখা সকালের মুগ্ধতা তোমার সাথে ভাগ করে নিতে ইচ্ছা হলো। সকালবেলা কুয়াশার চাদরে সবকিছু ঢাকা। এই সময়টা আমার খুব প্রিয়। প্রকৃতি যেন এক শান্ত নীরবতা নিয়ে আসে। এবার আমি আর মা শ্রীমঙ্গলে এসে রাধানগরে হিমকুড়ি বনবাংলোতে উঠেছি। একটু হাঁটলেই চা বাগান, আর সরু পথ ধরে একটু এগোলেই গ্রাম, যেখানে আদিবাসী ও স্থানীয় লোকজন বাস করে।
এখানকার সকালগুলো একেবারে অন্যরকম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কুয়াশা ভেজা ভোর দেখি, শিশিরের আওয়াজ শুনি, বসন্তবৌরির ডাক শুনি। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। কিন্তু এই নীরবতার মধ্যেও তোমার জন্য এক গভীর শুন্যতা অনুভব করি।
রোদ, পাখির ডাক, চা বাগানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস, সকালের আলোছায়ার খেলা, আর মেঘের লুকোচুরি—সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। চা বাগানের পথে শিশিরে ভেজা পাতা, দিগন্ত জুড়ে ঝুলে থাকা কুয়াশা, আর দূরের কুঁড়েঘরের চিমনি থেকে ওঠা ধোঁয়া; শ্রীমঙ্গলের এই নীরবতা আমাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। আমার মনে রবীন্দ্রনাথের কিছু গান বাজছে, যেমন “তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মনরে আমার” এবং “চোখের আলোয় দেখেছিলেম, চোখের বাহিরে। অন্তরে আজ দেখব, যখন আলোক নাহি রে।”
পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে সবুজ দিগন্ত দেখি, রোদে ঝলমল করা চা পাতা দেখি, আর পাখিদের হঠাৎ উড়ে যাওয়া দেখি। পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে জলের ওপর শিমুল গাছের প্রতিচ্ছবি দেখি। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য, দুদন্ডের এই অবসরে মনকে শীতল করতে জানে, একটু শান্তি দিতে জানে, হোকনা সে ক্ষনিকের জন্য!
ঢাকা থেকে আসার সময় আমি “The Things You Can See Only When You Slow Down” বইটি এনেছি। কয়েকটা পাতা পড়লাম বইটার। বইটিতে ধীরে চলার কথা, নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার কথা, এবং অন্তর্দৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। মা সাথে করে এনেছে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন, চা বাগানে বসে সাতকাহন পড়তে সত্যিই ভালো লাগবে। আমি আরন্যক বইটা মোবাইল দিয়ে পড়ছি, তুমি জানো এই বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রকৃতি। আহা এই নির্জন প্রকৃতির সাথে ভীষন মিলে যাচ্ছে। এবার যেখানে আছি তুমি প্রকৃতির অনুষঙ্গের সুর ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ পাবেনা।
রাতে বনবাংলোর বারান্দায় বসে আছি। দূরে জঙ্গলে জোনাকি পোকা দেখা যাচ্ছে। বাইরে নেমে দেখি গাছের পাতাগুলো সব ভিজে গেছে, অথচ এখনো রাত ১০ টা বাজেনি। শিশির পড়ার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, কখনো শুনেছো? ঝিঝি পোকার ডাক আর পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। এখানে বসে তোমার জন্য লিখতে ভালো লাগছে।
তোমার দিন কেমন কাটছে? পড়াশোনার চাপে ক্লান্ত লাগলে প্রকৃতির কাছে যেও। প্রকৃতি আমাদের শান্তি দেয়। আচ্ছা, ওখানকার বন-জঙ্গল কি আমাদের মতোই? রাতে কি ঝিঝি পোকা ডাকে? ছবি তুলে পাঠাতে ভুলো না।
ইতি,
দেব
( আমাদের অতিথি দেবব্রত হিমকুঁড়ি এসেছিলেন উনার মাকে নিয়ে। উনার চিঠিটা উনার অনুমতি সাপেক্ষে কিঞ্চিৎ তুলে দিলাম। উনার জন্য ও উনার মায়ের জন্য ভালোবাসা রইলো।