24/01/2024
বিমান চলার সময় ওয়াই-ফাই কীভাবে কাজ করে
কখনও ভেবেছেন কি ৩৬,০০০ ফুট উঁচুতে থাকা চলন্ত বিমানে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছে? বা বিমানে থাকা ওয়াই-ফাই কীভাবে আপনাকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রাখে?
বিমানে চলার সময় যাত্রীদেরকে মোবাইল ফোন বা ডিভাইসগুলি এয়ারপ্লেন মোডে রাখতে হয়, নয়ত একেবারে বন্ধ করে দিতে হয়। এটা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর।
অনেকের জরুরি কাজে ভূমিতে থাকা অফিসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। আবার লম্বা বিমান যাত্রায় ইন্টারনেটে অভ্যস্তদের কাছে ইন্টারনেট ছাড়া সময় কাটানো বিরক্তিকর লাগতে পারে। যদি উড়ন্ত বিমানে সব সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়, তা নিঃসন্দেহে দারুণ বিষয়। কিন্তু বিমানে কি ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যায়?
সুখবর হচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন এয়ারলাইনস তাদের বিমানে ওয়াই-ফাই সুবিধা চালু করছে যার মাধ্যমে আকাশে থাকা অবস্থায়ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
কিন্তু মাটি থেকে ৩৬,০০০ ফুট উঁচুতে আকাশে কীভাবে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে? আর ওয়াই-ফাই বলতে এখানে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তরে বলতে হয়: এতদিন আসলে আমরা বিমানে এই ওয়াই-ফাই এর সুবিধা পুরাপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। ভবিষ্যতে বিমান ভ্রমণে আপনার কাজে লাগতে পারে এমন কিছু তথ্য জানা যাক।
# বিমানে কি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে কোন এয়ারলাইনসে যাচ্ছেন, যাত্রার রুট অর্থাৎ কোথা থেকে যাচ্ছেন এবং আপনাকে বহনকারী বিমানটি কোন মডেলের।
সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় হ্যাঁ, এখন অনেক এয়ারলাইনসের বিমানে ইন্টারনেট চালাতে পারবেন আপনি, ইন ফ্লাইট ওয়াই-ফাই এর সাহায্যে। যাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে এখন অনেক এয়ারলাইনসই এই সুবিধা দিচ্ছে। ধীরে ধীরে ওয়াই-ফাই সেবা প্রদানকারী এয়ারলাইনসের সংখ্যা আরো বাড়ছে।
আপনাকে এজন্য এয়ারলাইনসে বুকিং করতে হবে। কিছু অপারেটর সিংগেল ইউজ পাস বা একবার ব্যবহারের জন্য ওয়াই-ফাই এর পাস দেয়। আবার কিছু কোম্পানির কাছ থেকে প্যাকেজও নিতে পারবেন।
তবে বেশি ব্যান্ডউইথের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে। তবে যদি বিমানে অবস্থানের সময়ে অফিস বা ব্যবসার কাজের মধ্যে থাকতে চান, এতটুকু খরচ করতেই পারেন। নতুবা আপনাকে বই পড়ে, ঘুমিয়ে, নয়ত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সময় কাটাতে হবে।
# বিমানে ওয়াই-ফাই কীভাবে কাজ করে?
বিমানে ওয়াই-ফাই চালানোর জন্য দুই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম আছে। একটা হচ্ছে গ্রাউন্ড বেইজড, অর্থাৎ ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম বা Air-to-Ground (ATG) Wi-Fi, আর অন্যটি স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম বা Satellite Wi-Fi।
মাটি থেকে আকাশে যে ওয়াই-ফাই কাজ করে তার ধরন অনেকটা মোবাইল ফোন সংযোগের মত। এখানে বিমানের মূল কাঠামোর নিচে থাকা একটা অ্যান্টেনা মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযোগ রক্ষা করে চলে। বিমান যখন চলে, তখন এই অ্যান্টেনা একটার পর একটা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের ট্রান্সমিটারের সাথে সংযুক্ত হতে থাকে।
মোবাইল ট্রান্সমিটারের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ থাকার কারণে পুরো বিমানই ওয়াই-ফাই হটস্পট হয়ে ওঠে। তখন যাত্রীরা স্বাভাবিক ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের সব কাজ করতে পারে—যেমন ইমেইল পাঠানো, ফোন কল করা এবং সিনেমা স্ট্রিম করা। তবে বিমান যখন বিশাল জলরাশির ওপর দিয়ে যায় তখন এই ব্যবস্থা কাজ করে না। যেমনটা হয় ট্রান্সআটলান্টিক পথে যাওয়ার সময়। তখন তখন বিমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অসংখ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ আছে। এসব স্যাটেলাইটের সাহায্য নিয়েই স্যাটেলাইট ওয়াই-ফাই কাজ করে। এই ক্ষেত্রে বিমানের ওপরে থাকা নির্দিষ্ট অ্যান্টেনা দিয়ে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিমান। বিমান আকাশে ওড়ার সময় সবচেয়ে কাছে যে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট খুঁজে পায়, সেটার সঙ্গে বিমানের ওপরে থাকার অ্যান্টেনার যোগাযোগ ঘটে।
স্যাটেলাইট ওয়াই-ফাই দুই ধরনের ব্যান্ডউইথ নিয়ে কাজ করে। ন্যারোব্যান্ড এবং ব্রডব্যান্ড। দুই ধরনের ব্যান্ডউইথেই যাত্রীরা পূর্ণ ইন্টারনেট সেবা পায়, তবে মুভি স্ট্রিম করার জন্য ন্যারোব্যান্ড কম উপযোগী।
