13/03/2020
মেনিসকাস বা তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ হলো নরম হাড় যা শরীরের বিভিন্ন শক্ত হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে এবং জোড়ার মধ্যখানে অবস্থান করে। হাটুর জোড়ায় দুই হাড়ের মাঝখানে দুইটি মেনিসকাস থাকে। একটি মেনিসকাস হাঁটুর জোড়ার বাহির পার্শ্বে থাকে এবং অপরটি হাঁটুর জোড়ার ভিতর পার্শ্বে থাকে। আকৃতিতে মেনিসকাস বা তরুণাস্থি ইংরেজি অক্ষর সি বা ক্রিসেন্ট এর মত। এই আকৃতির জন্য হাঁটুর জোড়ায় সহজেই নড়াচড়া হয় এবং দৃঢ় অবস্থা বজায় থাকে। মেনিসকাসের বাহিরের অংশে রক্তের প্রবাহ থাকে তাই ইনজুরি হলে জোড়া লাগে কিন্তু ভিতরের অংশে রক্ত প্রবাহ নাই বলে ইনজুরি হলে জোড়া লাগেনা। মেনিসকাস শরীরের ওজন সমভাবে উরুর হাড় থেকে পায়ের হাড়ে সরবরাহ করে এবং হাড়ের প্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় সহায়তা করে। যান বাহন (বাস, রিকশা) থেকে নামতে গিয়ে যদি পা মাটিতে থাকে কিন্তু হাঁটু ঘুরে (রোটেশন) যায়, সে ক্ষেত্রে মেনিসকাস ইনজুরি হয়। বাস, কার ও মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট এবং মই, সিড়ি বা উপর থেকে পড়ে গিয়ে মেনিসকাস বা তরুণাস্থি ইনজুরি হয়। ফুটবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, বেডমিন্টন ও টেনিস খেলোয়াড় দের মেনিসকাস ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আঘাতের ফলে হাড় ভাঙ্গলে ও জোড়া স্থানচ্যুতি হলে অন্যান্য লিগামেন্টের সাথে মেনিসকাসও ইনজুরি হয়। এছাড়াও আর্থ্রাইটিস এবং বয়স্কদের ব্যবহার জনিত ক্ষয়ের কারনে মেনিসকাস ইনজুরি হয়।
মেনিসকাস ইনজুরির লক্ষনসমূহঃ
হাঁটুতে ব্যথা হয়। ব্যথা প্রথমে অল্প থাকে এবং পরে বাড়তে থাকে। আঘাতের পরো খেলোয়াড় খেলতে থাকে এবং আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তি হাটতে থাকে কিন্ত কিছু সময়ের পর আর পারেনা। আঘাতের কয়েকঘন্টার মধ্যে হাঁটু ফুলে। কখনও দেখা যায়, প্রথম আঘাতের পর হাঁটুর জোড়া ফুলে না কিন্তু হালকা ব্যথা হয়। মাস বা বছর পর পুনরায় আঘাত পেলে জোড়ায় তীব্র ব্যথা হয় এবং বেশ ফুলে। কোন কোন হাঁটু কিছু দিন পর পর ফুলে আবার কমে কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় না এবং দৈনন্দিন কাজ - কর্মে ব্যঘাত করে। হাঁটু পুরোপুরি ভাঁজ বা সোজা করা যায় না। মাঝে মাঝে হাঁটু ভাঁজ করার পর আর সোজা করা যায় না (লকিং হয়) এবং সাথে ব্যথা হয় তখন হাঁটুকে বিভিন্ন দিকে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করতে হয়। বেশী দিন এভাবে চলতে থাকলে হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং পেশী দুর্বল হয়। ফলে বসলে উঠতে কষ্ট হয়। হাঁটুর জোড়ায় মুভমেন্ট কমে বা জোড়া জমে যায়। ওসটিওআর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হতে থাকে।
চিকিৎসাঃ
মেনিসকাস ইনজুরির চিকিৎসা নির্ভর করে ইনজুরির ধরন, টিয়ার এর আকৃতি - ছোট/ বড় রোগীর অসুবিধার তীব্রতা এবং রোগীর বয়সের উপর। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রে একই রকম। চিকিৎসা প্রদানের পূর্বে রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা, প্রয়োজনে হাঁটুর এক্স - রে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে এম, আর, আই, একান্ত দরকার। ছোট আকৃতির টিয়ার যা রক্ত প্রবাহিত অংশে (বাহিরের) হয় তা কনজারভেটিভ বা মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো হয়। আঘাত প্রাপ্ত হাঁটুকে বিশ্রাম দিতে হবে। বরফের টুকরা প্লাস্টিকের থলিতে নিয়ে এবং থলিলে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে হাঁটুতে লাগাতে হবে প্রতি ঘন্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘন্টায় ২০ মিনিট। ইলাস্টিক কমপ্রেসন বা নি ক্যাপ ব্যবহারে ব্যথা ও ফুলা কমে আসে। স্প্লিন্ট বা ব্রেস ব্যবহার করে হাঁটু উপরে উঠিয়ে রাখলে ব্যথা ও ফুলা কমে যাবে। তিন সপ্তাহ ক্রাচে ভর দিয়ে হাটার পর হাঁটুর পরিপূর্ণ নড়াচড়া ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো না হলে বা মারাত্মক ইনজুরি হলে সর্বাধুনিক সার্জিকেল চিকিৎসা পদ্ধতিতে ছোট দুইটি ছিদ্রের মাধ্যমে আর্থ্রোস্কোপ হাঁটুতে প্রবেশ করিয়ে মেনিসকাস ট্রিমিং বা সেভিং ( মেনিসেকটোমি) এবং প্রয়োজনে সেলাই করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারির পর উপযুক্ত ও পরিমিত পরিচর্যার ( রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল হাই
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারি)
সহকারী অধ্যাপক(অর্থোপেডিক সার্জারি)
আর্থ্রোস্কোপিক,জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট, অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন
AO Basic & Advance Course
Fellow-Joint Replacement & Arthroscopy JBCH Hospital, India
Advance Training on Knee & Shoulder Arthroscopy, Thailand, India
SICOT Course In Arthoplasty & Arthroscopy, Thailand
এপিক হেলথ কেয়ার
১৯, কে.বি. ফজলুল কাদের রোড,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মেইন গেইট এর বিপরীতে, চট্টগ্রাম।
সিরিয়ালঃ ০১৭৪৬-৫০০৭১৭