# কীভাবে বিমানে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন?
বিমানে ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকলে সচরাচর এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ টিকেট কেনার সময়, বিমান ওঠার সময় ও বিমান চলাকালে যাত্রীদের এই সুবিধার কথা জানিয়ে দেয়।
এই সুবিধা ব্যবহার করার জন্য মোবাইল বা ডিভাইসে এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে হবে। এরপর ওয়াই-ফাই সেটিংসে গিয়ে In-Flight Wi-Fi খুঁজতে হবে।
তবে বিমানযাত্রায় সব সময় ওয়াই-ফাই সংযোগ যথেষ্ট শক্তিশালী নাও থাকতে পারে। তখন ইন্টারনেটে ঢোকা বা স্ট্রিম করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া কিছু বিমানে ওয়াই-ফাই এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টেনা নাও থাকতে পারে।
ভবিষ্যতে বিমানের ওয়াই-ফাই সংযোগ সুবিধা আরও উন্নত হতে যাচ্ছে। এর প্রভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের ফ্লাইটে আরো বেশি সংখ্যক এয়ারলাইন্স ওয়াই-ফাই চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
# বিমানগুলির কি নিজস্ব ওয়াই-ফাই আছে?
কিছু এয়ারলাইনস নিজস্ব ব্র্যান্ডের ওয়াই-ফাই এর কথা বললেও, আসলে বিষয়টা ঠিক তা নয়। কারণ বিমান চলাকালে ওয়াই-ফাই এর জন্য মোবাইল টাওয়ার বা স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয়। যে উৎসটি কাছে থাকে বিমান সেখান থেকে ইন্টারনেট সুবিধা নেয়। বিমান এখানে কেবল হটস্পট হিসাবেই কাজ করে থাকে।
# বিমানের ওয়াই-ফাই কি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়?
এটা নির্ভর করে এয়ারলাইনসের ওপর। কিছু এয়ারলাইনস, যেমন জেটব্লু কর্পোরেশন, ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা দেয়, তারা এটিকে বলে ফ্লাই-ফাই (Fly-Fi)। অন্যদিকে কিছু এয়ারলাইনস নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে ওয়াই-ফাই সেবা দিয়ে থাকে।
অল্প কিছু এয়ারলাইনস তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সেবা দেয়। অন্যদিকে কিছু এয়ারলাইনস কেবল টেক্সট করার জন্য ফ্লাইটে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।
কিছু এয়ারলাইনস প্রতিবার ফ্লাইটে ওয়াই-ফাই ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অংকের টাকা চার্জ করে। আবার কেউ কেউ ফ্রি ওয়াই-ফাই এর পরীক্ষামূলক সেবা দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে যাত্রীদের জন্য এই সুবিধা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেওয়া।
আপনি যদি বিমানযাত্রার সময় উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এর ঝুঁকি এবং কীভাবে তা ব্যবহার করতে হয়, এসব বিষয়ে সঠিক ভাবে জেনে নিন। বিমানে থাকার সময়ে সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও কিছু সময় ওয়াই-ফাই বন্ধ করার নির্দেশনাও শুনতে হতে পারে।
আশা করা যাচ্ছে, এক সময় বিমানযাত্রায় ওয়াই-ফাই একটা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে। তবে বিমানে ওয়াই-ফাই ব্যবহারের নিয়ম, সংযোগ ও ফি এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।
#ওয়াইফাই #বিমান #প্রযুক্তি